মা

 


মা

মুহাম্মদ বরকত আলী

মেহেজাবিন কলেজ থেকে ফিরেই রুমে গিয়ে ব্যাগটা রেখে উঠানে এসে দাঁড়াল। বাড়ির চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে ফিরে এল চোখ জোড়া। নানি হাজিরন বিবি রোয়াকে বসে পানের বাটা সামনে রেখে পান সাজাতে সাজাতে বলল, ‘কীরে, পোশাক বদলাবি না?’ মেহেজাবিন কোনো কথা বলল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। এবার রান্না ঘর থেকে আওয়াজ ভেসে এল, ‘কেমন হলো তোদের অনুষ্ঠান?’ এতক্ষণ চুপচাপ যাকে খুঁজছিলো পেয়ে গেছে মেহেজাবিন। রান্না ঘরে ঢুকে মায়ের পাশে বসল। মায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে মেহেজাবিন। আমেনা বানু রুটি বেলতে বেলতে বলল, ‘পোশাক না বদলিয়ে এখানে এলি যে? যা পোশাক বদলে হাত মুখ ধুয়ে আয়। সেই সকালে খেয়েছিস। খাবি, যা।’ মেহেজাবিন কোনো কথা না বলে চুপচাপ মায়ের পাশে বসে রইল। এমন আচরণ ও কখনো করেনি। কলেজ থেকে এসে মাকে হাক ডাক ছেড়ে বলে, ‘মা, খিদে পেয়েছে খেতে দাও।’ ব্যস এতটুকুই। আজ ওর কী হলো যে কথা বলছে না। আমেনা বানু হাতের কাজ রেখে দিয়ে মেয়ের দিকে তাকাতেই দেখল মেয়ের চোখে জল। আমেনা বানু ভয় পেয়ে গেলেন। কাপড়ের আঁচলা নিয়ে মেয়ের চোখ মুছতে মুখতে বলল, ‘কীরে, কী হয়েছে? কলেজে কেউ কিছু বলেছে? কী হয়ে আমাকে বল মা?’ মেহেজাবিন এবার কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, ‘মা, তুমি সত্যি করে একটা কথা বলবে?’

মেয়ের হঠাৎ এই প্রশ্নে ভয় পেয়ে যায় আমেনা। ‘কী কথা?’ 

মেয়ে কঠিন ভাবে বলে, ‘আগে বলো সত্যি বলবে?’ 

আমেনা শক্ত হয়। কী এমন কথা যে এভাবে তাকে সত্য বলার শপথ করতে হবে। মেয়েকে লুকানোর কোনো কথাত তার কাছে নেই। তবে কী কথা? প্রস্তুত নেয় প্রশ্ন শোনার। ‘আচ্ছা বল, বল কী কথা? 

মেহেজাবিন ধুম করে বলে বসে, ‘আমার বাবা কে?’ 

আমেনা বানু আবার কাজের দিকে মন দেয়। কথা ঘুরিয়ে বলল, ‘সে কথা তোকে অনেক আগেই বলেছি। আবার কেন? আমি কী তোর কোনো চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ রেখেছি? তোর বাবা মারা গেছে।’

মেহেজাবিন উঠে দাঁড়াল। কঠিন স¦রে বলল, ‘এই আমি রুমে যাচ্ছি, আজ তুমি আমার কাছে সত্যিটা না বললে এক ফোটা জলও স্পর্শ করবো না।’

কথা শেষ হতেই নিজের রুমে গিয়ে ঐ পোশাকে শুয়ে পড়ল। এতক্ষণ মেয়ে নাতীর কথা শুনেছে মেহেজাবিনের নানি। এই বাড়িতে মেহেজাবিনের নানী, মামা মামী আর ওর মায়ের বসবাস। সেই ছোটবেলা থেকেই মেহেজাবিন ওর মায়ের সাথে নানা বাড়িতে আছে। এটাই ওর বাড়ি। এখানেই বড় হওয়া। একটি বারের জন্যও বাবার মুখ দেখার সৌভাগ্য হয় তার। যখনি বাবার কথা জানতে চেয়েছে, তখনি আমেনা এড়িয়ে গেছে। বলেছে বাবা মারা গেছে। মেহেজাবিন সব মেনে নিয়েছে। কিন্তু দাদা দাদী, চাচা চাচীরা তো আছেন। অন্তত এতটুকু জানতে চেয়েছে বাব দাদার গ্রামের নামটা। বাবার গ্রামের নামটা পর্যন্ত সে জানে না। এখন সে বড় হয়েছে, কলেজে বন্ধু বান্ধব হয়েছে। তারাও তো জিজ্ঞাসা করে। তখন কী উত্তর দিবে সে? লজ্জায় পড়তে হয়। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে অন্য কথায় চলে যেতে হয় বুদ্ধি খাঁটিয়ে। কিন্তু কলেজের বন্ধুরাওতো এত দিনে ওর মত চতুর হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গ ধরে রাখতে ওরাও যে পারদর্শী। শুধুমাত্র মা আর নানার পরিচয়ে এখন আর পেরে উঠছে না। সে এখন বাবার পরিচয়ে পরিচয় দিতে চায়।

 

দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। নানী খুব করে জোরাজোরি করলেও মেহেজাবিন বিছানা থেকে মুখ উঠায়নি। মামা মামি তেমন খবর রাখে না। দুজনেই চাকুরি করেন। সকালে বের হন আর বিকেলে ফেরেন। সংসারের কাজ আমেনাকেই একা করতে হয়। সেই কাকডাকা ভোরে বিছানা ছেড়ে উঠে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ির সমস্ত কাজ আমেনাকেই করতে হয়। রান্না বান্না করা, কাপড় কাচা, বাজার করা, সব কাজ আমেনাকেই একা সামাল দিতে হয়। এর মধ্যে একটা স্কুলে শিশুদের ক্লাসও নিয়ে আসেন এক ঘন্টা সময় বের করে। শুধু পেটে খেলেই চলবে না, হাতে কিছু কাচা পয়সাও থাকা চায়। সময় অসময় মেয়েটার আবদার পুরন করতে হয়। সন্ধ্যার পর সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে বাসন কোসন গুছিয়ে মেয়ের জন্য কিছু খাবার হাতের নিয়ে রুমে ঢুকল আমেনা। মেহেজাবিন বালিশে মুখ লুকিয়ে আছে। আমেনা বানু বলল, ‘উঠে বস মা। খেয়ে নে।’ মাথায় হাত বোলাতেই মেহেজাবিন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আমেনা মেয়েকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘আচ্ছ বলবো সব। আগে খাবার খেয়ে নে।’ কোনো মতে খাবার খেয়ে শেষ করল। আমেনা একটু গুছিয়ে বসল। মেদের দিকে তাকিয়ে বলল তাহলে শোন, ‘আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও ভালো ছিলাম। বিশেষ করে দৌঁড়ে আমার সাথে কেউ পেরে উঠত না। জেলা থেকে বিভাগ, এমনকি ঢাকাতেও গিয়েছি। কলেজ জীবনে আমার অনেক বন্ধু বান্ধব ছিল। এর কারণ, আমি সব সময় সবার সাথে খোলা মনে ব্যবহার করতাম। কিন্তু এটা আমার জানা ছিল না যে, দ্বিতীয় বর্ষের একটা ছেলে আমাকে পছন্দ করত। বন্ধু বান্ধবীদের কাছ থেকে প্রথম শুনলাম কেউ আমাকে পছন্দ করে। আমি তাকে পাত্তা দিতাম না। কিন্তু সেই ছেলেটা আমাকে দেখার জন্য আমাদের বাড়ির আশে পাশে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরত। তোর মামা, নানা আর আশে পাশের লোকজন যখন বিষয়টা জানতে পারল তখন আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখতে শুরু করল। আমকে জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করেনি ঐ ছেলেটার সাথে আমার সম্পর্ক আছে কিনা। একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখি বাড়িতে অনেক লোকজন। ওরা নাকি আমাকে কলেজেই দেখেছে। আজকেই বিয়ে। তোর বাবা উচ্চ শিক্ষিত। আমি অনেক প্রতিবাদ করেছিলাম। ছেলের বাড়ির খোঁজ খবর না নিয়ে এভাবে বিয়ে মানতে পারি না। বিয়েটা আমার খালুজান দিয়েছিল। বাবা মা দুজনেই খালুর উপর ভরসা করেই বিয়েটা ঠিক করেছিল। তোর দাদার সয়সম্পত্তিও কম নেই। জমিদার বলা চলে। কথা গুলো ঠিক ছিলো। তবে খালুজান একটা কথা লুকিয়ে ছিল। বিয়ের দিন ওখানে গিয়েই জানতে পারলাম এত তাড়া কেন। প্রথম দিন থেকেই তোর বাবা আমাকে সেভাবে মেনে নিয়ে পারেনি। আমাকে যেমন জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঠিক তোর বাবার মতের বিরুদ্ধে বিয়েটা দিয়েছিল। কিছুদিন ও বাড়িতে সবাই আমাকে বেশ প্রাধান্য দিলো। শশুর মশায় আর শাশুড়ি আমাকে বোঝালেন যে, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছুই ঠিক হলো না। দিন দিন তোর বাবা আমার উপর অত্যাচার করতে লাগল। জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাকা দিতো। একদিন তোর বাবার ডায়েরী পড়ে জানতে পারলাম যে, তোর বাবা তার খালার মেয়েকে ভালোবাসে। কিন্তু বাড়ি থেকে সেই সম্পর্ক মেনে দিতে পারেনি। আস্তে আস্তে নেশার জগতে চলে যায় তোর বাবা। হেরোইন সেবন শুরু করে। ছেলের এই পাগলামো ঠিক করতে আর নেশার জগৎ থেকে বের করে নিয়ে আসতেই খুব দ্রুত বিয়েটা দিয়ে দেয়। একপ্রকার আমার ও আমার পরিবারের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। একদিকে তোর বাবার অমানবিক অত্যাচার অন্যদিকে তোর চাচা ফুপুদের মুখের গালি শুনতে হত। বাড়ির সমস্ত কাজ আমাকেই করতে হতো। তবুুও ছোট  লোকের মেয়ে বলে গালাগালি দিতো। একদিন পাচির টপকিয়ে পালিয়েও এসেছিলাম। কিন্তু তোর নানা নানির জোরাজোরিতে আবারও ফিরে যেতে হয়েছিল। তুই যখন পেটে এলি তখন তোর বাবা আমাকে ইলেকট্রিক সক দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। সেদিন রাতেই সবার অলক্ষে পালিয়ে এসেছিলাম। সেই আসাই আমার শেষ আসা। আর ফিরে গেলাম না। তোর বাবাও দিন দিন নেশার মধ্যে ডুবে গেল। আমি চেয়েছিলাম তোর বাবাকে নেশার জগত থেকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু পারিনি। বিয়েটা দিয়েছিল খালুজান। বাড়ির সবার বুঝতে বাকি থাকল না যে খালুজান প্রতিশোধ নিয়েছেন। খুলজানও খালার সাথে প্রেম করে একা একা বিয়ে করেছেন। এজন্য আমার নানা নানী সেই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। খালা খালুর সাথে নানা নানীর সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে যায়। খালা খালু মনে করেন যে, আমার মা আর বাবা মিলে ওদের বিরুদ্ধে নানা নানীকে খাপিয়ে তুলেছে নিজেরা সুবিধা নেওয়ার জন্য। তাই খালুজান যেনেও একজন নেশা গ্রস্থ ছেলের সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। তুই যখন জন্ম নিলি তখন তোর দাদা দাদীকে খবর দেওয়া হয়েছিল। কেউ আসেননি। শুনেছিলাম তাদের অভিযোগ হল বাড়ির বৌ কাউকে না বলে একলা পালিয়ে গেছে। মান ইজ্জতের ব্যাপার। তাই সেখানে যাব না। ইচ্ছে হলে বৌ নিজেই চলে আসুক। আমিও প্রতিজ্ঞা করলাম সে বাড়িতে আর যাব না। তোকেই আকড়িয়ে বেঁচে থাকব। তোর লেখাপড়ার খরচ, অন্যান্য খরচে জন্য একটা এনজিওর শিশু শিক্ষা স্কুলে চাকুরি নিলাম। সকালে এক ঘন্টা ক্লাস আর বাকি সময় বাড়ির সমস্ত কাজ করা ছিলো আমার ডিউটি। তোকে নিয়েই আমার স¦প্ন। তোর মাঝেই বেঁচে আছি। আমেনার কণ্ঠ আটকিয়ে আসে। দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। মা মেয়ে দুজনেই চুপ। নিস্তব্ধ রাত। দুর থেকে কিসের যেন আওয়াজ ভেসে আসছে। 




সকালবেলা মেহেজাবিন বের হলো দাদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।  রংমহল গ্রামে দাদার বাড়ি। মায়ের কাছে ঠিকানা নিয়ে বের হয়েছে। এই প্রথম দাদা বাড়ী যাওয়া তার। বাস থেকে নেমে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করতেই দেখিয়ে দিলো সারাফাত চৌধুরীর বাড়ি। বাড়িতো নয় যেন আস্ত একটা রাজবাড়ি। অনেক পুরনো আমলের এই রাজ প্রাসাদ। মেহেজাবিনের মনে মনে ভাবল এই হলো তাদের রাজ প্রাসাদ। সে এই বাড়ির মেয়ে। অত্র গ্রামে সারাফাত চৌধুরীর বেশ নাম ডাক আছে। এই এলাকার প্রভাবশালী লোকদের মধ্যে সারাফাত চৌধুরী সবার উপরে। জমিজমা, বংশ, সয় সম্পত্তিতে সারাফাত চৌধুরীর সমান আশে পাশে কয়েক গ্রাম মিলে কেউ নেই। বাড়িটা চারিদিকে উচু প্রাচির দিয়ে ঘেরা। একদিন এই প্রাচির টপকিয়ে তার মা এই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। এত বড় প্রাচির টপকানো বেশ কষ্টের ব্যাপার। তবে এর চেয়ে বেশি কষ্ট না পেলে কেউ এই প্রাচির টপকাতে পারবে না। বিরাট পুরনো লোহার গেট পার হয়ে ভিতরে প্রবেশ করল মেহেজাবিন। বাড়ির ভিতরে বড় উঠান। উঠানে একজন বয়স্ক লোক চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখে চশমা পরে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছেন। আমার যাওয়ার শব্দ পেয়ে বললেন, ‘এই তুমি কে? কাকে চাচ্ছো? এদিকে এসো।’ 

মেহেজাবিন ধীর পায়ে লোকটার কাছে গেল। এই বয়স্ক লোকটাই ওর দাদা। মেহেজাবিন বলল, ‘আপনি সারাফাত চৌধুরী?’ 

‘হ্যাঁ, আমিই সারাফাত চৌধুরী। তোমর পারিচয় কী?’ 

মেহেজাবিন কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এরি মধ্যে বাড়ির অন্য লোকজন এসে হাজির। দাদী, চাচা, চাচি, চাচাত ভাই বোনেরা এসে হাঁজির। মেহেজাবিন বলল, ‘আমি আপনার বংশধর। ভয় নেই। আমি আপনাদের সম্পত্তির ভাগ নিতে আসিনি। আমার কাছে বড় সম্পদ ও সম্পত্তি আমার মা। এসেছি আমার জন্মদাতা পিতাকে একটি বার চোখের দেখা দেখতে।’ 

সবাই চুপচুপ মেহেজাবিনের কথা শুনছে। কেউ কথা বলছে না। দাদীমা মেহেজাবিনের হাত ধরে বলল, ‘এসো তোমার বাবাকে দেখবে।’ 

দাদীমার হাত ধরে রাজ প্রাসাদে প্রবেশ করল মেহেজাবিন। অন্যরা নিজ নিজ রুমে চলে গেলেন। কারো কোনো প্রশ্ন নেই। কোনো কিছুই যেন জানার নেই। মেহেজাবিনকে নিয়ে যাওয়া হল একটা রুমের সামনে। দাদিমা রুমের দরজা খুলে দিতেই দেখল রুমের ভিতর একজন মধ্য বয়স্ক লোক মেঝের উপর উপুড় হয়ে ঘুমুচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ শুনে উঠে বসল। দেখে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক একজন মানুষ। মাথার চুল ছাটা, মুখে ছোট ছোট কাচাপাকা দাড়ি। পোশাক পরিষ্কার। মেহেজাবিন কাছে গিয়ে বসল। মানুষটা হাত পা কাপাতে কাপাতে একটু সরে বসল। মেহেজাবিন বলল, ‘আমি তোমার মেয়ে, বাবা। জানি তুমি চিনতে পারবে না। আমার জন্মের পর একটি বারও যে আমার মুখ তুমি দেখনি। কেন বাবা, কেন? আমার কী অপরাধ ছিল? একবারও আমাকে দেখতে মন চায়নি তোমার?’ মেহেজাবিন কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো। মেহেজাবিনের বাবা স্থির হয়ে মাথা বাকা করে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। কী যেন ভাবছে। হঠাৎ মাথায় হাত বুলিয়ে দিল মেয়ের। মেহেজাবিন বাবার প্রথম স্পর্শ পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। দাদি এতক্ষণে মুখে আঁচল দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। বাবার চোখে জল। সেই জল বাবার মুখের আধাপাকাকাচা দাড়ি গোফ ভিজে গেল। হয়তো মনে পড়েছে তার সেই সব দিন গুলির কথা। নিজের রক্তের সাথে দুরত্ব তৈরি করেছে সে নিজেই। মেহেজাবিন চোখে অশ্রু নিয়ে বের হয় রুম থেকে। বাবা শুয়ে পড়লেন মেঝের উপর। 

মেহেজাবিন চলে আসার পথে দাদি খুব করে ধরল কিছু মুখে দিয়ে যেতে হবে। মেহেজাবিন বলল, ‘দাদিমা, আমি এসেছি আমার টানে। তোমরাতো আমাকে নিয়ে আসোনি।’

উঠানে চেয়ার পেতে বসে আছে সারাফাত চৌধুরী। মেহেজাবিন বাইরে আসতে তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের মত জেদি হয়েছো। তোমার মায়ের অহংকার আর জেদ কমেছে? নাকি আগের মতই আছে?’

মেহেজাবিন দাদার নিকটে গিয়ে দাঁড়াল দাদার মুখোমুখি। বলল, ‘সারাফাত চৌধুরীর আত্মহংকার কমেছে? মান সম্মান ইজ্জত এগুলো কি আগের মত আছে? সারাফাত চৌধুরী, আমি চাইলেই আপনার মান সম্মানকে কোর্টে তুলতে পারি। আমি এই বাড়ির ইজ্জত। কিন্তু আমার মা আমাকে সেই শিক্ষা দেয়নি। তোমার সম্পত্তির ছিটেফোটা আমার প্রয়োজন নেই। আমার সম্পদ মা। আমার মাকে তোমরাই ঠগিয়েছো। তাকে রাখতে পারোনি। যদি পার আমার মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে এসো।’ এই মিথ্যা প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এসে বাড়ির পথ ধরল।





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট