ভাঁটফুল




... তারপর আমি তাঁর পিছন পিছন হাঁটতে থাকি। সে দুই বার পিছনে তাকিয়ে আবার হাঁটতে থাকে, কিছু দূর গিয়ে আবার পিছনে তাকায় এবার উল্টো দিকে হাঁটতে হাঁটতে আগের চায়ের দোকানে এসে বসে। একটা সিগারেট জ্বালায়। ওস্তাদ, কামডা হইয়া যাইবো এতো টেনশন লওনের কিছু নাই। কথাটা বলার সাথে সাথে আমারে ডেকে পাশে বসায় হারু হাওলাদার। চোখে কালো সানগ্লাস পরার কারণে চোখ দেখা যাচ্ছে না, চৈত্রের এই দুপুরেও ফুলহাতা শার্টের উপরে খয়েরী রঙের কোট পড়েছে সে, কি রকম একটা অস্থিরতা তাঁর ভিতরে যে কেউ দেখলে বলে দিতে পারবে..!! হঠাৎ বলে ওঠে
-ব্যাটা, দেশ চালাই আমরা, কাজ হইবো, এইডা তুই যেমন জানস, তালগাছের বাইল্লা পাকিও জানে। পিছন পিছন কই যাইতেছিলি??
-আসলে হইছে কি ওস্তাদ, ফুলঝুরি নামের একটা মেয়ে যে কিছুদিন আগে খুন হইছিল, সেই ব্যাপারে...!!
-ধুর ব্যাটা এসব আমি অনেক আগেই ভুলে গেছি, বাদ দে, তুই একটা কাজ কর, ঘণ্টা খানেক পর, কাটাখালী নদীর পাড়ে আমার নৌকায় আয়.. 
এই বলে হারু হাওলাদার আবার হাঁটতে থাকে নদীর পাড় দিয়ে.. অনেকদূর যাওয়ার পর আমি আবার তাঁর পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম। একবার কি দুইবার পিছনে তাকিয়ে হাওলাদার নৌকায় ওঠে।

-ওস্তাদ, চলি আইছি..
-এতো তাড়াতাড়ি আইলি কেন হারামজাদা। আচ্ছা যা হোক শুন, নৌকা ভর্তি মালপত্র আছে, এগুলো নিয়া সোজা গাঙ দিয়া মনপুরা যাবি, সব গুলা বিক্রি দিয়া নগদ টাকা লইয়া আইজ সন্ধ্যার মধ্যে আমার বাড়িত আইবি, পারবি না..??
- কি কন ওস্তাদ, আমি বুঝছি অন্য কেইস, আমি মানুষটা খারাপ হইতে পারি কিন্তু এই কাম আমি করতে পারুম না, দেশের এই পরিস্থিতিতে গরিবের হক মাইরা খামু। আমি পারুম না। আপনে.....
-এই কেডা আছত, ওরে ধইরা নৌকায় উঠা.. হারামাজাদা হারামখোর তোরে.....

আমি দৌড়াচ্ছি.. পিছনে তিনজন। কোন দিকে যাচ্ছি বলতে পারতেছি না.. শুধু দৌড়াচ্ছি..  আঙুলের ফাঁকে কয়েকটা ভাঁটফুল আটকে আছে.. আমি দৌড়াচ্ছি... 


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট