ধোঁকা






ধোঁকা
আহমদ মেহেদী

আরে ভাই! পত্রিকার এসব বিজ্ঞাপন সবই ভুয়া, বানোয়াট। সবই বাটপারি! নাজমুলের এসব কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করেই পত্রিকার জ্য উপজেলার সামনের দোকানটিতে এলাম। রাতে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে গিয়ে নজরে এল বিজ্ঞাপনটি “টক- তে সেলসম্যান নিয়োগ, বিস্তারিত ০১৮৫২.....।” জাতীয় দৈনিকের এমন একটি বিজ্ঞাপন সেদিন আমার মগজে টক ভাইরাস ঢুকিয়ে দিয়েছেল। পরদিনই সকালে ঐ নাম্বাররে কল করতেই অসম্ভব ভদ্র এবং মার্জিত ভাষায় একজন বলে উঠল-
- আস্সালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আস্সালাম। ভাইয়া গতকাল পেপারে একটি বিজ্ঞাপন দেখলাম এজন্য ফোন করলাম।
- জি, আপনি কোথা থেকে বলছেন?
- চাঁদপুর থেকে।
- আপনার নাম? পাসপোর্ট করা আছে আপনার?
- হ্যাঁ, করা আছে।
আমরা আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে সিলেক্ট করব। ছো, আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত হন। আপনার সিভিটা ঁশ......@মসধরষ.পড়স এই মেইলে পাঠিয়ে দেন।
আমি একটি বেশি প্রস্তুত হয়ে গেলাম। যখন স্বপ্নে দেখলাম টক -তে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করা শুরু করে দিয়েছি। সেই আনন্দে কয়েকজনকে বলেও দিলাম শীঘ্রই বিদেশে চলে যাচ্ছি। কাছের মানুষ বেলাল শুনে আমাকে কিছুটা সতর্ক করে দিল। বিনা পয়সায় লন্ডনে যাবি বিষয়টা ক্লিয়ার না, তবে দেখে শুনে পা বাড়া। তার কথায় বিরক্ত হলাম। সত্যিকার অর্থে এদেশের লাখ লাখ বেকার মানুষ মনে প্রাণে একটি বিশ্বাস নিয়ে দৌড়াতে গিয়ে পত্রিকার এসব বিজ্ঞাপনকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করে থাকে, যা সেদিন নিজেকে দিয়ে বুঝেছিলাম। দিনটি ছিল বুধবার। দুপুরের দিকে ঐ না¦ার থেকে একটি এসএমএস আসে- টক -তে সেলসম্যান নিয়োগের বাছাই কাজ প্রায় শেষ। দশজন সিলেক্ট করা হয়েছে, আপনার অবস্থান টক- ০১ (এটাই আপনার কোড নাম্বার) পিন কোড নাম্বার টি ভুলবেন না। আগামী ২৬ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্ট অফিসে ভাইভা হবে, পাসপোর্ট নিয়ে চলে আসবেন আর বিকাশ করে মেডিকেল ফি বাবত ৮৮০০ টাকা পাঠিয়ে দিবেন তিনদিনের মধ্যে। না পারলেও জনাবেন, আমরা অন্য আকেজনকে খুঁজে নেবো। আমিতো খুশিতে আত্মহারা। কদিন বাদেই চলে যাচ্ছি স্বপ্নের লন্ডন। তাই এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে টাকাটা ঐ নাম্বারে পাঠিয়ে দিলাম। ফিরতি এসএমএস- ঞযধহশং ধ ষড়ঃ ড়ভ. এড়ড়ফ ষঁপশ.
স্বপ্ন বুঝি সত্যি হতে চলছে। তখনি কতো দায়িত্বনির্ভর চিন্তা করা শুরু করে দিলাম। কতো টাকা বেতন পাবো! প্রথমেই বাড়ির রাস্তা আর কবরস্থানটা ঠিক করবো। অতি আনন্দে আমি ঘুম হারালাম।

তখন আরও কিছু কাছের মানুষকে খবরটি জানলাম। তারা প্রাণভরে দোয়াও করলেন। অনেকে টাকা দিতেও রাজি ছিল যে যার সাধ্য অনুসারে। আমার মাকে সারপ্রাইজ দেবো ভাবছি। প্রথমবারে মা আমার বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।
বাবা শুনলে নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবেন। মনে মনে বাবাকে বলেই ফেললাম- “দেখো বাবা, আমাদের আর অভাব থাকবে না, এক ঘরে সবাই থাকতে হবে না। মুশফিকাকে মেডিকেলে পড়াব। সামিয়াকে ধুমধাম করে বিয়ে দেব। বিয়েতে আমার বন্ধুদের দাওয়াত করবো। বাবা তোমাকে বলে রাখি, আমার কিন্তু একজন স্পেশাল গেস্ট আছে, মেহেরিন তাঁর নাম!”
কিছু অপেক্ষা আনন্দের হয়। আমিও অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই দিনটির জন্য, প্রত্যাশিত সুখবরটির জন্য।
একদিন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ঐ নাম্বারে কল দিলাম। আশ্চর্য! সইচড অফ। আমি চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম। দুই মাস ধরে চেষ্টা করছি এখনও নাম্বারটা বন্ধ! নাজমুলের কথাই সত্য হল। বিশ্বাস করে আবারও ধোঁকা লেখাম। এমনিতেই সংসারে অনেক ঝামেলা। সুমনের টাকা কোথা থেকে দেবো? সেদিন আমার এই পৃথিবীর প্রতি ঘৃণা জন্মেছিল খুব। যে ঘৃণার আগুনে একটি রাজ্য পুড়ে যেতে পারতো। বিজ্ঞাপন মালিক আমাকে ঠকিয়েছে। আমার সেদিন সমস্ত মানবজাতিকেই ঠকাতে ইচ্ছে করেছিল। আমার বিশ্বাসের ভিত্তিটাও নড়েচড়ে উঠল। কেনো এমন করে মানুষ? আমার মাতৃভূমির মানুষ?
অবশেষে মনের মাঝে কিছু ভাবনার উদয় হলো। সেই মানুষটি আমাকে ধোঁকা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু এই কয়দিন আমাকে যে স্বপ্নের মাঝে বিভোর রেখেছিল এটাই বা কম কিসের! কিছু স্বপ্নের কাছে অর্থ তুচ্ছ বিষয় এমনটাই মনে হয়েছিল সেদিন, যেদিন আকাশটাও আমার ছিল।

নোয়াগাঁও, দেবিদ্বার, কুমিল্লা।  

ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট