বৃহস্পতির সাতকাহন

 



বৃহস্পতির সাতকাহন 

যুবায়ের আল মাহমুদ 


দিনের আলোটা ক্ষীণ হয়ে এসেছে প্রকৃতির বুকে। চারদিকে কেমন ধুয়াটে আবরন। পরিবেশটা হিম-শীতল। সূর্যের দেখা মিলেনি আজ সাড়া দিন। সূর্যের অপেক্ষায় থাকা প্রতিটি মানুষের দিনমান দিব্যি কেটে গেছে তাকে ছাড়াই। কিছুক্ষনের মধ্যে আলো-আধারির মৌন মিলনে মেতে উঠবে প্রকৃতি। দূর আকাশের বুকে বসবে তারাদের মেলা। দ্বশমির চাঁদ উঠবে মেঘলা সিয়াকাশে। ল্যামপোষ্টের হলুদাভ আলোয় সেজে উঠবে শহুরে রাস্তাগুলো। 


বৃহস্পতির গুমোট মুখ নিয়ে আমি দাঁড়ালাম ভাবনার করিডোরে। স্মৃতির আকাশে জমে আছে শত সহস্র বেদনারা। হৃদয়ের কুসুমবাগে ভিড় জমিয়েছে ডজন খানেক ভিমরুল। তারা বিষাক্ত শুল ফুটিয়ে দিচ্ছে- হৃদয়কাননে অতি সযতেœ ফুটিয়ে তোলা প্রতিটি পুষ্পের কোমল শরিরে। আমি কিছুটা স্বস্তি অনুভবের জন্য একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। সাথে সাথে নাসিকা দিয়ে একটা স্যঁত স্যঁতে গন্ধ প্রবেশ করলো আমার শরিরে। এই স্যঁতস্যতে গন্ধটা আমার তনুমনে কেমন যেন এক দুর্বলতা ছড়িয়ে দিলো। মনটা অজানা এক আবেশে ছেয়ে গেল। আমি মনে মনে আওড়াতে লাগলাম-


বৃহস্পতির সন্ধাগুলো নিঃসঙ্গতায় আসে 

আলো আধারির মিলন মেলায় চাঁদটা কেমন হাঁসে

সন্ধার আচল বেয়ে নামে গভির নিশিরাত 

দূর নীলিমায় আলো ছড়ায় গোলগাল একটা চাঁদ 


প্রতুত্তরে বিশাল শূন্যতা থেকে কার যেন দরদ মাখা কন্ঠস্বর ভেসে আসে কানে। সে আনমনে ছড়া কাটে- 


মন খরাপের দিনে আমি আসবো তোমার ধারে 

প্রণয়ের গান কবিতা বলবো তুমি ছাড়া আর কারে 


আমি তাকে খোঁজার চেষ্টা করি মানুষের কোলাহলে, হেঁটে যাওয়া মানুষের ভিড়ে; কিন্তু মানুষ ঠিকই হেঁটে যাচ্ছে। তাদের মুখাবয়বে আনন্দ, উচ্ছলতা। তারা বন্ধু-স্বজনদের সাথে হাসি খুশি কথা বলে, খুনসুটি করে। আমি শুধু মানব মিছিলের পানে তকিয়ে থাকি একজনকে খোঁজার জন্য। গুধুলির বিসন্ন আকাশে তখন উড়ে যায় শঙ্খচিল। যার ডানায় অংকিত বিশ্ব জয়ের স্বপ্নরেখা। আমার হৃদয়ের দু-কুলে ছাপিয়ে উঠে বেদনারা। আর আমি অযথাই তাকে খোঁজার জন্য সন্ধার বালুতে রাখি পদরেখা। 





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট