পদাবলি



পুরস্কার
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

মিথিলা আমাকে বললো, তুমি সাহিত্যে নোবেল পাবে কবে?
আমি বললাম, যেদিন তোমাকে ভুলে যাবো।
মিথিলা আর্তস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো, গুষ্টি কিলাই তোমার পুরস্কারের।
আমি হাসি, টেনে রাখি বুকের বামপাশে-
তুমিই আমার পুরস্কার, তোমাকেই চেয়েছি জনমভর।



আই কনফেস
শাহীন মাহমুদ

বেদুঈন পাখি পালক ফেলে  যায় গন্দম বাগানে
স্বপ্নলোক পানসি  ভিড়ায় তীরে
লখিন্দর বাসর ঘরে ঘুমচোখ
কাঁচ ভাঙ্গা শব্দে কেঁদে উঠে বেহুলা
লীন হয় ভালোবাসা ভুজঙ্গ মায়ায় ।
একদিকে ফুলসিরাতের সাঁকো
অন্যদিকে হাউজে কাউসার
মাঝখানে শিরির ফরহাদ; তৃষ্ণার ধাপাধাপি
দুর থেকে ভেসে আসে ভুতুড়ে বিভ্রাট

আই কনফেস... আই কনফেস ।



সংজ্ঞা
সাঈদ সাহেদুল ইসলাম

দীপ জ্বালিয়ে
যতই খোঁজো আলো,
অন্ধকারে থাকবে পড়ে
মন যদি হয় কালো।

মুখের কথায়
যতই বলো ভালো,
মন পাবে না শুদ্ধ জলে
মন যদি না ঢালো।




বর্ণহীন ভালোবাসার প্রান্তরে
বজলুর রশীদ

বোধের জগতে জন্মেছে
ভুল পথের সিঁড়ি,
মনের জানালা জুড়ে এলোমেলো
বির্বণ পঙক্তিমালা-
অধরা তৃষ্ণায় কেটেছে এ জনম
কবিতা ‘তোমার’ ভাবনায়।

বিরহের বাঁশিতে
পূজালোভী তোমাকে কতভাবে ডেকেছি,
তবুও সাড়া নেই আজন্মধ্যানে মগ্ন।
অনেক সাধ ছিল ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকব
আর তুমি সাড়া দিবে।
তোমাকে ভালোবাসি ভিন্ন শিরোনামে
তোমারই দুর্বোধ গানে।

আর কত নামে ডাকলে
ভাঙবে তোমার ধ্যান-মগ্ন
জানা হবে তোমারই
গতি ও গন্তব্যের শুভ যাত্রাপথ।

আজ বিশ্বাসের জ্যামিতিক অঙ্কে
মাঝে মাঝে মনে হয়-
আবার ফিরে যাই আগের
বর্ণহীন ভালোবাসার প্রান্তরে।



উষ্ণ সন্ধ্যার উপাখ্যান
জাহিদ হোসেন

আনন্দের প্রশাখা দু’হাতে সরিয়ে
দেখে আসি উৎসবে ভালোবাসার ভোর;
আমাদের উঠোনের আকাশে আজ বলাকারা হাসে।
বিকেল আর সন্ধ্যার পার্থক্য না বুঝে
সন্ধ্যার নিমজ্জিত আঁধারে
হারিয়ে যাওয়া উষ্ণতায়-
প্রাণ খোঁজো কুসুম কুসুম ভালোবাসার।

আনন্দ ভালোবাসার প্রাণবন্ত মুহূর্তের দিকে ঝুঁকে
তৃপ্তির সাধ গ্রহণ করো অবিরত।
আর আমি বান্ধবসহ মৌলিক জলসায়
আনন্দ ভাগাভাগি করি।


ঢং
আকিব শিকদার

‘আমার বৈঠা ভেঙে গেছে, তোমার নায়ে আমায় তুলে নাও’
এই কথাটি প্রথম যেদিন বলেছিলাম
অবজ্ঞা আর অবহেলায় বললে তুমি- ‘যাও...’।

চন্দনের গন্ধ পেতে চিতা জ্বালায় এমন বোকা ক’জন আছে...!
শুনলে যে কেউ হাসবে...
তোমার ভ্রুয়ের কোঁচকানো ভাব দেখতে পেলেই
বুঝতে পারি ঘরভাঙা ঝড় আসবে।

যখন তুমি কারণ-অকারণ আমার ওপর ঝাল ঝারো
দুঃখে আমার কান্না আসে, তুমি বলো- ‘ঢং ছাড়ো’।



কবিতার খরা
যাহিদ সুবহান

দীর্ঘশ্বাসটুকু তোমার জন্য নয় নিশ্চয়
হৃদয়ের হাহাকারটুকুও নিজেরই গড়া
সুখগুলো চলে যায় অবকাশে শুধু
দুঃখের নেই কোনো অবসর
ভেবোনা হারিয়ে যাবো যন্ত্রনায়
কতকিছু দেখালে গো শেষ সময়ে
মাটি দেখে দেখে তুমি গল্প বলো
অথচ আমার কবিতার খরা...



যদি ফিরে আসো কখনো
স্বপন শর্মা

তোর থাকা, না-থাকা দিনগুলো নিয়ে বসে আছি,
ছেঁড়া সম্পর্কের প্রতিটি খাঁজে নোনা গন্ধ।
সদ্য জন্ম নেওয়া ছোট্ট নদীতে ভেলা ভাসিয়ে,
স্বেচ্ছায় চলে গেলি যেদিন।
সেই প্রাচীন ঢেউয়ের ¯্রােত আটকে তোকে জানানো হলো না,
আকাশ কোনদিনই আমাদের ছিল না।
তবু দ্যাখ প্রথম পুরুষের মতো ক্যামন দিগন্তে শুয়ে আছে ...

তোর চলে যাওয়ার পর একা সেই চার দেয়ালের মস্ত এজলাস।
সেই নুন হলুদের বেহাগ যাপন;
নিজের চোখ বেঁধে নিজের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা।

স্মৃতিগুলোকে নিয়ে শহরের চারদিকে ছুটি,
ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে খুব গোপনে তাদের শুইয়ে আসি জংধরা বেঞ্চে।

শব্দহীনতার কিছু কথার টুকরো তুলে রাখি;
যদি কখনো ফিরে আসিস কিছু দাবী নিয়ে।


প্রশ্রয় দাও আমায়
এস এম নূরনবী সোহাগ

প্রশ্রয় দাও আমায়; ধনুকের মত নিশানা চাই তোমার বুকে।
তোমার বুকে বিদ্ধ হবো ঋদ্ধ করা সুখে
প্রশ্রয় দাও! আরো প্রশ্রয় দাও আমায়
ঝর্ণার স্নানঘরে খুনসুটি চাই; দ্বৈত সত্তায়
অতর্কিত চুম্বনে লুফে নেবো হিতাহিত বোধ
অনাবৃত চুলে নামবে হিন্দোল।
স্নায়ুবিক বিকার ভেঙ্গে এলিয়ে পরবে প্রেমানুভুতির ¯্রােত!
প্রশ্রয় দাও শিশুর মত আদর খুঁজবো তোমার গভীরে
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরবো তোমার অস্তিত্ব অনুভব করে!


ছুঁয়ে আমায় দাও
লাভলী ইসলাম

কখনো কি মগ্ন হয়ে রাতের শেষ প্রহরে আকাশ তারাদের মেলাতে সেই তারাটি খুঁজো ?
যার আড়ালে ছদ্মবেশে আমি থাকি লুকিয়ে অগোচরে তোমাকে দেখবো বলে
ব্যালকনির প্রণয়ী গ্রিলের ফাঁকে।
ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের গানে গানে রাত জাগা পাখিদের আলিঙ্গনে তুমি দাঁড়িয়ে কি থাকো  ?
আমার প্রতীক্ষায় রাত জেগে কি ভাবো ?
আমার শূন্যতায় বুকের পাঁজরে কি কোন চিনচিনে
ব্যথায় কখনো মুষঢ়ে পড়ো ?
আমি দিন রাত্রি পূর্ণিমায় অমাবস্যায় মেঘলা আকাশেও চেয়ে বসে থাকি
আর তোমাকেই কাছে ডাকি;
তুমি দেখতে কি পাও হৃদয়ের সলতে মন প্রদীপে বুকের গোপন ক্যবিনে আমাকে ছুঁয়ে কি দাও
বলনা গো কখনো কি আমায় খুঁজে পাও ?


ভুলতে কি পারি ?
শারমিন আক্তার

রাতটাও জেগে আছে গল্প শুনবে বলে,
আর আমাদের গল্প বলার রাত
সারসেরা পাখে পোড়ে বাতাসী কুয়াশা
শীতরাত্রির হিমেল তাপাবে সেও।
          বুকখোলা বাতাসে-
       মন পেতে বসে আছ তুমি
এলোকেশে তোমার হাসি খেলে যায়
       ঠিক বুঝতে পাই।
ছাদটাতে জমে আছে তুমি, তুমি জোৎস্না
থাক, জমে থাক নির্বিকার
নিরবধি, শেষ অবধি,
তোমাকে ভুলতে কি পারি?



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট