পদাবলি




চাহিদা
শোয়াইব শাহরিয়ার

যেতে বললে যাবো। তার আগে একবার তোমায় ছুঁয়ে দেবো।
তার আগে একবার তোমার শহরে বৃষ্টি নামাবো
শুষ্ক মাঠে জন্মাবে ফল আর ফুল
সৌরভে তুমি পাগল হয়ে উঠবে।

বলো, এই জন্মে আমরা ভালোবাসা ছাড়া আর কি-বা চাইতে পারি ?

জীবন-বসন্ত
হাসান নাজমুল

বসন্তের বৃক্ষশাখা হতে যেমন শুকনো পাতা-
ঝরে পড়ে মৃত্তিকার’পর,
আবার শুন্যতা ভরে দিতে বেড়ে ওঠে-
আরেক জীবন;
আলো দ্যাখে নতুন বিশ্বের;
আমিও শুকনো পাতার মতন ঝরে যেতে চাই-
এ বসন্তে; আর বসন্ত-বৃক্ষের শাখায়
বুনো হাওয়ায় উদ্দাম জীবন নিয়ে-
ক্রমে ক্রমে বেড়ে উঠতে চাই বসন্তদিনে,
জীবন শাখায় শুকনো জীবন-
শুকনো পাতার মতো খসখসে মনে হয়,
তাই শুকনো জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে-
এ বসন্তদিনে জীবনকে বসন্ত বানিয়ে-
জীবন-বসন্ত শাখার শুন্যতা ভরে দিতে চাই।

হাসি
সাবিকুন শুভা

ঠোঁটের ফাঁকে শুভ্র এনামেল
একটু পর পর দৃশ্যমান ইনসিসর;
তুষারের পর্বত ভেবে হারিয়ে যাবার পালা,
দেখতে দেখতে হারিয়ে যায়-
মাঠ-ঘাট, শহর-বন্দর, গাছপালা
                 লোকালয়ের কোলাহল।
থাকে কেবল তুষারের পর্বত,
দু’টি গোলাপি ফুলের মৃদু ওঠা-নামা।

প্রিয়তমেষু
হোসনা মুরাদ

আর কতকাল অপেক্ষা করলে
তোমার একদৃষ্টি ভালোবাসা পাবো ?
আর কত বিনিদ্র রাত কাটালে
হঠাৎ দেখা দিবে তুমি স্বপ্নের ভোরে ?
আর কত ঝুম বৃষ্টি হলে
তোমার কলম লিখতে শুরু করবে
একটা প্রেমের কবিতা ?
তোমাকে যে ভাবি সারা দিনমান...
তোমাকে যে আমার বড় প্রয়োজন
হে প্রিয় !!!
মনে আছে সেই হিরণ্ময় বিকেলের কথা ?
তুমি বলেছিলে-
তোমার মতো করে কেউ নাকি
ভালোবাসবে না আমায় এই নশ্বর পৃথিবীতে ।
হুম; সত্যিতো আদ্যোপান্তে তুমি আমার
তোমার মাঝে আমার সূর্য উঠে,
দিন গড়িয়ে রাতঘুম দেই তোমায় ভেবে ।
তোমাতেই খুঁজে পাই আমি আমাকে
বিষন্ন আমি লুকিয়ে থাকি সন্তর্পনে
তুমি যে আমার আনন্দ আশ্রম ।
জানো ?
আমি এখনো তোমায় চিঠি লিখি
প্রতি রাতে একটা করে
সেই পুরোনো কথাই বার বার লিখি
তোমার প্রতি আমার অদৃশ্য ভালোবাসা
তোমার মাঝে আমার মুক্তি
তোমাতেই শক্তি ।
উত্তর পাব না জেনেও
জুড়ে দেই সাথে কিছু না বলা অভিমান, অনুযোগ, আবদারের কথা ।
অথচ ভুল ঠিকানা বলে চিঠিগুলো কড়া নেড়ে
ফেরত আসছে পরেরদিন
ঠিকানা কি আসলে ভুল ছিল,
নাকি তুমি কপাট খুলোনি ?
আর কত?
আর কত চিঠি লিখলে তোমার উপেক্ষার মান ভাঙবে?
আমার বুঝি কষ্ট হয়না প্রেরক হয়ে প্রাপক হতে ?
যদিওবা ঠিকানা ভুল হয় চিঠিগুলো কিন্তু ভুল নয়!
অনন্তকাল চিঠি লিখে যাবো আমি...
যদি তুমি একবার প্রাপক হও
তোমাকে যে আমার বড় প্রয়োজন
হে প্রিয় !!!!



তুমি, কেন এত বেশি কৃত্রিম ?
রেবেকা ইসলাম

তুমি, কেন এত বেশি কৃত্রিম ?
ওই যে সেদিন অপরাহ্ন শেষে
নেমে এসেছিল বেলোয়াারি আকাশ
ঝুল বারান্দার ভাঙাচোরা কোণে,
তারপর শোনা গেল দ্রৌপদি মেঘের
কিছু কালজয়ী চরণ
দীর্ঘক্ষণ,
তুমি তা বোঝনি, আমি বুঝেছি।

কেন তুমি এত বেশি কৃত্রিম?
সেই ধুন্ধুমার রাতে বটবৃক্ষের সাথে
গাঢ় জ্যোৎস্নার মুখোমুখি প্রেম,
ডালে ডালে আলোর তীব্র আন্দোলন
নতমুখি পাতাদের ফিসফিস
বুকের ওঠানামা, কম্পন
দীর্ঘক্ষণ,
তুমি তা শোননি, আমি শুনেছি।


মরীচিকা
সাদ সাইফ

অদ্ভূত আঁধারের শেষ প্রহর,
নিদ্রালু চতুর্দিকের গুমট ভাব নিমিষেই উধাও
আনমনেই ধায্যা বেরিয়ে আসে;
আলোর দীপ্তশিখায় রঙিন মখমল
নিমীলিত তৃতীয় চোখে শ্বেতপরীর দেশে।

শব্দাধিষ্ঠানে আসে নগরপালের হাঁক;
মুহুর্তেই কৃত্রিম ভূবনের অসমাপ্ত প্রস্থান,
স্খলিত লাঠির মুহুর্তবাহুতে দৈব অবস্থান।

নগরপালের হাঁক নীরবে ক্ষীণতায় পর্যবসিত
দ্বিবিধ মধ্যমলোক; ভাঁলকে বাঁশের নমনীয়তায় গাঁথা।

ইস্পাত অথবা তৎসম শক্তের পূঁজারি !
শুচিবাই; ইতস্থত সিদ্ধান্ত,
দুরাচারির বপু সিঁদুর রঙাগার
রঞ্জিত করার কৃত্রিম বাসনা,
নাহ্! করমূক; মানবতার ধ্বজা বক্ষজুড়ে
ফিরে আসি শ্বেতপরীর কল্পঘরে।


দেবদারু
রাহাত রাব্বানী

সকালের বয়স বেড়ে বেড়ে দুপুর হয়।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল, গোধূলির মৃত্যু লিখে দেয়-
সন্ধাধ্বনি। রাতের কোলে মাথা রেখে সন্ধা ঘুমায়।
দেবদারু বৃক্ষ প্রিয় সহচর করে তোমার বাসার মোড়ে-
বিরামহীন দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকে আমার মস্তিষ্ক, দুটি চোখ;
একবার তোমাকে দেখবে এই প্রত্যাশা। তুমি তার-
কিছুই জানো না, কিচ্ছু জানলে না। অথচ-
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া দেবদারু জানে
আমার মস্তিষ্ক, যুগল চোখ, আমি কতোটা প্রেমিক!



মনোজ টান
অভিজিৎ মান্না

নির্জন পথে অনুকূল হাওয়া বইছে
ওখানে মেঘেরাও হালকা হয়
ব্যস্ত জনপদ শোনে না
রঙের কৌটো গড়ায় মাঝ রাস্তায়
ধাক্কা খেতে খেতে পৌঁছে যাওয়াটাই শ্রেয়
ত্রিমাত্রিক ক্ষোভ শীতল হবেই- তুমিও এসো ।
  

কবিতার বারুদ
পবিত্র মহন্ত জীবন

আমার বুকের ভিতর কষ্টঘোচা গুলো
দাউদাউ করে জ্বলছে! জ্বলতে দাও!
মূর্তির বেশে আমিও চলছি আর বলছি
আমার স্বাধীনতা আমার কাছে
জ্ঞান ও বিশ্বাস ঘনিষ্ঠ  মিশ্রিত পদার্থ
এবং সর্বত্রই স্বাগত আমি শুদ্ধ;
বিশুদ্ধ বায়ুতায় হর্ষে উদ্ভাসিত আজ এখনো
এইভূমে কবি ও কবিতার বারুদ,
আমি কবি আজো কবিতাকে বলি-
শব্দাংশ বারুদের চাষ কবি হয়নি নিরাশ।




ক্ষণিক আভাস
নাফছি জাহান

পূর্ববর্তী নৈসর্গিক রূপের বাহার
নির্জন পথ ধরে, অৎ¯্র পর্দা পাড়ি দিয়ে
গভীর অন্ধকারে মিশে ঝরে যাচ্ছে রুদ্ধ বেদনার কূপে,
অসহায়ত্বের বেদনাময় রেখা টেনে
বিমুগ্ধতার সুর তুলে, ভেসে যাচ্ছে দূর কোনো প্রান্তরে।
বিলীন হওয়া নৈসর্গিক রূপের বাহার-
ক্ষণিকের তরে ফিরে আসার আভাস দিয়ে
মিষ্টি স্বপ্নে বিভোর করিয়েছিল,
বর্তমান আজ মিশে আছে
মলিন সবুজে, তীব্র খরা বহন করে।
তীব্র অত্যাচার উজ্জ্বল সবুজকে
আহ্বান করেছিল অন্ধকার মৃত্যুর পথে,
রৌদ্রেরা ভিড় করত, মিষ্টি আলোর সমাহার সঙ্গী করে।
অতিশয় সৌন্দর্যপূর্ণ কারুকার্যে ঘেরা ছিল,
পৃথিবীর দূর দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হারিয়ে যাওয়া পূর্ববর্তী নিসর্গ।
বাংলার এই সবুজ, সেই মৃত্যুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে
ধূসর রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে
এতটুকু পরিমাণ বিলম্ব করেনি,
ক্ষণিকের বেঁচে থাকার আভাস চক্ষুর সম্মুখে তুলে ধরেছিল।
ক্ষিপ্র ডানা ঝাড়া পাখির মত ধ্বংসের আহ্বানে পা বাড়িয়ে
হৃদয়ের শব্দহীন পথে একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে।

অবনিতা
সাঈদ চৌধুরী

খুব নির্জনে হেঁটেছেন কখনও
জিজ্ঞেস করছিলাম নতুন পরিচিত হওয়া অবনিতাকে
সে বলল, হেঁটেছি তবে এমন করে নয়
জিজ্ঞেস করলাম কেমন করে
এই যে আপনার সাথে দুজন মিলে একা হাঁটা !
বসন্তের পাতাগুলো মারিয়ে যাওয়ার শব্দও প্রতিধ্বণি হয়
দুজনের মধ্যে দূরুত্ব অনেক
এখনও আপনিতেই সীমাবদ্ধ
দুজনের মনেই প্রশ্ন তবে কেন তুমি বলাবলি হচ্ছে না
আমি ডাকলাম অবনিতা
তিনি বললেন “এবার কিন্তু অন্যরকম লাগলো আপনার ডাকটি”
আমি বললাম কেমন বলেনতো
নির্দ্বিধায় অবনিতা বলল “খুব আপন”
আসলে এমন নির্জনে দুজন থাকলে এমনিতেই দুজন আপন হয়
খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম কেন যেন
বুঝতে পারছিলাম অবনিতাও
হাঁটছি খুব দূরের কোন রাস্তায়
ক্লান্তির সময় নারীদের একটু এলিয়ে যাওয়া
অবনিতার মধ্যেও ¯পষ্ট হয়ে উঠছিল
সে আমার কাঁধে মাথা রাখতে চাইছে
কিছুক্ষন পর যখন খেয়াল করলাম তখন হাতে হাত রেখে হাঁটা
একটি নির্জন পথ কখন ভালোবাসায় ডোবালো বুঝলাম না
আজ রাতেও অবনিতা আমার শোবার ঘরে
তার শাড়ীর আচল মেলেই আমাকে ধরে আছে....


জটোচ্ছেদ
পরান জহির

কোন শব্দ নেই। কোন অর্থ নেই। নেই কোন উপমা। নাম-উপনাম । আমরা বিশুদ্ধ ভালোবাসা, বিশুদ্ধ প্রেমের গোলাপ কিনতে চাই। চাই ফুলের ভিতর শান্তির বসতি গড়তে। সাজাতে চাই ফুলে ফুলে, পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চল। আমরা আমাদের রেখে যেতে চাই তোমাদের হৃদয়ে। আমরা আমাদের তৃষ্ণা মিটাতে নিয়ে যেতে চাই তোমাদের হৃদয়। আমাদের স্বপ্নের মাটিতে যে বৃক্ষটি শাখা মেলে, আমরা তাকে আমৃত্যু ভালোবেসে যতœ দেই। গাই বৃক্ষসুলভ স্বাধীনতার অপার মুক্তির গান। কোনো প্রকার কলুষতা যেন ছিন্ন করতে না পারে আমাদের পারস্পারিক হৃদয়ের বন্ধন। তাই-রক্তের ভিতরে হেঁটে গিয়ে আমরা রক্তকে শাসাই...

জানিতো-
হৃদয় যতো বড় হয়, মানুষ ততো বড় নয় !

একটি নিরপেক্ষ সকাল এবং আমাদের জাতীয় সংগীত
শৈলেন চৌনী

০১. হাতুড়ির মতো মুহূর্তদের পরেই আমাদের যখন সকাল হয়
বাবা ‘সা রে গা মা পা’ ছেড়ে জাতীয় সংগীতে মন দেন
০২. বেঁচে থাকার যাবতীয় টুকু জুড়ে এক সাদা খরগোশ ছুটে বেড়ায়,
চারদিকে আমাদের সারাদিন শুধু মৃত্যুর আওতায়,
কেবল অবসাদের নিদ্রায় আমরা জীবিত হয়ে উঠি-
০৩. কোনো কোনো দিন এমন হয় দারুণ হেমলক চাখনা
জমতে থাকে স্থবির বিষাদে,
সুর ও সুরেলা স্বরলিপি সহ পুড়ে বিষাদের আঁচে,
আমাদের সেদিন জানা থাকে আজ শনিবার-
০৪. প্রতিটি কথার মধ্যে ঢুকে যায় বিষাদ
যেভাবে ঝাউপাতার ফাঁক দিয়ে হু হু করে ঢুকে পড়ে শোক-
ঠিক তখনই, আমি ভ্রমন শুরু করি, নদীর মতো-
০৫. নিয়ত রোদরাত্রি, ঝড় বাদলা পেরিয়ে
যখন মাতাল হই রাত্রি বেলায় আর, শীলাবতীর বুকে পা ঝুলাই-
বলতে ইচ্ছে করে- ‘ফাক দি রুলস্ এন্ড রুলার্স’ রাষ্ট্র আমার ছিঁড়ে নেবে ।






শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট