আলো জ্বেলে রাখি কবিতার খাতায়






আলো জ্বেলে রাখি কবিতার খাতায়
আনোয়ার রশীদ সাগর

কী নীরব রাত! একা একা বসে লিখছি। লেখার মাঝে দুঃখগুলো লুকিয়ে থাকে। লিখে, খানিকটা পাতলা হই।
আটটি বছর হয়ে গেল বিনা বেতনে চাকুরী করছি। বাবা তার শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে ম্যানেজিং কমিটির হাতে তুলে দিয়েছিলেন, এই চাকুরীটার জন্য। সে চাকুরীই এখন গলার কাটা; না পারি ছাড়তে, না পারি ধরে রাখতে। শূন্য পাখা মেলে উড়া যেন, গাছ নেই, সবুজ নেই, আশা নেই, ভরসা নেই। তবুও পথচলা।

মাস্টার্স পাশ  করে একটা কোম্পানীতে চাকুরী পেয়েছিলাম। কিন্তু বাবার একমাত্র ছেলে হওয়ায়, খাবার টেবিলে বসে, এক রাতে খেতে খেতে বলেছিল, তুই কোথায় দৌড়াদৌড়ি কইরি বেড়াবি, গ্রামে কলেজ হচ্ছে, একে নিই ছেলেমেয়ি পড়া।
সেই থেকে কলেজেই আছি, পড়াচ্ছি ছেলেমেয়ে। আজ না কাল, করতে করতে আটটা বছর কেটে গেল। এলাকার সংসদ সদস্য কলেজের এমপিও ভুক্তি করে দেবে বলে, দু’দফায় টাকা নিয়েছে । তবুও হয়নি বেতন।
আবার ভোট এসেছে, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে প্রার্থীরা। অপেক্ষায় আছি।
ছাত্রজীবন থেকে কবিতা লিখতাম। আমার কবিতার সবচেয়ে আগ্রহী পাঠক, আজ আর কাছে নেই। আলো জেলে রেখে চলে গেছে। তেলহীন নিভু নিভু জলে সে আলো। যার কথা বলছি, সে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি রিনি। রিনি আমার কবিতার প্রধান উপকরণ ছিল। ওর হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ ছিল কবিতার পথহাটা।


যখন ওর বিয়ে হল, তখন বছর ধরে বিরহের কবিতা লিখেছিলাম।  মেঘ হয়ে উড়তাম, বৃষ্টি হয়ে ঝরতাম। আঁধারে আঁধারে হাটতাম, এ জীবনে আর আলোর মুখ দেখব না-এমনই ভাবতাম। প্রতিদিন কলেজে যায় পাঠদান করি, বিকেলে মাঠে মাঠে ঘুরি। সবুজের সাথে মিশে থাকি। হঠাৎ কোথা থেকে প্রজাপতির মত উড়ে এসে জুড়ে বসল নীলিমা। আসলে নীলিমাও রিনির মতই চঞ্চলা হরিণী। কলেজ মাথায় করে রাখতো, কাছে এসে শিশুর মত আবদার করতো। নীলিমার কথায় কাজে যেন রিনির  ফটোকপি মনে হতো।
প্রথমে ভাবতাম নীলিমা রিনির মামাতো বা খালাতো বোন-টুইন হবে। কিন্তু না। নীলিমার বাবা চাকুরী সুত্রে এখানে এসেছে। ওদের দেশের বাড়ি খুলনার সাতক্ষীরা। আর রিনির বাবা ছিল রাজবাড়ীর মানুষ। রিনি এবং আমরা ঢাকা কলেজে পড়তাম।
নীলিমার বাবা আমাদের উপজেলায়  থানায় পুলিশের এস আই হিসেবে চাকুরী করতে এসেছিল।
দূর্ভাগ্য হচ্ছে, নীলিমা যেভাবে এসেছিল, সেভাবেই ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষে চলে গিয়েছিল। শুধু যাওয়ার সময় ওর চোখে শ্রাবণের বৃষ্টি ঝরেছিল।
আমি শিক্ষকতা করি, মন খুলে কিছুই বলতে পারিনি, মনের গহীনে চুলার আগুন জলেছিল, সে আগুনের ঝাঁজ উত্তাপ ছড়ায় নিয়মিত।
রিনি আর নীলিমার দেওয়া আলোটুকু জেলে রেখেছি কবিতায় কবিতায়। নীরব রাতের এ আঁধারে কবিতাগুলো বিড়াল পায়ে হাটে মনের গহীনে। একটি নয়, যেন দুটি কবিতা -দু লক্ষ পথ ধরে হাটে।
আলমডাঙ্গা,চুয়াডাঙ্গা।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট