ক্ষুৎপীড়িত






ক্ষুৎপীড়িত
অরূপ রতন

নবীউল্লার বউ আবারো পোয়াতি। আপাদমস্তক খিটখিটে গড়নের এই মহিলা ইতোমধ্যে পাঁচটি বিয়ান দিয়েছে। চার মেয়ের পর শেষ বারে পুত্র সন্তানের মুখ দেখেছে তারা। এই বার কিসের আশায় নবীউল্লা আবার সন্তান নিল তার ব্যাখ্যা কেউ করতে পারছে না। আগে সবাই বলত,‘নবীউল্লার ভাগ্যই খারাপ। একটি পুত্র সন্তানের জন্য বেচারীর ঘরে এখন চার চারটি কন্যা।’ যাইহোক, চার কন্যার পর যখন পঞ্চম সন্তান হিসাবে তার ঘরে পুত্র সন্তানের জন্ম হলো তখন সবাই রসিকতা করে বলেছিল,‘বেচারী নবীউল্লা দৌড়ও জানে। ছাওয়াল একখান জন্ম দিয়্যাই ছাড়ল।’ নবীউল্লা তাদের এই রসিকতায় কর্ণপাত করেনি। যখন যে-ই এই বিষয়ে কথা বলেছে তখনই নবীউল্লা তার চোখের দিকে তাকিয়ে হালকা একটু হাসি দিয়ে সেখান থেকে সরে পড়েছে। কিন্তু সবাই অবাক হয়েছে এইটা জেনে যে, নবীউল্লার বউ ষষ্ঠ বারের জন্য আবারো পোয়াতি। পাড়ার কেউ কেউ নবীউল্লাকে কাছে ডেকে বলে, ‘নবীউল্লা, পাগলা ঘণ্টাডা এই বার থামাও। সংসারডা তো অনেক বড় বানাই ফালাইলা।’ নবীউল্লা কিছু বলে না। শুধু সুযোগ খোঁজে সেখান থেকে সরে পড়ার। অগত্যা সে বলে, ‘আমি কী করবো? আল্লাই দিছে।’ তখন কেউ কেউ রসিকতা করে বলে,‘আল্লায় তো ম্যাগ-বিষ্টিও দেয়। তখন ছাতি-টাতিও তো ধরা যায়, নাকি?’ নবীউল্লা কিছু বুঝে কিনা তা বলা মুশকিল। কেবল ভ্রু কোঁচলে চোখের দিকে একপলক তাকিয়ে সামনে দ্রত পা বাড়ায়। নবীউল্লার এমন বাচনভঙ্গী দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে সবাই হাসতে থাকে। নবীউল্লার চেহারায় তেজদীপ্ত কোন ভাব নেই। খুব যে স্বাস্থ্যবান মনে হয় তাও নয়। বয়স বড়জোড় বিয়াল্লিশ  পেরিয়েছে। এই বিয়াল্লিশ বছর বয়সে একজন মানুষকে যতটা স্বাভাবিক মনে হয় নবীউল্লাকে তেমন মনে হয় না। বেশ বুড়ো মনে হয় তাকে। শরীরের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে। মুখে একগোছা ছাগল মার্কা দাঁড়ি। এই একগোছা কাঁচাপাকা ছাগল দাঁড়িই তাকে বুড়ো বানিয়ে রেখেছে। ইচ্ছে করলে সে দাঁড়ি কামাতেও পারে না। মসজিদের ঈমাম সাহেব তাকে দাঁড়ি রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। ঈমাম সাহেব বলেছেন, ‘দাঁড়ি রাখা নবীজীর সুন্নত। যে দাঁড়ি রাখবে সে নবীর সুন্নত আদায় করবে।’ নবীউল্লা বেশ ধর্মভীরু মানুষ। তাই সে নবীর সুন্নত আদায় করার জন্য দাঁড়ি রেখেছে। পড়াশুনা কিছুই জানে না। তবে ইসলামী আদর্শে বেশ অনুপ্রাণিত। ঈমাম সাহেবের সহায়তায় কিছু হাদিস কালামও শিখেছে সে। আশে পাশে কোথাও ইসলামী জালসা কিম্বা ওয়াজ মাহফিল হলে নবীউল্লা বাড়ি থাকে না। ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেয়। বেশ ভক্তি সহকারে ওলামায়ে একরামগণের বয়ান শোনে।


কোন কাজ স্থায়ী ভাবে করে না নবীউল্লা। কখনও সে ক্ষেত খামারে কাজ করে আবার কখনও তাকে মাটি কাঁটার কাজে দেখা যায়। তবে নবীউল্লা স্থায়ী ভাবে যে কাজ করে তা হলো সপ্তাহ শেষে জুম্মাবারে মসজিদের থলে নিয়ে গ্রামের ঘরে ঘরে ঘুরে মুষ্টি তোলা। এ কাজে বেশ দক্ষ সে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে উচ্চ কণ্ঠে হাদিস কালামের আধভাঙ্গা বয়ান দিয়ে সে সহজেই মা-বোনদের মনকে নরম করে ফ্যালে। ফলে মসজিদের জন্য ভালোই আদায় হয়। মসজিদ কমিটি তাই কোন কারণেই নবীউল্লাকে হাতছাড়া করতে চায় না। মাঝে মাঝে মসজিদের মুয়াজ্জীন সাহেব না থাকলে অথবা মুয়াজ্জীন সাহেবের অনুমতি বলে তার অনুপস্থিতিতে আযান দেওয়ার মতো গুরু দায়িত্বও নবীউল্লা পালন করে থাকে। সব মিলিয়ে নবীউল্লা মসজিদের জন্য অনেক শ্রম দেয়। এখান থেকে কিছু রোজগারও হয় তার। এক সপ্তাহে যত টাকার মুষ্টি সে আদায় করে তার থেকে শতকরা ২০ টাকা সে পায়। এটি নবীউল্লার আয়েরও একটা উৎস বটে। তাই খুব ভক্তি, শ্রদ্ধা নিয়েই সে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকে। নিজের দায়বন্ধন থেকেই সে তার এই দায়িত্ব এড়াতে পারে না। গ্রামের মানুষের কাছে সে হাফ পাগল একজন মানুষ। রাস্তায় বের হলে কেউ না কেউ তাকে খোঁচাবেই। অত্যন্ত নিরীহ, নাদান কিম্বা সদাশয় নির্বোধ কোন মানুষও যদি তাকে একনজর দ্যাখে তবে তার মধ্যেও এক পশলা হাসির উদ্বেগ ঘটে। তাকে নিয়ে মশকরা করে। কেউ কেউ বলে, ‘নবীউল্লা একটা গজল গাওতো।’ পেছন থেকে কেউ বলে ‘নবীউল্লার এখন হাতে সময় নেই। তাকে মাগরিবের আযান দিতে হবে।’ নবীউল্লা কথা না বলে সেখান থেকে চলে যেতে লাগলে আরেক পক্ষ আরেক দফা বলে উঠে, ‘ভাই নবীউল্লা, আযানের এখনও অনেক সময় বাকি। এর মধ্যে তুমি আমাদের একটু ওয়াজ করে শোনাও। তুমি খুব ভালো ওয়াজ করো। কণ্ঠটাও খুব সুন্দর। কতদিন তোমার ওয়াজ শুনি ন্যা।’ নবীউল্লা একটু প্রশংসাতেই ফুলে ফেঁপে উঠে। তারপর একটু লাজুক স্বরে বলে ‘আমি আর কইটুকু পারি। তুমরা খালি আমার কতা কও। ক্যাঁ, মাদ্রাসার তমিজ হুজুরও তো ভালোই ওয়াজ করতে পারে। তার কতা তো একবারও কওনা।’
‘তুমি কনে আর তমিজ হুজুর কনে। তুমার সামনে তার দাঁড়াতিই সাহস হবি ন্যা।’
‘তুমরা আসলে পাগল হয়্যা গ্যাছাও। উনি অনেক জানলেওয়ালা লোক। কামেল মানুষ।’
‘তুমার চাইতে বেশী জাইনব্যার পারে এইড্যা আমরা মাইনব্যারই পাইরল্যাম না।’
নবীউল্লার মুখে মৃদু হাসি ফোটে। সে যে আহলাদে গদোগদো তা আর বলতে হয় না। সে চাঁপা কণ্ঠে বলল ‘তুমরা আসলে একটু বেশি বেশি কও।’
‘শোনো নবীউল্লা, জিডা সত্যি কথা সিডা আমরা কবোই। যাইহোক, আমরা এতোগুলান মানুষ তুমাক অনুরোধ করতিছি, একটা ওয়াজ তুমাক করা লাগবিই।’
অগত্যা, নবীউল্লা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ওয়াজ শুরু করে। আর চায়ের স্টলে বসে শ্রোতা সাধারণ মুচকি মুচকি হাসে।



সকাল থেকেই শেফালী মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে ঘ্যান ঘ্যান করছে। মা যত বকছে তার ঘ্যান ঘ্যান তত বাড়ছে। শেফালীর এমন ঘ্যান ঘ্যান কান্নার শব্দ শুনলে মা মরিয়ম বিবি’র শরীরের মধ্যে রি রি করে উঠে। সহ্য হয় না তার। শেফালী এবার পনেরতে পড়েছে। বড় বোন আমেনার বয়স পনের না হতেই বাবা নবীউল্লা তাকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দেয়। ছেলে ভালো। গঞ্জের বাজারে একটা মুদিখানা দোকান আছে। জমিজিরেতও কিছু আছে। বলা যায়, আমেনা ভালো ঘর-বর পেয়েছে। তেমন যৌতুক দিতে হয় নি। এর প্রধান কারণ হলো, আমেনা এইট পর্যন্ত পড়াশুনা জানত। আরবি শিক্ষাও ছিল তার দখলে। নামাজ কালামে বেশ পারদর্শী। তাছাড়া আর যে বিষয়টি বেশী সাহায্য করেছে তাহলো, আমেনার উঠতি বয়স। বেশ আকর্ষণীয় ছিল তার শরীরের ভাঁজ। রঙটাও ছিল দুধে আলতা। কিন্তু শেফালী সেদিক থেকে পিছিয়ে। দেখতে কিছুটা রোগা। তবে এই পনের বছর বয়সেও শরীরের নিটোল ভাঁজগুলো স্পষ্ট। রঙটা তেমন আকর্ষণীয় না হলেও সহসা চোখ সরিয়ে নেওয়া দুস্কর।
মা মরিয়ম বিবি’র শরীর এখন ভারী। হাঁটা চলাতে সাবধান হতে হবে। তাই ভারী কাজ করা বন্ধ করতে হবে এখনই। মরিয়ম বিবি হোসেন হাজীর বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। এতো বড় সংসার তো আর এমনি এমনি চলে না। তার পেট যত ফুলে উঠছে, তার কাজের পরিধিও তত কমে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে মাথায় চক্কর দিয়ে ওঠে। শরীরের মধ্যে কেমন যেন একটা আলসেমি ভাব উপলব্ধি করে। তাই খালাস না হওয়া পর্যন্ত শেফালী হোসেন হাজীর বাড়িতে কাজ করুক এইটাই চাইছে মরিয়ম বিবি। কিন্তু শেফালীর চোখে অন্য রকম স্বপ্ন। সে এবার নবম শ্রেণীতে পড়ছে। হোসেন হাজীর বাড়িতে কাজ করতে গেলে শেফালীর আর স্কুলে যাওয়া হবে না। কিন্তু শেফালী স্কুলে যেতে চায়। হোসেন হাজীর বাড়িতে কাজ করতে চায় না। তাছাড়া হোসেন হাজী মানুষটাও তেমন সুবিধার না। তার চোখে দোষ আছে। মেয়ে মানুষ দেখলেই যেন শরীরের মধ্যে কামভাব জেগে উঠে। ঘরে তিন তিনটি বউ। প্রথম পক্ষের বউ এর কোন ছেলেপুলে হয়নি তাই হোসেন হাজী দুই বছরের মাথায় দুইটি বিয়ে করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন বউ এর ঘরে সন্তান হয়নি। হোসেন হাজী আফসোস করে বলে,‘বড়ই বদনসিব আমার।’ মেয়ে মানুষ বলতেই দুর্বল এই হোসেন হাজীকে কেউ কেউ আড়ালে আবডালে লুচ্চা হাজী বলেও ডাকে।
এশার নামাজ আদায় করে নবীউল্লা বাড়ি ফিরে আসে। দরজার সামনে আসতেই সে শেফালীর কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। শেফালী দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। নবীউল্লা পেছন দিক থেকে আলতো করে শেফালীর মাথায় হাত রেখে বলল, ‘ওমা কান্দো ক্যাঁ’? শেফালী কোন উত্তর দেয় না। তার কান্নার আওয়াজ কিছুটা কমেছে। মরিয়ম বিবি বিছানা থেকে উঠে হারিকেনের সোলতেটা একটু বাড়িয়ে দিল। নবীউল্লা তখন মরিয়ম বিবি’র দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার বাবজান কুনটি? আমার সাত রাজার ধন, মানিক।’
 মরিয়ম বিবি বিরক্ত হয়ে বলল, ‘এতো রাইতে আর আহলাদ করা লাগবি ন্যা। ভাত খায়্যা ল্যাও।’
‘তুমি কী কও মরিয়ম বিবি। সারাডা দিন গ্যাছে বাজানেক একবারও কোলে লেইনি।’
‘আমাগির চিন্তা যদিল তুমার থাইকতো তালি পরে আর টো-টো কোম্পানির মতো সারা দিন ঘুইর‌্যা বেড়াইতে না।’
‘ইডা তুমি কিরাম কতা কও। আমিতো সারাদিন মসজিদেই ছিলাম।’
‘সারাদিন মসজিদে থাকলি কী আমাগির প্যাটে ভাত আসবি। চাইল-ডাইল কিছু কিনে দেওয়া লাগবিন্যা তুমার।’
‘শুনো মরিয়ম বিবি, আল্লার ধ্যান জ্ঞানে থাকলি পড়ে আল্লাই কোন না কোন ব্যবস্থা কর‌্যা দেয়।’
‘আল্লা মানুষিক চিষ্টাও করব্যার কইছে। জুব্বা টুপি পইড়্যা খালি মসজিদে বইস্যা থাকলি অয় না।’
নবীউল্লা কোন উত্তর দিল না। মাথার টুপি আর শরীরে জড়িয়ে থাকা জুব্বা খুলে মেঝেতে খেতে বসল। মা-বাবার সোরগোলে ইতোমধ্যে জেগে গেছে আরো দুই মেয়ে কুলসুম আর জোছনা। ছেলে মানিকও দু’বার ওয়া শব্দ করে কেঁদে উঠে আবার শান্ত হয়ে গেল। মরিয়ম বিবি ছেলের বুকে তেল বসিয়ে দিচ্ছে। বেশ ঠান্ডায় ধুঁকছে ছেলেটা। শেফালী তখনও দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল। কান্নার কোন শব্দ না হলেও সে দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে, সে আর হোসেন হাজীর বাড়িতে কাজে যাবে না। মরিয়ম বিবি এতক্ষণ ব্যাপারটা ভুলে ছিল। দরজার দিকে চোখ যেতেই সে আবার খেঁকিয়ে উঠল, ‘এখনো দাঁড়িয়েই আছিস। ভাত দিচ্ছি খায়্যা শুয়ে পড়।’
‘খাব না।’ শেফালীর অভিমানী প্রতিক্রিয়া।’
‘খাবু না তালি দাঁড়ায়ে আছিস ক্যাঁ?’
শেফালী নিশ্চুপ। শুধু মাথা নিচু করে মায়ের কথা শুনছে। মরিয়ম কোন উত্তর না পেয়ে আবারো খেঁকিয়ে উঠল। শেফালী তখন ভয়ে ভয়ে আবার বলে,‘আমি হাজীর বাড়িত কামে যাব না। আমি স্কুলে যাবো।’
মরিয়ম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। হিংস্র ভঙ্গিতে শেফালীর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে বলল, ‘মাগি, মুখে মুখে খালি তক্ক করে, সুংসারের ভাব বুঝে না।’
নবীউল্লা এই মুহুর্তে খাওয়া ছেড়ে উঠে। মেয়েকে মায়ের গ্রাস থেকে উদ্ধার করে মরিয়ম বিবি’র উদ্দেশ্যে বলে,‘ছোট মানুষ, এতো মারলি পড়ে খাইত্যা হয়্যা যাবি। মিষ্টি কতা দিয়্যা কাজ করাতি হয়।’ তারপর মেয়ের পিঠে, মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, ‘যা মা খায়্যাদায়্যা শুয়ে পড়।’



শেফালী কোন কথা না বলে পাশের ছাপড়ায় ঢুকে পড়ল। তারপর ছোট দুই বোন কুলসুম আর জোছনার পাশে শুয়ে পড়ল।
মরিয়ম বিবি’র খাওয়াতে অরুচি ধরেছে। আগে তার কোনদিন এমন হতো না। এবারই তার এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কুলসুম অথবা জোছনা যখন তার পেটে ছিল তখনও সে দিব্যি সবকিছু খেতে পারত কোন বাছ-বিচার করত না। এমন কী শেষ বারে মানিকের জন্মের আগেও মরিয়ম বিবি‘র কোন ধরনের সমস্যা ধরা পড়েনি। কেবল এবারই তার কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে। যাই-ই মুখে তোলে কেমন যেন উটকো গন্ধ তার নাকে আসে। সে কিছুই খেতে পারছে না।
বিছানায় শুয়ে শেফালী খুক খুক করে কাঁদছে। এপাশ ওপাশ করছে। কিছুক্ষণ পরপর সে বিছানায় উঠে বসছে। আঁচল দিয়ে চোখ মুছসে। সে ঘুমাতে পারছে না। সকাল হলেই তাকে হোসেন হাজীর বাড়িতে কাজে যেতে হবে। কিন্তু সে কাজে যেতে চায় না। হোসেন হাজীর বাড়িতে কাজে গেলে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। ভাবতেই শেফালীর বুকের মধ্যে হাহাকার দিয়ে উঠে। কুলসুমের বয়স বারতে পড়েছে। সংসারের হাভভাব বুঝে না। বড় বোন আমেনা, শেফালী আর কুলসুমকে কোলের কাছে রেখে ঘুম পাড়াতো আমেনার বিয়ের পর শেফালী এখন সেই দায়িত্ব পালন করছে। প্রতি রাতে সে ছোট দুই বোনকে কোলের কাছে নিয়ে শুয়ে থাকে। বড় ভালোবাসে শেফালী ওদের। শেফালী ঘুমাচ্ছে না। কুলসুম ব্যাপারটা অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে। সে চোখ মেলে দেখল শেফালী বিছানায় বসে আছে। তার চোখে পানি। কুলসুম বোনের পিঠে হাত দিয়ে বলল, ‘ঘুমাইবানা বু?’
শেফালী ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, ‘ঘুম আসতিছে না।’
কুলসুম তখন বিছানা থেকে উঠে বসে। তারপর শেফালীর কাঁধ স্পর্শ করে বলে, ‘তুমি হাজীর বাড়িত কামে যাইতে চাওনা, তাই কাঁন্দো?’
‘হুঁ, লোকটা ভালা না।’ শেফালী বলে।
‘ক্যান? মাথায় টুপি পইড়্যা থাকে। নামাজ পড়ে।’
‘টুপি পইড়্যা থাকলেও ভালা না। আমাক খারাপ খারাপ কতা কয়।’
কুলসুম ফিক করে হেসে বলে, ‘কী খারাপ কথা বু?’
শেফালী ধমক দিয়ে বলে, ‘তোর শুনতে হবি ন্যা। এখন ঘুমায়ে পড়। রাইত অনেক হইছে।’
বড়বোনের ধমকে কুলসুম চুপ করে। তারপর বাধ্য মেয়ের মতো নিজ বিছানায় শুয়ে পড়ে। সকাল বেলা মরিয়ম বিবি শেফালী শেফালী বলে ডাকতে ডাকতে দরজায় গিয়ে ধাক্কা দেয়। আশ্চর্য! ঘরে শেফালী নেই। মরিয়ম বিবি বেশ অস্থির। ফযরের আযানের পর পরই নবীউল্লা মসজিদে রওনা হয়েছে। সে এ বিষয়ে কিছুই জানে না। কয়েকদিন পর জানা গেল, শেফালী বাড়ি থেকে পালিয়ে গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি নিয়েছে। নবীউল্লা খবরটা শোনার পর কিছুক্ষণ ধামা ধরে থাকে। তারপর চেঁচিয়ে বলে, ‘গার্মেন্টস কারখানায় যে মাইয়া কাম করে সেই মাইয়া হইল বদ মাইয়া। বদ মাইয়ার জায়গা আমার বাড়িত হবি ন্যা। ঐ মাইয়ার আমার বাড়িতে উঠা নিষেধ।’ শেফালী এরপর আর বাড়ি ফিরে আসেনি।
মরিয়ম বিবি’র সাত মাস চলছে। ভারী কাজ কিছুই করতে পারছে না। আগে এমন হয়নি। এই বয়সে এসে সে প্রথম পোয়াতি হওয়ার মত যন্ত্রণা ভোগ করছে। অথচ সন্তান জন্ম দেওয়া তার কাছে ডালভাত ব্যাপার। শেফালীর যাওয়া মাস দেড়েক হয়েছে। ও থাকলে অবশ্য এমন যন্ত্রণা হতো না। বাড়ির কাজগুলো ঐই সামলে নিত। আমেনাকে আনা যেতে পারে। অবশ্য ওর শ্বশুর বেশ জটিল। আসতে নাও দিতে পারে। সেক্ষেত্রে জামাইটা বলা যায় মাটির মানুষ, সহজ সরল। বেশ যতœ আত্তির করে। আমেনার কপাল ভালো। এমন বর পেয়েছে। মরিয়ম বিবি হেঁশেল ঘরে বসে পুঁই শাকের ডাল থেকে পাতা আলাদা করছে। পেটটা অস্বাভাবিক হারে ফুলে উঠায় ঠিক মতো বসতে পারছে না। যে কাজই করতে চায় যেন পেটটাই তার আগে দৌড়ায়। মাঝে মাঝে ঘর থেকে কান্নার শব্দ ছুটে আসছে। মরিয়ম বিবি ঘরে চৌকির উপর খুব সাবধানে মানিককে শুয়ে দিয়েছে। দুই পাশে দুটি বালিশ দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। যেন মানিক গড়ে মাটিতে পড়ে না যায়। ছেলের কান্নার গতি বেশ চওড়া হচ্ছে। মরিয়ম বিবি চট করে উঠেও যেতে পারছে না। এই ভারী শরীর নিয়ে চটকরে ওঠাও যায় না। বাড়িতে আর কেউ নেই। কুলসুম গিয়েছে হোসেন হাজীর বাড়ি। জোছনা চৌরাস্তার মোড়ে দাপাদাপি করছে। পাড়ার সব বাদুড়ে ছেলে মেয়ে জড়ো হয়েছে ঐ জায়গায়। ধূলোর মধ্যে লুটোপুটি খাচ্ছে তারা। তাই দেখে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে জোছনা। মাঝে মাঝে সেও তাদের সাথে ধূলো খেলায় অংশ নিচ্ছে। সারা শরীর তার ধূলোয় মাখামাখি।
মরিয়ম বিবি ধীরে ধীরে দরজার কাছে গিয়ে চৌকাঠ ধরে দাঁড়াল। মানিক কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। মরিয়ম বিবি হঠাৎ কিছু একটা শব্দ পেয়ে পেছনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। নবীউল্লা ঘাড় থেকে ব্যাগটা নামিয়ে বারান্দায় রেখে মরিয়ম বিবি’র উদ্দেশ্যে বলল, ‘তুমার রান্ধন কী শ্যাষ হইছে, মরিয়ম বিবি?’
মরিয়ম বিবি কোন উত্তর দেয় না। না শোনার ভান করে আবার হেঁশেল ঘরে গিয়ে বসে। তার এখনও অনেক কাজ পড়ে আছে। নবীউল্লার সাথে ভ্যান ভ্যান করলে হবে না। নবীউল্লা আবার জিজ্ঞেস করল, ‘কতা কউ না ক্যাঁ বউ? খাওন কী হইছে?’ মরিয়ম বিবি বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ঘরেত কী রাইখ্যা গ্যাছাও যে চালি পড়েই খাওন পাওয়া যাবি।’
‘ইডা তুমি কী কও? ঘরেত কিছু নাই সিডা তুমি আমাক সকালে কলিই হত।’
‘তুমাক কয়্যা আর কী হবি। শুক্কুরবার ছাড়া বাড়িত কোনদিন কিছু আনিছ্যাও?’
নবীউল্লা কাচ-মাচু হয়ে বউএর দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিল। সেও জানে তার সারা সপ্তাহের আয় শুক্রবারেই হয়। হাছেন ডাক্তার কাজটা তার কাঁধে গোছিয়ে দেওয়াই দিব্যি চলে যাচ্ছে তার। আগে ক্ষেত-খামারের কাজে কেউ ডাকলে নবীউল্লা মাঝে মধ্যে যেত। এখন সে আর কোথাও যায় না। শুক্রবারে মসজিদের মুষ্টি তুলে যা পায় তাই তার কাছে অনেক। তার ভাষায়, ‘আল্লার রাস্তাই থাইকি যিডা পাওয়া যায় সিডাই লাভ।’ গত শুক্রবারে নবীউল্লার তেমন উপার্জন হয়নি। পাওয়ার মধ্যে সে মসজিদ থেকে সাড়ে তিন কেজি চাউল পেয়েছিল। নগদ কোন কালেকশন হয়নি বিধায় সেও কোন নগদ টাকা পায়নি। তবে আজ নবীউল্লার পকেট গরম। গত সপ্তাহের চেয়ে আজ মুষ্টি ডাবল হয়েছে। নগদ কালেকশনও হয়েছে ভালোই। জুম্মার নামাজ শেষ করে ক্যাশিয়ার সাহেব তাকে ৪০ টাকা নগদ আর ৬ কেজি চাউল দিয়েছে। তাই তার মনে বেশ আনন্দ। চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। একটু গাঢ় হাসির রেখা ঠোঁটে নিয়ে নবীউল্লা বলল, ‘ঐ ব্যাগের ভিতর ৬ কেজি চাউল আছে। আইজক্যা জব্বর কামাইছি, বুইজল্যা বউ। আল্লাই যেদিন দেয় ঝাক্কর মাইরা দেয়। আর শোনো জুম্মাবাদে বাড়িত ফিরার সময় রাস্তা থেইক্যা কিছু মাছ কিনছি, ল্যাও।’
‘তুমাক মাছ আইনব্যার কইলো কিডা? কুঁটার কেউ আছে?’ মরিয়ম বিবি বিরক্ত হয়ে বলল।
‘চ্যাচাইওনা। সস্তা পাইছি তাই আইনল্যাম।’
‘তাই বইল্যা এমন পঁচা পুঁটি আনতে হবি। দ্যাখো কিরম ফুইল্যা উঠছে। মাছের পুটুলি হাতে নিয়ে মরিয়ম বিবি এগিয়ে এলো।’
‘এখন কিন্যা ফালাইছি, কী আর করা যাবি কও।’
আল্লার দুনিয়ায় কী আর মানুষ নাই সবে খালি তুমাকই ঠকায়।’ মরিয়ম বিবি বিরক্ত হয়ে বলল।
নবীউল্লা কথা না বাড়িয়ে ঘরের ভিতর যেতে যেতে বলল, ‘শুনো বউ, কাকু ঠকায়্যা কেউ কোন দিন বড় হইব্যার পারে না।’
ভাঙা চৌকির উপর সাবধানে বসল নবীউল্লা। তার পাশে ওপর হয়ে শুয়ে আছে তার দেড় বছরের পুত্র মানিক। খুব তির্যক ভাবে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে মানিক। নবীউল্লা তখন মুখ থেকে বিশেষ ভঙ্গীতে কিছু অদ্ভুত শব্দ তৈরি করতে লাগল। বাবার তৈরী এমন অদ্ভুদ শব্দ শুনে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে মানিক। নবীউল্লা মানিকের চোখে চোখ রেখে আদুরে গলাই বলল, ‘বাবধন হাসো ক্যাঁ? মজা লাগতিছে। আহারে কত মজা!’ এই বলে সে আবার তার সৃষ্টি কর্ম চালিয়ে যেতে লাগল। ছেলের হাসির শব্দ কানে যেতেই মরিয়ম বিবি হেঁশেল ঘর থেকে বলল, ‘অত হাসায়ো না। প্যাটে ব্যথা উঠব।’
নবীউল্লা ছেলেকে দুই বাহুর মধ্যে নিয়ে তার চোখের দিকে চেয়ে বলল, ‘বাবধন অত হাইসেন না, প্যাটে ব্যথা উঠব। আপনার মায়ে কয়।’ মানিক বাবার ছাগল দাঁড়ি তার হাতের মুঠোয় নিয়ে টান দিল। নবীউল্লা ব্যথায় খেঁকিয়ে উঠল। ঝেংটি দিয়ে দাঁড়ি থেকে হাত ছাড়িয়ে ছেলেকে চৌকির উপর শুইয়ে দিয়ে বলল, ‘বড়ই বেয়াদব ছেলে।’ ততক্ষণে মানিক হিসু দিয়ে নবীউল্লার কাপড় ভিজিয়ে দিল। নবীউল্লা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে মরিয়ম বিবি’র উদ্দেশ্যে বলল, ‘বেয়াদব ছাওয়াল আমার জুব্বাডার বারটা বাজাই দিছে।’ মরিয়ম বিবি স্বামীর উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলল, ‘অহন আবার কোনহানে যাও? খাওন হয়্যা গ্যাছে। ঘরেত যায়্যা বস।’



নবীউল্লা বউ এর কথায় পাত্তা না দিয়ে বের হয়ে এলো। পকেটে কিছু টাকা থাকায় বেশ ফুরফুরে মেজাজ তার। করম আলীর চায়ের দোকানে বসে একটা বনরুটি আর এক কাপ মিকচার এর অর্ডার দিয়ে এক কোণায় গিয়ে বসল সে। দোকানের ভেতর থেকে করম আলী চেঁচিয়ে বলল, ‘আইজ মনে হয় ভালোই কামাইছ্যাও নবীউল্লা।’ নবীউল্লা কিছু বলল না। কেবল ঘাড় ঘুরিয়ে একটু হাসল। করম আলী দোকান ঘর থেকে বের হয়ে নবীউল্লার পাশে ফাঁকা টেবিলে গিয়ে বসল। নবীউল্লা স্তম্ভিত। করম আলীর মতলব সে বুঝতে পারছে না। সে মিকচারের ভেতর বনরুটি ভিজিয়ে মুখে দিল। তখন আরো দু’জন খরিদ্দার করম আলীর দোকানে এলো। নবীউল্লা ভ্রু কোঁচলে সেদিকে তাকাতেই একজন বলে উঠল, ‘আসসালামু আলাইকুম হুজুর সাহেব।’ নবীউল্লা ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্যাখে করম আলী ছাড়া দোকানে আর কেউ নেই। খরিদ্দার দু‘জনকেই চেনে নবীউল্লা। এই গ্রামেরই বাসিন্দা। সে চোখ তুলে তাকিয়ে বলল, ‘তুমরা সালামডা কী আমাক দিল্যা?’
‘তুমি ছাড়া হুজুর আর কিডা আছে কও?’
‘তুমরা খালি আমাক হুজুর কয়্যা অপমান কর।’
‘ইডা তুমি কী কও নবীউল্লা। তমিজ যদি আমপাড়া শিখ্যা হুজুর হইব্যার পারে আর তুমাক হুজুর কয়্যা ডাকলি দোষ কী?’
‘তুমরা কিন্তু আর একখান ভুল কাম করিছ্যাও।’
‘একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে আগন্তুক দু’জন বলল, কী কাম?’
‘খাওয়ার সময় সালাম দিতে হয় না। নবীজীর হুকুম। ইডা কী তুমরা জানো না?’ নবীউল্লা বিজ্ঞের মত বলল।
একজন বলল, ‘সত্যি আমি জাইনত্যাম না।’ আর একজন বলল, ‘আমিও জাইনত্যাম না।’ এবার দু’জন একসাথে বলল, ‘তুমি অনেক কিছু জানো নবীউল্লা। তুমার কাছে আসলি অনেক কিছু শিখা যায়।’ পেছন থেকে করম আলী আর একটু উৎসাহের সাথে নবীউল্লার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তালি পড়ে আইজ থেইক্যা তুমাক হুজুর কলি আপত্তি থাকবিন্যাতো নবীউল্লা?’ নবীউল্লা কিছু বলল না। তার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক।
খরিদ্দার দু’জনের একজন নবীউল্লার পাশে বসে তার হাত ধরে বলল, ‘নবীউল্লা তুমাক একটা অনুরোধ করব, অনুরোধডা কিন্তুক রাখা লাগবিই।’
নবীউল্লা অস্বস্তি নিয়ে বলল, ‘কী?’
‘আগে কও, অনুরোধডা রাইখব্যা।’
‘কও দেহি।’
‘অনেকদিন তোমার গজল শুনি ন্যা। আইজক্যা একটা তুমাক গজল কওয়া লাগবিই। না করব্যানা।’
নবীউল্লা ইতস্তত করে বলল, ‘আইজক্যা না।’ তখন করম আলীসহ সবাই এক সাথে বলে উঠল, ‘না না আইজক্যাই।’
নবীউল্লা অস্বস্তি নিয়ে গজল গায়তে শুরু করল।
           
             ‘কোরান শেখাও ছেলে-মেয়েদের ওহে মুসলমান
             জান কবজের সময় তোমার হবে যে আছান।’

মরিয়ম বিবি খুব অস্থির হয়ে পড়েছে। সূর্য ডুবে গেছে অনেক্ষণ। চারদিকে সন্ধ্যার ঘনঘোর অন্ধকার। নবীউল্লা দুপুরে সেই যে বের হয়েছে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। মরিয়ম বিবি’র অস্থিরতা সেজন্য নয়। কুলসুম সকালে হোসেন হাজীর বাড়ি কাজে গ্যাছে। এখন সন্ধ্যা ঘনঘোর। আছর আযানের পর পরই কুলসুম বাড়ি ফিরে আসে। আজ এখন পর্যন্ত এলো না। কোথায় গেল মেয়েটা? মরিয়ম বিবি খুব ভয় পাচ্ছে। তার শরীরের যে অবস্থা তাতে বাড়ির বেরও হতে পারছে না সে। নবীউল্লাকে খবরটা জানানো দরকার। কিন্তু তারও কোন উপায় নেই। 

ইছামতির চরে বেশ ভীড়। সন্ধ্যা গড়িয়ে যেতেই চাঁদের আলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যায় খুব শকুনের ডাক শোনা যাচ্ছিল। এখন কিছুটা কম। একদল উৎসুক জনতা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে চরের মাঝখানে পড়ে থাকা একটা বিভৎস লাশের দিকে। যার মাথার চুলগুলো লাল ফিতেয় বেণী করা। শরীরে কোন আবরণ নেই। সদ্য বয়ঃসন্ধি প্রাপ্ত এই কিশোরীর চোখ মুখ দেখে তাকে চেনারও উপায় নেই। তার স্তনযুগল বিষাক্ত নখের আঁচড়ে রক্তাক্ত। ক্ষত-বিক্ষত জরায়ুর রক্তস্রোতে ভেসে যাচ্ছে ইছামতি।
লাশের অদূরে পড়ে আছে একটা সোনালী ফ্রেমের চশমা। সবাই ধারণা করছে, চশমাটা হোসেন হাজীর।
নাটোর সদর, নাটোর।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট