প্রেমেরে পদাবলি




বোমা বিষয়ক
শেখর দেব

নিজের ভেতর ক্ষয়ে যায় আদিম পাথর এক
কোথাও কোন আগুন জ্বলেনি তবু
বিন¤্র বোমা পুঁতে চলে গেছো দূরের কোলাহলে
বিকট সশব্দ আস্ফালন শুনিনি কখনো
ফুলকির স্বভাবে তিলতিল ক্ষয়ে যায় সভ্যতা
তীব্র আগুন-আঁচে ক্লান্ত পৃথিবী শুয়ে আছে আজ।

একটি বিশদ বেমালুম বিস্ফোরণ শেষে
চূর্ণ হয়ে যাক রাত আর সমগ্র দিবস
রাগ ও অনুরাগ সমৃদ্ধ কয়েকটা প্রেম
শুনতে পাবে না কেউ।

তোমাকে না-ছুঁয়ে কলঙ্ক লেগেছে গায়ে
ভেবেছিÑ চুমু খেলে গোপন বোমার আকারে
ধ্বসে পড়তো সভ্যতার খোলস!
কে তুমি অসভ্য হতে বলো?
সভ্যতার সুন্দরে পুড়ে পুড়ে ম্লান হয়ে আছে
নিরালম্ব কংকাল আমার।

সভ্যতা বুঝি, বোমা বুঝি
প্রেম তবে রয়ে যায় অবুঝ আঁধার!


কাট গোলাপের ঘ্রাণ
শাহীন মাহমুদ

তোর কানে দিবো নয়নতারা সোনালুর দুল
খোপায় দিবো কৃষ্ণচূড়া -কনকচাঁপা ফুল
কোমরেতে পড়িয়ে দিবো কুর্চি ফুলের বিছা
ভ্রমর হয়ে হুল ফোটাবো পাবি না যে দিশা ।
ফাগুনের এই লগন না হয় উজাড় করে দিলাম
ভালোবাসে ফতুর হতে তাইতো ফিরে এলাম।
তোর অধরে বইছে আজি কাট গোলাপের ঘ্রাণ
আমার ঠোঁটে চোট লেগে হায় হল যে খান খান ।



ঈশ্বরের অপেক্ষায়
মোকসেদুল ইসলাম

গোপন অন্ধকারে যে বাঁশি বাজে সে নয় প্রত্যাখ্যানের সুর
আলগোছে রাখা বুকের পাখিটা উড়ে গেলে
অযথা চিন্তা বাড়ে আমার
শুধু হাতদুটি তুলে ধরো
উড়াল জাহাজে পার হবো আগুনজ্বলা নদী

আমাদের যাত্রা শুরু হয় মূলত মাটি থেকেই
সত্য কিনা জানি না তবে পতিতার সাথে আমাদের
শারীরিক গঠনে কোন পার্থক্য নেই
আর এই নির্মম সত্যটি জানার পরেই ঈশ্বর ছুটি নিলেন আগাম সাতদিনের
এবং ঘোষণা দিলেন পৃথিবীতে কেউ কেউ মানুষ হয়ও জন্ম নেয়

কড়া পৌষ মাস
উনুনে অঙ্গার জ্বালিযে আমরা তার ফেরার অপেক্ষায় থাকি।


তিতাস পাড়ের মেয়ে
উষার মাহমুদ

শেষ কবে দেখেছিলাম হুবহু মনে নেই,
একদা তুমি ঠিল্লার পিঠে চড়ে মাঝ নদীতে ভাসতে তিতাসের জলে।
চলন্ত লঞ্চ রেখে যাওয়া ঢেউগুলো খেলতো তোমাকে নিয়ে।
আলতো চুমু খেত তোমার শরীরে! সুমিতা,
হয়তো তুমিও জানতে না কতবার পায়ের বদল হতো-
নদী থেকে তোমার ঘর অবদি পৌছতে।

আমি গনেছি, আর তোমার জলে ভিজা পায়ের ছাপে পা মিলিয়ে হেঁটেছি।
পেছন থেকে দেখেছি, মাটির কলস ভেয়ে ঝরেপড়া টিপ টিপ জলকণা,
আলতা রাঙা উদলা পায়ে কয়েক বিন্দু স্বপ্ন।
জলসিক্ত কামিজের আড়ালে কোমরের ভাজ, লাল ডোরা কাটা গামছায় মোড়ানো চুল!
 প্রক্ষালনে তুমি আসতে; তবে আর দেখিনি তোমার দূরন্তপনা
তুমি বেড়ে উঠার সাথে সাথে প্রস্থান হয়েছে অনেক কিছুর।



উপমা তোমাকে বিদায়
শাহিন আলম

আমার কবিতারা তোমার দরজা জানালা খুলে লুট করেছে সর্বস্ব
সে অভিযোগে তুমি মামলা করেছো দায়ের।

আমার কবিতারা ফেরারি আসামী হয়ে
অন্ধকার গলিতে বেড়ায় ঘুরে।

তোমার রুপের সুধা পান করে যে কবিতারা বড় হয়েছে
যার ডালপালায় ফুটে আছে তোমার স্পর্শের ফুল
তারা আজ জমটুপি পরে পায়চারী করে হৃদয়ে আমার।

মরা নদীর মতো আমার কবিতারা পড়ে থাক
আমার কবিতার শরীর থেকে উপমা তোমাকে বিদায়।


হৃৎপিণ্ড তুমি নিয়ে যাও
এসএম নূরনবী সোহাগ

তুমি না থাকলে; এর আর দরকার হবে না আমার
নিঃশ্বাসের ওঠা নামা, আমি ফুসফুস দিয়ে চালিয়ে নিতে পারবো।
হৃৎপি- বরং তুমি নিয়ে যাও!
হৃৎপি-ের যা কিছু কাজ সব তোমায় ঘিরেই
তুমি কি করছো, কি করবে, কি ভাবছো, কি ভাববে ইত্যাদি ইত্যাদি।
যৌক্তিক অযৌক্তিক সকল চিন্তায়, ও তোমায় নিয়ে আসে
শরীরের এটুকুই কেবল আমার অবাধ্যে চলে আসছে বরাবর।
তোমার জন্য, ও শরীর জুড়ে অবরোধ করে
চোখকে পোড়ায়, মস্তিষ্ক বিকল করে দেয়
হাত পায়ে ঢালে অবশের মত ব্যামো।
হৃৎপি- বরং তুমি নিয়ে যাও
তোমায় ছাড়া ও  থাকতে চাইবে না; আমার পাঁজরের বেষ্টনীতে!


ক্রিয়া
পরান জহির

কাঁসরধ্বনির সম্পাদনা শেষে,
তুমি ছুঁয়ে থাকো রাত্রির মতো

আকাঙ্খার স্তনযুগলে, ভ্রমতিলকের ফোঁটা
পেশিবহুল স্বপ্নের চোখে, কুসুমরঙা প্রভাত!

কুহকের নিতম্বে তোমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়,
যৌবনপ্রাপ্ত ষোড়শী বাতাসের মত!

তুমি কল্পনা করে চলো নারী আর পুরুষেরর,
বেয়াব্রু অজ্ঞতার কলেবর!

তুমি, এখানেই ইতি টানো সমস্ত দুরাশার...




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট