পদাবলি

 

ধোঁয়া
দাউদুল ইসলাম

ধোঁয়া উঠে
নতুন আগুনে, তুষের স্তুপে, বরফে
শীতের সকালে
রোদ্দুর মাখা চাতালে...
ধোঁয়া উঠে
পুরনো গল্পে,
নতুন কল্পে- সংকল্পে, অলীক আশংকায়...
ধোঁয়া শুরু এবং শেষে
ঝড়ের তোপে, জলোচ্ছ্বাসে!...
ধুলোর প্রলেপে বিবর্ণ ছবি, নীরবে হাসে
আনন্দে, স্মৃতির মহোৎসবে।
ধোঁয়া অনিরুদ্ধ!
পরম আবেগে, রুদ্ধ শোণিতে, প্রভাত ফেরীর মেঘে...
দূর আকাশে
অগ্নি শিখা গায়ে মেখে ধোঁয়া বাঁধে ঘর
ছোঁয়ার দূরত্বে থেকে দ্বিধা পোড়ায় অণিমা অন্তর!
জানে অপেক্ষার প্রহর
বর্ণীল দিন ম্লান করে
ধোঁয়া বেরিয়ে যায় ঈশ্বরের পাণে!...



আঙুল
আজাদ বঙ্গবাসী

প্রিয় শাহাদাত আঙুল- শৈশবে দুধের বোটা ছিলে তুমি আমার
শতবার হোচটের পরও বাবার দিকে দিয়েছিলাম তোমাকে বাড়িয়ে
লাঙল জোয়ালের গল্পে- তুমি একদিন রোপা লাগানো, মার্বেল ছুড়ে মারা
শিখে নিলে কি নিখুঁত কারিগরের মত !
প্রিয় শাহাদাত আঙুল, তুমি কালো বর্ণের
শিল্পি হলে;  ক্লাসগুলো এঁকে দিলে চিন্তার কত্ত বড় জগতে। পুরুষ পরীক্ষায়
একবার লবণের খাদে তোমাকে লাজ্জাবতি দেখেছি।

তুমি এই সেই আঙুল
যাকে দিয়ে এখন আমি নদী নাড়ি
আর আমার মুখস্ত হয়ে যায় ‘কবুল পড়া একটি শরীর’ ।



পাষণ্ড
শ্যামলী বিনতে আমজাদ

কাঁকর মিশেছে চিন্তা চেতনায়, বিবেকে ধরেছে জং,
হেসে খেলে আজ মারছি মানুষ, করছি নানান ঢং।
নির্মলতার মুখোশ পড়ে ভাই, দু’টাকা করি যে দান,
বঞ্চিত শিশু মনে মনে ভাবে- আহা, কী মহীয়ান !
মানি না নাকো তার আদর্শ আর ঐক্যে ঘেরা তান,
পাষ- মোরা ভুলে যেতে চাই, মার্চের সেরা গান।



অভিপ্রায়
লুৎফুন নাহার লোপা

বেগতিক ঝড়ের মত ছাড়িয়ে যাচ্ছে দিন,
আমার ঘরের পাশে কাঁঠাল গাছের ছায়া
পুরোনো ভালোবাসা ছেড়ে দূরে তপ্ত রশ্মিতে,
আদরে জমানো মৌচাক কেটে নিচ্ছে অন্য কেউ,
অথচ তুমি চাইছো সুখী হতে -
ঝি ঝিঁ পোকারা দেশছাড়া, পালানোর বাধকতা,
থেমে গেছে সন্ধ্যার অহেতুক কান্না, উচ্চস্বর।
অরণ্য চিরে চিরে ঢুকে যাচ্ছে যে মানুষেরা
তারাই এখন নির্ভিক, শ্বাস নিতে ব্যস্ত।
শত বছরের রাজত্ব হারিয়ে উইপোকা
প্রেম খুঁজে খুঁজে উঠে যায় প্রসিদ্ধ দালানে,
অথচ তুমি চাইছো সুখী হতে !



আত্মজীবনী
দেলোয়ার হোসাইন

অভিজ্ঞতার পান্ডুলিপি যতই দীর্ঘ
হোক না কেন, মন খারাপের ভয়ে
যা বলতে পারিনি তাতেই লুকিয়ে
আছে আত্মজীবনীর বিভ্রান্তি!

আমার মন কারাগারের কয়েদি
সে জানে- ভিতরে নৈঃশব্দ্যতা...


শীতল জোছনার অজ্ঞাত ছন্দোচ্ছল ঢেউ-০৩
ইউসুফ কবিয়াল

নিয়মের করাতে কাঁটতে পারো মনের শত খেদ, নিরহ বুক কিলিয়ে ভরসা জাগাও বুকে
নীড়ে জোনাকির মতো মিটিমিটিয়ে জ¦লে ওঠবে হারিকেন
আনন্দাবেগে লজ্জাবতীর পাতাছোঁয়া চোখে চুমু এঁকে দিয়ে যাবে সবুজিয়া আলোর নাচন
হুতুমপেঁচার চেঁচামেচিতে খোঁজে পাবো সেই হারানো জ্ঞান।
যখন মুখোমুখি হবে বিপ্রতীপ চড়–ই- তখন তারাবাজি জ¦লে ওঠবে আকাশের উঠোনে
পিপিলিকার ঠোঁটে বেজে ওঠবে সঞ্চায়িত যাতনার গান
ঝিরিঝিরি হাওয়ার ছোঁয়ায়- যখন মনে জাগাবে শিহরণ তখন তুমি পুষ্পাসনে বসে
মেহেদিরাঙা হাতে লজ্জানত মুখে পুড়ে দিবে সতেজ পান।
তুমি পোস্টকার্ডে হৃদয়ের গহীনের শব্দটি লিখে পাঠালে না, পাঠালে না কোন সাংকেতিক শব্দ
তুমিহীনা ল্যাম্পপোস্টে ঝুলে আছে কুয়াশায় আহত এ চাঁদ
শীত পোড়াচ্ছে শরীর স্বপ্ন পোড়াচ্ছে হৃদয় শুধু কয়লা- অঙ্গার হয়ে জ¦লছে অহর্নিশ
দৃশ্যের বাহিরে অদৃশ্যের ছায়া বাড়াচ্ছে- আপন দুটো হাত
স্বপ্ন যত কাছে টেনে নেয় তুমি ততটা দূরে সরে যাও, ক্রমযোজিত দূরত্ব বাড়তে থাকে
সর্বনাশা চোখের ভাষা পাঠ করে কেঁটেছে কত শত রাত।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট