শীত বাস্তবতা


শীত বাস্তবতা
হাসনাত মোবারক

শীতকাল আমাকে আলসে করে দেয়। অসহ্য বেদনার এক ঋতুর নাম শীতকাল। তবে ভোজনরসিকদের জন্য এই ঋতুটি অনুকূলের। হরেক রকমের পিঠাপুলি তৈরি ও ভোজনের সময় শীতকাল।  পিঠা উৎসবের একটা আমেজ লাগে গ্রামে গ্রামে। গঞ্জে ঘাটে  যেখানে লোক সমাগম ঘটে সেখানে শীতের পিঠা বিক্রীর ধুম পড়ে যায়। এই ঋতুর বৈষয়িক সব সুবিধার চেয়ে শীতের তীব্র তীর আমাকে ফালা ফালা করে দেয়। তাই শীতকে কখনো প্রিয় ঋতু মনে হয় না। ভালো লাগে তারা ভরা রুপালি রাত। কুয়াশা জীবন যাপনকে স্থবির করে দেয়। তবে হালকা ঈষৎউষ্ণ শীত আমার ভালো লাগে। এ সময়ে নদীর জলধারা ধীরে বহে। আমিও ধীর গতিতে চলি। চলেছি আমার শৈশবের অপাঙক্তিও রেখা ধরে। কুয়াশার  চাদর ভেদ করে প্রকৃতির উপাদান -ডালিয়া, ক্রিসেন্থেমাম, বাটন, কারনেশন, জিনিয়া, কসমস, পিটুনিয়া, হলিহক, এস্টার, সুইটপি, ফ্লকস্, পর্টুলেখা, ভার্বেনা  বোতাম, এসব নামধামের ফুল তো এখন এসে চিনেছি। কিন্তু  বেড়ে উঠেছি আলপথের ধারে বেড়ে ওঠা  ঝলমলে হলুদ, হলদে কমলায় মেশানো গাঁদা আর আমাদেরই নিজস্ব ফুল, দশবাইচন্ডীর রূপ আর রঙ দেখে। পল্লী বাংলার পথঘাট, জলারধার ধরে হেঁটে হেঁটে পৌঁছেছি  বিল বাওরের ওপার। কী যে অসহনীয় দুর্ভোগ! যেখানে বাংলাদেশের একমাত্র গোচারণ ভূমি অবস্থিত। বাথান ভুমির দক্ষিণে চলে গেছে একটা নদী। কুয়াশচ্ছন্ন নদী পথে ভুটভুট করে দূর থেকে অতিদূর চলে এসেছে, চলে যাচ্ছে  শ্যলো মেশিন তোলা নৌকা। শ্যলো মেশিনের চালক হতে চাইতাম। এসব আমার শৈশবের তীর্থ¯স্থান ও তীব্র আকাক্সক্ষ। আমাদের রুজি আর রোজগারের লালনভূমি। বিল দাবুনার ওপার। একটা যুগ মাঠেঘাটে খেতখামারে কাটিয়েছি। তাই শীত যে কী জিনিস তা বুঝি। বুঝেছি শীতের নিদারুণ কষ্ট। দুর্বা ঘাসের ওপর মুক্তোদানার মতো শিশির বিন্দু। শিশিরের ওপর নাম নিওর। আমরা বলতাম নেঙর। ওই শিশিরে ধুয়ে দিয়েছে শিউলি ফুলের গা। আমি সে দুর্বলতার কথা গোপন রাখলাম। রেখেই চলেছি আজ অবধি। শীতে শরীরে থর থর কাঁপন ওঠে। শীতবাস্তবতাকে উজিয়ে কৃষক , ঝেলে মজুরদেনর শাঠে নামতে হয়।  জলডোবার পাড়ে অবহেলিত ও স্বদ্যোগে বেড়ে ওঠা মটমটির ঝাড়ের ভেতর থেকে  মাথা উঁচিয়ে থাকা বেগুনি ফুলের মায়াবী চেহারাও শীতদুর্বল মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠে না। 
শীত গ্রাম আর শহরের মানুষের কাছে ভিন্নভাবে হাজির হয়। তবে শীতের অনুভূতি সব জাগয়ায় একই। শীতের প্রলেপ গ্রাম আর শহরে কিছুটা তফাৎ। ঋতুভেদ শহরের মানুষ জানেই না। মানুষ শুধু শীতকালেই জানে বা জানতে পারে, এখন শীতকাল। শীতকালে বাঙের শীতনিদ্রা যাবার প্রমাণই যথেষ্ট। ঋতু-বৈচিত্রের তারতম্যে মানুষের মন আর মেজাজ নির্ভর করে। বসন্ত ভালোবাসার ঋতু। বর্ষায় প্রণয় বা প্রেয়সীকে কাছে পাবার একটা দুর্বার আকাক্সক্ষা থাকে। শরতের নিটোল জলের মহিমা তুলনারহিত। সেক্ষত্রে শীত অনেকটাই নির্মম প্রেষণা দিয়ে থাকে আমাদের। অধিক শীতের প্রকোপ আমাদের রবি শস্যের ভয়াবাহ ক্ষতির কারণ। বীজ ও অঙ্কুরোদগমসম নানান সমস্যা দেখা যায় এই শীতে। পাতাঝরা এই শীতে সৃজনশীল কর্মও সম্পাদন করা হয়ে ওঠে না ঠিকঠাক মতো।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট