একুশের পদাবলি



সালামের চোখ
আহাদ আদনান

স্বপ্নের নাকি কোন রঙ নেই,
তবে সালামের চোখ দেখেছিল কোন সে রাঙা সূর্য,
সেই যে আগুন জ্বলেছিল রাজপথে,
সেই যে আগুন জ্বলেছিল বাংলায়,
সেই যে আগুন জ্বলেছিল হৃদয়ে হৃদয়ে,
সেই যে আগুন জ্বলেছিল রক্তাক্ত একুশে?
ঠিক আগের রাতে, বায়ান্নোর ফেব্রুয়ারির কুড়ি,
সালামের চোখ, বুঁজে ছিল,
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তার, বুঝে ছিল?
সুবাস পেয়েছিল পায়ের তলাতে লুটিয়ে পড়া
সহস্র গোলাপ রাশির?
কাশবন, কোন এক স্বর্গোদ্যান,
মাথার উপর মখমলের মত ভেসে যাওয়া মেঘ,
মেঘেদের ফাঁকে জ্বলজ্বলে তারকারাশি, অ আ ক খ গ?
কোন এক অপ্সরী কানে সঁপে দিয়েছিল বিজয়ের মন্ত্র,
আর দেবদূত হাতে নিয়ে পেয়ালা ভরা অমৃত সুধা?
সালাম কিংবা, সালামদের চোখ, কী করে দেখে
যুগে যুগে নতুন লাল সূর্যোদয়,
সোনালি ভবিষ্যৎ এই ভূখ-ের,
সুফলা জমিতে তার পুঁতে দেয় বীজমন্ত্র?
সেই মহীরুহের ছায়ায় তোমাদের
আমরা কুর্নিশ জানাই। 


জননীর অভিমান
এম এ রহমান

ভাঁজপড়া চামড়ার আড়ালে ছলছল চোঁখ দু’টি
অঝোর ধারায় ঝরছে অশ্রু
তুমি বললে, ‘যাও বাবা, সাবধানে থেকো’
মিছা হাসি দিয়ে বললাম, কাঁদছো কেন মা?
আবার আসবো, কিছুদিন পরে।

মাগো!
যখন তোমার চার কোটি সন্তান ছিল
যখন বৃটিশ বেনিয়াদের অত্যাচারে
ক্ষত বিক্ষত ছিল তোমার সারা দেহ
সেদিনও তুমি এতটা কাঁদো নি!

যখন তুমি সাত কোটি সন্তানের দ্বায়ভার নিয়েছিলে
যখন তোমার অম্বরে লাথি মেরে সম্ভ্রম হানি করেছিল
হিং¯্র হায়েনার দলে
তখনও এতো অভিমান ছিল না!

অথচ, আজ তুমি ষোল কোটি সন্তানের জননী
আনাচে কানাচে শিক্ষায়তন
ঘরে ঘরে উচ্চ ডিগ্রী।
আজ কেন তোমার চোঁখে এত জল
তাহলে কি তোমার সন্তানেরা তোমায়
ধারণ করতে পারে নি?

তোমার শেখানো আদর্শলিপিতে যাদের
বিদ্যা শিক্ষার হাতেখড়ি
বুদ্ধি বিকাশের ভিত্তি
যে সিঁড়ির উপর ভর করে তারা উচ্চ স্তরে পৌঁছেছে
তাকে কীভাবে ভুলে গেছে ওরা?

এই ক্ষোভ, এই অভিমানে  তুমি কি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে?
না না তা হতেই পারে না
অভিমান তো প্রিয়জনের উপরেই করে
শত্রুর উপরে নয়!

তুমি চেয়ে দ্যাখো
তোমার আদর্শ লিপি থেকে কুড়িয়ে নেয়া শব্দ
আজ মহাকাশে উড়ছে
সাগর তলে চড়ছে
হানাদারের বংশেরা আজ চেয়ে চেয়ে দেখছে
আর মাথাখুটে মরছে।

তুমি লাখো শহীদের রক্তে মোড়ানো
এক পবিত্র মহাসত্তা
এ সম্পদ খোয়া যেতে পারে না।

শ্লোগান
খায়রুল আলম রাজু

বেদনাগুলো আজ ছুটি চায়-
শেকল ভেঙ্গে ঘুরে দাঁড়ায়; স্বাধীনতা, স্বাধীনতা,
মুক্তি দাও, মুক্তি দাও, শ্লোগানে...
আর আমি...  নিরুপায়,
ওদের দাবির কাছে, চাওয়ার কাছে!

সময়ের নায়ে, তারাও আজ বীর;
সময়ের আলোকিত পালোয়ান!
শুধু আমি’ই  ভীতু; প্রতিবাদ করিনা
অবহেলা, লাঞ্চনা, আঘাত, নীরবতা,
হাহাকার, করুণ চিৎকার; তাইতো সঙ্গী আমার !

তবুও, আমার কোনো চাওয়া নেই!
নেই কোনো মুক্তির শ্লোগান...
তবুও আমি’ই দোষী! আমি’ই ছলনার নেতা !

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট