লিউ জিয়াবোর স্মরণে চায়না কবিতা
সমুদ্র উপাখ্যান
মূলঃ লিউ জিয়া
ইংলিশঃ মিং ডি
বাংলায় রুপান্তরঃ মীম মিজান
১.
সে সৈকতে হাঁটু গেরে
মাছ শিকারের একটি জাল বুনছে,
তার পেটটি উঁচু।
সে সাগর দেখার জন্য একটু জিরিয়ে নিলো,
একটি সাগর কী সীমাহীন! কোনো কিনারা নেই।
মাছ শিকারের জালটি তার দৃষ্টিকে বাঁধা দিল একটি ছোট্ট বর্গাকার ক্ষেত্রের দিকে।
সে একজন ধীবরের স্ত্রী।
সে সবসময় এই দ্বীপেই বসবাস করছে,
কখনোই বাইরে যায়নি।
তার একটি লালরংয়ের পোশাক আছে যেটি সে মাত্র একবারই পরেছে
মূল্য নির্দেশিকা এখনো লাগানোই আছে,
যেটি এখন বাক্সের একবারে তলায় আছে।
সে শহরের স্বপ্ন দেখেছিল।
আর শহরের জাঁকজমক আলোর।
কিন্তু এটা আর হবেনা। সে তার স্বপ্ন জানাতে পারবেনা।
সেদিনগুলোতে তার স্বামী যখন সাগরে যেত
সে তার ছেলের সঙ্গে কথোপকথন করত-
সে নিশ্চিত যে সেটি তার গর্ভের বাচ্চাটি ছেলেই হবে
সে তার সঙ্গে নিঃশব্দে কথা বলে।
সে একজন ধীবরের স্ত্রী।
২.
গোধুলি লগ্নে একটি বালক সাগরে যাচ্ছে
তার দাদার হাতটি ধরে।
সেখানে বিভিন্ন আকারের সমাধি আছে
রাস্তাটির পাশ ধরে ছোট ও বড়,
পোশাকাদি, তোষক ও বাটিসহ
যেগুলি সেই বৃদ্ধলোকটির বন্ধুর-
তারা সাগরে গেল
কিন্তু আর কখনোই ফিরলোনা।
বৃদ্ধলোকটি এই সমাধিগুলো গড়েছে
আর তার অনুসারী ধীবরদের জন্য অশ্রু ফেলে দুঃখ করেছে।
সে নিজে কখনো সাগরে যায়নি।
বালকটি তার সঙ্গে হাঁটছে, একটি সমাধি থেকে অন্য সমাধিতে লাফ দিচ্ছে,
সমাধিগুলো ঘাসে ছেয়ে গেছে
বালকটির পায়ের আঘাতে ঘাসগুলোতে ঢেউ উঠেছে।
প্রত্যেকদিন বালকটি তার দাদার সঙ্গে সাগরে যাবে
সে সৈকতে বসবে
অতিপরিচিত কিন্তু আশ্চর্য সাগরের দিকে থাকিয়ে থাকবে।
যখন পরিপূর্ণ আধার নামবে তারা উভয়েই
ঢেউয়ের শব্দের কলতান ছেড়ে
নিরবেই ঘরে ফিরবে
দু’টো সাম্পানের সাগর পারি দেয়ার ন্যায়।
৩.
সেকতের উপরে কিছু নৌকো ছড়িয়ে আছে,
পুরাতন ও শৈবালযুক্ত।
একটি ছোট্ট বালক অনাবৃত কাঠের গুড়িতে খেলছিল
হঠাৎ কিছু একটা দেখতে পেল।
সে কাঁদতে কাঁদতে খাড়া বাঁধে থাকা বৃদ্ধলোকটির দিকে
প্রাপ্ত বস্তুটিসহ দৌঁড় দিল।
এটি দেখে বৃদ্ধলোকটি কেঁপে উঠল
একটি হাতে তৈরি দাঁতভাঙ্গা চিরুনি।
সেই কাঠের চিরুনিটি সে একটি মেয়েকে দিয়েছিল,
কী চমৎকার ও প্রাণবন্ত মেয়েটি!
অতপর মেয়েটির সঙ্গে এখনকার ভগ্ন নৌকোগুলোর একটায় অভিসার করেছিল,
একটি তৈল প্রদীপ তাদের যুবায়বে আলো দিচ্ছিল।
এখন তার অর্ধাঙ্গি গত।
এখন আর কোনো চুল লম্বা ও কালো হবেনা,
তাদের ইটের তৈরি শয্যায়।
বৃদ্ধলোকটি বোবাহয়ে মাথা নড়াচ্ছে।
সে চিরুনিটিকে সাগরে ছুড়ে মারলো,
দূরে সেটাকে দুলতে দেখল।
ভূমিকা
লিউ জিয়া(জন্ম-১৯৬১) শান্তিতে নোবেলজয়ী লিউ জিয়াবো(২৮ ডিসেম্বর, ১৯৫৫- ১৩ জুলাই, ২০১৭) এর স্ত্রী। লিউ জিয়া একজন চীনা কবি ও চিত্রশিল্পী। তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে কবিতা লিখলেও গত তিরিশ বছর ধরে আলোচনায় আছেন। তিনি তিনশতাধিক তৈলচিত্র ও বিভিন্ন ধরনের চমকপ্রদ সাদা-কালো ছবি এঁকেছেন। ২০১৪ সালে ‘পূর্ব-পশ্চিম উঔঝ কবিতা’ পদকে ভূষিত হন। কবিতাটি লিউ জি তার প্রয়াত স্বামী লিউ জিয়াবো এর ভালোবাসায় লিখেছেন।
উল্লেখ্য যে, লিউ জিয়াবো চীনের একজন নামকরা কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক, কমিউনিস্ট বিরোধী ও সমাজকর্মী। তিনি একনায়কতন্ত্রী কমিউনিজম অবসানের জন্য আন্দোলন করেছেন। এজন্য ২০১০ সালে শান্তিতে নোবেল পান।