পদাবলি : ০১



দুঃখ পুষে পুষে
ফজলুর  রহমান

বারান্দার সিলিং এ ঝুলে থাকা বিকেলগুলো;
আজকাল জলময়ূরীর ডানার রোদ নিয়ে ফেরে না।
নেতিয়ে পড়া দুপুর না ফেরা মানুষের ব্যথায় টাটিয়ে ওঠে,
হু হু করে ঘূর্ণি বাতাস একতারার সুর হয়ে;
নোনা মনের চারিপাশে ঘুরে-ফিরে যায়।
সাগর জলে পালক ভেজানো পরিযায়ী পাখির দল যে বিরহ নিয়ে দূর দেশ ছাড়েÑ
কোনো কোনো মানুষ ঠিক অতটা বিরহ নিয়েই;
অজন্ম কচুরিপানা হয়ে ভরা নদীতে ভাসে।
কিছু কিছু দুঃখ ধানের মতোন ফলনশীল,
একটা ছড়ায় থোকায় থোকায় পুরুষ্ট হয়ে তা ঝুলে থাকে।
দুঃখ পুষে পুষে বয়স্ক সন্ধ্যারা আজকাল শীত তাড়িয়ে আনে;
বন্য রাতগুলোকে জ্যোৎস্না আর শালুকের মতোন স্নিগ্ধ করে তোলে।


নিশ্চুপে প্রস্থান
সাঈদ চৌধুরী

নিশ্চুপ পরিতাপে শহর পুড়ে যায়
হতাশার ডাল নুয়ে ছুঁয়ে যায় রোদেলার মন, দেহ, অক্ষত পরিনয়,,,
একদা এ শহরে শুভ্রতা এসেছিলো
ভেন্টিলেটরের গা বেয়ে পূর্ণিমার আলো ঢুকেছিলো কামুক কোন আঁধার কক্ষে
অথচ বিহ্বল অসময়ে বুড়িয়ে যাওয়া দুটো শরীর তখন আলাদা বিছানায়
একজন অঘুমা
সে ভাবছে প্রিয়তমা নুপুর পায়ে,
কাচের চুড়ি পড়ে
আমার বাহুতে ব্যজ্ঞনা দিতে পারতো!
অন্য বিছানায়
রমনী স্বপ্নে ডুবে বিভোর
তার রাজপূত্র তাকে বিদেশ ঘুড়ায়, পিকাসোর দেশে যায়
নীল নদের পূর্ণিমাকে অবগাহন করায়!
আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামে
আবার শুকোয়
জোনাক আসে, আসে তেলাপোকার অযথা ওড়াওড়ির সময়
চিলগুলো খাবারের তাড়নায় বিলবোর্ডে অঙ্কিত রঙিন ছবিগুলোতে মুখ লাগায়
অথচ কিছু আত্মা  পঁচে বিশ্রী গন্ধে ভরে গেছে লোকালয়!
কেউ দেখেনা
বিধাতা দেখে তবুও চিল শকুন পাঠায় না!
একে একে পোড়ে
বন, বাগান, জলাশয় আর শান্তির নিবাসলয়
বরং এভাবেই চলুক,,,
মাতাল শহরে এলকোহলের আগুনে যখন পুড়বে
তখন বোধ হারাবে পঁচে যাওয়া আত্মাগুলোও!
তখন শহর ছাড়বো
খুঁজে নেবো জেগে থাকা এক অচেনা অপ্সরীকে
পুরো রাত কাটাবো ভোরে এক সঙ্গে শিউলি কুড়োনোর অপেক্ষাতে,,,


অপরিচিতা
মাহদী হাসান
  
আকাশের রং বিহ্বল কোকিলের সিক্ত চোখ যেন
সন্ধ্যে হয়ে এলো ফাগুন জমিনে।
উত্তুঙ্গ হাওয়া মেলেছে ডানা, শোই শাই করে ভাসে হলদে পাতা
ফুলে উঠে বিষণ্ণ সমুদ্র ফানুস;
আরেকটু হলেই পাখা মেলবে সুরভিত সগরপক্ষি।

স্বপ্নে ঢুলুঢুলু চোখে তোমায় দেখি নিঃসঙ্গ হাওয়ার রাতে
তোমায় দেখার চেয়ে অন্ধকার দেখি ঢের
টিম টিম বাতি জ্বলে মস্তিষ্কের ভেতর হাতড়াই-
না, তোমাকে পাইনা-
পাই এক দুরন্ত হরিণ মায়া চোখ নিয়ে চেয়ে আছে।
আমি আরও গহিনে যাই, অরণ্যে যাই, জলোচ্ছ্বাসে যাই। তোমাকে পাইনা।

অতঃপর কোন অলক্ষ্যে কোন পরাবাস্তবতায়
ইকারুস হয়ে বুনোহাঁসের মত মিথ-ফানুসে  
ময়ূর পেখমের বর্ণিল রামধনু আঁচলে
আমায় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছ-
অথচ, আমাদের কখনোই কোন পরিচয় ছিল না।


মরা ফাগুনের বিকেলে
মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ্

নিজের হাতেই জবাই করেছিলো
এক মিথ্যে ছলনার প্রেম,
অথচ এখনো মনে করিয়ে দেয়
এক মরা ফাগুনের বিকেলে
শেষবার দেখা হবার কালে,
কী অবলীলায় মিথ্যে বলার ঢঙে
কাঁদিয়েছিলো অবুঝ প্রেমের জলে
নিঃশেষ করা এক গভীর দুঃখবিলাসে


বসন্ত তোমার জন্য
মোহাম্মদ আবদুর রহমান

ঊসন্ত তোমার জন্য
অপেক্ষা করেছি অনেক দিন ধরে
কখন যে তুমি আসবে?
আঁচল ভরে আনবে অনেক অনেক ফুল
ফুলদানি সাজিয়ে দিবে সেই ফুল দিয়ে
সুগন্ধে ভরে যাবে হৃদয় ভুবন
কন্ঠে ধারণ করবে অনেক পাখিদের গান
মৃদু হাওয়ায় গান গুলি বেজে উঠবে 
আনন্দে আঁকড়ে ধরব তোমাকে
পাগলের মত বলল -আর যেতে দিবনা তোমাকে।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর
তুমি যখন এসেই পড়েছ
তবে আর দেরি কিসের ?
সাজিয়ে দাও ফুলদানি
শুনাও গান 
আনন্দে ভরে উঠুক হৃদয় কানন।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট