হৃদয়ে মান্না দে !




প্রবোধ চন্দ্র দে ডাক নাম মান্না দে (জন্ম: মে ১, ১৯১৯; মৃত্যুঃ ২৪ অক্টোবর, ২০১৩ ) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীত শিল্পীদের একজন। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, গুজরাটিসহ অজস্র ভাষায় তিনি ষাট বছরেরও অধিক সময় সঙ্গীত চর্চা করেছিলেন। বৈচিত্র্যের বিচারে তাকেই হিন্দি গানের ভুবনে সবর্কালের সেরা গায়ক হিসেবে স্বীকার করে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞ সঙ্গীতবোদ্ধারা। কক্সবাজার মহেশখালীর উদীয়মান চিত্রশিল্পী আর.করিম হৃদয়ে মান্না দে কে ধারণ করেছেন। এঁকেছেন চল্লিশটির মতো ছবি।মান্না দের প্রতি ভালোবাসা ক্রমে ক্রমে বেড়েই চলেছে তাঁর।'কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই...'-গানটির প্রেমে পড়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন- 'ফ্রেন্ডস কফি হাউস'।মূলত গানটির সাত বন্ধুকে প্রাধান্য দিয়ে এ নামকরণ।মান্না দে র সম্পর্কে উদীয়মান তরুণ চিত্রশিল্পী আর.করিমের ভাবনা ও অনুভূতি কী তা জানতে ও আপনাদের জানাতে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র।



ইস্রাফিল আকন্দ : কেমন আছেন আপনি?

আর.করিম : এইতো ভালো। তুমি?

ইস্রাফিল আকন্দ: আলহামদুলিল্লাহ ভালো।।আপনার কাছ থেকে মান্না দে সম্পর্কে আপনার ভাবনা ও ভালোবাসা জানতে চাই। জানাবেন?

আর.করিম: অবশ্যই।

ইস্রাফিল আকন্দ: আপনি মান্না দে র কোন গানে প্রভাবিত হয়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন ?

আর.করিম:  গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের লেখা এবং সুপর্ণ কান্তি ঘোষের সুরে সেই বিখ্যাত গান" কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী বিকেল গুলো সেই আজ আর নেই"। অবশ্য শুধু বিখ্যাত গান বলা আন্ডারস্টেটমেন্ট। বাংলা গানের ইতিহাসে কালজয়ী যে সমস্ত গান রয়েছে তাঁর মধ্যে একাবারে উপরের সারিতে এই গানটির স্থান।

ইস্রাফিল রুদ্র: মান্না দে'র এ (আপনার প্রিয়) গানটি সম্পর্কে আপনার ভাবনা কি?

আর.করিম: গানটি সম্পর্কে অনেকের মতো আমার ভাবনাও বাড়াবাড়ি রকমের। তবে যার যার চিন্তা-ভাবনার জায়গা আলাদা আলাদা হতে পারে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই জায়গা থেকে গানটিকে আমি আমার মতো করে দেখি। গানটি নিয়ে আমার যতো ভাবনা তা ভাষায় প্রকাশ করা দুষ্কর।আমি মনে করি আমার সাথে সবাই অবশ্যই একমত হবেন।কারণ এই গানে রয়েছে বাঙালির ভিন্ন ভিন্ন আবেগ। আমি শুধু এতোটুকুই বলবো-এ গান আমার হৃদয় ছোঁয়া গান,এ গান আমার প্রাণের আরাম।

ইস্রাফিল আকন্দ: মান্না দে'র গান ব্যতীত তাকে কেনো আপনি অনুসরণ করেন?

আর.করিম: আসলে অনুসরণ করি অনুসরণ করার মতো বলেই।মান্না দে'র সংগীত জীবন নিয়ে অনেকের জানা থাকলেও মানুষ হিসাবে উনি কতটা উদার, মহৎ এবং সাধারণ বা পারিবারিক জীবনে উনি কতটা স্নেহশীল,দায়িত্ববান এবং সংবেদনশীল - তা হয়তো অনেকেরই সেভাবে জানা নেই। সেটাই স্বাভাবিক।এ ক্ষেত্রে তাঁর আত্মজীবনী মূলক বই "জীবনের জলসাঘরে" পড়তে হবে।(অনুলেখক - ড. গৌতম রায়)  বইটিতে সংগীত জীবনের কাহিনীই শুধু নয়। তাঁর ব্যক্তি জীবনের অন্দর মহল পাঠকের সামনে তিনি খুলে দিয়েছেন নিঃশেষে।তাঁর সময়ানুবর্তিতা, নিয়ম নিষ্ঠা,ঐদার্য, স্নেহশীলতা, মরমীমন, নিরহংকারী চরিত্র ও সংবেদনশীলতার নানা নিবিড় অনুষঙ্গ এবং ছবি বইটির মতো করে আর কোথাও পাওয়া যাবে না বলে আমি মনে করি।


ইস্রাফিল আকন্দ: এতো গুলো ছবি ভালোবাসা থেকে নিশ্চয় এঁকেছেন। ভালোবাসার পিছনের গল্পটা শেয়ার করুন।

আর.করিম: ভালোবাসা থেকে এঁকেছি তা তো অবশ্যই। আমি যেহেতু ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকি আমার তুলিতে প্রিয় মানুষের ছবি তো আসবেই। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তেমন মান্না দে'র ছবিও এসেছে। তবে প্রিয় থেকে বেশি প্রিয় মানুষ ও শিল্পী কখন কিভাবে হয়ে গেলো তা আমার কাছে বিস্ময়ের!এ নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে দিন - তারিখ বা সাল বলা খুবই মুশকিল। এ যাবত মান্না দে'র ৪০ টার মতো ছবি এঁকেছি বিভিন্ন মাধ্যমে।তাঁর মধ্যে জলরঙ,এক্রেলিক কালার, পেন্সিল ও বলপেনের কাজ রয়েছে। মান্না দে'কে এঁকেছি, আঁকছি এবং আঁকবো জীবনভর। প্রশান্তির জন্য জীবনে জন্য প্রচুর মান্না দে'র ছবি আঁকতে হবে। আমার সকাল, দুপুর, বিকেল কিংবা রাত সারাবেলার যতো মনের আনন্দ-বেদনা সবই মান্না দে'র গানে খুঁজে ফিরি। কখনো অভিমানী হৃদয়ে তাঁর গানে গানে গলা মিলাতে চেষ্টা করি।  গেয়ে উঠি" দুঃখ আমার তোমায় আমি যে ভালোবেসেছি, স্বপ্ন তুমি সত্যি আমি এক হতে চেয়েছি" আবার কখনো আনন্দে গেয়ে উঠি "কী! আনন্দ এ বসন্ত আজই তোমারি এ কুঞ্জের পাড়ে, তুমি দাও সারা দাও এসে নাও যেনে নাও কেনো বসে আছো বন্ধু ধারে" হয়তো সেভাবে পারিনা। তবে হৃদয় থেকে আগ্রহের কমতি নেই। হৃদয় দিয়ে গাওয়ার চেষ্টা করি। হৃদয় দিয়ে কয়জনেই বা গাইতে পারে। তাঁর সে রকম একটা গানের কথায় বলি " হৃদয়ের গান শিখেতো গাইগো সবাই ক'জনা হৃদয় দিয়ে গাইতে জানে, নয়নে কাজল সে তো সবাই পড়ে ক'জনা তোমার মতো চাইতে জানে।"

ইস্রাফিল আকন্দ: আপনি "ফেন্ডস কফি হাউস" প্রতিষ্ঠা করেছেন,  মান্না দে'র সেই বিখ্যাত গান "কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই। এর প্রেমে পড়ে কি?

আর.করিম: হ্যাঁ,এ গানটি আমাকে ভীষণভাবে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানের নামটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই গানের সাত চরিত্র কে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

ইস্রাফিল আকন্দ: আমরা জানি মান্না দে'র মৃত্যু হয়েছিলো ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর-সে দিনটাতে আপনার অনুভূতি কেমন ছিলো;যখন শুনলেন প্রিয় মানুষটি আর নেই?

আর.করিম: আমার মনে আছে, আমাকে মান্না দে'র মৃত্যুর সংবাদটি দিয়েছিলেন আমার এক সিনিয়র বড় ভাই। তিনি তখন কলেজে পড়ালেখা করতেন।আমরা একই উপজেলার তবে আমার বাড়ি এবং তার বাড়ির দূরত্ব অনেক। তার পড়ার কলেজটা ছিলো আমাদের এলাকায়।সে ক্ষেত্রে আমাদের এলাকায় এক বাড়িতে লজিং থেকে কলেজে  পড়ালেখা করতেন। উনি আমার চাইতে বয়সে সিনিয়র হলেও মানসিকতার মিলের কারণে বয়সের ব্যাপারটি কখনো সামনে আসেনি। উনি আমাকে হঠাৎ এসে বললেন আমাদের শিল্পী আর নেই। আমি কে জিজ্ঞেস করার আগেই উত্তর পেলাম - মান্না দে মারা গেছেন। শোকস্তব্ধ হয়ে গেলাম। তখন তো আমার স্মার্ট ফোন ছিলোনা।টিভিতে খবর দেখেছিলাম। মনে আছে সেদিন অনেকটা সময় টিভি পাহারা দিয়েছিলাম।সে থেকে মান্না দে'র প্রতি আগ্রহটা বেশি করে বাড়তে শুরু করেছিলো।



ইস্রাফিল আকন্দ: মান্না দে কে নিজের কাছে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপনি আর কী কী করতে চান?

আর.করিম: আমি এক কথায় রংতুলির মানুষ।কফি হাউসের ব্যবসাটাও আমার কাছে শুধু মনের খোরাক।মান্না দে'র প্রেমে না পড়লে হয়তো ব্যবসায় নামতাম না।আমি শুধু আমার আঁকার মাধ্যমেই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।

ইস্রাফিল আকন্দ: মান্না দে'র ছবি গুলো নিয়ে কোনো প্রদর্শনী হয়েছিলো বা ভবিষ্যতে হবে?

আর.করিম: স্থানীয় ভাবে ২০১৪-২০১৫ তে দুটি যৌথ চিত্রপ্রদর্শনীতে আমার অন্যান্য ছবির সাথে মান্না দে'র ছবিও ২-৩ টা করে ছিলো। এছাড়া আর মান্না দে'র ছবি নিয়ে কোনে প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে মান্না দে'র একশো'র অধিক আঁকা ছবি নিয়ে একটি একক ভাবে চিত্রপ্রদর্শনী করার।

ইস্রাফিল আকন্দ: আপনার মূল্যবান সময় থেকে আমাদের সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আর.করিম : ধন্যবাদ তোমাকেও।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
১৫ এপ্রিল, ২০২০ এ ১১:৪৯ AM

ধন্যবাদ প্রিয় আর করিম

Reply
avatar