পদাবলি

 



বারো মাইস্যা পোয়াতির খোঁজে 

মোস্তফা হায়দার 


এসো নিজেকে খোঁজে বের করার মাস্তিতে হাত বাড়াই,

মনুষ্য সময়ের কোলে বসে নিস্তার খোঁজার চেয়ে

ঝিঁঝিঁ পোকা অথবা নিন্দাপতির সূত্রে ডাকো।


ঘন বরষার কোলা ব্যাঙ চৈত্রে ডাকে জল পেতে

সবুজ পাতায় শিশির পরে চৈতের বিদায় দেখে 

তা যেন আরেক কান্নারপিঠে চড়া ঘোড়দৌড়।


বারো মাইস্যা পোয়াতির খোঁজে আর কত নাচবে

আর কত নিন্দ্রা ভাঙবে ব্যাংকের ভল্ট খোলে!

ভেবে দেখো এক নিমিষেই সব সেতারা হারিয়ে গেছে।


এখন আর রাতদিন হিশেব করে লাভ নেই

প্রিয়ার ঠোঁটে বিশ্বাস জমা রেখে পরীমনি হতে চেয়োনা

দেখে নিও মানুষের পৃথিবী বড্ড মাতাল পদ্যে নাচছে!


সঙ্গমের অঙ্গহানিতে কেদারার পাদুকা গেছে ঘেঁড়ে

মধ্যরাতটাকে আপন করে তালাশ করো বিশ্বাসের তরীখানি।



আকাশ বলতে আমি আপনাকেই বুঝি

মারজানা মার্জিয়া 


তারপর অনেক অনেক দিন। আপনার আর আমায় মনে পড়েনা। মনে পড়ার কথাও না। অতি নগন্য কেউ যে আমি। মানুষ যাকে সুন্দর ভেবে শান্তি পায়, তারা খুব দ্রুত প্রস্থান নেয়। জানেন? আকাশের বিশালতা কে খালি সদ্য চোখ দিয়ে বহু বহু দূর থেকে দর্শন করতে পারি। আকাশের সাথে দূরত্ব বাড়ার ভয় নেই, কারণ আকাশ যে কাছেই আসে না। আপনি আকাশ হলে মন্দ না!



নরোম রঙের ছায়া 

সাব্বির আহমাদ 


প্রতি রাতে আমার শিয়রেই পড়ে থাকে একটা নরোম রঙের ছায়া। নির্লিপ্ত চোখের ভিতর কয়েকটা গভীর দাগ- চুম্বনের আবেশ মাখা ক্ষত’র মতো বিছিয়ে থাকে। আমার পাশেই এক নরোম রঙের ছায়া আর আমি ভাবলেশ শূন্য এক প্রজাপতি উড়তে থাকি। 

সারা রাত্র জুড়ে এইসব মূহুর্ত কাঁপানো শীতল রাতের শরীরে গেঁথে দেই কম্পিত ডানার মায়া। তবুও দ্যাখি-

খুব দূরে কেউ একা একা জ্বালাচ্ছে প্রতœতত্ত্ব গায়ের ওঁম। আর তার গালের রেখাচিত্র ধরে আলগোছে বেরিয়ে পড়ছে নির্মেঘ ভাবনার গতর। এক লম্বাটে হাতে; বিভক্ত ঠোঁট। একসাথে অনেক গুলো ব্যস্ত মানুশেন পা।



মায়াজাল

হোসেইন দিলওয়ার


ভাবতেই যেন খুলে যায় স্মৃতিপট

টুকরো সুখের তালাশে অশুচি নেই,

আমার আমিতে লাগুক না যত জট

কিছু বিস্মৃতি ঠিক ভেসে উঠবেই।


বুক ভাঙা ঢেউ রোজ তুলে শিহরন


ফাগুন আসেনি আর এই চরাচরে,

ফেরারি ঢেউয়ে পাক খায় নিউরন

পিছুটান করে রব শুধু অগোচরে।


গাঙশালিকের মতো শিষ দিয়েছিলে

বুঝিনি তোমার ছিল কাপালিক নখ,

শ্বাসরোধী ডানা। প্রাণ হরে তিলে তিলে

তারপর লক অবজ্ঞাপূর্বক।


ভাঙে এ হৃদয় পাড় নিরবধি তোড়ে

তবুও রেখেছি ধরে দেই নাকো যেতে,

কিছু শোক পোঁতা থাক বেদনার মোড়ে

তাতেই রইবো পড়ে তোমাতেই মেতে।


কাল হোক গত তবুও রইবো আমি

মায়াজালে বাঁধা। বিচ্যুত নহে বিষে,

প্রেমের পৃথিবী ভালোবেসে হয় দামি

এভাবেই প্রিয় তোমাতেই রবো মিশে।



এখনো পোষ্ট অফিসের সামনে আছি 

শেলী সেলিনা


আমার, তোমার, আমাদের শুভাকাক্সক্ষীদের সমবেত প্রার্থনার অর্ঘ্য আমাদের অপেক্ষার অবসান ঘটাবে কি?  

পেনেলোপ এর মতো বিশ বছর অপেক্ষা করবো তোমার জন্য, হয়তো তার চেয়ে বেশি! অনন্তকাল!

উদ্দাম উড়ন্ত হামিং বার্ডের মতো

ছুটে চলতে চলতে কখন যে পরবাসে

চলে গেলে, হে পরবাসী!

যারা বলে পৃথিবী সুন্দর তাদের সাথে প্রায়ই আমার তর্ক-যুদ্ধ হয়!

একটা তুমি ছাড়া কি পৃথিবী সুন্দর হয়?

সব ধান্ধাবাজ, শালা উন্মাদের দল!

সাধক না হয় ধ্যানে মগ্ন হয়ে বলে পৃথিবী সুন্দর!

আমি কোনো সাধিকা নই

আমি রাধিকা

প্রেমই আমার বিন্দাবন

আমার প্রেম চাই প্রেমিকের সাথে

নষ্ঠ হওয়াই আমার স্রষ্টার সান্নিধ্য

অনুরক্তগন,

প্রেমিকের সঙ্গ ছাড়া সব ভঙ্গ!

তুমি ছাড়া পৃথিবীর সব আপ্যায়ন

আমি দুপায়ে ঠেলে দেই!

আমি এখনো অপেক্ষমান তোমার নিযুক্ত

পোষ্ট মাষ্টারের পোষ্ট অফিসের সামনে! 


মৃত্যুর দিনলিপি

জিয়া হক


নবজাতক হাসপাতালের ব্রিফিং-

‘তাওহিদ, স্ত্রী সুলতানা

আল্লাহর দিকে তাকান

তিনি বাঁচালে বাঁচবে

চিকিৎসা নেই

সিঙ্গাপুর নিতে পারেন

আমাদের দেশেই একজন চিকিৎসা করে এসেছে

২২ কোটি টাকা লেগেছে

মাত্র ২২ কোটি 

অনেকের টাকা আছে

আপনার-আমার নাই হয় তো।’


আমরা এক আল্লাহর ভরসাতেই বেঁচে আছি 

ফুল যেমন ভাবতে পারে না কেন বেঁচে আছে

আমরাও তেমন।


ফুল না, ফুলের সৌরভ

কাঁঠালচাঁপার মতো গন্ধ

হাসপাতালের দখিন ফ্লাটের বারান্দায়

কে বসে আছে

আমাদের মৃত্যুর দিনলিপিতে

কে হাসছে অমন মুখে-বুকে টোলপড়া গালে?


আমাদের সময়

রহিত ঘোষাল


আমরা যেতাম প্রান্তরের ওপারে

ওখানে আমাদের মুক্তি আঁকা থাকত

পথের দুধারে চটপটে খাবার দোকান

আমরা হাত ধুয়ে খেতাম কিনা মনে নেই

তবু আমাদের শরীরে থাকত সুঘ্রাণ

তালা খুলে ঘরে ঢুকিয়ে নিতাম তাপ উত্তাপ 

এক অন্যরকম ভিড় নেমে আসত

আমাদের চোখের সামনে ভিড় হালকা হয়ে আসত

আমাদের পকেটে থাকত লাইটার-আগুন

চটের তাঁবুর তলায় উষ্ণ আলিঙ্গন 

দোতারা বেজে উঠতো বেখেয়ালি সন্ধ্যেরাত

এক অদ্ভুত দ্যুতি ছেিড়য়ে পড়তো

অর্জুন গাছের পাতা লাল হয়ে ঝরে যেত

আমাদের আশ্চর্য যৌবনের বিস্তীর্ণ সীমান্তে



বিবর্ণ হৃদয়

মোখতারুল ইসলাম মিলন 


বিবর্ণ হৃদয়, ক্লান্তি ভরা,

মনের কোণে জমে থাকা কষ্টের ধারা।

হাসির আলো ম্লান হয়ে গেছে,

স্বপ্নগুলো যেন দূরে সরে পড়েছে।

দৃষ্টি হারায়, খোঁজে সান্ত¡না,

শূন্যতার মাঝে একটুকরো বাসনা।

দিন যায়, রাত আসে ছায়া মেলে,

কিন্তু মন কি আর সুখের পথে চলে?

কাঁপা কণ্ঠে বলি কথা,

কিন্তু হৃদয় বোঝে না তার ব্যথা।

আলো নিবে যায়, অন্ধকার বাড়ে,

বিবর্ণ হৃদয় শুধুই বেদনার ছায়ায় হারায়।

তবু আশা আছে, রঙ ফিরে পাবে,

জীবন একদিন নতুন করে জাগবে।

বিবর্ণ হৃদয় রাঙাবে নতুন আলোয়,

দুঃখ পেরিয়ে সুখের পথে চলবে কালোয়।




চোখের আড়ালে কাঁদে চোখ 

রফিকুল নাজিম 


হঠাৎ দেখা। বিহ্বলতায় তাকিয়ে ছিলাম আমি

তুমিও নির্লিপ্ত চোখে অপলক তাকিয়ে ছিলে,

ভেজা মনে খুব গোপনে মন খারাপের আনাগোনা 

স্মৃতির সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছি আমরা দু’জন মিলে!


ঠোঁটে আমি শুকনো হাসির সহজ প্রলেপ মেখে

জিজ্ঞেস করলাম তোমাকে, ‘কেমন আছো?’

সুচিত্রা সেনের মতো একগাল হেসে বললে, 

‘বেশ আছি। খুব সুখেই আছি আজও।’


অস্থির গলায় পাল্টা প্রশ্ন করলে আমায়

‘এখনো কি তুমি রাত জেগে কবিতা লেখো?

হেসে বললাম, ‘চোখের পাতায় রোজ ঘন হয়ে আসে ঘুম

চোখ দুটো কেমন ফোলে আছে- দ্যাখো দ্যাখো!


তারপর নিরবতা। তারপর ফের তাকিয়ে থাকা

বুলেট ট্রেনের মতো সময় দ্রুত গড়িয়ে যায় একা

তবুও প্ল্যাটফর্ম স্বাক্ষী- গোপন ব্যথার দীর্ঘশ্বাস

সুচতুর অভিনয়ে প্রাণবন্ত হয়- মেকি ভালো থাকা!


তারপর ফিরতি ট্রেনের হুইশেল- ঝকঝকা ঝকঝক

অথচ মনে কথার উতল হাওয়া; গল্পরা করে বকবক, 

অভিনয় দেখে দিচ্ছেন তালি- অন্তর্যামীই নিরব দর্শক

চোখের আড়ালে কাঁদছে গোপন- দু’জনের পাথুরে চোখ!



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট