শব্দমালা : মোস্তফা হায়দার






জারজ বুলেটের মতো ইচ্ছের পতন ডাকছে

রাষ্ট্র আর ঝরাপাতা
যেন এক সতিনের সংসার!
ঝরাপাতারও আছে ইচ্ছে আওয়াজ
রাষ্ট্রের নাম যন্ত্রদানব না হলেও
একেকটা সময়ে জারজ বুলেটের মতো
ছুঁড়তে ছুঁড়তেই বত্রিশে ঢুকেছিল!
আবার ঢুকবে পাশের ঘরের চৌকাঠ কেটে
রক্তনদীর ঢেউ মাড়িয়ে,
                     জলজ সোহাগ পেরিয়ে
                     হয়ত আপনভবনের ভেতরতলায়!
আপসোস আর বিদঘুটে ডিসেশন
ট্রীগারের শাহাদাত আঙ্গুল
শাহাদাতের উচ্ছ্বাস দেবে ডায়রির পাতা মেলে
তোমার ভোঁজ পাতা মার্কা ন্যানো ইচ্ছের কাছে
শকুনের পাখায় চড়ে বিভাদের বুদ্ধি ছড়ায়
কচলায় সময়ের অসম যতো হিসেব নিকেশ!
ছাদের নীচে মসজিদ দিয়ে কী হবে!
যদি ভেতরের ক্যানসারে পঁচে যায় বিশ্বাসের আস্তর!
ইশ্বরের দোহায় মেরে স্থানের কতটা করবে পরিবর্তন!
সোধের পিঠ চষে হাতে রেখেছিলে তসবীর দানা
কপালে দিয়েছিলে ইলিশটিপ
বিশ্বাসের সামিয়ানায় জননীর খেতাব!
সব যেন জনগণের ট্যাক্সভোগিদের পদপিষ্টে পিষ্ট!
কবি নজরুলকে কাফের বললেও
                      অসাম্প্রদায়িকতা ছিল তাঁর পদনীড়ে;
আজ সেই ইচ্ছের বেতাল কাণ্ডে
                         অথবা গেঁড়ে থাকা মসনদে
থ্রীকার্ড খেলে যাচ্ছো
             পিতার ওরসের হিসেব নিকেশ ভুলে!
চেতনার কঠিন নাম কিন্তু - মিখ্যায় কান দেয়া
অথবা ঠাকুরবাদিতার পট্টী লাগিয়ে
আশীর্বাদের খামারে দেয়া ট্যানারির পেয়ালা,
জলবিয়োগের চেয়ে স্থল বিয়োগের আশীর্বাদ
এবং টুয়েন্টি টুয়েন্টি র সামনে ভাসছে ইচ্ছের পতন
            অথবা কেনানের জলজমৃত্যুর মতো নব্যবিষাদ!
রাষ্ট আজ বোবাদের হাতে
                                   বধিরের হাতে
বিকলাঙ্গ এক বিশ্বাসের হাতে
মাঁয়ের আঁচলের চাবির গীটের মতো গীটে আঁটকা!
বিশ্বাসের ইশ্বরের চেয়ে
তখতের ইশ্বরে দৌড়তে দৌড়তে
ধ্বংসের শোকেসে ভাসবে রক্তনদীর ঢেউ!


এসো বন্ধু জড়ো হই মুক্তির মিছিলে

চেতনার কথা বলে আর কত কাল
পতাকার নাম জপে দিচ্ছে হাল
দেশ যাক জাতি যাক থাকুক চেয়ার
বেশী দেবো কম নেবো করো না কেয়ার!
দেশ আমার নানার দেয়া পুতুলের সংসার
জারজ সন্তানেরা করবে ইতিহাস পাংচার!
ভোগ আর ভাগে বসে সেজে ওঠে বাঘ শেয়াল
এ ভূমি একদিন গড়ে তুলবে প্রতিরোধের দেয়াল!
শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হবে রক্তেভেজা ভূমি
দোহাই তোদের মুষ্টি বাঁধলে কিন্তু আর দেবো না চুমি!
রক্তকে বহুবার বারণ করেছি না হতে ক্রোধ্য
তোদের বদমাশি দেখে রক্তই বলছে হও মুষ্টি বদ্ধ!
এসো বন্ধু জড়ো হই মু্ক্তির মিছিলে দাঁড়াবার জন্য
শুয়ে থাকা বীরেরা দেখিয়েছে না হতে কাপুরুষের পণ্য!
মুক্তি চাই-মুক্তি চাই-বাকস্বাধীনতার অধিকার চাই
'লাথি মার ভাঙরে তালা'এ শ্লোগানে সম্মুখ পথ মাড়াই।



হত্যা সাক্ষী বাড়ায়

কাউকে হত্যা করলেই সত্য চাপা রাখা যায় না
কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যায় বীরত্ব প্রকাশ পায় না
কাপুরুষগণ বেহায়ার হাত ধরে বড় হতে জানে
ক্ষমতার শাড়ি পরতে বড়দের অন্যায় অর্ডার মানে।
কাউকে হত্যা করেই লুকানো যায় না আসল সত্য
কাউকে হত্যা করা মানেই বেরিয়ে আসবে আসল তথ্য!
ভোগের রাজত্ব বাড়লেই রক্তের তৃষ্ণা বেড়ে যায়
অন্ধ হতে হতে অপরাধের রাজ্য সাক্ষী বাড়ায়। 
কারো বুক খালি করাতে নিজেদের কোনো বড়ত্ব নেই
অভিশাপের পেয়ালায় দূরত্ব আহ্বান করে যমদূতকেই!
দিদি,ভাইরা লেপ্ট রাইটে গড়ে তোলে বিশাল আস্তানা
তোমাদের আকামের দরিয়ায় পাবে না কারো শান্তনা!
মা জননী, মাদার অব হিউমিনিটি কোনটাই কল্যাণে আসেনি
রক্তসুধার ভোগে চড়া লোকদের কোনদিন বুক কাঁপেনি!
বৃটিশ আর পাকবাহিনী বিদায় ছিল অনেক ভালো
স্বাধীনতার আড়ালে ভাসছে দেখো কালো আর কালো।


শিক্ষাগুরুর আদবে আজো সজীব 

সে দিন তোমাকে বুঝতে অথবা ভালোবাসতে
ভোরের কুয়াশায় জেঠার পেছনে পেছনে
মসজিদের বারান্দায় দাঁড়াতেই
জেঠার আওয়াজ - তুই!
কুয়াশার ভয়ের চেয়ে জেঠার আওয়াজে
                             অনেকের মত ভয়ে বুক কাঁপছিল
দিনের প্রথম আহ্বানের সাড়া দেয়াটা
আজো ঘুমের ঘোরে আওয়াজ দিয়ে যায়
যদিও জেঠা আজ গৌরের স্খায়ী বাসিন্দা। 
বেচা মেস্বারের কুটচালে ভেঙ্গে গেছে
                                  পারিবারিক হৃদ্যতা
                                       শ্রদ্ধাবোধ
                            এবং একীভূত স্বপ্নের কাশবাগান।
রাতের আকাশে যাদের খুঁজি
কিছু বেহায়া বেজন্মার কল্যাণে অনেককে হারাতে হয়;
আদবের পাঠশালায় আজো আমার মা ই সেরা শিক্ষক
এতোটা আদব এ সমাজে এখন আর নেই
মায়ের আদেশে কতদিন হরব ঘঢিয়া দেখিনি
একত্ববাদের বিশ্বাসে কাউকে শরীক করতে দেয়নি ;
মা আজ তার পছন্দের প্রিয় শাশুড়ির সাথে
                                          পাশাপাশি শুয়ে আছে 
অনেকের মতো প্রিয় আবাসস্থল মসজিদের পাশে।
আজ বড় হতে না হতে
তোমার অনেক আদবের লঙ্গন করলেও
মানুষকে শ্রদ্ধা,উপকার,ভালোবাসতে করিনা কসুর।
আমার শিক্ষাগুরুর শেখানো ভুলি
নিয়ত আওড়াতে আওড়াতে ভেতরকে করি সজীব।



বৈষয়িক ভাবনার অন্তরালে
 
বিবেকের উদভ্রান্ততা সময়
ঘুমের পথে ব্যারিকেট দিয়ে দূরে বসা,
জোছনাদের পাঁপড়ি ছোঁয়ার
অথবা কিছু বিতরণ বৈতরণিতে
সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে মাইক্রোফোনে!
অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলাম
কর্ণের সদর দরোজা খোলে দিয়ে
বিশেষণের ব্যবহারবিধি
অথবা যতিচিহ্নের অপব্যবহার
বিশাল মেহফিলে হবে স্বাক্ষের এক মুঠো নিনাদ!
উপলব্দির শূন্যতা বয়ে কতোবার আসা যাওয়া
লাগামহীন মূখের শংকায় কাঁপছে ভবিষ্যৎ
আপনার আপন আলোতে ধরা পড়াটা একবার শুরু হলে
নত হওয়া ইচ্ছেরা
কান খোলা করার এই যুগে
অন্ধের কাছে এসো!
আপন সোহাগের হিসেব নিতে করুণার প্রাতে।



সোহাগা পোড়ানো গন্ধ

সাদা পাঁপড়ি একেকটা কদার্যে ভরা
তাদের বাল নাড়ানো দেখলে
কুত্তাগুলো ঘেউ ঘেউ করে ওঠে!
তাগো সোহাগা পোড়ানো গন্ধে
রাতের শহরের চেয়ে দিনের আলো হয় বিদগুটে!
ধনুক রাশির মতো কোমড়ের বিছা মারায়
হাতের বাহুর চেয়ে কণ্ঠনালি পাইপগান মেশিন
নিজের বাসর করে ছাড়ে মিথ্যার আশ্বাসে
সকালে চুলভেজাটা জাষ্ট ফর ফরমাল;
তারা ভোগের দরিয়ায় একেকটা হাঙ্গর
বিষাক্ততায় একেকটা কাওঁন মা
আয়নার সামনে গেলে সে বড় সাধক জায়া!



এক রাতের গল্প

জীবনের ধারাপাত আর
ইচ্ছেবিষের পেয়ালা হাতে ঘুরেছি
কোন্ ধনুকে শেষ হয় সময় সারথী!
রাতের জোনাকির কাছে হিশেব রেখেছি জমা
মধ্যরাত কেটেছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার শীৎকারে
পেয়ালা ছাড়িনি বিষাদের হাতে!
এ রাত কভু শেষ হবার নয়
জিরো আওয়ার পার হতে না হতে
হেলে পরা চাঁদের গায়ে দেখি সব হারানোর চিহ্ন
চশমার ফ্রেম খোলে গ্লাসে রেখেছি দেখার ইচ্ছে
পেছন থেকে ডাক এসেছে -বন্ধ করো চোখের পাঁপড়ি
দাঁড়িয়ে দেখো সাত তারার ঝিলিমিলি
পেয়ে যাবে বিষাদের পেয়ালা হাতে বাঁচার চাবি।
সুবহে সাদেক সামনে এসে করজোড়ে দাঁড়ায়
গান ধরেছে তার পুরনো শোকের মিছিল নিয়ে
শ্লোগানে শ্লোগানে আকাশ ভারী হতে না হতে
আসসালাতু খায়রুম মিনান নাওম ' হাতে
একদল বিশ্বাসির সুরের গান ভাসছে বাতায়নে
সাধকের পৈতা নিতে পেয়ালা আজো নড়েবড়ে
আহবানের ধ্বনি শেষে কল্যাণের দ্যুতি বেয়ে
বিষের পেয়ালা ছুঁ মেরে নিয়ে গেলো এক খন্ড উল্কাপিণ্ড
শূন্যহাতে পূর্ণতা এসে দাঁড়ায়
প্রভাতের রঙিন থালা হাতে সম্মুখ দিগন্তে।



হিসেব

রাতের চাদর খোলে নেয় চোখের পাতা
বুকপকেটে লুকিয়ে আছে গোপন খাতা



পাহাড়ের গায়

পাহাড়কে একসময় খুব ভয় পেতাম
ভয় কাটিয়ে দিয়েছে আমার দু ছাত্রী
তাদের আবেদনে সীতাপাহাড় করেছি জয়
প্রেমতলায়'গিয়ে দেখেছি প্রকৃতির বিজয়।
নাকের ডগা সোজা খাড়া সিঁড়ি মাড়িয়ে
উর্ধ্বে যেতে যেতে বার বার ভয় কাটছিল
ভেতরের ইচ্ছে পুরুষ প্রেমিকার খোঁজে
দহনের সীমানায় তোমাকে পেয়েছি প্রকৃতির পোষাকে ;
চিলতে মায়ার কোল ধরেছি ভালোবেসে
পোড়ামাটির গায় শুঁকেছি প্রেম হারানোর ব্যর্থরীতি
কাশফুল হাতে সে দিন ওঠেছি সীতা পাহাড়ের মাথায়
একগ্লাস জলপানে তৃষ্ণাকে ডেকেছি আপন স্বরে।
সে দিনের সে স্মৃতি আজ টান্কির পাহাড়ে দোল খায়
মনোলোভা প্রকৃতির মাঝে পায় তোমাদের বিচরণ
স্বর্গের রুপটুকু খেয়েছো নরকের পোষাক পরে
চোখজোড়া কেঁদে মরে স্মৃতির বিরহ জ্বালায়!
এ সীমানার বাঁশের পাতার মাঝে খোঁজে পাই মিহিসুর
যে সুরে তোমাকে দেখেছি বিরহপাতার গায়
এ যেন ইচ্ছের পুরাতন শোকগাঁথা বর্ণমালা,
যেখানে তোমাদের হারালেও হারাইনি পাহাড়ের স্রষ্টাকে।


বিশ্বাসে কেনা যায় সুন্দরীর রুপের খেয়া 

বিবেকের কাছে সত্যের হাত পাতো
জাতের নামে বজ্জাতিটা এবার রাখো
সোনার মোড়কে এমিটেশনকে টানো
রুপোর ব্রেসলেটে নিজের পর্দা আনো।
কোনো এক বিকেলে দেখি তামার খচখচানি
দস্তার মোড়কে সিঁদুর আঁকা রুপের জলকানি।
অতোটুকু সময় যার হয় না দেয়া নেয়া
বিশ্বাসে কেনা যায় সুন্দরীর রুপের খেয়া।
জাত গেলে যাক  চায় অমৃত সুখের সুধা
অবিশ্বাসীর পেয়ালা বড় তবু মিটে না তার ক্ষুধা!
ক্ষুধার্তের চোখে কাউকে দেয় না তারা হাত বাড়িয়ে
গরীবের হক না চুকিয়ে যাচ্ছো কেনো সম্মুখ মাড়িয়ে?
এ কথার জবাব নেই বলে বিবেকের হয় না ক্বদর
বজ্জাতিরা গরিব মেরে বাড়ায় সম্পদের পাহাড়।




এ মধ্যরাতে

এ মধ্যরাতে
কবিতার শরীর বেয়ে
এই শহরে যাপন করেছি বিশ্বাসের
সোডিয়াম লাইটের নিচে দাঁড়িয়ে
ঝিঁ ঝিঁ পোকারা ডাকছে অনতিকালের দিকে
হাত বাড়ানো ইশারের কাছে
লাল ঠোঁট বেয়ে জানান দেয় উষ্ণতার কথা!
সে সব দেখে দেখে
কানুনের ভয়ে কেটে দিয়েছি দৃষ্টির সীমারেখা!
কেউ জানুক আর না জানূক
রিকশার হুট তোলে বিদায় জানানো সেই জানে।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট