প্রজন্মের বন্ধন





প্রজন্মের বন্ধন
আরিফুর রহমান

‘এই একটা দিন, মানুষটা কোন হৈ চৈ করত না।’
‘আজ আব্বার জন্মদিন, তাই না মা?’
‘হ্যাঁ। এই দিনটাতে তোর বাবার একটা বিশেষ কাজ ছিল। মনে আছে তোর?’
‘কোনটা মা? ম-া কিনে আনা?’
‘না, ম-া তো আন্তো, তাছাড়া আরেকটা কাজ করত। ফ্রেশ-ট্রেশ হয়ে, নতুন জামা কাপড় পরে আমাকে বলত, সাথী সালাম করো, সেলামি পাবে। সেটা তুই বড় হবার আগে। তারপর তোকে বলত, বাপ্পীকে বলত।’
‘হ্যাঁ মা। সেই টাকা থেকে বিকালে আব্বার জন্য এটা-সেটা কিনে আনতাম। খুব খুশি হতো।’
‘তোর ছেলেটা কিন্তু সেই সুযোগ পেল না। আচ্ছা, লীনাকে কি কোনোদিন বলেছিল তোর বাবা?’

হেলে পড়া পুর্বাকাশ থেকে রোদ এসে গ্রিলে জমতে শুরু করেছে। মাসুমের সাথে তার মায়ের এই আলাপ মাসুমের বাবা মারা যাবার পর তাঁর প্রথম জন্মদিনে। অনেক অনেক টুকরো স্মৃতি যখন তাদের ঘিরে রেখেছিল এলোমেলো ভাবে তখনি, মাসুমের ছেলে মেঘ তার অভ্যাসের অদৃশ্য জাল ছিঁড়ে এসে তাদের সামনে দাঁড়াল। ছিমছাম, পরিপাটি।
‘বাবা, ও বাবা, আমাকে সালাম করো, সেলামি পাবে!’
মেঘের মা লীনা, মেঘকে বারান্দা থেকে নিয়ে চলল স্কুলে দিয়ে আসতে।
‘তুমি যা দুষ্টু হয়েছো না বাবা! আজ তো ঈদ না। তাছাড়া তোমার আব্বু তোমাকে সালাম করবে, নাকি তুমি আব্বুকে সালাম করবে? দুষ্টু ছেলে!’
বারান্দায় এই মা-ছেলে জুটির ভেতরে তখন বাদল ধারা। যা আকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে, গাল পেরিয়ে এসে তাদের চিবুক ছুঁয়ে ফেলেছে।
শিক্ষক, ইসলামপুর সরকারি কলেজ, জামালপুর




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট