হেলাল হাফিজ রচিত কবিতা

 


হেলাল হাফিজ রচিত কবিতা 

কবি হেলাল হাফিজ (জন্ম : ৭ অক্টোবর, ১৯৪৮- মৃত্যু : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪)। কবি জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)- এর পরে হেলাল হাফিজ একমাত্র নিভৃতচারী কবি যিনি অতি অল্প লিখেও তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। হেলাল হাফিজ মূলত জাতকবি। 


যাতায়াত


কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।

কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না

রাত কাটে তো ভোর দেখি না,

কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না; কেউ জানেনা।


নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম

পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক

দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,

কেউ বলেনি ভালো থেকো, সুখেই থেকো।

যুগল চোখে জলের ভাষায় আসার সময় কেউ বলেনি

মাথার কসম আবার এসো।


জন্মাবধি ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো

শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক,

চৈত্রাগুনে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্থালি

বললো না কেউ তরুণ তাপস এই নে চারু শীতল কলস।

লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম।

ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয়

আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর

শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই দুঃসময়ে এতোটা পথ

একলা এলাম শুশ্রুষাহীন।

কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালোবাসি।


উৎসর্গ 


আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো

আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।

কবিতা কি কেবল শব্দের মেলা, সংগীতের লীলা?

কবিতা কি ছেলেখেলা, অবহেলা রঙিন বেলুন?

কবিতা কি নোটবই, টু-ইন-ওয়ান, অভিজাত মহিলা-সেলুন?

কবিতা তো অবিকল মানুষের মতো

চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক শাসিত,

তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু লাল নীল ক্ষত।

কবিতা তো রূপান্তরিত শিলা, গবেষণাগারে নিয়ে

খুলে দেখো তার সব অণু-পরমাণু জুড়ে

কেবলি জড়িয়ে আছে মানুষের মৌলিক কাহিনী।

মানুষের মতো সেও সভ্যতার চাষাবাদ করে,

সেও চায় শিল্প আর স্লোগানের শৈল্পিক মিলন,

তার তা ভূমিকা চায় যতোটুকু যার উৎপাদন।

কবিতা তো কেঁদে ওঠে মানুষের যে কোনো অ-সুখে,

নষ্ট সময় এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে,

পথিক এ পথে নয়

‘ভালোবাসা এই পথে গেছে’।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট