শব্দমালা : আকাশ মামুন






পোড়াও তোমার প্রেমাগুনে

ভালোবেসে পতঙ্গ ঝাপ দেয় জলন্ত আগুনে¾ মরিতে
আমি প্রিয় দিয়েছি ঝাপ তোমার প্রেমাগুনে¾ পুড়িতে
পোড়াইয়ো পোড়াইয়ো আমায় করিও খাঁটি¾ স্বর্ণসম
আলিঙ্গনে এদেহের পাপ যত করিও মাটি¾ প্রিয়তম
আমিতো নিরূপায় প্রেমিক কৃষ্ণ¾ তনুমন
কামে প্রেমে খুঁজিও ওগো রাধে¾ অনুক্ষণ
পুন্ন স্নানে হয় যদি মোচন দেহ মনের পাপ¾ সমূলে
ওগো রাধে উন্মোচিত হও দিব আমি ঝাপ¾ সে জলে

রেখো না রেখো না আড়াল ওগো প্রেমময়ী¾
হৃদয়ে ভীষন জ্বর¾ জিহ্বায় মেপে নাউ দেহের উত্তাপ


অনন্ত প্রতীক্ষা

হে উদ্ভিন্নযৌবনা তীলোত্তমা
এখানে এই রুক্ষ নগর¾ রোদের হলকা
ধিরে চলা বিকেলের গুই সাপের মত লিকলিকে জিহ্বা
শীতাতপ কক্ষের জানালায় নগরের ব্যস্ত বাথান
এক জনাকীর্ণ পানশালায় সম্মুখের খালি চেয়ারের দিকে তাকিয়ে 
তোমার আরধ্য প্রতীক্ষায়¾ কেটে যায় অনন্তকাল

তবে কি আমি বিকল হয়ে পড়ে থাকা কোন চক্রযান
যে তার প্রতীক্ষিত যাত্রীর প্রতীক্ষায় প্ল্যাটফ্রর্মে পড়ে আছে¾ যত্নহীন একা


ভুল বাগানের ফুল

আলোকিত নগর, প্রক্ষেপিত আলো ঠিকরে পড়ছে
যেন মানুষের ভিড়ে শরতের রোদ লাগা চকচকে মেঘ
পলেস্তারার মতো প্রসাধনের প্রলেপ দেওয়া
হাসিহাসি কৃত্রিম মুখ¾ নিটোল ঠিকরে পড়া চোখ
দেখে মনে হবে ভোরের স্নিগ্ধতায় ফোঁটা কোন ক্যামেলিয়া

অথচ আমি জানি, দূষিত নদীর মত দুঃখের কালো জল নিয়ে
কি ভীষণ উচাটনে নিরন্তর ছোটে চলা তোমার
কোন এক সন্ধ্যায় কাঙ্ক্ষিত গন্ত্যব্যের প্লেন ধরতে না পেরে
ভুল প্লেনের সওয়ারী হয়ে ভুল গন্তব্য চলে যাবার কি নিদারুণ কষ্ট

আমিও ফোঁটে আছি প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভুল বাগানে
অন্তিম বিকেলের রক্তিম আভায় কোন ফুল ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে
একদিন পৌঁছে যাব তোমার কাছে¾ পরিচিত আঙিনায়
নদী হয়ে মোহনায় মিশে যাবো একসাথে¾ সাগরের টানে



প্রেমিক কৃষক

এই সব চাষবাস নিড়ানি আমার ভালো লাগে
আজন্ম প্রেমিক কৃষক আমি-উতলা হৃদয়
হে শস্য ভুমি অকর্ষিত তোমার উর্বরা বুক
লাঙলের ফলায় চিড়ে-খুড়ে চাষেই আমার তৃপ্তি
আর অপেক্ষা কত কাল-বোশেখের বৃষ্টির
টুইটুম্বুর তোমার অমরা-চলো এই শীতেই বীজ ছিটাই
দিনে দিনে বাড়ছে দেনা কমছে ফসলের দাম
তবুও তোমার উর্বরা জমিনের মদন কৃষক আমি
তোমার নরম মহুয়া ঘ্রাণের ফল-ফসলেই-
পূর্ণ হোক প্রেমিক হৃদয়ের শূন্য গোলা



বিরহ বিলাপ

অনেক দূরে চলে গেছে
বন্ধু খবর রাখেনি
অনেক দূরে চলে যাব
বন্ধু খবর পাবে না
ভালোবেসে ফুল ফোঁটবে
মালা গাথা হবে না
হয়তো রব পাশাপাশি
পাশে পাওয়া হবে না
হয়তো মিলবো প্রতিদিনই
মনের খবর পাব না
মন বলবে কাছে যাও
কাছে যাওয়া হবে না
ভালোবাসা বেঁচে রবে
ভালোবাসা হবে না


বিরহ বিলাপ

মনের পলল জমিনেতে আসবে বলে আসলে না
ঘাস গজিয়ে দাম বেঁধেছে বন্ধু খবর নিলে না,
হাতের কাছেই মুঠোফোন- জানি আছে খন্ডহীন অবসর
তবুও কেন হৃদয় দুয়ারে এঁটেছ তালা-নাও না খবর?
ক্লান্ত বিষন্ন বিকেল তোমার একা কেটা যায় ধিরে
আমিও একা থাকি বিষন্ন পৌড়ের একাকীত্ব ঘিরে
এই ব্যস্ত শহর যানজটের মত থমকে যায় চোখে
তবু দেয়ালে টাঙানো ঘড়ি বেজে যায় টিকটিক আপন সুখে
তোমার হয়তো আয়েশি সময় পরিমিত আড্ডা যোগব্যায়াম
চকচকে শহরে ঘিরে থাকা অর্জন ছেলে-মেয়ে যশ খ্যাতি
আমার দরিদ্র জিরজিরে শহরে নির্ভার নিস্তরঙ্গ জীবন
লোকসানি এক প্রেমিক আমি লোকসান আমার অগুনতি



বিপ্লবীর আর্তনাদ

উর্বরা সময়ের স্ফিত অমরা-নিশিক্ত হবার অপেক্ষায়
নপুংশক আমি¾ বিপ্লবের ময়দানে পিতা হবার সক্ষমতা হারিয়েছি
জনতার টুটি চেপে মদ্যপ রাজা ক্ষমতার মসনদে বসে
মা হবার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কাতরায় কুমারীবধু মাতৃভূমি
উন্নয়নের মিথ্যে বুলিতে ছেয়ে গ্যাছে শহর
বিপ্লব আজ শুধু টেলিভিশনের ক্যামেরায় বন্দি
উপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ চলে পুব থেকে পশ্চিমে
শান্তির নাামে দেশে দেশে যুদ্ধ চালায় বেনিয়া মহাজন
শিশুদের কান্না¾ নারীদের আর্তনাদ ভাসে বাতাসে
যুবকেরা কাঁদতে ভুলে গ্যাছে¾ প্রতিশোধের মন্ত্র জপে বসে

প্রতারক কথকের ভিড়ে দিকভ্রান্ত জনতা
প্রতিদিন হারায় নাগরিক অধিকারের চাবি
এমন উর্বরা সময়ে পৌরুষ দৃপ্ত চে তোমায় মনে পড়ে
আর নপুংশক আমি অপারগতার আগুনে পুড়ি
আবার যদি ফিরে আসার সুযোগ পাই হে পিতামহ
কথা দিলাম জনতার মঞ্চে বিপ্লবী শ্রমিক হবো


অনন্তযাত্রা

এই মহাসড়ক পেরুলেই পৌঁছে যাব নতুন পরগনায়
পথের ধারে ছড়িয়ে আছে যাদের কঙ্কাল তারা আমার পূর্বপুরুষ
হালটানা গরুর মত মানুষের ক্ষয়িষ্ণু জীবন
চলতে চলতে পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করে
আমিও অনুসরণ করে চলছি আজন্ম
ওয়ারিশ সূরে বেছে নিয়েছি পূর্বপুরুষের চাষী জীবন
বাবা বলেছেন-দাদার মত চওড়া বুকের ছাতি আমার
বাঘের সাথে পাঞ্জা লড়ে ফসল ফলাই ক্ষেতে
এবার ফসল পরিপক্ব হলেই ঘরে ফিরব মহাসমারোহে
মহাজন সফল চাষীকে বুকে টেনে নিবে আদরে

জয়ের নেশায় ক্ষিপ্র বেগে যে ঘোড়া ছুটে যুদ্ধের ময়দানে
তাকে ফেরানোর দুঃসাহস করা পতঙ্গের ন্যায় আগুনে ঝাপ দেওয়ার সামিল
দিগ্বিজয়ী সৈনিক আমি চলছি আলীর বাহুবল নিয়ে
ফিরাতে এসো না কেউ-মহাজন আমার প্রতীক্ষায়
হে মহাজন অপার করুনাময় যদি আমি নিঃস্ব হই
অনাবৃষ্টি ঝড়ে ফসল না হয়-তবে ক্ষমা করবেন আমায়
হে মহাজন যদি মৌসুম না বুঝি-যদি ঘুমাই বেঘোরে
যদি ভুল ফসল ছিটাই জমিনে-তবে ক্ষমা করবেন আমায়
যদি হাট ভঙ্গে যায়-শুন্য থলে হাতে ফিরে আসি ঘরে তবে ক্ষমা করবেন
আমি অবাধ্য নই-বাধ্য অনুচর কেবল হাটের তামশায় ভুলে ছিলাম



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট