লাবণ্য


লাবণ্য
জুয়েল মাহমুদ

জোনাকিরা চারদিকে মিটিমিটি আলো ছড়াচ্ছে। চাঁদের জোৎস্নায় চারদিক অপরুপ। যেন চাঁদনিপসর রাতের লাবণ্যময় আলো। পুকুরের পানিতে সেই চাঁদের আলো জ্বলজ্বল করছে। পুকুর ধারে বাঁশরি তার বাঁশি নিয়ে এই সুর তুলে হারিয়ে গেল এক অচিনপুরে। হঠাৎ ডানায় চড়ে তার সামনে হেসে খিলখিল করে হাসতে লাগলো এক কন্যা। বড় দুটো ডানা। মাথায় ফুলের খোঁপা। আজ অচিনপুরের বসন্তের প্রথম দিন। তাই এমন সাঁজ। বাঁশরি তার মন খেয়ালে সুর তুলেই চলছে। এবার কন্যা তার পাশে এসে বসলো। বাঁশরি তার বাঁশি বাজানো বন্ধ করে দিল।
কে তুমি কন্যা?
আমি এই অচিনপুরের লাবণ্য। তোমার বাঁশির সুর আমাকে উদাস করেছে। সত্যিই তুমি খুব সুন্দর।
আচ্ছা বাঁশরি তুমি কি আমার রাজ্যের রাজা হবে?
বাঁশরি বলল, আমি সামান্য বাঁশরি। কি করে তোমার রাজা হয়।
লাবন্য বলল, আমিতো আমার রাজা হতে বলি নাই তোমাকে। আমি বলেছি আমার রাজ্যের রাজা হতে। বাঁশির রাজা। তুমি আমাকে রোজ বাঁশি শোনাবে। তুমি যাবে আমার সাথে?
বাঁশরি বলল, আমি রাজি। কিন্তু কিভাবে?
লাবন্য বলল, আমার ডানায় উঠো। বাঁশরি তার ডানায় চড়ে রাজ দরবারে পৌছালো। সেই দরবারে আরও অনেক সুন্দরী কন্যারাও রয়েছে। বাঁশরি বলল, এরাও কি লাবণ্য? না, এরা আমার দরবারের দাসী, আমার খেদমত করে। এভাবে চলে গেল কয়েক মাস। বাঁশরির বাঁশিতে মুগ্ধ হয়ে উঠে লাবন্য। একদিন লাবন্য তার দরবারে বড় আয়োজন করল। অচিনপুরের পরীরা সবাই আসলো। বাঁশরির প্রেমে ব্যাকুল হয়ে লাবন্য ভোজ আয়োজনে বলল ‘হে বাঁশরি আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি কি রাজি?
বাঁশরি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সবাই তাকে স্বাগতম জানাতে শুরু করল। হঠাৎ ভোজ আয়োজনে ঝড় বইতে শুরু করল।মুহুর্তের মধ্যে সব যেন উদাও হয়ে গেল। কোথাও কোন চিহ্ন রইলনা। বাউলা মনে উদাসী হয়ে দিন কাটাতে লাগলো বাঁশরি। কোথাও চলে গেল লাবণ্য? কোথায় অচিনপুর? কোথায় অন্য পরীরা। শুধু ভাঙ্গাজোড়া দরবার। বাঁশরি সেখানে দিনকাটাতে শুরু করে। মাঝেমাঝে মনে পড়ে লাবণ্যের সাথে কাটানো সময়গুলো। মনে পড়ে চন্দ্রিমার রাতে তার কোলে মাথা রেখে বাঁশির সুর শুনে ঘুমিয়ে যেত লাবণ্য। তখন তার ঘুমের চেহারা দেখে সে বলত সত্যিই তুমি রাতের আকাশপটের চন্দ্রিমার লাবণ্য। তখন হাত দিয়ে তার চুলগুলো সাজিয়ে দিত। এসব কথা মনে পড়ে বাঁশরির। এভাবে কেটে যায় চার বছর। একদিন বাঁশরি দরবার থেকে দূরে জঙ্গলে হাটছে। হঠাৎ তার পায়ের সাথে কি যেন লাগলো। সে পাতা সরিয়ে দেখে ঝড়ের সময় হারিয়ে যাওয়া বাঁশি।
বাঁশিটি পেয়ে বাঁশরি খুশিতে আতœহারা হয়ে উঠলো। সে দৌড়ে সেই রাজদরবারে গেল। এবং যেখানে ভোজ আয়োজন হলো সেখানে বসে বাঁশিতে সুর তুলল। আর চোখের পানি ছেড়ে দিল। বাঁশির সুর অনেকদূর পৌছে গেল। দরবার থেকে অনেক দূরে একগুহায় ঝড়ের সময় স্মৃতিশক্তি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল লাবণ্য। বাঁশির সুর শুনে ডানায় চড়ে বাঁশরির সামনে এসে বলল- ‘হে বাঁশরি কে তুমি? বাঁশরি তাকে জড়িয়ে ধরে বলল ‘আমি বাঁশরি, তুমি আমার লাবণ্য’।





ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট