পদাবলি



সন্তানদের চাহিদা ও হ্যালুসিনেশন
আল-আমীন আপেল

সুপ্রভা, নীলরঙা শাড়ি জড়িয়ে আসবে কি!
এক টুনটুনি ডাকা পড়ন্ত বিকেলে?
গহীন অরণ্যে নয়,
বিনয় বাবুদের তালপুকুর পাড়ে।

যেখানে রোমান্টিক শব্দগুলি হাওয়ায় ভাসে,
সেখান থেকে কিছু শব্দ ধার করবো।
তারপর, তোমায় গল্প শোনাবো।
আমার গল্প, আমার সন্তানদের গল্প।

সুপ্রভা, জানো ছেলে-মেয়েগুলি মাঝে মাঝে
আমায় ‘মা’ এর গল্প বলতে বলে।
আমি তোমার কথা বলি।
আজকাল ওরা তোমায় দেখতে চায়।

ওদের সবাই অশিক্ষিত পথশিশু বলে,
আমার গা সয় নি সেটা।
রোজ তাই স্টেশনের চত্বরে
বিকেল হলে ওদের পড়াই।

সুপ্রভা, লোকে বলে ওরা পরিচয়হীন, ওদের পরিচয় নাই।
দুই হাত বাড়িয়ে ডেকেছি ওদের-
মিলেছে সাড়া, বুকের বামপাশে জমিটা
এখন সেটা ওদের দখলে।

স্বার্থপরতার এ যুগে এসব দেখে, লোকে ‘পাগল’ বলে!
তাদের কথায় কষ্ট পাই না।
তবে সন্তানদের মায়ের চাহিদা আমায় ভাবায়।
ওদের নাকি মা চাই!

সুপ্রভা, মেয়েমানুষ নিয়ে আগে তো
কোনো দিন ভাবি নি,
তবে এখন কেন ভাবি?
আলসে দুপুরে তুমি আমায় ছুঁয়ে আছো!

ধ্যাত! এ নিশ্চিত হ্যালুসিনেশন।
সন্তানদের মায়ের চাহিদার প্রতিফলন।


রোদ্দুরে চাঁদ
সা’দ সাইফ

এখন আর হিমালিনীর গায়ে শুভ্র পোশাক নেই।
নেই হিরকদানার সেই সুগন্ধি।
যে সুগন্ধির পরশে শত শত শতদল বুজে রাখত তার পাপড়ি।

রাতের আকাশে নেই তাকিয়ে থাকা জোছনা বিলাস কিংবা জোছনার সুড়সুড়ি।
এ সবুজ প্রান্তর এখন ধুলো মলিন। পদে পদে রেখে যাওয়া পদচিহ্ন এক ঝাপটা
বৃষ্টিতে বেদখল।

রবিজ্জ্বল আলোকছটায় গায়ে মাখেনা তীব্র জ্বলন।
কারণ এ শহর তীব্র নোনায় ভরা।
শহরের প্রতিটি নলকূপ এখন এক একটা স্যালাইনের চৌবাচ্চা।

এখন আর চোখের পানি মাটি স্পর্শ করেনা।
মুখেই শুকিয়ে যায় খেজুরের খিলে থাকা জমাট রসের মত।
কারণ এ শহরে এখন রোদ্দুরে চাঁদ।



তোমাকে পান খাওয়াবো বলে
রুদ্র সাহাদাৎ

তোমাকে পান খাওয়াবো বলে- পানের বরজ বানিয়েছি
মহেশখালীর মৈনাকপর্বতের নিকটে-
                       ত্রিশ শতক পাহাড় কিনে।
মুরুব্বিদের মুখে পানের বহুত গুনগান শুনেছি
                             সেই শৈশব থেকে
পান নিয়ে আছে গান, কবিতা, সহস্র গল্প...
তোমাকে পান খাওয়াবো বলে নিজ হাতে পরিচর্যা করি
পানের বাগান অহর্নিশি।
সবুজ মিষ্টিপানের কিলি বানিয়ে প্রতিক্ষায় আছি
তুমি আর আসোনি।


চশমা
ইসমত জাহান লিমা

বিদ্যের দৌড়ে মোরা ছুটছি অহর্নিশ,
গাদিগাদি বইয়ে রাত্রিদিন করেছি এক।
জ্ঞানের ভারে নুইয়েছি উন্নত শির
আমরা অশিক্ষিত, আমরা পরাধীন-
আমরা বধির, আমরা নিথর বঙ্গবীর।
হারিয়ে ফেলেছি মুখের জোড়
হৃদয় ছোঁয় না শোষণ, নিপীড়ন।
কন্ঠে দিয়ে লৌহ কপাট!
প্রতিবাদী স্বর ওঠা কিভাবে সম্ভব?
চোখে লাগিয়ে বিদ্বানের উজ্জ্বলিত চশমা
তাইতো কেউ অন্যায়-অবিচার দেখিনা!!
কলমে লেখি না অন্যায়ের প্রতিবাদ
হাত গুটিয়ে দেখি বিদ্বেষ, নৈরাজ্য, অনাচার।
ধিক মোদের বিদ্বানের চশমায় লক্ষ ধিক!
আমরা মূক, আমরা কাপুরুষ,
আমরা নীচ, আমরা বাকরুদ্ধ বন্যজীব।


এই বুড়ো তোর কাপড় কোথায়
[কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর স্মরণে]
হিমাংশু দাস

অ্যক দৌড়ে-
পালিয়ে গেলি আগুনের ঘরে ।
ঐখানে তোর বসত;
জানি !

বুড়ো,
এই বুড়ো, তুই যাচ্ছিস কোথায় ?
                তোর কাপড় কোথায় ?

এতদিন অন্যের কাপড় কোথায় খুঁজেছিস,
এখন তো, তোর কাপড় খুলে রয়ে গেল !
যাক আরেকটা কাপড় তো হলো,
পরতে পারব !

তোর কাপড়ে আমি ঘুমবো
তোর কাপড়ে আমি স্বপ্ন আঁকব
তোর কাপড় গায়ে মেখে আমি গন্ধ ছড়াব
তোর কাপড়ে আমি বৃষ্টি নামাব,
তোর কাপড়ে আমি প্রাণ জুড়াব রে বুড়ো !

এই বুড়ো, আমার লজ্জা আছে
তাই তোর কাপড় রেখে গেলি
আমার জন্য ! বল...

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট