ইজাজ মিলনের কোনো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই

 



ইজাজ  মিলনের কোনো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই

আনিসুল হক 


সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি। বলেছিলেন জীবনানন্দ। আবার কথা আছে, প্রতিটা মানুষই কবি, যখন সে প্রেমে পড়ে। কবিতা মানে সুন্দরতম কথার সুন্দরতম বিন্যাস। আবার আমরা জানি, আজকালকার কবিতা কেবল সৌন্দর্যের প্রশস্তি নয়, সুন্দরের ধ্যান নয়, অসুন্দরকেও কবিতা নিজের মধ্যে ধারণ করে। সর্বোত্তম কথার ধারণাও তো পাল্টে যায়। সর্বোত্তম বিন্যাস বলতে কী বোঝায় সেই বিষয় নিয়েও কোনো স্থিরতা নেই। কখনও কখনও বিন্যাসহীনতাই শ্রেষ্ঠতম বিন্যাস। কবিতার মানে খুঁজতে হয় না। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ফুল শুঁকে কেউ যদি বলে কিছুই বুঝলাম না, তার যেমন কোনো মানে হয় না, তেমনি কবিতা পড়ে কেউ যদি বলে কিছুই বুঝলাম না তারও কোনো মানে হয় না। আবার ইচ্ছা করেই পৃথিবীর বহু কবি তার কবিতাকে মানে বোঝানোর ভার থেকে মুক্তি দিয়েছেন। কখনও কখনও গেঁয়ো শব্দ, কখনও কখনও সুধীজনে উচ্চারণ-অযোগ্য শব্দ প্রয়োগ করেছেন কবিতায়। আপাতত গদ্যে যা ভুল, কবিতায় তার প্রয়োগ চলে, যাকে বলে পোয়েটিক লাইসেন্স।

দেহারণ্যের ভাঁজে শূন্যতার বিলাপ কবি ইজাজ আহমেদ মিলনের সর্বশেষ কাব্য-প্রয়াস। নতুন দিনের কবিরা স্পর্ধাময়, তারা কোনো প্রবীণ কবির সনদপত্রের জন্যে হা করে তাকিয়ে নেই। ইজাজ আহমেদ মিলনের কোনো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই। তিনি বিলাপ করছেন, সেটা করছেন দেহারণ্যের ভাঁজে, আর সেই বিলাপ শূন্যতার। সেখানে আমি কে কথা কইবার? তাকে বিলাপ করতে দিন। বিলাপ গোলাপ হয়ে উঠুক। গোলাপ সৌরভ না ছড়ালে কাঁটা ছড়াক। কবিতা আজকাল কাঁটাও ছড়াতে পারে। আবার গোলাপের মতো সৌন্দর্য ও সৌরভও তার করায়ত্ত। 


লেখক : কথাসাহিত্যিক ও উপ সম্পাদক প্রথম আলো



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট