পদাবলি : ১




ফুলের কোন পোষাক নেই 
আজাদ বঙ্গবাসী

ফুলের কোন পোষাক নেইÑ পোষাক নেই রাত ও দিনের
প্রকৃতিও পরে না কোন পোষাক
যে সুন্দর তুমি,  বেষ্টন করে রেখেছো আড়াল থেকে
দেখা অদেখা সব
সেই তোমার কাছে আসতে যেতে প্রয়োজন হয় না
কোন পোষাকের
ফুলের মতো লুটিয়ে পরি নারী তোমার কাছে 
একটা পা রাখি দোলায়িত মনের উপর
বিষ্ময়ে যখন দেখিÑ সেখানে জমে আছে অজ¯্র পুরুষ ইচ্ছে
তখন তোমায় শুদ্ধ সিজদার প্রস্তাব করি
তুমি জান্নাতের মতো হেসে উঠো
হেসে উঠো উঠতি যুবকের কল্পনার মতো
হেসে উঠো প্রকৃতির মতো
সুন্দর হতেই কি প্রকৃতিরা পোষাক পরে না
জন্ম-মৃত্যুতে কোন পোষাক নেই বলে
একদিন সৃজকের দিকে খুব করে বিনয় রাখবো;
পোষাক পরার মূল্য চেয়ে।


নিম্ন-মধ্যবিত্ত যে কবিতাগুলো লেখা হয়নি
বিশ্বজিৎ মজুমদার

কবিতা লেখার অক্ষরগুলো আকাশে বোঁবোঁ করে ঘুরছে- রানওয়ে ক্লিয়ার না থাকায়  প্লেনগুলো যেমন আকাশে চক্কর মারে- আমার লেখাগুলো ঠিকঠাক ল্যান্ড করতে পারছে না- ঘুরেই চলেছে, ঘুরেই চলেছে, পাক খেয়ে, পাক খেয়ে। আমি গড়িয়ার ছোট্ট গলির ভাড়া বাড়ি আঁকতে চাইছি কবিতা দিয়ে, কিন্তু আমাদের অতি প্রিয় ব্যবসা- কবিতা  আমাদের বসিয়ে দেয়, হয় গড়িয়াহাট ব্রিজের নিচের গাড়িগুলোর সাইডে মুরগীর পালক রান্নার পাশের ভাঙা প্লাস্টিক, এর টুলে বা লেক গার্ডেনস এর হলুদ সোফা সেটে এসি আর শ্যাম্পেন হাতে হাল্কা গানের সাথে কবিতাকে দাঁড় করিয়ে দেয় বেলুন হাতে গাড়ির কাঁচের বাইরে বা এসি স্করপিওর  বিলাস ভ্রমণের সিটে কিন্তু আমি নিম্ন মধ্যবিত্তের পোষ্টাপিসের এমআইএস থেকে কবিতাকে বেরতে দেখি ধুঁকতে ধুঁকতে, অকালে নিভে যাওয়া যৌনতাহীন ভাড়াটে কর্পোরেশন, এর জলের সংসারের ভিতর থেকে ,সাদা , খালি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা কবিতাকে বেরোতে দেখি, বারো হাজার টাকা স্যালারির একমাত্র রোজগেরে ছেলেটার বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ার প্রথম দিন  হাসপাতালে নিয়ে যাবার ট্যাক্সি থেকে, কবিতাকে বেরোতে দেখি , যারা এই বিরিয়ানি অধ্যুষিত বইমেলা চত্বরে ল্যান্ড করতে না পেরে ভোঁ ভোঁ উড়ে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে ।




কুসুমের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা
সানি সরকার

আরেকটুক্ষণ চুপ করে থাকো। এমন-ই

আমি এভাবেই দেখতে চাই তোমাকে
আর মাত্র কয়েক মুহূর্ত-ই তো, তারপর
তুমি চলে যাবে তোমার শহরে...

এইভাবেই। হ্যাঁ এইভাবেই
হাঁটুর ওপর ছুঁয়ে থাক হাত দু’টি

চুলগুলো ঝর্ণার মতো নেমে যাক বুকের ওপর...

আর তুমি খাটের ওপর পা দু’টি ভাঁজ করে বসো
যতœ করে গুঁজে নাও গোলাপি শাড়ির আঁচল

তোমার গভীর চোখ দু’টি এমনই স্বতন্ত্র থাকুক
সমুদ্রের মতন

হ্যাঁ, এমনতর, গাঢ়, আলাপচারি
এবং কমলালেবুর কোয়ার মতো ঠোঁট জোড়া,
একবারটি পুনরায় আরও কিছুটা বিধ্বংসী হোক...

দাঁড়াও। নড়ো না প্লিজ

এই হেমন্তের রাত্রিবেলা, এইভাবে
আমি আরও কিছুক্ষণ দেখতে চাই তোমাকে
কারণ যতক্ষণ জীবিত আছি
তোমার জন্যেই তো, ভুলে যেওনা

তারপরে চাইলে ফিরে যেও তোমার শহরে




সময়ের প্রয়োজনে
সাদিয়া রাকা

আমি দেখেছিলাম,
এক মৃতপ্রায়-জীর্ণ গাছ থেকে চারা বেরোতে
দুখানি পাতা নিয়ে, ছোট্ট চারাটি বাঁচার আশায়,
এই সম্ভাবনাময় পৃথিবীর ঐ নীল আকাশে তাকিয়ে ছিল।
যেন আকুল হয়ে বিধাতার তরে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছিল,
‘আমি বাঁচব তো?
দেখে বড্ড মায়া লেগেছিল।
তাই অনেক যতœ করে, গাছটিকে তিলে তিলে বড় করলাম।
ডালপালা গজালো, শাখাপ্রশাখায় সবুজের ঝড় উঠল,
রঙিন ফুল ধরল, পাখি এসে তার মধু খেল,
থোকায় থোকায় ফল ধরল, কত পথিকের ক্ষুধা নিবারিত হল,
মিষ্টি বাতাসে, তার ছায়ায় বসে মনের সব ক্লান্তি দূর হল ।
এভাবে, কেটে গেল কয়েক বসন্ত।
এক বর্ষায়, আমার একটি নৌকোর প্রয়োজন পড়ল।
তাই, সময়ের প্রয়োজনে-
আমি সেই গাছটি কেটে খুব ছিমছাম একটি পানসি বানালাম,
নদীতে ভাসাব বলে।
আমি দেখেছিলাম, প্রাণহীন কাঠের পানসি বানাতে,
সরল, সুন্দর,  কারুকাজ খচিত পানসি!
আমি দেখেছিলাম,
একটি অবয়বকে নদীর বুকে আচড় কেটে
এলোমেলো ভাবে অবিরাম গতিতে ছুটে চলতে, যেন জীবন্ত!
আমি তাতে খুঁজেছি এক বন্ধুকে,
বিধাতার কৃপায়-
যে আমাকে শিখিয়েছে,
নিজেকে বিলিয়ে দিয়েও কিভাবে বাঁচা যায়!
যে করেছিল আমার প্রয়োজন পূরণ ।
যেমনটা একদিন আমি করেছিলাম,
যার ঋণ সে মিটিয়েছিল তার সবটুকু দিয়ে।




ত্রিয়ন্তী
রাকিব ইমতিয়াজ

আমি এক ক্ষুদ্র মানব
দূর আকাশের বিশালতা যার ঠিকানা
যে ঠিকানায় সে সবর্ত সমাদৃত
তন্দ্রা আসলেই শহরটা বনে যায় তার
নিকুঞ্জ চক্ষুদ্বয়ের কোনায় ভাসমান হয়
এক মৃয়মাণ হাসি
মনে হয় এ যেন কৃষ্ণপক্ষের এক চিলতে চাঁদ
আমি এক ময়ূরাক্ষী নদীর ঢেউ
যে ঢেউ ত্রিয়ন্তীর চক্ষু সমুদ্রে বিস্তৃত
কখনও এপার কখনও ওপার
বিরামহীন চাহনিতে চেয়ে আছে ত্রিয়ন্তী
ক্লান্তির ছিটে ফোটাও নেই চোখে
দিন যায়...
ত্রিয়ন্তী নির্বাক থেকে নির্বাকতর হয়।


দাও ছুঁয়ে দাও
মাহদী হাসান

এক বিকেলের স্বপ্নগুলো দেয় না ধরা
চন্দ্রাহত বুকের ভেতর ভীষণ খরা।
পা বাড়ালেই এক পৃথিবী শেষ হয়ে যায়!
কোথায় যাবো ভাবছি বসে এই অবেলায়।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে যাই হারিয়ে
মহাজগত ডাকছে আমায় হাত বাড়িয়ে
হয় না যাওয়া। গুমরে কাঁদি বিষণœতায়
আটকে আছি এই শহরের কঠিন মায়ায়।

একটা খোঁপায় জোনাক পোকা যাচ্ছে নেচে
দেখার লোভেই হতভাগা থাকছি বেঁচে।
সঙ্গে আছে শ্যাওলা ধরা আমলনামা
মহাকালের পিছ ছাড়িনি হয় না থামা।

মন বসে না কোনো কাজে- ছন্নছাড়া
সুখের এবং দুখের স্মৃতি দেয় না নাড়া।
তাল হারিয়ে চোখের জলে ভাসতে থাকি
এই শহরের বৃত্তকলায় দেখছো নাকি!

ইচ্ছেগুলো  হাওয়ায় ভাসে দেয় না ধরা
দিনের পরে দিন চলে যায় বাড়ছে জড়া।
হাত বাড়ালেই এই আমাকে পারবে ছুঁতে
দাও ছুঁয়ে দাও কষ্টগুলো দাও না পুঁতে।



আমায় ভুলনা
শ্যামলী বিনতে আমজাদ  

আলুর ভর্তা তোমার হাতের
লাউয়ের শাকে গরম ভাতের
হয়না তুলনা -
তুমি আমায় তুলনা
তুমি আমায় ভুলনা।


টেবিল ভরা খাবার কত
গন্ধ খুঁজি অবিরত,
পাই না যে আর স্বাদ-
কেন দিচ্ছো আমায় বাদ!
কেন দিচ্ছো আমায় বাদ!




কাটা ঘুড়ি
পারভেজ মল্লিক

গোধুলি বেলায় একটা ঘুড়ি কেটেছে। পড়েছে ছাতে। সাথে রক্তের ফোঁটা।
থমকে দাঁড়িয়ে পড়ি। সঠিক দিক নির্ণয় করি। তারপর প্রাণপণে ছোটা।
একটুকরো সুতোয় বাঁধা নীল সবুজ জীবন। বেপরোয়া। পেতেই হবে।

একরাশ ভালো থাকার মানে মাখানো ওর গায়ে। রং বাদামী।
মুহূর্তরা ছিটকে পড়ে পায়ের চোটে। রাস্তা ক্ষতবিক্ষত। অকস্মাৎ থামি।
দেখি হতচ্ছাড়া উঁকি দিচ্ছে ভীত চোখে। চিলেকোঠায় । আমার শৈশবে।

হাওয়ার আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হতে মরিয়া তখন। গোলামী নামঞ্জুর।
নাড়ির শেষ টুকরোখানা শূন্যে ভাসিয়ে স্লোগান, প্রতিবাদ পুরোদস্তুর।
আর কলঙ্কিত নয় কামুক লাটাইয়ের ছোঁয়ায়। এ নিলাম বন্ধ হোক তবে।

সাবধানী হাত খামচে ধরে কাগজের শরীর। রোমকূপে নখের ভালোবাসা।
ঘরে আনি সারাটা বিকেলের সঞ্চয়। শিখি সহনশীলতা। নির্জীবের ভাষা।
শুনি হাজারো হাতবদলের বায়োগ্রাফি। সার্থক উড়ানের বীজ মৃত্যুপ্রসবে।

তারপর গল্পের শেষে আকাশে রূপকথার চাঁদ ওঠে। আধখানা। বাঁকা কাস্তে।
ফের ভাসিয়ে দিই তাঁর শতচ্ছিন্ন শরীর। মুক্ত হও। শূন্যতাকে চুম্বনের ওয়াস্তে।


বিরহবিলাস
ইয়াকুব শাহরিয়ার

তোমার খুশি হতে তেমন কিছু লাগেনা। চুলের খোপায় কাঁচাফুল, হাতে চুরি, পায়ে নূপুর কিংবা নীল রং-এর একটা থ্রি-পিস কিছুই লাগে না তোমার খুশি হতে। সাংবাদিকতার ভাষার মতো করে চরম কটকটে স্বভাবে দু’চারটে ভালোবাসার কথা বলে দিলে তুমি অনেক খুশি হতে পারো। কবিদের মতো নরম স্বরে তোমাকে কিছু না বললেও চলে। ওসব তোমার লাগে না।

আমার লাগে, অনেক কিছুই লাগে। হাতে হাত রাখা লাগে, একসাথে হাটতে গেলে কনিষ্ঠা আঙ্গুল ধরা লাগে, রিকশার বাম পাশে বসে হাত মোড়া দিয়ে ধরা লাগে, সন্ধ্যায় আজকে স্নান করবো কিনা তাও জানা লাগে, কি করছি; কেনো করছি জিজ্ঞেস করা লাগে। তবেই আমি খুশি হই তোমার উপর। তবেই আমি তোমাকে ভালোবাসি নদীর মতন।

আমি তোমাকে খুশি করতে কিছুই করবো না- তবু তুমি আমার উপর ভীষণ খুশি থাকতে হবে। হ্যাঁ, খুশি থাকতে হবে। হোক সেটা অন্যায়, এটাই আমার বেস্ট ফিলোসোফি! আমার এমন অন্যায় ফিলোসোফি পৃথিবীর বুকে শুধু তোমার আর আমার জন্যে। আদালত পাড়ায় এমন ফিলোসোফি দিলে হয়তো আমাকে লাত্তি মেরে তাড়াবে লোহার কাটগড়া।

এমনটা মানতে তোমার এখন ভীষণ বাধা পড়েছে। বিপরীত কাটগড়ায় দাঁড়িয়ে সেকি অভিযোগ আমার উপর, চলে যাবে। গেলেও। এমন দুঃসময় যাপন করবার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা আমার সময়। কপালে ভাঁজ, ক্লিনসেভ মুখে এখন লম্বাটে দাঁড়িগুলোর অসাড় উল্লাস, চুলগুলো আনমনা খেলে যায় ঢেউ। রাত্রির বেলায় জ্যোৎস্নার বদলে করি বিরহবিলাস।



ক্লান্ত পৃথিবী
সোলায়মান আহমাদ

পৃথিবীর মনে ভয় নামক এক দূর্বলতা বাসা বেঁধেছে।
অথচ বোধগম্যহীন মস্তিষ্কে এটা পৌছায়নি আজো-
ভয় বলতে কোন অস্তিত্ব নেই-
যাকে ভয় বলো তা মূলত দূর্বলতা!

সহজ কুম্বিরাশ্রুর প্রাসাদে যে রক্তও জন্ম নিতে জানতো,

তা মধ্যবয়সী পৃথিবী ভুলে গেছে।
এখন সব দর্শনেন্দ্রিয় জল বহন করতে সাচ্ছন্দবোধ করে!

রক্তের চেতনায় এখন জলমৈর্ধন করছে বায়ু, পরিবেশ;
যার ফলসরূপ নিষ্প্রভ হ্রেসার অঙ্কুর নির্বাপনে,

তাই দুপুরেই পৃথিবী ক্লান্ত,
সন্ধ্যাবতীর প্রদীপ হয়তো ডানহাতে জ্বলবে না,
আঁধারের ডাক আসবে না সুপ্তির প্রেম নিয়ে
আগুন ভুলেছে বলে জলেই ভাসে ডুবে আজ পৃথিবী!


ডেকে নিও গোপনে
মারুফ নয়ন

আমাকে ডেকে নিও তোমার খুব কাছে, যেখানে সবুজ ঘাসের উপর বিছিয়ে রেখেছো শীতল পাটি; যেখানে বৃক্ষ, আরো সবুজ, আরো সতেজ, আরো ছায়া  দেয়, যেখানে নদীর স্রোতধারা কলকল ধ্বনিতে উচ্চারণ করে তোমার নাম, যেখানে পাখিরা তোমার নামের সংগীত গায়, যেখানে হাত বাড়ালেই সব কিছু মুঠোয় ধরা দেয়। আমাকে ডেকে নিও সেখানে, সেই মধুর আলাপনে, যেভাবে জলের ওপর একটি সবুজ পাতা খুব গোপনে তলিয়ে যায়।




তোমার আমার
মেহেদী রানা

তোমার সকাল কফি চা আর বাইপাসে পথ চলা,
আমার সকাল নিকোটিনে মোড়া হিমুর হলুদ পাঞ্জাবি খোঁজা।
তোমার ফিজিক্স হকিন্স মেরী নিউটনে ডুব
মারা,
আমার ফিজিক্স রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দে মোড়া..।
তোমার ব্যাগে quantum classical খেলা করে particle physics,
আমার ব্যাগে নেরুদা, পেত্রার্ক আর দাস ক্যাপিটালের lyrics,
তোমার কলেজ আলফা বিটা আর গামার সাথে কথা বলা,
আমার কলেজ ক্যাফেটেরিয়া আর সবুজ ঘাসে পড়ে থাকা।
আমার কাছে ক্লাসরুম মানে তাই অনেকটা ঠিক হ-য-ব-র-ল,
তোমার কাছে ক্লাসরুম মানে তাই শুধুই বেনিআসহকলা।
তোমার বিকেল নন্দন চত্বর আর ভিক্টোরিয়ায় ঘোরা,
আমার বিকেল ঘামের গন্ধে গোলের শব্দে ভরা।
তোমার সুরে শ্রেয়া শান আর লতার কথায় মোড়া,
আমার সুরে আমিই আমি বনলতা ঝিন্টি আর নীরা।
তোমার রাত্রি অক্সফোর্ড, হাভার্ড আর নালন্দার স্বপ্নে মোড়া,
আমার রাত্রি চে, ফিডেল আর বিপ্লবের সুরেই ফেরা।


অতি সাধারণ
খায়রুল আলম রাজু

তোমার বিনম্র চাওয়ার কাছে 
আমি পরাজিত, আমি লজ্জিত!
কেননা অজুহাত যখন পারিজাত
জীবন তখন ছোট গল্প;
নতুবা সম্প্রদান করা তখন সুদীর্ঘ উপন্যাস বটে!
কালের যাত্রায় আমি পথ হারা পথিক,
ফুলের বাগানে মালি।
তবে পারিজাত কোনো ফুল চাষ করিনি কখনো!
দান করার মতো অনেক কিছুই আছে
একগুচ্ছ কষ্ট, রাত্রি জাগা ক্ষণ,
ক্লান্তিকর সকাল আর নীল রঙ!
অবশ্য তোমাকে দেওয়ার মতো
কিছুই নেই আমার!
দিনের নীলিমা আর রাতের নক্ষত্র
যদিওবা আমার বাগানের ফসল,
অথচ দান করার সংগতি আমার নেই
আমি তো অতি-সাধারণ!
তাই আমি অবহেলিত আর লাঞ্চিত!


তোমাকে ছুঁয়ে দিতে
সুমন আহমেদ 

তোমাকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয় নেশাতুর যুগল চোখের দৃষ্টিতে;
তুমি নামে স্বর্গ নামে আমার পৃথিবীর সমস্ত আঙিনায়।
শীতার্ত পাখির মতো সমস্ত বাঁধার প্রাচীর ভেঙে, শঙ্খচিল ডানা
মেলে, তুমি এসো এই শীতে- কুহেলিকা ও রোদ্দুর ভালোবাসায়।
দূর্বাঘাস আর বাঁশ বাগানের অবয়ব চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়বে শিশির বিন্দু,
নেড়া মাথার দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় বৃক্ষগুলো পূর্ণতা প্রত্যয়ে
আবারও স্বপ্ন বুনবে নতুনত্বের প্রত্যাশায়।
কুয়াশার চাদর সরিয়ে ভোরের ঊষারের রক্তিম কিরণে
মন রাঙিয়ে, তোমাকে ছুঁয়ে দিতে-
কুসুম কাননে দীর্ঘ প্রতীক্ষায়- গাঁদা, ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকা।



এমন অসময়ে অন্ধকারে
নুরুল ইসলাম বাবুল

আগুনে পুড়িয়ে দিলে ঘর
নিভে যাবে ছারপোকাদের বংশের বাতি
দেশলাই কাঠি হাতে নিয়োজিত গোলাম
হেঁটে যায় দ্বিধা-দ্বন্ধ ত্রস্ত্র পায়ে...

সত্যি কি পুড়িয়ে দিলে ঘর বেপরোয়া আগুনে
নিভে যাবে ছারপোকাদের বংশের বাতি ?

একদল রাতজাগা ঝিঁঝিঁ পোকা আতকিংত উচ্ছ্বাসে
আমাদের নির্বুদ্ধিতায় মনে মনে হাসে।


কবিতা বিরহের অন্য নাম
ফজলুর রহমান

নিঃশ্বাসের ভেতর কবিতার শব্দরা আজকাল নীল ভ্রমরের মতন গুনগুন করে না।
তোমার নীল নাকফুলে ওরা কবে বন্দি হলো তাও বলে গেল না।
পা টিপে টিপে হাওয়ারা আসে,
চুম্বনে ভাঙে সন্ধ্যামালতীর ঘুম;
মাছরাঙার মতন নিঃসঙ্গ দুপুরে কবিতার দোরে,
সে হাওয়া কড়া নেড়ে নেড়ে নিঃশব্দে চলে যায়।
ভাবি শব্দেরা এলো বুঝি,
কিন্তু তারা আর আসে না।
তোমার মতো তারাও অন্য কোথাও,
অন্য কারো ঘর-গেরস্থলি করতে ব্যস্ত;
শূন্য কলমটা সাদা শাড়ি পরা বিধবার মতন নিষ্প্রাণ।
ভাষা বলে গেল হাওর-বাওরের জেলেদের কাছে ঘুরে আসবে কদিন,
বললাম তাকে-‘ফিরবে তো আবার?’
শব্দের মতো করবে না ঘর অন্য কারো?
সে বললো, না, যদি যায় তবে দেশ মাতৃকার মিছিলে, স্লোগানে ঝড় তুলবো একদিন।
আমি বললাম-‘মাথার দিব্যি রইলো,
আমার কবি হওয়ার আহ্লাদটুকু আশকারা পেতে দিও,
ডান হাতের বৃদ্ধা, তর্জনী আর মধ্যমার ভেতরে তাকে বাঁচতে দিও।
উপমারা বললো, ভোরের সাথে গ্রামে-গঞ্জে থাকবে কিছু দিন,
তাঁতি, ময়রার ঘরে করবে বাস।
হেরিকেনের ঘোলা আলোয় মাকুর ঘটঘট আওয়াজ শুনবে তারা;
বললাম যাও, আবার আসবে তো?
রহস্যমাখা হাসি হেসে বললো, আসবো বই কি;
অনেক দিন হলো গাঁয়ের জ্যোৎস্নার সাথে তারা করছে ঘর।
এক জীবনে কবি হওয়ার আহ্লাদটুকু পূরণ হলো না আর,
আশকারা পাওয়া অনুভূতিরা বরফ জলে গেল মিশে;
তোমার চোখের অপাঠ্য বিষণœ বিকেলের গল্পের মতন তা রয়ে গেল অধরা।




জীবন কবিতা
মোঃ হাসান মাহমুদ

থেমে গেছে কবিতার ছন্দ
উঠছে না সুর মিলছে না হিসেব, মন্থর ছন্দ গতি
জীবন কবিতায় ছন্দের বড় পতন, নিবু নিবু জ্যোতি
অবিন্যস্ত অক্ষর অর্থহীন শব্দে কবিতার অমিল বিন্যাস
মাধুর্যহীন বাক্যে জীবন গেছে থেমে, কবিতার পরবাস।
মর্মকথাহীন বাক্য মিশ্রণে শ্লথ জীবন গতি
শূণ্য খাঁ খাঁ অন্তঃবাসে কবিতার মর্ম জৌতি
গরুচ-ালী আর জড়তার জীবন বেঁধেছে সুরের পা
জীবন মরুর বাস্তবতায় শুকনো ধূসর কবিতার বাগিচা।
জীবন কবিতা আজ ছন্দ ছাড়া, অমিল শব্দের অন্তমিল
নিয়ম শৃঙ্খলার রক্ত প্রেমে থেমেছে জীবনের ছন্দ সলিল।



হলুদ সকাল
নুশরাত রুমু

হেমন্তের হলুদ সকালে সাইরেন বাজায় হলুদ পাখি।
জীর্ণ জীবনে ফিকে অতীত উঁকি মারে।
তবু মাঠে ঘাসের ডগারা আনন্দে মাতে বিন্দু বিন্দু স্বচ্ছ জল নিয়ে,
রবির কিরণ রাতের কান্না লুকায় তড়িঘড়ি করে
উচ্ছ্বাসী বাতাস হাত বুলিয়ে যায় ধানের ক্ষেতে,
মেঘমেদুর ভাবনায় আচ্ছন্ন মন ঝলসে ওঠায় ব্যাকুল
নতুন উদ্যমে রসের হাঁড়ি গুছিয়ে নেয় কৃষাণীরা
খেজুর গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক।
আমি আনমনা হই-
ফিঙের কৌণিক লেজে
জীবনের সমীকরণ খুঁজি।


চলেই তো যাবো একদিন
আবুল বাশার শেখ

আমি প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করি নিজের বিবেকের সাথে
আমি প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করি বৈরি এই সমাজের সাথে।
সত্য বিবেকের মরণের কিছুকাল আগেও আমাকে
দগ্ধ করেছে সভ্যতার কিছু কুলাঙ্গার তবুও
নিজেকে মৃত বিবেকের কাছে বন্ধক রেখেছি হাসির ছলে।
মাঝে মাঝে মুখোশের অন্তরালে হায়েনাগুলোকে
টিপে টিপে মারতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারিনা,
অতীতের অনেক কিছুই তাড়া করে,
ভুলে যেতে চাই কিন্তু পারিনা কে যেন ডাকে
খুব বেশি কাছে থেকে ডাকে-
তুমি চলে এসো সব দোয়ার খোলা তোমার জন্য।
চলেই তো যাবো একদিন কি লাভ এই মায়া রেখে
তোমরা ভালো থেকো আমার তার প্রয়োজন নেই,
আমি তো চলেই যাবো, কোন একদিন।


পোড়া মবিলের দাগ
স্বপন শর্মা

পোড়া কপাল, পোড়া-মবিল বিশেষণে ঢের মিল।
একদিন কপালের ডাক্তার দেখাই-
তিনি গভীর মনোযোগে দেখেন
তার পর প্রেসক্রিপশন লেখতে গিয়; লিখল না
ভিজিট দিতে না পারায়, চিকিৎসা আর হয় না-

বেকার নামক ঘানি-টানি কপাল দোষে-
ঘানি টানতে টানতে কখন যেনো মানুষ টানার কাজ পেয়ে যাই,
ভালোয় চলছিল, মিরপুর, গুলিস্থান, সাভার;
একদিন আজিমপুর।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাড়ে-তিন হাত মাটি বরাদ্দ নিয়ে
বৃদ্ধ কচ্ছপের ন্যায় মন্থরগতি রেখে ফিরছিলাম-

আমাকে ঘিরে কোলাহল, কিছু বুঝে ওঠার আগে
আয়নায় চেয়ে দেখি কপাল জুড়ে পোড়া মবিলের দাগ
আমি নির্বাক অশ্রুজল মবিল রঙে সাদা শার্টে মাখে....


খেলাঘর
বৈশাখী চক্রবর্তী

তোমরা ভাবোটা কি?
যখন যা ইচ্ছে, তাই?

প্রকৃতিকে ভালোবাসো? বেশ
কবিতা লেখাতে আসক্তি, বাহ্ ভালো,
সোনালী ধানের ফুলের সৌন্দর্য আর
মৌ জোৎস্নার সুগন্ধি আবেশ, সেওতো ছিল।।

বিস্তৃীর্ণ বিপুল জলরাশি
হৃদয়াঙ্গনে দুর্নিবার অশান্ত ঢেউ,
বর্ষার প্রথম কদমের সুগন্ধ
বিজন সন্ধ্যায় অমোঘ ডাক দিলো কি কেউ?

যখন দরকার শরীরী আলিঙ্গন
আলিঙ্গন শেষে ছুড়ে দাও, দূরে ফেল
শরীরে তখন শুধু শরীরই বর্তমান
অন্ধকারে বিলীন, বনজোৎস্না মৌ হারালো।
শূন্যতার নিজস্ব একটা রূপ আছে
কখনো সে অতীত হয় কখনো বা বর্তমান,
ভালোবাসো খেলতে আমায় নিয়ে,
প্রেমই হোক আর বিরহ, দুই তো তোমারই দান।

বারবার প্রেমের আবেশ সৃষ্টি করো আমাতে
বইয়ে দাও শাপলা-শালুক, স্রোতে, ভালোবাসার
ধানফুলের সুগন্ধ আর মাতাল করা মৌ,
অবশেষে হৃদয় রক্তক্ষত, বারবার খেলাঘর চুরমার।।


অপেক্ষা
ইকরামুল হাসান শাকিল

প্রেমিক হয়ে কতবার ভালোবাসতে এসেছি নদীর মতো
মুঠোবদ্ধ আমার এ দুটো হাত দ্যাখোনি, দ্যাখোনি
কঠিন অস্থিরতার তুমুল ঢেউ
আমি হয়তো তাই বহুদূর চলে যেতে চেয়েছি; একাই
যেতে যেতে বারবার ফিরেও এসেছি হৃষ্টপুষ্ট হয়ে
কত সহস্র সন্ধ্যা অতীত হয়েছ সন্ন্যাসীমগ্ন দীর্ঘতম বৃক্ষের নিচে
কান পেতে বসে থেকেছি প্রেম সঙ্গীতের প্রতিক্ষায়
আজ ঘৃণা নেই, নেই মান-অভিমানের অভিযোগ,
জমে আছে ক্লান্তি বেঁচে থাকার
জ্বালাময় বুকে একান্ত  প্রাগৈতিহাসিক সুখের বারান্দা আছে
শুধু সেগুনকাঠের আলমারি নেই দরজার ওপাশে
বুকের ব্যালকনিতে অই ওড়নার সীমানায়
শরতমরা কাঁশফুলেরা দ্যাখো কতোটা
আনুগত্যে হেলে আছে তোমার দিকে হাসির মায়ায়
আবোল তাবোল বাতাসে নীল শাদা জামার ভাঁজ খুলে
ফিরে দ্যাখো কেউ আছে অপেক্ষায়...


সময়
লুৎফুন নাহার লোপা

ক্যালেন্ডার উল্টিয়ে দেখা গেল
ছুটিহীন আরো একটি মাস
ঝুলে আছে কৃত্তিম চাঁদের মতো।
অথচ মনে মনে সে হাটছিল বহুদূর
হাতের উপর ঝুলছিল যে কয়টি মাস
সাথে নিয়ে, বার বার একই কক্ষপথে ঘুরে
সে টেনে তুলতে চাইছিল উষ্ণতা,
আর অপূরণীয় সেই সব স্বপ্নের কথা
ফুরিয়ে আসছিল মৃত্যুর কাছাকাছি।


গণিকা
জাকারিয়া প্রীণন 

পথিক বললেন-
পৃথিবী অনুভব ছন্দের মতোয় অনুধাবনীয়
মন দুলায়িত হয় বটে; দুলে না!
পথিককে নির্বিঘেœ বলা যেতো-
পৃথিবী তবে কী কবিতা?
প্রকৃতি কী কবি?

পথিকের চোখে খেলছে অন্ধকার গীরিপথ-
চোখ ছুটছে;
দেহ ছুটছে;
চোখ লুকিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর ওপারে
দেহ পড়ে যাচ্ছে গহীন কুয়োয়!
পথিক বলেন নি-
চোখ নাকি দেহ!
কার সক্ষয়তা বেশি?

আচমকা পথিক বললেন-
মন না থাকলে কিছুই দেখা যায় না
আমার কাছেও দেখাটাই মুখ্য মনে হলো!

পথিক যাচ্ছেন-
আমি দেখছি পৃথিবীর আলো আরো গাঢ়
আরো মসৃণ
শুনতে পাচ্ছি শালিকের ডানা ভাঙা শব্দ
পথিকের পদধ্বনি
আর
দেখতে পাচ্ছি আমার চোখ থেকে খসে পড়ছে আদিম পাপ
তোমার দেহ থেকে উড়ে আসছে আদিম পূণ্যতা...


আক্ষেপ
সাদিক আল আমিন

আমাদেরও এতোটুকু ঘর ছিলো, ছিলো আশ্বাসের বাগান
অথবা ভোররাতে কোনো স্বপ্ন ছোঁবো বলে সারাটা রাত
নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়ার প্রবণতা ছিলো এতোটুকুই যাতনা;
প্রিয় চোখ অন্য চোখে তাকালে তারও বেদনা ছিলো!
ঘুড়ি ঘুড়ি উড়িয়ে দেবার পরে আর নাটাই কখনো যন্ত্রণা দিতোনা
এসব স্বীকারোক্তির কাছে আমার কিছুই নেই চাওয়ার
ইচ্ছেও নেই ফিরে পাবার গুটিগুটি পায়ে দৌড়ে বেড়ানো সোনালী দিন,
প্রিয় সব অভিলাষ ছিলো অল্পকিছু সাধ! স্বপ্ন অগাধ!
সেটুকুও ফিরে পাবার নয়!
এতোটুকু ঘরে বসেই আজো আশা বুনি, দেখি
ঈর্ষার ফানুসেরা উড়ছে যেন সমস্ত আকাশজুড়ে
তারি শয্যায় বসে পার করছি তারাঝলমল এক ব্যথাতুর স্বপ্নজীবন


সব’ই মায়া
ফয়জুল্লাহ আমিন কিবরিয়া 

সবি মায়া! হেলায় খেলায় যা হয় ছায়া,ওই প্রেমে যা খুয়েছি আর যা পেয়েছি যেমনটি তুমি বলো আর আমি বলি সব’ই মায়া!

হ্যাঁ ক্ষণে ক্ষণে যে অর্থ প্রাচুর্য অর্জিত হয় অথবা ওই লাজ্জত যার নাম লৌকিকতা তুমি আমি করি সব’ই মায়া!

এক নাম তো থাকবে বাকি কিন্তু প্রান নয়,
যখন বুঝলে তাতে কোন নয় ক্ষতি জীবন হলো বলিদান এ সব’ই মায়া!

কেন ব্যথায় ব্যথিত হয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত করো? কেন দুঃখের সাত সমুদ্র পারি দেয়ার চিন্তা করো? এ তো সব’ই মায়া!

ওই রূপসী নারী যে ছিলো চাঁদ নগরীর রানী, যার চোখের ইশারায় ছিলো যাদু সেও আজ পাঠালো সংবাদ এ সব’ই মায়া!

যে গড়েছে বিশাল অট্টালিকা শহরে বন্দরে যার ছিলো গুন কীর্তন, সেও পাঠালো মেসেজ এ সব’ই মায়া!


স্বপ্নযাত্রা
রেবেকা ইসলাম

স্বপ্নগুলো মাঝপথে এসে থেমে যায়,
ধীরে ধীরে আলগোছে থির হয়ে যায়
যেন হঠাৎ থামতে বলা কোন ট্রেন।
লাল পতাকার ক্রমাগত নাড়াচাড়া
ধপ করে সজোরে টেনে দেয়া চেইন।
হয়ত কেউ উপড়ে ফেলেছে স্লিপার
একটা, দুটো করে অথবা সবগুলো,
হতাশায় মনভূমি, আশাহত বুক,
হৃৎপি-ে কষ্টের ছোপ ছোপ দাগ,
ধারাল সরু নখের ভয়ার্ত আঁচড়!
মূহুর্তগুলোতে গোধূলির নীরবতা
বাতাসে রাগ কল্যাণের বিষণœতা
বিউগলে করুণ স্থির সুরের ঢেউ,
আহত পাখির ক্রমশ ছটফটানি
ক্যানভাসে ছোট ছোট দুখের কোলাজ,
তারপর আবার, আবার যাত্রা শুরু
খুঁজে পেতে সেই আরাধ্য প্রিয় ঠিকানা।



নতজানু অবয়
রায়হান ফেরদৌস

যেদিন তোমাকে কবিতার পুষ্পমালায় গাঁথতে বসেছিলাম- সেদিন হয়তো আমার ভ্রান্তি মূলের সর্বশেষ আভ্যুদয়িক শ্রাদ্ধ হয়েছিলো। কবিতার প্রতি তোমার অনীহা সরল রেখাংশে বেশ বাঁকামুখীই ছিলো। পরিহাসকে তুমি তিরস্কারে পুর্ণতা দান করত- বলতে, কবিরা সব অকর্মের দল। ক্ষীণ হেসে বলতাম- কবিতারা পৃথিবীতে অনন্ত কাল বেঁচে থাকে- আর মানুষ কালের বিবর্তনে একদিন গহীন অরণ্যে হারিয়ে যায়।
তীব্র শীতের উপেক্ষা, তেমাথা পথ, প্রতীক্ষার দীর্ঘশ্বাষগুলোকে শিরচ্ছেদ করে নিজেকে তুলে দিলে লালাস্রাব বেষ্টিত কোকিলের ভীড়ে। সময়ের পরিক্রমায় ভোজনপর্বের শেষাংসে যে; পরিত্রাণের পথ খুঁজে; মত দেয়। পথ আমিও ধরি; কবিতাকে পাথেয় ভেবে শব্দে গড়া নীলাদ্রির নীড়ে।
শব্দপ্রেমকে সপত্মীর কাতারে দাড় করিয়েছো লাস্যময় দেহের ভাঁজে। মনে আছে কোন এক চাঁদনী রাতে নারী -নদীর ফুলে ওটা গর্জন, সমাপ্তির দৈন্যতা, দেবালোকগমনের সাবলীল সূত্রটা শুনিয়েছিলাম কল্প কথার গল্পে। অমূলক বাক্যলাপ ভেবে; বাম কানে ঠেলে চললে বরফের দেশে। যেখানে দুখের বিপর্যাসে সুখছায়া মোড়ানো থাকে নদের চাঁদে।
অন্তরালে ধূসরিত মখমলে দুই দশক। অতঃপর; আকস্মিক দেখন। তোমার চোখে উপনেত্র আমার হাতে ভরসার লগুড়। চোখগুলো সটান ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো থাকিয়ে কাব্যগ্রন্থের মলাটে। তুমি নিশ্চুপ, নতজানু অবয়; নিরবতা ভেঙ্গে আবৃত ক্লেশগুলোকে রসিকতার সুরে আড়াল করে বললাম, তুমি বেশ বুড়িয়ে গেছো! অথচ এই দেখো; আমার স্বরচিত কবিতার পঙ্ক্তিগুলো যৌবনে দৃপ্ত হয়ে কেমন ছলছল করছে।



পৃথিবীতে প্রেম নেই         
তারিক ফিজার

শামুকের মতো সে  নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল একদিন
এক পশলা বৃষ্টির পর-
আকাশ, ঘাস আর মাছরাঙাদের ভালবেসে
পৃথিবীর কাকেরা বেশ্যা মেয়ের দেওয়া চুমুকে
ম্লান হয়ে তার কাছে ফিরে আসে।
‘আমি নই, তারে ভালবাসো, সুখে থাকো’
কাকদের ভরা যৌবন দেখে দেখে তার এইসব কথায়
বছরখানেক  ফেলব কিছুটা দীর্ঘশ্বাস,
গোলাপি শরাব মুখে নিয়ে তার ভুলে যাব ডাকনাম।

পৃথিবীতে কোনো প্রেমিক নেই, প্রেমিকা নেই
শুধু অর্থ যাকে তাকে গোলাম করে রাখে।


আমি প্রেমে পড়েছি
রাসেদুল হাসান রাসেল

আমি প্রেমে পড়েছি
বর্ষার কদমের-
জল ভরা দিঘী আর শ্রাবণের,
আমি প্রেমে পড়েছি
জৈষ্ঠ্যের আমের-
ঝড়ো হাওয়া আর প্লাবণের।
আমি প্রেমে পড়েছি
কুয়াশাছন্ন সকালের-
তপ্ত দুপুর আর কোয়েলের,
আমি প্রেমে পড়েছি
সরষে ফুলের-
ঝিঁঝিপোকা আর দোয়েলের।
আমি প্রেমে পড়েছি
বাউলের একতারার-
মেঠোপথ আর ফসলের মাঠের,
আমি প্রেমে পড়েছি
কুচুরিপানার-
বাঁশ বনের আর পদ্মদিঘির ঘাটের।


শিল্পের জিব
রবীন বসু

সমস্ত আয়তন যদি কৌটোবন্দি করি
যাবতীয় অবয়ব বিসদৃশ্য জ্যামিতিক ফিগার নেয়;
সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে বিষণœ কোনো বিকেল
মনখারাপের ভূগোল পেরোতে না পেরে
নিজেই কেমন নিস্তেজ হয়ে জলতলে আশ্রয় নেয়-
আমাদের সমস্ত প্রস্তুতি তখন মুখ থুবড়ে পড়ে
অসফলতার চাদরে, জরির কিংখাপ থেকে
অতল স্পর্শ সেই বিমর্ষতা ইতিউতি চাইতে চাইতে
গিরিখাদ পেরিয়ে আবার মাটির উঠোনে এসে
বাঁকাকেষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে- ঘরের চালে তখন
হাঘরে শিল্প নিজের জিব নিজেই চাটে !


ঠুমরী
মঞ্জিমা গাঙ্গুলী 

গোধূলির রঙ মাখো মেঘ
মাতালিয়া সুবাতাস ভেসে গেছে আঙিনায়
নদীর সাথে সখ্যতা ছিল ওর
সেই বালকটি তোমাদের বাড়ি চেনে
সেই বালকটি হেঁটে গেছে ঘরকুনো এক পথে
তুমি তো গাইতে ইচ্ছে করে এক পাগল গান,
ঠুমরী গেও বাবুই
তোমার বাসা বুনে দিও
ওই পাগল বালকের আস্ত সমস্ত বুকে
চোখে গেঁথে দিও একটা অলকলতা
মেঘ মেখে নাও আরো একটুখানি
ভাতের সাথে কথা বলতে চায় তার নিঃসঙ্গতা।





শিরোনামহীন 
ইয়াসির আরাফাত
     
 দু’টুকরো মেঘের ভেতর দিয়ে ছুটে যায় যে ভীষণ কাল্পনিক ট্রেন;
 বাতাসের জানলা; তাঁর মধ্যে  উঁকি দ্যায় তোমার বিষণœ মুখ
 অথচ দ্যাখো- সাতমাথায় এখন অবধি রিক্সার ভিড়
 পার্কের ধার ঘেঁষে ফুলের দোকান- থরে থরে সাজানো গোলাপ
 এখনও তেমনটাই হই চই তোমার শহরে এবং কতকটা অবিমিশ্র অন্ধকার
 গা ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে দিগন্তে হারালো। আমাদের অসমাপ্ত কথারা পাখা মেলে
 হারিয়ে গ্যালো ঘর ফিরতি মানুষের ভিড়ে- হুডতোলা রিক্সার ছায়ায়
 একজন আগুন্তুক রোমন্থন করে ধূসর স্বপ্নের- এখনও আমরা জানিনা
 আমাদের শুকিয়ে যাওয়া গোলাপগুচ্ছের শেষ পর্যন্ত কি হলো
 প্রতিটি নিরুদ্দিষ্ট ধূলো অতঃপর ফিরে পাবে কোনো একটা সংসক্তি বন্ধন
 কিছু মানুষ ঘরভর্তি অন্ধকারকে দেখবে ক’ফোঁটা জলের রেখায়
 আমাদের সমস্ত প্রেম, বিচ্ছেদ এবং একটা একটা করে পালিয়ে যাওয়া দিন
 ফিকে হতে হতে একসময় কি তার থেকে বেরিয়ে পড়বে সাত সাতটা রঙ;
 অথচ পাখির ডানায় চেপে যে অন্ধকার পৃথিবীর বুক ঢেকে ফ্যালে
 তার মধ্যে তোমার বিষণœ মুখ এবং আমার অনিঃশেষ হতাশ্বাস ব্যতীত
 পৃথিবীতে একজন মানুষও বেঁচে নেই।



পরিপূর্ণ শূণ্যতা
এনাম রাজু

নিষ্কর্মা সময় তবু হেঁটে চলি
রেলপথে, আলপথে, জলপথেও
এমনকি বাতাসের পথও থাকে না অচল
যা পাই ভাবনাহীন শুধু করে যাই।

শুন্য বুকে পূর্ণতা দিতে এই চলাচল
পেছনে পড়ে থাকে কচ্ছপ গতি...
তার বয়স নিয়েবাতাসের সঙ্গেআমি
সামুদ্রিক গর্জন উপেক্ষা করে যাই।

মনরঙের অভাবে শিহরণ জাগে
অনুভূতিতে আঘাত হানে আঁখিমোম গলে
অথচ- নিজঘরেই কুটুম যেনো সাহসী যুবক...

তবু ট্রেনে কাটা খ-িত দেহের মতো
লাফিয়ে চলে সর্বভূক জীবনআমার...




বিস্মৃতির অন্ধকারে 
মুহাম্মদ রাফিউল আলম

রাতজাগা ভোর-
আমার সকালটুকু চুরি করে নেয়।
কিংবা আসলেই মুখ লুকোতে চাই দিনের অন্ধকারে;
নিয়ম ভেঙে অনিয়ম গড়ি নিয়মে।

দেওয়ালে ইতিহাসের
মানচিত্র; হয়তো কোনো মায়াসভ্যতার-
কিংবা হাজার বছর আগের সাহারার
শিকড়টুকু!

মন্থনে ছাইভস্ম-
হলাহলটুকুও তেমন পোড়ায় না আর!
গোধূলী সুখে
হেমন্তবিলাস; নিশিযাপন !





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট