সুদীর্ঘ শোক সংবাদ





একটি শোক সংবাদ! একটি শোক সংবাদ! চৌবাড়ীয়া নিবাসী…।
হকচকিয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠি। পুরো শরীরটা ঝিনঝিন করছে। ঝিনঝিন শব্দের তালে শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। ঘামের শিশিরবিন্দুর শীতলতায় বুকের মধ্যে ধুকপুকানি শুরু হয়েছে। এ ধুকপুকানি মৃত্যুর ঘ্রাণে জীবন্ত। জীবন্ত মৃত্যুর ভয়।
জানালার কাছাকাছি হ্যারিকেন। হ্যারিকেনের আলো আয়নার কাঁচে আবদ্ধ, বদ্ধ। আয়নায় ভাসে পরিচিত মুখ। মুখ লুকিয়ে ভীতু কেউ একজন চিন্তামগ্ন। চিন্তায় মশগুল আঁখি যুগল। আরে! এ ছদ্মবেশী চেহারার মালিক তো আমি নিজেই। যাক, ভয়…।
‘একটা বিয়ে বাড়ি। বাড়িতে মানুষের আনাগোনা, ভিড়ভাট্টা। অথচ অচেনা অতিথির আগমন। আগমনে হৈ-হুল্লোড় হট্টগোল। হট্টগোলের হাসি-তামাশায় পুরোদস্তুর খুশি পুরো বাড়ি।’
সর্বশেষ এ স্বপ্নটিই তো দেখেছিলাম। হ্যাঁ, একদম ঠিক। পুরোপুরি ঠিক। আমি শিওর। এইতো মনে পড়ছে। হুমম, পুরোপুরি খেয়াল আছে। কিন্তু…। কিন্তু, তারপরেই তো সংবাদটা পেলাম। শুনেছি বিয়ের স্বপ্ন দেখলে মৃত্যুর সংবাদ আসে।
আমার সন্নিকটেই চৌকি। চৌকির কোলে বালিশ ঘুমিয়ে। বালিশের নিচেই নেংটি পড়া হাতঘড়ি। হাতঘড়িতে ৪ঃ বেজে ৪৭ মিনিট। এ সময়টাতে স্বপ্নও নাকি সত্যি হয়। সত্যি হলে, এতোদিনে রাজপুত্র হয়ে যেতাম।
দরজায় ঠকঠক শব্দ। আমি ভীতসন্ত্রস্ত, অসহায়, গুটিসুটি হয়ে চৌকিতে শুয়ে আছি। কে যেন ডাকছে? ভয়াবহ সেই ডাক। ডাকে কলিজা অবধি শুকিয়ে গেছে। তৃষ্ণায় ধুঁকছে হৃৎপিণ্ড, শ্বাসনালী। শ্বাসনালীর জ্বালা যন্ত্রণায় হা-হুতাশের গরমে পুরো শরীর ঘেমে লবনাক্ত।
এই অতন্দ্র! এই অতন্দ্র! কিরে, আমার কথা শুনছিস না?
পরিচিত কন্ঠস্বর। হুঁশ ফেরে। হুঁশের হুঁশিয়ারিতে চোখ খোলে। চোখ ডলে ডলে সকাল আলোর সন্ধান মেলে। সন্ধানে ভয়ের স্বপ্নগুলো ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে।
‘হ, শুনছি।’
‘ওঠ তাড়াতাড়ি। তোর নিমাই দাদু মরে গেছে।’
বুকের মধ্যের হৃৎপিণ্ডটা জাতাঁকলে পিষ্ট। পিষ্ট দেহ ভিটে মাটি। মাটিতে লুটে পড়লো কয়েক ফোঁটা অশ্রুসজল। অশ্রুসজলে বেদনার ছাপ। ছাপের পাপে আসামি দেহপিঞ্জর। দেহপিঞ্জর দণ্ড বিধানে সাজাপ্রাপ্ত।
ইস্! কতোইনা হাসি-তামাশা করেছি। ইয়ার্কি মশকারি করেছি। মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েও কতো কটুকথা বলেছি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়েও…। বলেছি, আর কতো বানিয়ে বানিয়ে বলবে। এইতো গতকালই বলেছিলাম।
অশ্রুসিক্ত আঁখিদুটি। আঁখিদুটি আঁখিজলে রোগাক্রান্ত। রোগাক্রান্ত পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। আনন্দ আহ্লাদ। হাসি-তামাশা, খিলখিলিয়ে হাসি।
এই বুঝি স্বপ্নের সিঁড়ি। যে সিঁড়ির প্রত্যেক ভাঁজে ভাঁজে হারানোর শোক। শোকবার্তায় সংহতি মনোকষ্ট। মনোকষ্টের চিপাগলিতে ঠুকরে কাঁদে বুক পর্দার দেয়াল প্রাচীর।
অবশেষে, স্বপ্নটা সত্যি হলো। সত্যি কানামাছি ভোঁ ভোঁ জীবন।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট