মিলন খুবই উচ্ছ্বসিত ও প্রাণবন্ত তরুণ

 


মিলন খুবই উচ্ছ্বসিত ও প্রাণবন্ত তরুণ

মহাদেব সাহা 


ইজাজ আহ্মেদ মিলনের তৃতীয় কবিতার বই ‘ পোড়ামাটির ক্যানভাসে বিরামহীন বেদনা’; নাম থেকেই বোঝা যায় কবিতাগুলি কবির অর্ন্তলীন বেদনার প্রকাশ; আর এ কথা তো বলাই যায় যে , বেদনাই কবিতার আদি উৎস। সব কবিই তার বেদনা ও জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতাগুলি ব্যক্ত করেন কবিতায়। একজন কবির তৃতীয় বইয়ের ভূমিকার কিংবা তার পরিচয় তুলে ধরার বিশেষ প্রয়োজন হয় না,নিজের পরিচয়েই তার নিজের পরিচয় জানা হয়ে যায় আমাদের। মিলন আমার স্ন্হেভাজন ও অনুরাগী, সে আমাকে গাজীপুরে অঞ্চলের উপচে পড়া সবুজ অরণ্যভূমি ঘুরে দেখিয়েছে, সেই অগাধ সবুজে ও উন্মুক্ত প্রান্তরে আমি অশেষ আনন্দবোধ করেছি। মিলনের কিছু কিছু কবিতা আমি পত্রিকায়  দেখেছি,মিলন খুবই উচ্ছ্বসিত ও প্রাণবন্ত তরুণ, সে নিজেই উদ্যোগী হয়ে আমার মতো নির্জন ও বিচ্ছিন্ন স্বভাবের মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখে ও অনুপ্রাণীত করে। আমি লক্ষ্য করেছি নানা বিষয়ে তার উৎসাহ থাকলেও কবিতাই তার প্রধান আকর্ষণ। সে যদি তার এই আকর্ষণ কবিতার প্রতি আরও নিবদ্ধ করে , আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে যায় কবিতার সঙ্গে,তাহলে তার কবিতা আরও শিল্পিত ও লাবণ্যময় হয়ে উঠবে,কবিকে নিরন্তর তা-ই করতে হয়। কবিতার ক্ষেতে কোনো সহজ ও সংক্ষিপ্ত পথ নেই, কবিতার জন্য কতো যে যাতনা সইতে হয় কবিকে,কবিতা হচ্ছে অপার সুখ ও অপার দু:খের দুলর্ভ ফসল, সত্যই কবিতা হচ্ছে বিরামহীন বেদনা ও বিরামহীন যুদ্ধের ফল। আমার বিশ্বাস, মিলন এই দু:খ বরণের প্রস্তুতি নিয়েই এই দু:খের পথে পা বাড়িয়েছে, আমি কয়েকশো বাক্যে প্রার্থনা করি তার এই কাব্যযাত্রা সফল হোক। ইজাজ আহ্মেদ মিলন কবিতা লেখে নিজের মতো করে,তার খুব বেশি কবিতা আমি পড়েছি তা নয়, কিন্তু তা সত্যেও তার কোনো কোনো কবিতা বা কাব্যপঙ্ক্তির ঔজ্জ্বল্য ও গভীরতা আমাকে সপঠ করেছে, নিজের গুণেই তার কোনো কোনো পঙ্ক্তি আমার প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে, আমি লক্ষ্য করেছি এই নবীন কবির মধ্যে সম্ভাবনার ঝলক আছে, পৃথক একটা আবেদন আছে। তার এই শক্তির প্রতি তাকে নিজেই আস্থশীল হয়ে উঠতে হবে। আমার অনুভূতি ও উপলব্ধি সব সময়ই নতুন কবি ও কবিতার পক্ষে, এখন এই নবীন  ও তরুণেরাই আমার প্রিয় সঙ্গীও আর এটা হওয়ার কারণ তাদের কবিতার প্রতি আমার ভালোবাসা, সেই তালিকায় মিলনও নি:সন্দেহেই এক পছন্দের নাম। সব কবিকেই নিজস্ব একটি জগৎ তৈরি করতে হয়,সেজন্য চর্চার কোনো বিকল্প নাই। মিলনের কবিতার প্রধান বিষয় প্রেম, প্রকৃতি, সমাজ,দেশ ও দেশের প্রতি মমত্ববোধ। তার কবিতার ভাষা স্বচ্ছ ও সাবলীল , অকারণ দুর্বোধ্যতা সৃষ্টির প্রয়োগমুক্ত। এ কারণে কবিতা পাঠকদের সব সপঠ করে। এ ক্ষেত্রে যদি আরও যতœবান হয়, তাহলে তার কবিতা আরও বেশি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হবে। 


মিলনের একটি কবিতার নাম ‘ ঢেউহীন জলের উপর তুমি আঁকো ছবি’ বেশ অমিয়, ‘ যার আঁচল তলে’, একটি প্রেমের কবিতা, ‘ মুিদ্রত তর্জমা,’ বেশ অভিনব, বন্ধুর স্মৃতি নিয়ে তার লেখা আর একটি কবিতা‘ নিখিলের স্মৃতি’ হৃদয়গ্রাহী,মাটির সাথে যে সম্পর্ক এটা সহজে বোঝা যায় তার একটি কবিতার নাম থেকে  ‘ মাটির সাথে কথা বলি এখন’। কবিতা নিয়ে কোনো শেষ কথা বলা যায় না, আশা করি মিলন তা মনপ্রাণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবে। তাকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট