শব্দমালা : নুরুল ইসলাম বাবুল



রং 

গায়ে মেখে নেব আজ উৎসবের রং
তোমার গালেও লাগিয়ে দেব রক্তজবার লাল,
সবকিছু রাঙিয়ে দেব;
আকাশও থাকবে না নীল
 সাজবে রংধনুর সাতটি রঙে,

রং মেখে মেখে আজ শুয়ে থাকবো
পৃথিবীর শরীর জুড়ে।


শহরমুখি

একদিন শহর থেকে ফিরতে ফিরতে
ঘরে নিয়ে আসতাম পথের ধূলিকাদা,
আজ সেই মেঠোপথ কংক্রিটে মোড়া;

গ্রামীণ অনাত্মীয়ও শহর চেনে,
মেকআপে ঢাকা মুখ গুুুনগুন করে;
হুইসেল বাজাতে বাজাতে চলে যায়...

গ্রামগুলো আজ বড্ড শহরে চেনে।


তোমার স্বভাব

কোন কম্পনেই আমি কাঁপি না
অথচ তোমাকে কাঁপতে দেখলেই
থরথর কেঁপে উঠি,
তাবৎ ভয়েই আমি নির্ভয় থাকি
কেবল তোমাকে ভীতু হওয়া দেখলেই
আমি ভীষণ আতংকিত হয়ে যাই...

কেননা, আমি তোমার স্বভাব চিনি।



রাখালের বাঁশি

রাখালের বাঁশি বেজে উঠলে নেচে ওঠে ঘাস
উড়ে উড়ে খেলে যায় পথের ধুলোবালি,
তখন আমার পুড়তে থাকে মন
তখন আমার ভাঙতে থাকে গৃহকোণ
তখন আমি ভেসে চলে যাই আকাশে...

ও রাখাল কোথায় তুমি?
নিশিদিন বাজাও তোমার বাঁশের বাঁশি।



সূর্যমুখি

চোখ মেলে আকাশ দেখি না
ঠিক যতবার তোমাকে দেখি
তোমার পায়ে ঘুঙুর বেজে ওঠার আগে
তোমার চুলগুলো মেঘ হয়ে উড়ে যাওয়ার আগে
শেষবারের মতো অন্ধ হতে চাই না আমি।
সূর্য হওয়ার আগেই তুমি তো জানো-
আমি তোমার সূর্যমুখি।


তুমি

তোমাকে দেখলে দেখা হয়ে যায় রাতের জোছনা
তোমার মুখের কথা শুনলে শোনা হয়ে যায় পাখিদের গান,
তখন আমি মধ্যরাতের মতো স্তব্ধ হয়ে যাই
বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকি;
তখন মেঘের আড়ালে মুখ ঢাকে চাঁদ
পাখিরা চুপচাপ থাকে

 আমি কেবল তোমার এলোকেশে মেঘডম্বর আকাশ দেখি।



তুমি আসো না

তোমাকে কাছে পেলে ভেঙে চুরমার হয়ে যাই
অবশিষ্ট অহংকারটুকু গুড়ো-গুড়ো হয়ে যায়,
বুকের ভেতর আনন্দের ডুগডুগি বাজে
অথচ তুমি ঝুলে থাকো শূন্যে...

মাঝে মাঝে শোনাও শুধু আগমনী গান
সে গানে বেদনা জাগে আমার
কেননা, আসি-আসি করে তুমি আসো না।


আহ্বান

এখানে ফেলো তোমার পায়ের ধুলো
সযতেœ আমি মাথায় মাখিয়ে নেব,
তোমার জন্য রেখেছি যে ফুলগুলো
উজাড় করে হাতভরে তুলে দেব।

এখানে উড়াও এলোমেলো ওই চুল
তপ্ত বুকে বৃষ্টি নামবে তবেই,
শুধরে নেব জীবনের যত ভুল
পৃথিবীর বুকে স্বর্গ নামতে হবেই।


তোমাকে দেখাব

তোমাকে দেখাব আকাশের ঘন নীল
তোমাকে দেখাব খয়েরি ডানার চিল
তোমাকে দেখাব সবুজ মাঠের বুক
তোমাকে দেখাব বাংলা মায়ের মুখ
তোমাকে দেখাব নদীনালা খালবিল
তোমাকে দেখাব রংধনু ঝিলমিল
তোমাকে দেখাব বিচিত্র ফুল-ফল
তোমাকে দেখাব সাঁঝের জোনাকিদল
তোমাকে দেখাব আমাদের এই গ্রামে
কী যে অপরূপ পূর্ণিমারাত নামে।


স্বপ্ন

এখনো রেখেছি কিছুটা স্বপ্ন জমা
কেউ কি আছো স্বপ্নবিহীন ঘোরে?
তার কাছে চাই অতি সবিনয়ে ক্ষমা
এসে নিয়ে যাও স্বপ্ন দুচোখে ভরে।

স্বপ্নবিহীন জীবনে আসে না দুপুর,
হৃদয়ে বাজে না কখনো সুখের নূপুর।

একটা জীবনে হাজার স্বপ্ন থাকুক
ভাঙে যদি তার দুচারটা অবিরত,
শতবাধা-ঝড় জীবনে আসবে আসুক
তা বলে হয়ো না বেদনার কাছে নত।





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট