ঘাতক



ঘাতক
বিবিকা দেব

দিনের আলো কোলাহল পেরিয়ে সন্ধ্যা মৌনতার স্পর্শ। কর্ণফুলীর তীরে পাশাপাশি দুটো জীবন। জলের ভাসমান আলোর পূর্ণতা। তারাগুচ্ছ আকাশে জোসনা। নিঃশ্বাসে উড়ে জোনাক প্রেমিক। রকমারি আলো আঁধারি ছায়াপথ। তাহলে জীবনে এমন কেন বিপর্যয়। সবকিছু দুমড়ে মুছড়ে আষাঢ়ী তা-বে কাগজের নৌকা । মহাকাশে এক টুকরো মেঘের লুটোপুটি। কখনো ভেলা হয়ে ভাসবে। আবার কখনো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে মাটির নরোম বুকে। সত্যিটাকে সহজে আড়াল করা যায় না। এক সময় না হয় এক সময় স্বচ্ছ হয়ে ভেসে উঠবে চোখের মানস পটে। চাঁদ সূর্যের আলোর ন্যায়।
সন্ধ্যার মুখোমুখি বসে জীবনের কথা ভাবছে তাসনুভা নিশি। দুচোখের কোণে জমানো গরম জলের ফোটা ঝিমিয়ে থাকা ভাসমান জাহাজের আলোয় চিকচিক করে। নিষ্প্রাণ পলকে ধূসর প্রতিচ্ছবি দেখে শিউরে উঠি। ক্লান্ত মন নিস্তেজ শরীরটাকে নিয়ে কোন রকম বাসায় ফিরে নিশি। প্রাণ চঞ্চল সদা হাসি খুশিতে মুখরিত। নিশি দিন-দিন মন মরা হয়ে থাকে । চার ভাই দুই বোনের মধ্যে নিশি ছোট। তাই আদরের মাত্রাটা একটু বেশী। পড়া লেখায় মেধাবী। বন্ধু বান্ধবীদের কাছে নিশি ছিল উড়ন্ত প্রজাপতি। জীবন থেকে এভাবে হোঁচট খাবে ভাবতে পারেনি। মা-বাবা বড় ভাইদের না জানিয়ে তৌসিফ নামের বাউ-েলে ছেলেকে বিয়ে করে। বিয়ের ছয় মাস পর তৌসিফের আসল রুপ উন্মোচিত হয়। ভেবে ছিল রাতের অন্ধকারে নিশি কামিণীর রুপ রস গন্ধ নিবে। ছোট্ট নিতু বাবা ডাকার কারণ জানতে চাওয়া তৌসিফ বেদম ভাবে অত্যাচার ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। রাতের পর রাত মানসিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। তখনি চোখের মানসপটে ভাসে তৌসিফের নিরন্তর ভালোবাসার কথা।
প্রতিদিন সময় দিতো। বেড়াতে নিয়ে যেত দর্শনীয় কোন স্থানে। লাইব্রেরীতে একসাথে যেত। একজন আরেক জনের পছন্দের লেখকের প্রিয় কোন কবিতার  লাইন পড়ে শোনাত। বিকেলে গোধূলির নরোম আলোয় পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে নিবু নিবু সন্ধ্যা উপভোগ করতো। মাত্র দুই মাসের পরিচিতসময়ে যেন অনেক যুগ ধরে তৌসিফকে চেনে। কখনো অভিমানে তৌসিফ আগে রাগ ভাঙাতো।
তৌসিফ একটা স্বনামধন্য প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করতো। সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অফিস টাইম। অফিস ছুটির পর যত সময় সবই নিশির জন্য বরাদ্দ থাকতো। নিমেষে জীবনেসময়টুকু ফুরিয়ে যায়। শাশুড়ী নিশিকে খুবই ¯েœহ করেন। কিন্তু ছেলের আচরণে কষ্ট পেতেন। ছেলেকে বুঝিয়ে বলতেন যেইনিশি তার বিয়ে করা বউ। কে শুনে কার কথা তৌসিফ ওর মর্জিমত । রিনা ভাবী তৌসিফের গোপন অভিসারের সঙ্গীনী। নীতুর জন্মদাতা বাবা। নিশি ভাবতো নীতুর বাবা বিদেশে থাকে। তাই চাচা তৌসিফিকে বাবা বলে ডাকে। রিনা ছিল তৌসিফের বন্ধুর স্ত্রী। তৌসিফের ছোটবেলার স্কুল বন্ধু হাসান। রিনা ওর স্ত্রী। সড়ক দুর্ঘটনায় হাসানের বাম পায়ের হাড় ভেঙে যায়। হাসানকে অনেক দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। টানা তিন মাস চিকিৎসার পর ভালো হয়নি। এদিকে অনেক টাকা পয়সা খরচ হয়েছে। ধার দেনা প্রচুর হয়েছে। ডাক্তার বলেছে আরো তিন মাস সময় লাগবে। পায়ের জোড়া লাগতে। আরো তিন মাসের খরচ জোগাতে রিনা অস্থির। কি করবে ? কোন উপায় নেই। বাবা মার কাছে আর কতো হাত পাতবে। চিকিৎসার খরচ জোগাতে হলে একটা চাকরি দরকার। কিন্তু এই অবস্থায় রিনা চাকরি পাবে কোথায় ?
হতাশা ও বিষণœতায় ঘিরে রাখে। একদিন বিকেলে হাসান বললো, শোন রিনা আমার একটা ছোট বেলার বন্ধু আছে ।ভালো কোম্পানীতে চাকরি করে। ওর কাছে গেলে নিশ্চয় কোন একটা চাকরি ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তৌসিফের নাম্বারে কল করব। তুমি এখন বাসায় যাও। ফ্রেশ হয়ে আসো। হাসপাতালের খাবার খেতে অরুচি লাগছে। বাসা থেকে রান্না করে আনবে। রিনা স্বামীর কথা মতো বাসায় ফিরে যায়। এদিকে হাসান কল করে তৌসিফকে।
Ñহ্যালো তৌসিফ কেমন আছিস ?
Ñভালো ।
                                         
Ñশুন বন্ধু একটা অনুরোধ রাখবি ?
Ñকি বলবি বল আগে ।
Ñতোর ভাবীকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে হবে । আসলে অনেক খরচপাতি হয়েছে । টাকা পয়সা অনেক ঋণ হয়েছে । ওর যা লেখাপড়া আছে তাতে চাইলে একটা চাকরি দিতে পারবি ।
Ñআচ্ছা ঠিক আছে হাসান । তুই কোন চিন্তা করিস না । ভাবীকে সকালে আমার অফিসে পাঠিয়ে দিস । কাগজপত্র দেখে জানাব কি করা যায় । আচ্ছা এখন রাখি । ভালো থাকিস ।

                                                         ২
লাইনটা কেটে দিয়ে হাসান বিমুঢ় হয়ে শুয়ে আছে । আর কত দিন শুয়ে থাকতে হবে জানি না । রাত আট টার দিকে রিনা খাবার নিয়ে আসে । হাসান রিনাকে সব কিছু খুলে বলে । তৌসিফ আমার ছোটবেলার স্কুল বন্ধু । নিশ্চয় চাকরির ব্যবস্থা করবে ।
পরদিন সকালে রিনা পরিপাঠি ভাবে তৌসিফের অফিসে পৌঁছায় । রিনা নিজের পরিচয় দিতেই তৌসিফ এম.ডি সাহেবের কাছে নিয়ে যায় । এম.ডি সমস্ত সার্টিফিকেট চেক করে বললেন । যদিও কোন পোষ্ট খালি নেই । তবু তৌসিফ এখানকার পুরানো স্টাফ । ওর অনুরোধ ফেলতে পারি না । তাই তোমাকে চাকরি দেব । নতুন একটা পোষ্টে । এই পোষ্টটা অবশ্যই আগে ছিল না । নতুন করে বাড়ানো হয়েছে ।
রিনা খুশিতে আত্মহারা হয়ে কৃতজ্ঞা জানায় । এই অভাবের দিনে অন্তত একটা চাকরি পেয়ে গেল । তাহলে উঠি আস্সালামু আলাইকুম ।
যদিও বন্ধুর বউ, রিনাকে তৌসিফের ভালো লাগে । রিনার শুভ্রতায় সারাক্ষণ ঘিরে রাখে । কখন যে রাত-দিন গিয়ে এক তারিখ এসে গেছে টের পাইনি । নীলচে শাড়ীতে রিনাকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে । অফিস ছুটির পর এক সাথে রিক্সায় বাসায় ফিরে দুজনে গল্প করতে করতে ।
এভাবে কয়েকটা মাস কেটে গেলো। হাসান হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়েছে । হাসান সারাদিন বাসায় থাকে । সকালে হাঁটার চেষ্টা করে । রিনা দিন-দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে । হাসানের মনে হাজারো প্রশ্ন । রিনা ইদানিং দেরি করে বাসায় ফিরে । জিজ্ঞেস করলে ঠিকঠাক উত্তর দেয় না । আমতা আমতা করে ঘুরিয়ে কথা বলে । আর শারীরিক বা মানসিক সম্পর্ক ঠিকমত হয় না । মাঝে মাঝে হাসান জোর করে চেষ্টার পর সফল হয় । তাও আবার বাঁধা দেয় । অনিচ্ছা প্রকাশ করে বেশী । হাসানের মনে খুবই খারাপ লাগে । হাসি খুশি প্রাণোজ্জ্বল বউটা যেন কেমন হয়ে গেল । হাসানের সন্দেহ হয় । রিনাকে বুঝতে দেয় না ।
একদিন বিকেলে তৌসিফ রিনাকে ধরে বাসায় নিয়ে আসে । হাসানের বুকের ভেতর দুক পুক শরু হয় । এগিয়ে জিজ্ঞেস করে রিনার কি হয়েছে । উত্তরে তৌসিফ বললো তেমন কিছু না । শুধু বমি করতেছে আর নাকি মাথা ঘুরছে । দুপুরে লাঞ্চ করেনি । তাই রিনা ভাবীকে বাসায় নিয়ে আসলাম । হাসান বললো ঠিক আছে । ভালো করেছিস বন্ধু । তৌসিফ তুই না থাকলে রিনা বাসায় ফিরতে পারতো না । আমি অবশ্যই দুপুরে কল করেছি । কিন্তু রিনা রিসিভ করেনি । মনে করেছি অফিসের কাজে ব্যস্ত আছে । পরে আর কল করিনি ।
Ñবসো তৌসিফ । চা খেয়ে যাবি ।
Ñনা হাসান । অফিসে আবার যেতে হবে । অন্য একদিন এসে খাবো ।
রিনাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছি । ডাক্তার ডাকব বলে কোন রকম বের হচ্ছি । এমন সময় রিনা পেছন থেকে ডাক দেয়। শোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না । তেমন কিছুই হয়নি । ঘুমিয়ে নিলে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে । রিনার কথা শুনে হাসান চেয়ারে বসে থাকে । অনেকক্ষণ সময় কেটে গেল । এর মধ্যে রিনা আরো একবার বমি করেছে । হাসান দুশ্চিন্তা করে । রিনার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ।
                                                     ৩
Ñআচ্ছা তোমার কি হয়েছে ?বলো তো সত্যি করে ।
Ñরিনা মুছকি হেসে উত্তর দেয় । তুমি জান না। এই সময় মেয়েদের কেন এমন হয় । ইস কি বোকা স্বামী আমার ।
Ñতার মানে তুমি মা হবে আমি বাবা হব । খুশিতে আত্মহারা হয়ে হাসান জড়িয়ে ধরে । আমার সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হবে । হাঁটবে কথা বলবে । আমাকে বাবা ডাকবে । আচ্ছা আজ থেকে তোমার সমস্ত কাজে আমি সাহায্য করবো ।
Ñঠিক আছে আমি কিছুই করবো না । তুমি সব কিছু করবে ।
দিন মাস পেরোতে থাকে । তৌসিফের আসা যাওয়া বেড়ে গেছে । হাসানের মনে সন্দেহ জাগে । একদিন সকাল বেলা চাকরি খোঁজে হাসান বেরিয়ে যায় । দুপুরে ফিরে আসে । দরজায় আধভেজা ভেতর থেকে তৌসিফ আর রিনার কথা শুনা যাচ্ছে । নিঃশব্দে পা ফেলে হাসান এগিয়ে যায় । চোখ কপালে উঠে গেল । রিনা দাঁড়িয়ে আছে আর তৌসিফ দুহাত দিয়ে রিনাকে জড়িয়ে ধরেছে । হাসান নিগূঢ় প্রেমের কাহিনী দেখে দরজার সামনে বসে পড়ে । শব্দ হতেই তৌসিফ বেরিয়ে আসে ।
Ñতৌসিফ বললো কিরে হাসান তুই কখন এলি । ডাকিসনি কেন রিনা ভাবীকে ? তোর কি শরীর খারাপ লাগে ?
Ñনা তেমন কিছু নয় । বাইরে বেশ কড়া রোদ । প্রচ- গরমে হয়তো মাথা ঘরছে ।
Ñএবার তৌসিফ বললো ঠিক আছে । তোরা কথা বল এবার আমি আসি । আচ্ছা ভাবী চলি তাহলে । ভালো থাকবেন ।
হাসান হতাশায় চুপসে যায় ! রাতে ঘুমাতে গিয়ে জিজ্ঞেস করে । আচ্ছা রিনা তোমার পেটের বাচ্চার বাবা কে ? আমি না তৌসিফ ?
Ñকি বলছো তুমি। তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে । তোমার বাচ্চার বাবা কেন তৌসিফ হবে ?
Ñরিনা আমি বিশ্বাস করি না। তৌসিফকে তোমার সাথে যেভাবে অন্তরঙ্গ ভাবে দেখছি । তাতে আমি নিশ্চিত যে, বাচ্চার বাবা আমি নই! তুমি আমাকে পছন্দ করো না, এটা বিয়ের আগে বলতে পারতে । আমি তোমাকে সাহায্য করতাম । রিনা তুমি আমাকে এভাবে ঠকালে। এটা বিশ্বাস করতে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে । ঠিক আছে, এখন থেকে আমরা আলাদা থাকব । আর তুমি যথা সময়ে তৌসিফের কাছে চলে যাবে । আশা করি তৌসিফ তোমাকে ভালো রাখবে।
এভাবে আরো কয়েকটা মাস চলে গেল । প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কেউ কোন কথা বলে না । হঠাৎ একদিন রাতে রিনা কাপড় ব্যাগে গুছিয়ে নিচ্ছে। হাসান বুঝতে পারে রিনা সত্যি চলে যাবে । কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলে না । সকাল বেলা রিনা সারা জীবনের জন্য বাসা ছেড়ে চলে যায়।
নারী ঘটিত ব্যাপারে রিনা এবং তৌসিফের চাকরি চলে যায় । তৌসিফ রিনাকে গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে আসে । মা জিজ্ঞেস করতেই বললো বন্ধুর বউ। কয়েক মাস বাড়ীতে থাকবে । হাসান একটা সমস্যার মধ্যে আছে । মিটে গেলেই ওর বউকে নিয়ে যাবে। মা তুমি কিছু চিন্তা করো না । এভাবে মাসের পর মাস চলতে থাকে।
এর মধ্যে রিনা একটা ফুটফুটে ছেলের জন্ম দিয়েছে । ছেলের প্রেমে তৌসিফ আনন্দিত । তৌসিফকে ওর মা বার-বার তাগাদা দিচ্ছে। হাসান এখনো আসছে না কেন ? রিনা আর ছেলেকে নিতে । তৌসিফ নিরুত্তর । এক সময় বলতে বলতে বিরক্ত হয়ে যায়। পরে এই বিষয় নিয়ে আর কথা এগোয় না । দিন গিয়ে রাত হয় । রাতের পর ভোরের আলোতে আলোকিত হয়। সময় গড়িয়ে পাঁচ বছর কেটে গেলো । রিনার প্রতি তৌসিফের আরো দায়িত্ব বেড়ে যায়। ধোঁয়াশা লাগে কিন্তু মুখ ফুটে ছেলেকে কিছুই বলতে পারে না । গ্রামের আশে পাশে নানা জনের দশ রকম কথা শুনতে                                                                                                                           
হয়। বিষয়টা পরিষ্কার যখন রিনা আবার মা হতেচলছে। তৌসিফের মায়ের মাথায় হাত ! তার মানে তৌসিফ হাসানের বউ নিয়ে পালিয়ে এসেছে !                                               
                                                                  ৪
বছর পেরোতে রিনা মেয়ের জন্ম দেয় । এই নিয়ে অনেক ঝগড়া হয় । নিতান্ত নিরুপায় । বাধ্য হয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করতে হয়। মন থেকে অন্যের বিয়ে করা বউ রিনাকে মা মেনে নিতে পারিনি । এই ফাঁকে কবিরাজের সানিধ্যে নিতো হলো। তেল পড়া, পানি পড়া, তাবিজ কবজ নিয়ে আসে । এর মধ্যে রিনা আর তৌসিফের মধ্যে প্রচ- ঝগড়া হয়। তৌসিফ পুনরায় শহরে চলে আসে । দুই মাসের পরিচয়ে নিশিকে বিয়ে করে তৌসিফ । দুজনের ছোট সংসার । নিশি জানে না, তৌসিফের গ্রামে আর একটা সংসার আছে।
সাজানো সংসারে ছোট শুয়ো পোকার অবস্থান নিশির তলপেট জুড়ে। নিষ্ঠুর তৌসিফ ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে নিশিকে মেডিকেল নিয়ে আসে। পেট থেকে সমস্ত তরল এম.আর করিয়ে নেয়। নিশির যখন জ্ঞান ফিরে আসে । তখন প্রচ- ব্যথায় কুঁকড়ে থাকে। তলপেটে হাত বুলিয়ে খুঁজতে থাকে শুয়ো পোকার অবস্থান। নিশি এখন বুঝতে পারে । তৌসিফ কেন সন্তান চায় না। তৌসিফের দুটো সন্তান আছে। তাই নীরব ঘাতক মেরে ফেলে নিশির মাতৃত্ব । আর এক মূহুর্ত নয়। তাসের ঘরের মতো ভাঙল নিশির ছোট সোনালু সংসার। এভাবে সময় ফুরিয়ে যায় ।
নিশির মা-বাবা ভাইয়েরা মিলে নিশির আবার বিয়ে দেয় । নিশি এখনো তৌসিফকে ভালোবাসে।
নিশির বর্তমান স্বামীর নাম নয়ন। একদিন সন্ধ্যাবেলা নিশি নয়নকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। হঠাৎ রাস্তা পার হয়ে দেখে তৌসিফ ফোন কানে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিশি দেখে অবাক । ভেতরটা জ্ঞান শূন্য। স্পদন দ্রুত গতিতে চলছে। হাত-পা ঠা-া। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের বৃষ্টি। নয়নের চোখ পড়তেই বললো তেমন কিছু না। চলো সামনে এগিয়ে যায়।
ডাক্তার দেখানো হয়ে গেলে বাসায় তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসে । কাজে কিছুতেই মন বসাতে পারছে না । শুধু তৌসিফের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে । বারবার চেষ্টা করে সরাতে। কিছুতেই সরাতে পারে না । এজন্য বোদয় লোকে বলে প্রথম প্রেম ভোলার নয় । নিজেকে শুধরে নেয় । এভাবে একজন ঘৃণ্য প্রতারকের জন্য কেন কষ্ট পাব ? নিশি তৌসিফকে ভুলে যেতে চাই । তার জন্য মনোবল বাড়াতে হবে । আবার পড়াশুনা শুরু করেছি । নতুন ভাবে বাঁচার লড়াই। এক সময় তৌসিফ নামের প্রবঞ্চকে মন থেকে বের করে দেয়। বুক থেকে স্বচ্ছও দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তাতে অনেকটা শরতের পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়ায় মেঘের এপার থেকে ওপার। আকাশের নীলের সঙ্গে মিশে চাঁদের এক টুকরো নিশি জোসনা । যা চুইয়ে চুইয়ে পড়ে সমগ্র পৃথিবী দৃশ্যমান।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট