বইয়ের সদগতি!

 



বইয়ের সদগতি! 

অলোক আচার্য


বইমেলাটা ভালো গেল না। বিক্রি টিক্রি তেমন একটা নেই। প্রকাশক মন খারাপ করে থাকেন। আমার মনও খারাপ। বেশি খারাপ লাগে না যখন পত্রিকায় খবর দেখি দেশে বইয়ের পাঠক কমছে। উঠতি লেখক হিসেবে অনেকের সাথেই পরিচয় হয়েছে। আমিও বড় লেখকদের সাথে গদগদ ভাব নিয়ে কথা বলি। আমার কাঁধের ঝোলায়ই আমার লেখা কয়েকটি বই থাকে। উদ্দেশ্য আর কিছুই না। সুযোগ টুযোগ পেলে বড় লেখকদের হাতে বই তুলে দেই। সকলেই মুখে বিগলিত ভঙ্গিতে বই নেয়। আমি প্রমাণস্বরুপ মোবাইলে ছবি তুলে রাখি। সেসব ফেসবুকে দিয়ে বাহবা কুড়াই। একদিন দুপুরে কাঁধে ঝোলা নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছি। রাস্তার পাশে একজনকে দেখলাম মাথা থেকে বিশাল একটা বোঝা নামিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। বোঝা আসলে অন্য কিছুই না। ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বাড়ি থেকে পুরাতন বই। আমার আবার অভ্যাস বই পুরাতন হোক আর নতুন হোক একবার ঘেঁটে দেখা চাই ই চাই। এখানেও সেটাই করছি। এমন সময় হাতে এলো আমার একটা বই। আশ্চর্য! এই বই তো পুরাতন হয়নি। তাহলে একে বাতিলের খাতায় কে ফেলল? আমি লোকটিকে বললাম, ভাই এই বইটি কোত্থেকে পেয়েছেন বলতে পারেন? 

এই যে এই বাড়ি থেইকে দিছে। হাত দিয়ে পাশের বাড়িটি দেখালো। 

আমি তাাকিয়ে দেখলাম বাড়িটি। আমার চেনা। ভেতরে যাইনি। তবে জানি এটা কার বাড়ি। একজন বিখ্যাত নামদার কবির। গতকালই একটা অনুষ্ঠানে কবির হাতে আমার বইটি তুলে দিয়েছি। ফেসবুকে তার ছবিও ঘুরছে। আর আজকেই তিনি আমার বইটি ফেলেদিলেন! আমি ঝোলা থেকে অবশিষ্ট কয়েকটি বই বের করে লোকটিকে বলি, ভাই এই বইগুলো কিনবেন? এই বইগুলো তো নতুন স্যার? তা হোক। আপনি কিনবেন? বিক্রেতাটি মাথা নাচায়। আমি বইগুলো কেজি দরে বিক্রি করে হাঁটতে থাকি। অন্তত কয়েকটা টাকা তো হাতে এলো!


শিক্ষক ও লেখক

পাবনা।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট