কতদিন দেখিনা তোমায় !



কতদিন দেখিনা তোমায় !
আহমদ মেহেদী

 শীতের দিনের রোদ খুব কড়া হয়, সকালে গোসল কওে বের হয়েছি বলে একটু আরাম পাচ্ছি। বাবাকে বলেই বাড়ি থেকে বের হলাম। যেদিন রিকশার প্রয়োজন সেদিন রিকশা সহজে পাওয়া যায় না। দুএকজন রিকশা ড্রাইভারের নাম্বার সেভ করা আছে। কল দিতে একজনের নাম্বার বন্ধ অন্যজন ভাড়া নিয়ে চলে গেছে। মেজাজটা গেল খারাপ হয়ে। অফিসের প্রমোশনের একটা পরীক্ষা আছে কুমিল্লায়। পরীক্ষার আর মাত্র এক ঘন্টা বাকি। বাড়ি থেকে ষ্টেশন  আসতে আধা ঘন্টা শেষ। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি। পাপিয়া বাস ছেড়ে দিবে দিবে করছে। দৌড়ে গিয়ে উঠে পড়লাম তা না হলে আরও দশ মিনিট লেইট হবে। পিছনের সিটে বসতে গিয়ে হকচকিয়ে গেলাম। স্কুল জীবনের ক্লাসমেট সামিয়া তার বাচ্চা কোলে বসে আছে ! সেও আমাকে দেখে সেই পুরনো হাসি দিয়ে বলল ।
-কেমন আছ জাকির?
-ভালো। তোমার কী খবর?
-আছি ভালোই, কোথায় যাও? এখন কি কর? বিয়ে করেছ?
-কুমিল্লায় যাব অফিসের কাজে, গত জানুয়ারিতে বিয়ে করেছি।
-কেমন তোমার বউ, তার পড়াশুনা কতটুকু?
-হ্যাঁ, ভালো। বউ এবার এসএসসি দিবে। তা শুনে সামিয়া হেসে ফেলল আর বলল ।
-আর কারো সাথে কন্ডাক্ট হয় তোমার?
-না, এখন আর কারও সাথে তেমন কন্ডাক্ট নেই!
-তোমার কন্ডাক্ট  হয়? খালেদা, শিরিন ও নাজমাদের সাথে?
-না আমারো হয় না। শুনেছি ওয়ালিউল্লার সাথে কন্ডাক্ট হয় শিরিনের! কুমিল্লায় যেতে যেতে অনেক কথা  হল, কত পবিত্র স্মৃতির কথা মনে ভেসে উঠলো শিরিনের কথা  শুনেই নিজের ভিতরটা কেমন জানি হু হু করে কেঁদে উঠল। কোন রকম পরীক্ষা দিয়ে চলে এলাম সোজা ধর্মসাগর পাড়ে। সিগারেটটা ধরাতে ধরাতে ভাবতে লাগলাম-  যে ওয়ালিউল্লা আমাদের দুজনের সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে বেড়াত সেকিনা আজ আমার প্রিয়তমার সাথে ফোনে  কথা বলে । সত্য যে আকড়ে ধরে তাকে মনের মসজিদে ভালবেসে যায় তার এখন কোনো দাম নেই, মিথ্যা ছলচাতুরীর জালে আটকে সে সব ভুলে গেছে! তার দেওয়া চিঠি গুলো দেখলেও কি এই কথাগুলো আজ আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? চিঠির কথাগুলো কি সব মিথ্যা ছিল? আমাকে কি মিথ্যাই মনের রাজা বানিয়েছিল সে? আমাকে নিয়েই কি অকুল সাগর পাড়ি দিতে চেয়েছিল ! আমৃত্যু কি আমার ভালবাসাই কামনা করেছিল? আমার জন্য কি এই শিরিন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চেয়েছিল? আমার জন্যই তো তুমি তোমার প্রিয় মাকে পর্যন্ত ছাড়তে চেয়েছিলে? তুমি তো চেয়েছিলে যেন আমি তোমার বিয়েতে বাধা না হয়ে দাড়াই, তোমার মৌলানা বাবার মানহানি যাতে না হয়, তুমি ভালবাসার কসম দিয়ে তোমার এই কথা রাখতে বলেছিলা কেন? কেন! কেন! তুমি ভালো করেই জানতে আমি চাইলে  বিধাতা ছাড়া কারও সাধ্য ছিল না আমাদের ভালবাসার পথে বাধা হয়ে দাড়ায়! সরলতা কে কেন তুমি আমার দূর্বলতা ভেবে ভেবে দিব্যি পরের ঘরে আলো জ্বালাচ্ছ।
-না, আমি বিশ্বাস করিনা আর করতে চাইও না। আমার প্রিয়তমা  শিরিন এমন করতেই পারেনা। অনেক বছর তো হয়ে গেল একটিবার ও আমার খোজ নেওনি ভালো কথা  তাতে কি হয়েছে! কিন্তু যে আমার শত্রু তার সাথে নাকি তুমি কন্ডাক্ট করছ। এসব কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না আমি।  সরলতার মানুষটিও ইচ্ছে করলে তোমার হতে পারত, তুমিই পরিবারের মান রক্ষায় তাছাড়া সদ্য এসএসসি পাশ করা একজনের সাথে নিজেকে নিয়ে টালমাটাল হয়ে পড়েছিলা। তোমার বিয়ের কথা শুনতে হয় অন্যের কাছে এর থেকে দুঃখ জীবনে আর কি হতে পারে!
সামিয়ার সাথে দেখা হয়ে নিজেও টালমাটাল হয়ে গেলাম। কত কথা বলতে ইচ্ছে করে,কত স্মৃতি আজও আমাকে ঘুম পাড়ায়, চমকে দেয়।  কত মানুষকে প্রতিদিন দেখি শুধু আমার প্রিয়তমা ছাড়া! সামিয়ার মতো যদি দেখা পেয়ে যেতাম  আরেকবার  কোন অচেনা ষ্টেশনে, অভিমান ভুলে বলতাম- প্রিয়তমা, কতদিন দেখিনা তোমায় !



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট