গল্প- স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা




স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা
নূরে জান্নাত

-আমি স্টেশনে এসেছি কন্যা।
-একটু অপেক্ষা করুন আসছি।
ফোনে স্ক্রীনে এস এম এস শেষে কন্য রওনা হয় স্টেশনের উদ্দেশ্যে।
আজ তার বন্ধু আসবে।এক সময় স্টেশনের আশে পাশে চারটি চোখ খুজে বেরাচ্ছে দুটো মুখ কে।
ফোনে কথা শেষে হঠাৎ মুখো মুখি হয় দুই বন্ধু।এক পলকেই চিনে ফেলে দুজন দুজন কে।অথচ কেউ কাউকে চিনত না।
কন্যা সালাম দিয়ে...
-স্বচ্ছ বন্ধুত্বের জগতে আপনাকে স্বাগতম।
বন্ধু হেসে...
-থ্যাংক ইউ।
এর পর ব্যাগের পকেট থেকে কয়েকটা চকলেট বের করে বাচ্চাদের মত মুষ্টি খুলে উন্মুক হাতের তালুতে রাখা চকললেট তুলে ধরে বন্ধুর দিকে।
বন্ধুও কন্যার ছেলেমানুষি আচরণে সায় দিতে হাত পাতে।কন্যা টুপ করে বন্ধুর হাতের তালুতে চকলেট গুলো দিয়ে...
-আসুন আমার পিছু পিছু,এখান থেকে বাসা পর্যন্ত হেটে যেতে হবে।সমস্যা হবে কি?
-একদম না।
রাস্তায় হাটতে হাটতে টুক টাক কুশল বিনিময়।সিরি বেয়ে চার তলায় উঠতে দুজনেই হাপিয়ে যায়।রুমে ঢুকে ফ্যান ছেরে বন্ধু ছোফায় আর কন্যা ধাপ করে ফ্লোরে বসে পরে।ফ্লোরে বসতেই কন্যা বেশি পছন্দ করে।
হালকা জলযোগ শেষে আবারো গল্প।
লান্সে মনে ররাখার মত কান্ড ঘটিয়ে ফেলে কন্যার বন্ধুটি।কন্যাতো
অক্ষমের ঢেকি কিছুই পারে না,সার্ভ ও করতে পারেনা।বন্ধু নিজের প্লেটে খাবার নেবার সময় কন্যা বন্ধুর প্লেটে খাবার না
সার্ভ করতে দিয়ে নিজের প্লেট এগিয়ে পট পটিয়ে বলে....
- আমাকে দিতে হবে।
বন্ধু হেসে..
--অবশ্যই।
খাবার সময় বন্ধু তার প্লেট থেকে এক পিস মুরগি কন্যার প্লেটে তুলে দেওয়াই আপ্লুত চোখে তাকিয়ে থাকে বন্ধুর বদন পানে।
খেতে বসে অনেক জোকস,বাস্তব হাস্যকর
কথায় খাবার চ্যাপ্টার টার সমাপ্তি হয়।
হাত ধুয়ে এসেই কন্যা তার বন্ধুত্বে স্টাইল
এর অংশিদার বানায় বন্ধুটিকে।
হাত মুষ্ঠি করে দুইরকম স্টাইলে ডিস্যুম ডিস্যুম ই তার বন্ধুত্বের এক্সক্লুসিভ স্টাইল।
ভাবতে পারছে না দুই বন্ধু সামনা সামনি পাশাপাশি বসা।
দুপুর গরিয়ে বিকেল।এক সময় প্রবল বর্ষন,দমকা হাওয়া,ও বজ্রপাত।
কাচের জানালাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে বর্ষনের ফোটা ফোটা অস্পষ্ট স্পর্শ।
ভীষন ইচ্ছে করছিল কন্যার জানালার কাচে আঙুল ছোঁয়াতে,ছাদে গিয়ে বন্ধুর সাথে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভিজতে আর রবীন্দ্র সংগীত শুনতে।দূরে বিল্ডিংয়ের
চিলে কোঠায় ভেজা কাকেদের দেখছিল কন্যা।
ইচ্ছেগুলো চাপা রেখে ফ্লোরে বসেই বন্ধুর কন্ঠে আবৃত্তি ও রবীন্দ্র সংগীত শুনছিল..
‘আমি চিনিগো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী..."
যেমন আভা থাকতে হয়,তেমন সুরেলা আভা ছিল ও কন্ঠে।
ছোফা ছেরে কন্যার তালে তাল মিলাতে কন্যার বন্ধু ফ্লোরে বসে।
এক সময় দুই বন্ধুর মাঝে যোজন যোজন
দুরত থাকলেও সে দুরত্ব কিছুই মনে হত না।অথচ আজ এক দুই গজ দুরত্ব কে মনে হচ্ছে লক্ষ কোটি বর্গ মাইল দূরত্ব।
অনেক গল্প,গ্যালারির ছবি দেখা স্বচ্ছ হাসাহাসিতে বিকেল।
বিকেলে মিষ্টি খাওয়া নিয়ে দুই বন্ধুর মত পার্থক্য কালো না সাদা মিষ্টি..?
অবশেষে ভাগ করে মিষ্টি খাওয়া।


বড় রা সব সময় ছোটদের একটু বেশি ভালবাসে।
সন্ধ্যের চুরি যাওয়া আলোয় "বন্ধু " শব্দটিকে স্নান করিয়ে পবিত্র আবেষ্ঠন তৈরিতে বিদায় পালা।
ল্যাম্প পোষ্টের আলোতে জনবহুল রাস্তাটা কেমন অচেনা লাগে।
আইস্ক্রিম খাওয়াতে অন্য পথে হাটা দেওয়া বন্ধুর হাত ধরে টেনে হিচরে রিক্সার কাছে দার করিয়ে রিক্সার অপেক্ষায় ...
কন্যার ভীষন ইচ্ছে ছিল বিদায়ের আগে একটি বার বন্ধুর গোছালো চুল গুলো অগুছালো করে দিতে ।
কিন্তু হল না।  রিকশা ও বন্ধু আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলে গেল।
যাবার বেলায় অভিমানী নিরবতা গুমোট বেধে আবহাওয়াটাকে কেমন যেন ভারী করে তুলেছিল।শেষবারের মত দুই বন্ধুর চোখাচোখি হয়েছিল একবার।কন্যা রুমে ফিরে ডাইরিতে লিখে যাওয়া বন্ধুর অভিমত পরোখ করছিল।লেখার
বিষয় অবাক হবার মত না; আবার অবাক না হলেও চলছে না! ডাইরির পাতা উল্টাতে ঊল্টাতে বেরিয়ে পরে একটি ছবি।
বন্ধুর দেওয়া ছবি।চশমার ফ্রেমের ভেতর
থেকে তাকিয়ে আছে দুটি চোখ এক দৃষ্টিতে।পৃষ্ঠার ভাজ থেকে ছবিটি যদি হারিয়ে যায় সেই ভয়ে কাগজের আভরনে ছবিটি পার্সে রেখে দেয়।
রাতের খাবার সেরে স্বার্থ পরের মত ঘুমিয়ে যেতে নিয়েও সংকল্প করে যতক্ষন বন্ধু বাড়ি পৌছাবে না ততক্ষন কন্যা জেগে থাকবে।বিছানায় শুয়ে খোলা জানালা দিয়ে রাত্রীর অন্ধকার আকাশে মেঘের সাথে তারাদের লুকোচুরি অবলোকনে মগ্ন কন্যা।তারা দেখার উছিলায় যাতে তার চোখে ঘুম চলে না আসে।
গভীর রাত, পাশের স্টেশন থেকে ট্রেনের হুইছেল ভেসে আসে,ফ্যানের বাতাসে জানালার পর্দাগুলো উড়ে উরে উঠছে।
তারার পাশাপাশি ফ্লাইং হওয়া দু একটা প্লেনের লাল টিপ টিপ আলো,ও ভো ভো কেমনন একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে।
তন্দ্রাচ্ছান্ন চোখ হাতের উলটা পিঠে বার বার ডলে জাগ্রত থাকার চেষ্টা করে কন্যা।
প্রশ্ন জাগে মনে...
রাতের বুকে কি অনেক যন্ত্রনা? যার ফলে অত অন্ধকার?অন্ধকার হলে কি হবে?
রাতের বুকেও একপ্রকার শৈল্পিকতা আছে।
ইত্যাদি ভাবনা ভাবতে ভাবতে কন্যা যখন শেষবার ঘড়িতে তাকিয়েছিল তখন
১২.৩০ মিনিট।
চোখের সামনে ভেসে ওঠে বন্ধুকে দেওয়া হলুদ খাম টি স্বজতনে রাখা বুক পকেট টি।যেখান থেকে লোভনীয় ভাবে উকি দিয়ে ছিল হলুদ খামের সৌন্দর্য।
কন্যা বন্ধুর উপহারের কলম বক্সের দিকে একবার তাকায়।কোন দিন এ কলমে সে লিখবে না।স্বজতনে মন মিউজিয়ামে রেখে দেবে ওমর স্মৃতি হিসেবে।
কত শৈল্পিক মনের অধিকারি কন্যার বন্ধুটি।
চাঁদরটা গায়ে ভালবাবে জড়িয়ে নেয়।
জানালার দিকে তাকাতে কেমন যেন একটা ছায়া ছায়া দেখতে পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
হঠাৎ..
ধাপ ধাপ শব্দে কাচের পাল্লা গুলো বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ ও চলে যায়।অন্ধকার ঘর।গা ছম ছমে ব্যাপার।
চাঁদরের নীচ থেকে উকি দিতেই আবারো জানালা খুলে যায়।
টেবিলে রাখা বন্ধুর কলম বক্সটি আপনা আপনি টেবিল থেকে অনেক উপরে উঠে যায়। যা থেকে এক প্রকার অলৌকিক আলো ছড়তে থাকে।কন্যা হাত বারায় ধরতে।
কলম বক্স দূরে চলে যায়।
বিছানা ছেরে আরেকটু আগায়।
এবার কলম বক্সটি আরেকটু দূরে সরে যায়।
অদ্ভূত ভাবে কলম বক্সটিতে দুটো পাখা গজিয়ে যায়।উড়ে জানালা দিয়ে বাইরে চলে যেতে নিলে কন্যা প্রান পনে টেনে ধরে একটি পাখা।
জানালার বাইরের দিকে টানতে থাকে কলম বক্স আর ভেতরের দিকে টানতে থাকে কন্যা।
এ যেন এক তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ!
ঘুম ভেঙে দেখে চাঁদরের এক পাশ ধরে টানছে কন্যার বোন,অন্য পাশ টানছে কন্যা।
ঝাপসা চোখে জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে ঠি দারিয়ে আছে কন্যার বন্ধু...
সকালের বাতাসে ফিল ফিলিয়ে ঊরছে তার চুল গুলো।ঠোটের কোনে মিষ্টি হাসি,
চোখ ভরা স্নেহ মায়া।
ফোন এলার্ম বেজে ঊঠতেই দেখে কোথাও
কেউ নেই।
বিছানায় ঘুমে বিভোর তার বোন।
মাথার কাছে পড়ে আছে ডাইরি কলম,যেখানে কন্যা লিখছিল "স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা " ছোট গল্প।
আরমোর ভেঙে বিছানা ছেরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে উদাস দৃষ্টি তে বাইরে তাকিয়ে কন্যা।
হাতের উপর অলতো স্পর্শে পাশে তাকিয়ে দেখে তার বন্ধু হেসে বলছে...
‘আমি এসেছি কন্যা’।
সত্যিই কি এসেছে কন্যার বন্ধু?
নাকি সবি "স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা......?



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট