পত্রগল্প : প্রিয়তমা : মোস্তফা হায়দার


প্রিয়তমা
মোস্তফা হায়দার

প্রিয়তমা,
শীতে ঝড়েপরা পাতাদের সংসারে তোমাকে একরাশ কুয়াশাময় শুভেচ্ছা। ভালোবাসার করিডোরে আজ জ্যাম পড়ে জাঙ হয়ে আছে হৃদয়ের গতিপথ। তাই শুভেচ্ছার আসতে দেরি হয়নি বলে ওটুকুতে তোমাকে শান্ত থাকতে হবে। বাণী আর বাকবিতন্ডায় ভেতরের উত্তজনাটাই বাড়ে। বাড়ে না ভালোবাসাময় বিশ্বাসের। কিন্তু তুমি আমি সে দিন বটগাছের নীচে বসে কত কথাই না বলে বলে প্রতিশ্রুতির আঁটি বেঁধেছিলাম। বাতাসকে বলেছিলাম গতি মেরুকরণে তোমার চুলের কোন ক্ষতি যেনো না হয়! প্রকৃতিকে বলেছিলাম নিবিড়তর হতে হতে চোখের রেটিনার বৃদ্ধিতে যেনো কোন প্রতিবন্ধকতা না বাঁধে!
আসলে আমি তুমি সে দিন ভেবেছিলাম, পৃথিবীকে বসবাসে যোগ্যময় করে গড়ে তুলবো। যাতে করে প্রজন্মরা আমাদের স্মরণ করতে করতে হারিয়ে না ফেলে আপনার আসল পরিচয়।
মনে আছে প্রিয়তমা! যে দিন প্রথম তোমার সাথে সাক্ষাৎ হয়, সে দিন তুমি বলেছিলে হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসকে ফেরত পাওয়ায় তুমি আলিঙ্গন করবে দুচোখের ইশারার সাথে। অথচ তোমার সব হলো। হলো না আমার বিশ্বাসের মূল্য ফেরত! বিধ্বংসি বাবার হাত থেকে তোমাকে সেফ করতে পারলে তুমি বলেছিলে আমাকে স্বাধীনতা দিবে। শুনিয়েছো  আমাকে আসতে বলে লুকিয়ে থাকা অতীতের নতুন গল্প। আমি সেই গল্পের ভেতর মজে আছি।
প্রিয়তমা, আমার বাগান জ্বলতে জ্বলতে পৃথিবীর কানন দাহ্য হতে চলেছে। কোন এক সকালের ভয়ে আজো আমি দাহ্য হতে রাজি, তবে ছাই হতে চাই না! লাল সবুজের পতাকা গায় মাখাকে তুমি আমি চেতনার চাদর মনে করিনি। তোমার জন্মের চেয়ে আমার বিশ্বাসের পরিধি অনেক বড়। আমার সামিয়ানায় জড়ানো স্বপ্নে গেঁথে রেখেছি বেঁচে থাকার আস্থার কার্ণিশ। ভুল ভেবে ভুল করে চেতনার দ্যৌতনায় নাম জপতে জপতে আসলকে ভুলতে বসেছি। এই দায় শুধু তোমার আমার নয়! কতবার বলেছি কাগজের সাদা পিঠ চেপে, যেভাবেই আপনি আসেন না কেনো আমার পিতার প্রতি অসম্মান যেন না হয়, আমার পিতার কবরস্থান আর লাল সবুজের জায়নামাজ অতীতকালের স্বাক্ষ্য ছিল। অথচ অতিবেশী চর্বন আর অতিবেশী অপব্যবহারের ফলে ঈশ্বরের পর্যায় নিতে নিতে তোমরাই মাকড়সার সন্তানের মতো খেতে চলেছো!
যাপিতজীবন আর ধারণ করা বিশ্বাসের চেয়ে মুখের বুলি কখনোই টিকে না, টিকবে না অনাস্থার জোয়ারের মুখে। মনে থাকা দরকার যে, পিতার রেখে যাওয়া কাজের চেয়ে মিথ্যা স্বপ্নের চাষ না করাটাই হোক আমার প্রজন্মের বিশ্বাসে। কারণ পিতার আত্মজীবনীতে আছে ভবিতব্য স্বপ্নচাষের সব সীমানা। নবমশ্রেণীতে থাকাকালীন হোস্টেলের ছাদ ফুটোর ঠিক করে দেয়া দাবীই প্রমাণ করে বাবা তুমি আমাদের।
প্রিয়তমা, বাবাতো দুজনের। বিশ্বাস আপামর জনতার। কাজ সম্পাদন শুধু দুজনে করতে যাওয়া মানে আমাদের পিতার প্রতি অসম্মান নয় কী? এসো আমাদের ভালোবাসাময় সব স্বপ্নটুকু বীজের মতো রোপন করতে করতে লাল সবুজের পতাকায় গেঁথে যাবো প্রিয় মৃত্তিকার সোঁধাগন্ধ। যে গন্ধ শোঁকে শোঁকে আমরা ছড়িয়ে দেবো আমাদের আগামীর স্বপ্ন, আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যময় পাতাদের সংসার।
এসো বন্ধু আমরা আমাদের কথা বলতে বলতে বিশ্বজোড়া পাঠশালায় ছড়িয়ে দেবো বেঁচে থাকার আস্থা আর সব ইচ্ছে মানবের ভালোবাসা।
প্রিয়তমা তোমার শাড়ীতে ভাঁজ পরা শুরু হয়েছে। শাড়িতে টান পড়া চেতনা ভাগ করতে করতে আজ শাড়ী ভাগাভাগিতে আমাকে এবং বাবাকে কলুষিতের পুস্কনিতে ডুবিয়ে ছাড়তে শুরু করলে! তুমি-আমি বোধের ডানায় চড়া প্রজাপতিই ছিলাম। কিসে যেন সেই বোধ খেয়েই চলেছে! কিছুটা সময় বাকি থাকতে থাকতে যদি আপামর বোধের সঞ্চোদয় করানো যায়, তাহলে সে দিনের বটতলার সংগ্রামের কথা আবার জাগ্রত করবে সবার সবাইকে। পিতার রেখে যাওয়া স্লোগান জীবিত সুরে গান ধরবে -“এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। জয় বাংলা।”

প্রীততায়
তোমার প্রিয়তা...


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট