পদাবলি



দুই নদীর কাব্য
শাহীন মাহমুদ

ধরো তুমি আমি দুটি নদী
নদীর আপন দুটি ধারা ভিন্ন ভিন্ন গতিপথ
একি মোহনায় মিল মিশে একাকার ।
এবার তোমার সীমানা তুমি বুঝে নাও নদী, পারবে?
এক নদী আরেক নদীরে সুধায় ;একি মিলন মোহনা
না কি জলের বিলাপ;তেলিবাড়ির অভিশপ্ত বউ শুশুক বালা
বনে যায়-খোলা স্তনে বিস্ময়ে ভেসে উঠে আবার ডুবে ।
অবিকল মানবী ।
গহীন জলের সীমানা মাপে সে আবার কোন সার্ভেয়ার !
এক নদী আরেক নদীরে সুধায় ;যদি পারো করে নাও তোমার
সীমানা উদ্ধার ।    
শুশুক নারী মিলন মোহনায় মালটিকালার ঝড় দেখো
জলের গহীনে যাও...দূরে যোজন যোজন দূরে ।  


মায়ের মুখ
বিবিকা দেব

বট বৃক্ষের ন্যায় ছায়া সুশীতলতা ঘিরে রেখেছে ভূমিষ্ঠ
আদুরে সন্তানদের । হাসিতে প্রশান্তি, শাসনে অগ্নিবর্ণ আর
সাফল্যে আনন্দময়ী । শৈশবে ফিরে যায় মায়ের গায়ের গন্ধে ।
শত কষ্টে জর্জরিত আঁচলে খুঁজে পায় স্বগীর্য় অমিয় ধারা ।
সদা দু’হাত তুলে নিবেদনÑ “সন্তান যেন দুধে ভাতে থাকে”
সূদুর দিগন্তে পাড়ি অপলক দৃষ্টিতে ভাসে শান্ত ¯িœগ্ধ মমত্ববোধ
আমার প্রিয় মায়ের মুখে ঊষার আলোয় মৃয়মান হাসি ।


বৈকল্য ভালোবাসা
এস এম এ হাফিজ

বৈকল্য ভালোবাসা হামাগুড়ি দেয়
বঞ্চনার নগ্ন তপ্ত বালুকাবেলায়
অজ¯্র স্বপ্নের পাখিরা ডানা ভাঙা কষ্টে
মুখ থুবড়ে পড়ে মূক বেদনায়।

তুমি কি পাষাণে গড়া প্রালহীন প্রতিমা?
সহসা কষ্টের অগ্নিপাতে আমাকে
ঝলসাও নৈর্ব্যত্তিক অহংকারে
তোমার অবহেলার নিষ্ঠুর শরে
ঢলে পড়ে সযতেœ  গড়া আমার
গহীণ আরণিক ভালোবাসা...


তুমি আমার ঘামের কালি
যাহিদ সুবহান

আমি তো শ্রমিক শ্রেণির
আমার গাঁইতি কুঠারের জীবন
তুমি অভিজাত, তোমার প্রভুর আসন
তোমার হৃদয়ের বেখেয়াল হাঁটে তাই
সস্তায় কেনো-বেঁচো আমাকে প্রতিদিন
তুমি আমার শ্রেষ্ঠ কবিতার পান্ডুলিপি
তোমাকে পাঠ করি নিশিদিন
জুঁই তুমি আমার ঘামের কালি
আমি সেই কালিতে লিখে যাই জীবনের কবিতা ...

ইশারা
সাজ্জাক হোসেন শিহাব

একদিন ফেসবুকে দেখি মেয়েটার প্রেমছবি-
আকাশভাঙ্গা বৃষ্টিতে ভিজে দেহে লেপ্টে থাকা জামা
নিয়ে এক ছবি এলো আমার ইনবক্সেও। জলের
তা-বে আমি এমনি অস্থির হয়ে রই। আমি তো
লালন নই। মেয়েটি জলছবি দিয়ে বলে- কবি,
কেমন হয়েছে? আমি জলের তা-বে ভেসে বলি-
শিরা-উপশিরায় ঝড় তোলার মতো। ষোড়শী চুপ
থাকলো কিছুক্ষণ। সে নীরবতা এখনও আছে-
মাঝখানে ঘটে গেছে এক ঘটনা। মেয়ে একটা
কবিতা লিখেছে। যার নাম হলো- কবির অপেক্ষা।
কবি আজো অপেক্ষায়। মেয়েটি হয়তো জানে না যে
কবিরা বয়সী হলে লালন হয়, লালন হয়।


যাপিত জীবন
মাহদী হাসান

দুপাশে দু’টো পাহাড়- মাঝে বিস্তৃত কালো রাজপথ। ভ্রুণের গতিতে ছুটে চলছে তৃষ্ণার্ত মন। জংলী ফুলের বুনো সুবাসে আমি পৌঁছে যাই চরম মূহুর্তে, ঠিক আরশে মোয়াল্লার কাছাকাছি। সরলরেখায় একটা নির্দিষ্ট ভগাঙ্কুরের দিকে ধাবিত হতে হতে- নব্বই ডিগ্রি এঙ্গেলে বাঁক নেয় কালো রাজপথ। এখানে আমি বুক ভরে নিতে পারি বিশুদ্ধ নিশ্বাস। তারপর, হঠাৎ করে মনে হলো- আমি উত্তাল সমুদ্রে রোমাঞ্চিত এক সওদাগর। আমাকে ধেয়ে নিয়ে চলা বজরা উঠছে, আর নামছে। মউজের তালে তালে দুগ্ধফেননিভ ঘন কুয়াশার রেশ লেগে থাকে আমার ঠোঁটে। আমি প্রত্যেক বন্দরে সওদা করি। একই জমিন, স্বাদে ভিন্নতা! যেতে যেতে আমি রেখে যাই পদচিহ্ন। কাঁদতে থাকে আগ্নেয়গিরি হতে উদগিরিত  লাভা। তাদের কোথাও ঠাঁই নেই। উচ্ছিষ্ট বীজ। মরা বীজ।

এখানে প্রকৃতির অর্গাজমে স্নান সারে আমার মতো অসংখ্য পাপী। আমার উচ্ছলতায় স্বর্গীয় হুর-গেলমান এসে শরিক হয়। ধরা দেয় নিষিদ্ধ গন্ধম। লবণাক্ত জলে ফের ছুটে চলা- তওবায় ফিরে পাই যৌবনের দীপ্ত জ্যোতি। ক্ষুধা তাগাদা দেয়। আবার সওয়ার হই, নির্দিষ্ট ভগাঙ্কুরের দিকে।


প্রশান্তির খোঁজে
নাফছি জাহান

এক অফুরন্ত শান্তির নেশায়, আজ ধাবমান আমি-
আমার ছোট্ট গাঁয়ের সীমানায়।
যেখানে আমার জন্যে অপেক্ষমান আছে
প্রশান্তিময় বায়ু আর অতি নিগূঢ় ভালোবাসার মিশ্রণ,
নদীর পাড়ের ছোট্ট আঙিনায় আছে এক ছোট্ট ছাউনি,
যেখানে বধূ আমার পথ চেয়ে আছে, আছে গভীর প্রতীক্ষায়।
যেখানে লাল পাড়ের শাড়ি পড়ে
বধূ আমার- উনুনের জ্বলন্ত আগুনে রাঁধবে পরম যতেœ,
পিড়িতে বসে আমি- দেখব তাকে মাতোয়ারা হয়ে।
নাকে নোলক, হাতে কাঁচের চুড়ির ঝনৎকার,
পায়ে আলতা,আর চুলে লাল ফিতা।
আহা! কি অপরূপ সাজে সজ্জিত হবে বধূ আমার,
লাজুক চাহনীতে ক্ষণে ক্ষণে দৃষ্টি দেবে আমার পানে।
বহু বিস্তৃত পথ পাড়ি দিয়ে
গন্তব্য আমার- ছায়াঘেরা গাঁয়ের পথে...
এ গাঁয়ে সন্ধ্যে হলে জোনাক জ্বলা মিটিমিটি আলো
আলোকিত করে দেবে- বিদ্যুৎহীন গ্রামকে।
ছায়াঘেরা কুটিরের আঙিনায় দাঁড়িয়ে,
বধূর সহিত আকাশের চাঁদ দেখব অপলকে।
শহরের কোলাহল, উত্তপ্ত বায়ু হতে
কিছুটা মুক্তি পাব, নির্মল বায়ুতে-নিঃস্বাস নেব।


বোধ
দেলোয়ার হোসাইন

বেদনার কোন আদালত নেই
মন আর মোহের রিরোধ নিয়ে
আমরা ‘নীল’ আদালতে
আত্মসমর্পণ করি...!

২.
সব চোখেই নদী আছে কিন্তু
সব নদীতে পানি নেই
কিছু নদী মরা, কিছু নদী
অভাগা আর কিছু নদীতে
মানুষ শুধু কামড়াকামড়ি করে...!

৩.
দুঃখের কোন রঙ থাকতে নেই
কেননা সব রঙের মানুষ
দুঃখ লালন করে...!



শ্যাওলা ভর্তি পদ্ম
ফখরুল হাসান

খাটিয়াল বিলে চলে সোনালী মাছের জল উৎসব
হঠাৎ উড়ন্ত চিলের ঠোঁটে শোভা পায় বিলের মাছ
ওপারের নিতাই বাবুর পুকুরে ঠোঁট থেকে খসে পড়ে ।
পদ্ম ফোঁটা জলে দেখবে না কেউ সোনালী মাছের নৃত্য
কখনো আর হবে না সাদা বকের প্রণয়ের ডুবসাঁতার
ডানা ভাঙ্গা বকের চোখে মুখে বেদনার নীল জল ।
নেত্রপল্লবে সাঁতার কেটে কেটে ক্লান্ত সাদা বক ।
আহত বক ভেসে যায় ছাতল বিলের ঘোলা জলে
ডানা ভাঙ্গা বকের অশ্রুর জোয়ারের ভেসে যায় পদ্ম বিল ।
স্রোতে ভেসে খালের কিনারে পরে রয় স্মৃতির পান-কৌড়ি ।
বুকে শ্যাওলা ভর্তি পদ্ম নিয়ে উড়ে যায় উড়ন্ত চিল
ডানায় শ্যাওলা মেখে পরে থাকে নিঃসঙ্গ বক পাখি  ।
প্রণয়নের বিলে নিজেকে বিসর্জন দেয় ডানা ভাঙ্গা বক ।




কবি
শাহিন আলম

আমাকে আর যা-ই বলেন
অন্তত কবি বলবেন না
কবিদের হৃদয় খরগোশের মত নরম
কবিদের অনুভূতি
পুলসিরাতের মত ধারালো

কবিরা জানে
নীল গোলাপের সুবাস
কতদূর থেকে পাওয়া যায়
আমি তা জানিনা
আমি জানি
একটা গ্রেনেড বিস্ফোরণে
ঝরে যেতে পারে কতটা প্রাণ

কবিরা জানে
এ জগত সংসারে দুঃখ কাকে বলে
আমার সিলেবাসে দুঃখ বলে কিছু নেই
কারও মৃত্যু যন্ত্রণা দেখলে
আমি হো হো করে হাসতে থাকি
লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের গর্বে ভরে ওঠে মন।

আমাকে আর যা-ই বলেন
অন্তত কবি বলবেন না
একজন কবি ভালবাসার জন্য
মাথার চুল ছিঁড়তে পারে
ভোরের শিউলী কুড়িয়ে গাঁথতে পারে মালা
রক্ত রাঙা চোখ নিয়ে কাটাতে পারে রাত
অথচ আমি
রাতের আঁধারে হাঁটতে থাকি
বারুদের গন্ধ মাখা বাতাসে
নিঃশ্বাস করি চাষ

কবিদের সাথে রয়েছে আমার ব্যাপক ব্যবধান
কবিরা জীবনের কথা বলে
আমি মৃত্যুর কথা বলি
মৃত্যুকে বয়ে বেড়ায় পিঠে
তাই সম্মানিত পাঠক
আমাকে আর যা-ই বলেন
অন্তত কবি বলবেন না।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট