পদাবলি : ৩




 ঈশ্বর, রাষ্ট্র ও নিম্নবিত্ত শিক্ষিত যুবক
রুদ্র সুশান্ত

উচ্চতর ডিগ্রিধারী ছেলেটা একটা চাকরীর জন্য যখন
তার টিউশনির টাকায় কেনা চটিজুতা ক্ষয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে-
তখন তার চোখে-মুখের করুণ ঝলসানিতে মায়ারূপধারী সন্ন্যাসী
অহরহ শিক্ষা ব্যবস্থা আর মুখোশধারী রাষ্ট্রের নিকুচি করে।
তার দীর্ঘশ্বাস গিয়ে পড়ে ঈশ্বরের কাঁধে,
ঈশ্বর হাত জোড় করে ক্ষমা চায়।

জীবিকার্জনের তাগিদে যার চুলগুলো রুক্ষ হয়ে গেছে
সেই ছেলেটারও চাঁদতুল্য প্রেমিকা আছে।
প্রেমিকাকে নৃতাত্ত্বিক চুমো দিয়ে সে বলেছে- এই বসন্তে তোমায় বাসন্তী শাড়ি দিবো,
কাজল দিবো, ফুল দিবো।
প্রাণ খুলে ঘুরে বেড়াবো- টিএসসি শাহবাগের শিরায় শিরায়।
বসন্ত তার আগমনধ্বনি বাজিয়ে দিয়েছে দিগি¦দিক।
রাষ্ট্রের নির্লজ্জ চশমা মধ্যরাতে দামামা বাজিয়ে চাকরীর কোটা পূর্ণ করে।

সার্টিফিকেটের বয়স বাড়ে, ঋতুর আবর্তনচক্রে নদীর জল শুকিয়ে যায়,
আমের মুকুল আসে, চিত্রা হরিণটা বাচ্চা দেয়,
গৃহস্থের লাঙ্গলের ফাল ক্ষয়ে যায়,
হরিদা দোকান ছেড়ে ডিলার হয়ে যায়,
পাশের কাকা মস্ত পাকাঘর করে ফেলে,
তেঁতুল পেকে গাছ থেকে ঝরে যায়,
প্রেমিকার অপেক্ষা থেকে অগ্নি ঝরে,
বাবার পুরাতন চশমাটাও নষ্ট হয়ে যায়,
গত দু’বছর ধরে বাবার চেয়ারটা ভাঙ্গা,
ছেলের চাকরী হলে একটা নতুন শাড়ি পাবে-
এ আশায় মায়ের কাপড়ে ঊনিশটা গিঁট্টো,
ছোট্ট বোনটি আশায় থাকে তার দাদা এত্তোগুলো চকলেট, নতুন জামা আনবে।

কিন্তু এ রাষ্ট্র নিষ্ঠুর চৌকিদার দিয়ে মুহূর্তে মুহূর্তে
ছিঁড়ে খাচ্ছে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত সৌখিন যুবকটাকে।
একটা চাকরী, ঐ একটা চকরী ফেলে জীবনটা কতোই না রঙ্গিন হতো !
কিন্তু নির্লিপ্ত রাষ্ট্র ভালোবাসার নামে কারো মুখে হাসি আনতে পারেনি,
মাকড়শার জালের মতো মুখোশধারীরা ধুয়াশা অন্তর্বাস পড়ে আছে হৃদপিন্ডে, প্রতিটা শিরা-উপশিরায়,
এমনকি সেন্সরের নিউরন গুলোতেও।

যুবকের নাকের ডগার ঘাম গিয়ে পড়ে যমুনার কোলে,
তার ওষ্ঠ থেকে নির্গত শব্দাবলী বায়ুম-লীয় স্থরে মিশে গিয়ে ঈশ্বরের কর্ণে আঘাত হানে।
ঈশ্বর নিরুপায় হয়ে করুণা ভিক্ষা করে, তান্ত্রিক সমাজপতিদের কাছে।

এতো কিছুর পরে নির্মল যুবকটা একটা চাকরী পায়, যোগ্যতার চেয়ে যৎসামান্য।
ফিরে এসে দেখে প্রেমিকা গর্ভবতী।
তখন সে রাষ্ট্রের মুখে থুথু ঝেড়ে আবার দায়িত্বগামী হয়।



অসুন্দরের প্রতিচ্ছায়া
মোহাম্মদ অংকন

বিকশিত পৃথিবীটা ক্রমশ অসুন্দরে ভরে উঠছে;
সুভাসিত স্থানগুলোকে আকড়ে ধরছে ময়লা, জীর্ণতা।
বৈশাখেও বৃষ্টির জল তার রং হারিয়ে নামছে-
যে জল সবচেয়ে বিশুদ্ধ ছিল; তা এখন এসিডে আচ্ছন্ন।

বাজারের লকলকে সবজিগুলো ক্রেতাকে ঠিকই আকৃষ্ট করছে;
বিপরীতে ফরমালিন তার সুযোগটা বুঝে নিচ্ছে ঠিকই।
মানুষকে হত্যা করতে আর বিষ লাগছেনা-
অসুন্দরের গন্ধেই নাকেরশ^াস বন্ধ হয়ে আসছে।

নিরাপত্তা বোধটা ঠিক কি? মানুষ তা বুঝছে না আজ।
ঘুমোতে যেতে ভয়; যদি জাগতে না পাওে সকালে!
গাড়িতে একটু স্থির করে বসা হয়ে ওঠছে না;
যদি চালক গড়িয়ে দেয় পুকুর-ডোবা কিংবা কারও বুকে।

চোখের সামনে অনেককেই দেখছে রক্ত জল ঝরাতে;
তবুও দৌঁড়ে গিয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেনা কেউ-
এই ভেবে,অসুন্দরের প্রতিচ্ছায়া যদি তাকেও  গ্রাস করে!
তাই তো সবাই অসুন্দরের আলিঙ্গনে রয়েছে একরকম।


এক মুঠো রোদ্দুর চাই
জমাদ্দার কাব্য

এক মুঠো রোদ্দুর চাই; পড়ে আছি আঁধারে।
অসৎ ভাবনা আমায় বেঁধে রেখেছে
নষ্টের মাঝারে।
দক্ষিণ থেকে উত্তর সাগর থেকে পাহাড়
সবাই শুধু ব্যস্ত থাকে ভেদাভেদ নেই আলো আঁধার।
অসম প্রতিযোগিতায় মানুষের আবাস
আলোর বিশালতা থেকে কালোর গহ্বরে
পুণ্য তাড়িয়ে দিনে দিনে যাচ্ছে পাপে ভরে
ফেরা হয় না পেয়েও পূর্বাভাস।
আকাশে সূর্য নেই, নেই চাঁদ
আছে শুধু পাতা কালো ফাঁদ।
দুর্নীতি, অন্যায় এটাই এখন ন্যায়
দিন দিন করে ভালোকে ক্ষয়।
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতেই আঁধারে গেছে ঢেকে।
গলার মালা গলায় ফাঁস হয়ে রয়েছে গেঁথে।
নিজের লাভে, সীমাহীন লোভে যাচ্ছি চলে
ভয়ঙ্কর এক চোরাবালি তলে।
আঁধার থেকে মুক্ত হতে
এক মুঠো রোদ্দুর চাই;
যে রোদ্দুর পৃথিবীর সকল অশুভকে তাড়াতে হবে ধাই।



গোধূলি মধুচন্দ্রিমা
হোসনা মুরাদ

কোনো এক বিকেলে ভ্রমণের উদ্যেশে আমি
বেরিয়ে পড়লাম অপার্থিব ইশারায় ।
দক্ষিণমুখী বাসের মাঝের সারির
ডানদিকের সিটে জানালা ঘেঁষে বসলাম ।

বাসটা যাচ্ছে সাই সাই করে বাতাস কাটিয়ে
মুগ্ধ আমি সাদানীল আকাশ দেখছিলাম ।
বিকালটা আকাশে হেলান দিতেই
লাল কমলা সোনালী রংগুলো এসে
জড়িয়ে ধরলো আকাশকে ।

রঙের আভা আমার গায়ে এসে পড়তে
আমিও চনমন উচ্ছসিত হয়ে উঠলাম ।
ভালোলাগা ভালোবাসার বেহায়াপনায়
হারিয়ে যেতে লাগলাম...
একবার উড়ছি, তলিয়ে যাচ্ছি আবার উড়ছি ।
বেপরোয়া ঘুরে বেড়াচ্ছি মহাকাশ থেকে মহাকাল ।
মোহ থেকে মোহগ্রস্ত হয়ে
নিজেকে সমর্পন করতে শুরু করলাম ।
ভোগ ও উপভোগের নেশায় মত্ত আমি
অপূর্ব এই গোধূলি মধুচন্দ্রিমায় !!!

একি !!!
আমি এখানে আস্তাকুড়ে পড়ে আছি কেন?
আমাকে খুঁজে পাচ্ছিনা কেন ?
সম্ভিত ফিরে পেয়ে দেখি
আমি আর আমি নেই
গতরহীন, চিত্তহীন, মস্তিষ্কহীন
কোমল শিরদাঁড়া নিয়ে
ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি
কিন্তু পারছিনা....

পার্থিব রঙের মাঝে আমাদের এই অপার্থিব
হারিয়ে যাওয়া,
অনতিক্রম্য পথ পার করেও প্রকৃত গন্তব্য
যেমন পাইনা
ফিরেও যেতে পারিনা ফেলে আসা উৎসমূলে ।
আমি-আমরা-তুই।

ঝলসানো পেখমের প্রাচুর্য
মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম

ভাঙা ঘুঙুরের কান্না নয়!
ক্ষত চেপে, নিয়ে এসেছি নৈশ ডাকঘরে-
                                     ফেলে রাখা সমুদ্রের সৎকার;

আনন্দগভীর খুঁড়ে, তরঙ্গের আগে, এনেছি
অজ্ঞাত কারও রিমিঝিমি, রাত্রি ছেঁকে মনোহর বিষ।

টুপটাপ ঝরে পড়বো যে কোনও সময়,
নিমিষে ভস্মীভূত যে কারও আঙুলের ভেতর?

সর্বনামের পাশে বসতে দাও বা না দাও,
একটু শুধু হাত বুলিয়ে দিয়ো যাবতীয় নুনে;

শুধু রক্তচক্ষু করে বাজতে এসেছি!
আঁকতে এসেছি উড়ন্ত বাদুড়ের ঝাঁক আর
              ঘন খুদকুঁড়োর পাশে কারও মায়াবী প্রস্থান।

পক্ষপাতসমূহ থাক, কাঠের কোকিল, পিতলের হাঁস
জেনে গেছে, কেন জেগে আছি কর্পূরের অনুকরণে;

ছায়া ভান করে ঘিরে আছি রক্তেমাখা বিদ্রুপ।
মোরগঝুঁটির ভেতরে ফেলে এসেছি ছুটির সংকেত?

ছেঁড়া তবলার খোলে জমিয়ে রেখো শিরীষের গোঙানি।
ঝলসানো পেখমের প্রাচুর্য ঢেলে দিয়ো জামবাটিতে;

শুধু স্বর-শোকে ডুবে থাকতে এসেছি,
আর কম্পাসে বিশ্বাস নেই তাই কংক্রিট ফুটো করে-
                         দেখতে এসেছি বিষাদের আড় চোখ।

আঁধারেই আমাদের সুখ
যাহিদ সুবহান

যেন এক দুঃসময়ের দিনযাপন
দারুণ অসময়ের দিনলিপি আমাদের
অচেনা আতঙ্কের জড়তায় আমরা কাপছি
অচেনা ডানায় ভর করে চলছে আমার স্বদেশ
এখানে আজ কত মুখ অথচ কোন কথা নেই
চারিদিকে বন তবু যেন কোন বৃক্ষ নেই
আমরা প্রতিদিন কাকের ডাক শুনতে শুনতে
কোকিলের সুরেলা গান ভুলতে বসেছি আজ
এখানে আমরা ভুতের গল্প শুনে ভয় পাই
অথচ হায়েনার সাথে বাস করি প্রতিনিয়ত
আমরা পায়রাকে খাঁচায় রেখেই শান্তি পাই
শকুন আমাদের এই আকাশের শোভা
অন্ধকার বড় অন্ধকারে হাঁটছি আমরা
আলো আমাদের থেকে দূরে দূরে হাঁটছে
আমরা যেন অন্ধকারেই ভালো আছি
যেন আঁধারেই আমাদের সব সুখ ...


সভ্য সে গাঁয়ে আয়
সাঈদ সাহেদুল ইসলাম

মানুষ নির্ভর শহরের বুকে ধূলি
মানুষ নির্ভর সড়কের বুকে চিৎকার
কাতর হয়েছে দাঁড়িয়ে থাকা নিশ্চুপে ল্যাম্পপোস্ট
বন্ধ হয়েছে ডিভাইডারের সবুজ নাসিকা ছিদ্র
গন্ধ লাগে না নাকে

গন্ধ বাতাস নষ্ট করেছে নাগরিক নাড়িভুড়ি
গাড়ির ধোঁয়াও পচন এনেছে বৃক্ষের ফুসফুসে

আমরা কেবল মানুষ দাবিতে বেঁচে আছি দিনমান
গরু-ছাগলের গোহালে যখন দেখছি না ধুলি গাঁয়
আমরা শহুরে ভূতের মতন চলেছি নির্দ্বিধায়
মাটির সোঁদা গন্ধ গাঁয়ের যায়নি হারিয়ে আজও
সভ্য সে গাঁয়ে আয়।


প্রশান্ত পাখি
বিটুল দেব

একাকিত্ব প্রশান্ত পাখিটি উড়তে উড়তে খোঁজে সবুজ সঙ্গিনী। সুখ দুঃখের করতে বয়ান। অবলীলায় মিলেছে যুগল মন মন্দির। হাল ছাড়া স্বপ্নের, আবার হাত ধরে গন্তব্য বিজয়ের আশায়। সফলতা বয়ে আনবে, যদি হামাগুড়ি দেয়া মাটির কথা মনে রাখে আর শীতার্ত রাতে মা পাখির ওম। সুনীল আকাশে জোড়া ডানা মেলে উড়ার কৌশল ভুলে গেলে, আজ না হয় কাল কাঁদবে গোপনে।

নদী বিষয়ক কবিতা
সবুজ আহমেদ কক্স

নদীর নাম শুনলেই সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করে
কিন্তু সাঁতার কাটা হয়নি এখনো
বাস্তবে কিংবা স্বপ্নে...

স্বপ্নে সাঁতার কাটতে চাইলেও একটিবার নদীর কাছাকাছি যাওয়া চাই।
                         যেতে হয়...
ডুব স্বপ্ন দেখতে চাইলে নামা চাই হাঁটুজল।
                                   নামতেই হয়..

যদি প্রসঙ্গ স্বপ্ন হয়, ভার্চুয়ালনৈকট্যে ঠিকটাক মিলছে না আঙুলের ক্লিক।

হলো না, হলো না
তোমাকে শিরোনাম করে, হলো না একটিও নদীকবিতা।

অথচ আমার স্বপ্নের নদীতে ঢেউ বিকট আওয়াজ করে,
বারংবার সাতারু দল চেচামেচি করে উঠে

হঠাৎ মাঝরাতে ঘুমভাঙ্গে...


সাত্ত্বিক সুখ
শফিকুল ইসলাম শফিক

আজ ফকির-আমিরের অন্দরমহলে
সাদা-কালো রাতের মহাসমাবেশ।
সারেজাহানে একটাই চাঁদের হাট
মোলায়েম উল্লাস ঝরে পড়ে অহর্নিশ।
পাপিষ্ঠ এই তপ্ত মরুভূমির ধূলিকণায়
ঝড়ের মতো অপ্রত্যাশিত ছিল বৃষ্টির আনাগোনা।

আজ অহমিকা বরফ গলা নদী
ঝরনার মতো হাসি তার বুকে ঢেউ তোলে।
ক্রোধেরা রাতের শিশির বিন্দু
আলমকুলে স্নিগ্ধ প্রভাতের আলোয় হাস্যোজ্জ্বল।
হিংসুটে মন আর খেলে না খুনসুঁটি
লোভাতুর অন্তরালে খুঁজে পাই সাত্ত্বিক সুখ।

বিভেদের দিগন্ত জোড়া দেয়াল    
প্রেমের তোড়ে ভেঙ্গে পড়ে অনায়াসে।
আমির মুঠি মুঠি সাধ-আহ্লাদ
বিলিয়ে দেয় পরম তৃপ্তির আঙিনায়।
উত্তর-দক্ষিণের এক মেরুতে অবস্থান,
ফকির-আমিরের মিঠেকড়া প্রেম ছুটে চলে দিগি¦দিক।


শুধু তুমিই কিছু চাওনা
খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন

ঈদ এলে সবারই কিছু কিছু বায়না থাকে
সাপ্তাহিক কালেকশন শেষে
বকশিস নিতে ঘোরে মহল্লার  হিজড়েগুলো।
বাজারের ঝাড়ুদার তোক্কেলও বলে
এবার যেন দুশো টাকা বাড়িয়ে দেই।
পাহারাদার সবদুলের মুখ কালো হয়ে যায় একশ দিলে।
লোকাল বাসের কন্ট্রাক্টর
আজকাল সিটিং সার্ভিস হয়ে যায়।
রিক্সায় চড়লে ধমকি দিয়ে
নিয়ে নেয় ঈদ সেলামি, যতবার চড়ি ততবার সেলামি গুনতে হয় আমার।
সেদিন লোকাল কাগজের
রিপোর্টার এসেছিল।
ঈদ এলে
মুদি দোকানির ভোল পাল্টে যায় প্রত্যেকটা  বছর।
মহল্লার যুবকগুলির কি যেন পিকনিক হয়, সেখানেও চাহিদা
পাঠায় দল বেঁধে।
মাদরাসার খাদেম আসে
তিনিতো ওই এগার মাসও এসে থাকেন।

পুরোনো জুতোটায় কালি দিতে বা
চুল-দাড়ীতে ক্ষৌরকর্মে বকশিশ লাগে।
শুধু তোমার লাগেনা কোন কিছু! কোন একটি ঈদেও।

তুমি কোনদিন বায়না করনা।
এক মাত্র বায়না তোমার আমিতিই ফিরব কবে।

আর আমি পাঁজরের দক্ষিণাঞ্চল খুঁড়ে খুঁড়ে দেখি
সেখানে শুধু অস্থিরতা।
সেখানে শুধু হাহাকার
তোমাকে কিছু দিতে না পারার বেদনা।


ঝুল-কালির শূন্য ঘর
ফখরুল হাসান

ধুলোপড়া শূন্য ঘরে ঝুল-কালি পরে আছে দীর্ঘদিন যাবৎ।
চাদর , বালিশের মোড়কগুলোতে শ্যাওলা জমে স্যাঁতসেঁতে।
অযন্তে অবহেলায় এখানে-ওখানে ছড়িয়ে থাকে স্মৃতিকথা!
দিন তারিখ ভুলে এভাবেই বেঁচে থাকে ব্যর্থ পঞ্জিকা। 


বাবার ছবি
আশিক বিন রহিম

আমাদের ঘরে- দেয়ালে বাবার কোনো ছবি নেই। ওনার মৃত্যুদিনে আমাদের ছোট যে বোনটি মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে কেঁদেছিলো- এখন তার একুশ পূর্ণ হয়েছে। আজকাল সে ঘড়ির টাইম দেখে নামাজ দাঁড়ায়, না দেখে সুরা-কেরাত পড়ে; অথচ কি আশ্চর্য, কল্পনায় একটি বারও সে বাবার মুখটা আঁকতে পারে না। কারণ, বোনের চোখেও বাবার কোনো ছবি নেই।

আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম- প্রায়ই দাদির কাছে দাদার মুখাকৃতি জানতে চায়। মা তখন বেহায়া চাঁদের মতো চুপচাপ চেয়ে থাকেন; অথচ একটা সময় তিনি মুখের ভাষা আর হাতের ইশারায় অনায়াসেই বাবার মুখ- চোখ এঁকে দিতেন। ওনার অঙ্গ-ভঙ্গির মাঝে আমরাও খুঁজে পেতাম বাবার ছবি- গায়ের গড়ন। কখনো আবার কথার পিঠে চড়ে বলে উঠতাম ‘হ- মা, বাবার গায়ের রঙ বাদামের খোসা লাহন আছিলো, মুখভর্তি দাড়ি আর কোঁকড়া চুলে বাবারে মনে হইতো রাজা-বাদশাহ্। আম্মা তখন মাটিতে দৃষ্টি পেতে বলতেন ‘অনেক সুন্দর আছিলো মানুষটা, যেমন আচার তেমন তার ব্যবহার’

আজকাল আম্মার ছানি পড়া চোখে বাবার কোনো ছবি আছে কি-না তা আমারা জানি না; তবে আম্মা বেঁচে আছেন বলেই ঘরের দেয়াল কিবং অ্যালবামে আমরা আর বাবার ছবি খুঁজতে যাই না।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট