অশান্ত পৃথিবীর বুক ভালোবাসায় ভরে উঠুক, প্রেমের বীণায় বাজুক তবে মিলনের সুর...


অশান্ত পৃথিবীর বুক ভালোবাসায় ভরে উঠুক, 
প্রেমের বীণায় বাজুক তবে মিলনের সুর...
 
ইলিয়াস বাবর

কৈশোরেÑ তখনো বাড়ন্ত গাছটির মতো সবুজাভ আর চাঞ্চল্য ঘেষাঘেষি করে আছে আমাদের সাথে; আমরা ক্লাস নামক বন্ধনের চার দেয়ালে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ের প্রায় পুরোটাই বিসর্জন দেইÑ একদিন টুপ করে মাধ্যমিক জীবনের একেবারে মাঝখানের ক্লাসের শ্রেণিশিক্ষক পাঠদানের শুরুতে বললেন, এই শিরিন দাঁড়াও, তোমার জীবনের লক্ষ্য কী বলো তো? আমাদের তখন মাথায় বাজ পড়ার দশা! পাশের জনের দিকে তড়িৎ তাকাই, তারাও স্যারের আতিক্কা প্রশ্নে বিহ্বল। বলা নেই, কওয়া নেই, এমন প্রশ্ন কেউ করে? তার উপর, আমাদের তো কেউ বলেনি, বাচাধন স্কুলে গেলা, তা হবেটা কী? এমন বোধ কিংবা জিজ্ঞাসা জাগরুক করার পরিবেশ তখনো আমরা পাইনি; ফলে, সহপাঠীরা আশ্চর্যের অধিক বিস্ময়ে চুপ মেরে গেলাম এই ভেবে, যাক বাবা, বাঁচা গেল! শিরিনকেই জিজ্ঞেস করলেন স্যার। স্যার বাংলা পড়ান কিন্তু তার মেজাজ গণিতের শিক্ষক কি তারও জটিল বিষয়ের শিক্ষকদের মতোন। শিরিন খানিক চুপ থেকে হয়তো দম নেয়, তারপরই সে উত্তর দেয়, আমি একজন আদর্শ মা হতে চাই স্যার! একেবারে কবরের নিরবতা তখন, আমরা হাসবো না কাঁদবো এমন পরিস্থিতে স্যারও এক প্রকার বোবা হয়ে গেলেন বোধহয়। পেছন থেকে আশিক, যে কি না অষ্টম শ্রেণিতেই তিনবার ফেল করে আদুভাইয়ের নামকে আমাদের বাপদাদার আমলের পর আরেকবার স্মরণ করেই ছাড়ে যেন সেÑ গা-গতরে আমাদের চেয়ে বেশ এগিয়ে, সে-ই দাঁড়িয়ে সিনা টানটান করে বলে, স্যার, আমি শিরিনের সন্তানের আর্দশ পিতা হতে চাই! এবার আর পায় কে? আমাদের কৈশোরের জমাটবাঁধা হাসির দলাটা একেবারে ন্যাংটো হয়ে যায়, স্যারের কড়া মেজাজ আর টেবিলে রাখা বেত উপেক্ষা করে। শিরিনও তখন হাসিতে বেসামাল, স্যারও! এক পর্ব হাসি সেরে পাশের জনের দিকে তাকাই, সে হাসছে, চলমান হাসি দিয়েই সে তাকাচ্ছে শিরিনের দিকে। হয়তো তখন থেকেই আমাদের বোধে প্রেম জাগ্রত হতে থাকে, বিশেষ করে ভিন্ন লিঙ্গের প্রতি। স্যারের মেজাজেও সেদিনের পর থেকে আমূল পরিবর্তন দেখতে পাই আমরা। তিনি আগের মতো পেটান না, বেঞ্চে দাঁড় করান না অকারণে। অথচ শিরিন বেচারি টানা তিনদিন স্কুলে না এলে আমাদের পরানে কে যেন এঁকে দেয় কবিতার এমন লাইনÑ ‘একটি কথার দ্বিধাথরথর চূড়ে/ ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী।’ আশিকের মনেও কি এমন বোধ কেউ পলে পলে জাগরুক করাতো তখন! অপ্রকাশ্য যাই থাক এতোদিনের, আশিকই উসকে দিল মুহূর্তেÑ সেখান থেকে আমাদের অষ্টমশ্রেণিপড়ৃয়া মনে হঠাৎ করে প্রেম আমদানি হয়, বিনা নোটিশে। তারও বছর দুয়েক পরে আমি পড়ে উঠিÑ ‘সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি,/ বোলোনাকে কথা ওই যুবকের সাথে;/ ফিরে এসো সুরঞ্জনা:/ নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;/ ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;/ ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;/ দূর থেকে দূরেÑ আরো দূরে/ যুবকের সাথে তুমি যেওনাকো আর।’ প্রেম করলে কি মানুষ স্বার্থপর হয়ে যায়? একান্তই নিজের করে চায় সবটুকু? কিংবা যুবকের সাথে কথা বললেই কি প্রেম ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে? যুবতি যেতে চায় যাক না, যুবকের প্রতি প্রতিহিংসাই এমন কথা? সম্ভবত প্রেমিকই চায় না, তার প্রেমিকা অন্যের সাথে যাক, অন্যের হাত ধরে হাঁটুক। হৃদয়ের অবারিত আবেগ আর জোড়-বাসনার ফলেই তো প্রেম! ‘প্রেম আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর’Ñ এমন বাণী আমাদের কানে এসেছে সেই কবে! প্রেমের জন্য আত্মহত্যা, ভালোবাসার দাবি আদায়ে আমরণ অনশনের কাহিনিতে ভরা আমাদের দৈনিক, আমরা প্রেম শিখি, চালাক হই। অথচ তারো আগে ক্লাসরুমেই পড়ে উঠিÑ ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর/ আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।/ যে মোরে করিল পথের বিবাগী;/ পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি;/ দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর;/ আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।’ যুবতি যাক না তবে যুবকের সাথে! ভয় কেন যুবকের? প্রেমিকহৃদয় বড় বেশি স্বাস্থ্যবান, বড় বেশি কৃপন। তার যাপনের সবটুকু অন্যে নিয়ে যাক, তার পার্থিবতায় ভাগ বসাক অন্য পুরুষÑ হোক সহোদর কি আত্মজ অথচ যুবতিকে, আরো স্পষ্ট করে বললে প্রেমিকার ওদিকে যাওয়াই তার প্রাণে সয় না, কেঁপে কেঁপে ওঠে যেনবা, বিশ^াস আর অবিশ^াসের দোলাচলে নির্মাণ করতে থাকে প্রেমের কোরাস।
এখন, বলা যায়Ñ প্রেমের আকালে আমাদের সমুখে পৃথিবীব্যাপি দৃশ্যমান হতে থাকে প্রেমহীন হৃদয়ের তান্ডব। ধ্বংস আর রক্তের হুলিখেলায় কে কত বড় মোড়ল তারই নিয়মিত প্রচার হয় সংবাদ মাধ্যমগুলোয়। দেশহীন মানুষের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে, উদ্বাস্তুদের বেশুমার আহাজারিতে, সাগর পাড়ি আর প্রাকৃতিক ঝড়ে মারা পড়ছে কত মানুষ! ভালোবাসার অভাবে এমন পরিস্থিতে কেঁদে ওঠে যেকোন মানবিক মানুষ। কবি হয়তো রুমের আধো আঁধারে, নিজেরই ছায়ার দিকে তাকিয়ে বলেÑ ‘আমার এখন লাশের ঋতু লাশের বারোমাসÑ/ ডুব সাঁতারে বাঁচার ইচ্ছে প্রাণান্ত হাঁসফাঁস/ ছায়ার বেশে আসছে ধেয়ে মৃত্যু পরোয়ানা,/ শিশির ভেজা ঘাসের রৌদ্র মিথ্যে ষোল আনা।’ ভেতরের মানুষটি বড় স্বার্থপর হয়ে গেছে এখন, নিজের প্রতিই নেই প্রেম। আপন প্রেমের অভাব যার অন্তরে সে অপরকে ভালোবাসে কিভাবে? প্রথমে নিজেকে ভালোবাসা চাই, তারপর পরিবার, প্রতিবেশ, সমাজ এমনকি তা দেশ হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে পৃথিবীর সকল মানুষের দুয়ারে। অথচ আমাদেরই সুদৃশ্য ফ্ল্যাটের পাশে গড়ে উঠছে বৃদ্ধাশ্রম! কি নির্মম আমাদের সময়! কতোটা অমানবিক হলে আমাদের ঘর হতে পারে মা-বাবাশূন্য? এরকম বাস্তবতার মাঝেই আমরা প্রেমিক হচ্ছি সময়ের তুচ্ছ মোহের। ক্রমশ কমে যাচ্ছে শ্রদ্ধাবোধ, গোপনীয়তার আড়াল। প্রাযুক্তিক সুবিধা আরো গোঁয়ার করে তুলছে আমাদের। সম্পর্ক হচ্ছে দ্রুত, ভাঙছে আরো দ্রুত। পারস্পরিক বোঝাপড়ার আগেই জীবনের খেরোখাতায় যোগ হতে থাকে তিক্ততা, বাড়ছে হৃদয়ঘটিত মৃত্যু। পেছনে তাকালে দেখি, সভ্যতার অগ্রগতি, দারুন সব আবিষ্কার, জীবনকে উপভোগ করার নানা উপকরণ। অথচ ভালোবাসার জগতটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসছে তার দিকে নজর দিয়েছি কেউ? মা তার আদরের সন্তানকে, সন্তান তার মা-বাবাকে খুন করছে, এরকম সম্পর্কের বাইরে তো অহরহ অবিশ^াস্য কা- প্রতিদিন দেখা যায় দৈনিকের পাতায়। আইন-আদালত সবই থাক, মনের আদালতটি যদি অপবিত্র হয়ে যায় কোন কারণে, কালিমা যদি পড়ে যায় কোন অজুহাতেÑ তা বাড়তে থাকে। পরিবারের আয়তন ভেদ করে তা এখন পৃথিবীর সর্বপ্রান্তেÑ কত নামে, কত গোষ্ঠির আবরণে।


‘তোমার নয়ন হতে এক বিন্দু তপ্ত অশ্রুজল,/ আমারে দানিলে বন্ধু! জীবনের পাথেয় সম্বল।/ তোমার অন্তর হতে উৎসারিত অমৃত মাধুরী/ দিল মোর রিক্ততারে ভরি।/ লভিনু পরম ধন। মোর রিক্ত জীবনের দিন/ সার্থক সুন্দর হল কী দিয়া শুধিব এর ঋণ?’ ভালোবাসার এ ঋণ শোধ হয় না বলেই তাজমহল দাঁড়িয়ে থাকে ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে। শিরি-ফরহাদ, রাধা-কৃঞ্চ, ইউসুফ-জুলেখা প্রমুখ জুটির খবর বাসি হয় না; উল্টো ভার্সিটি ক্যাম্পাসে সহপাঠীরা কারো কারো প্রেমকে ভিন্ন সব নামে ডাকতে শুরু করে। তাতে কিছুই হয় না কারো, তবে প্রেমের পরম্পরাকে সামনে নিয়ে আসে প্রজন্মেরই প্রেমিকেরা। পার্কে-বিনোদন কেন্দ্রে-প্রাকৃতির সান্নিধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকারা হারিয়ে যায়। মিতালি করে প্রকৃতির সাথে। কখনোসখনো মনের প্রেম অতীত হয়ে শরীরে মজে যায় কেউবা। প্রেম অনুভবের, প্রেম হৃদয়েরÑ এমন কথার প্রেক্ষিতে কেউ বলবে, প্রেম শরীরনির্ভর চাহিদা। শরীর ছাড়া মনের অস্তিস্থ কেউ যেমন কল্পনা করতে পারে না, মন ছাড়া শরীরেরও। পতিতা দেহ দেয় মন নয়, প্রেমিকা মন দেয়। জোরাজুরির অপ্রীতিকর কা-ে মন ভাঙে, হৃদয় চুরমার হয়ে যায়। হৃদয়ের যতœ নেয়ার মতো কঠিন কাজ জগতে কে করেছে! প্রেমিক-প্রেমিকাকে হরহামেশাই তা করতে হয়, কখনো অভিনয়ের নিপুনতায়, কখনো বাস্তবতার ঘেরাটোপে। কাজী নজরুল ইসলাম যেমন বলেনÑ ‘তোমারে বন্দনা করি/ স্বপ্ন-সহচরী/ লো আমার অনাগত প্রিয়া,/ আমার পাওয়ার বুকে না-পাওয়ার তৃঞ্চা-জাগানিয়া!/ তোমারে বন্দনা করি.../ হে আমার মানস-রঙ্গিণী,/ অনন্ত-যৌবনা বালা, চিরন্তর বাসনা-সঙ্গিনী!’ স্বপ্নের সহচর বা সহচরীকে কেমন যতœ করা চাই, তা ভুলে গেছে আমাদের সময়! প্রেম প্রেম খেলায়, ভ্যালেন্টাইন দিবসের প্রেক্ষিতে নিরবে কাঁদে কত মানুষ। কারো বিসর্জন, কারো বা বুঝতে না পারার বেদনাÑ এই অপার অসংজ্ঞায়িত অনুভবের ভেতর দিয়ে দরোজায় কড়া নাড়ে ভালোবাসার দিবস। আলাদা দিবস লাগে না বলে যতই নাক চিটানো হোক, বাঙালি তো বটেই মানুষ মূলত উপলক্ষ না পেলে দাঁড়াতে চায় না। বাঙালির ভালোবাসার ইতিহাস জাতিয় জীবনের সাথে লেপ্টে থাকা রক্তেরই অনুবাদ। শেকড়কে ভালোবসার দায় আঁছড়ে পড়ে আমাদের অন্তরে, যেহেতু আমরা আকাশ সংস্কৃতির করাল গ্রাসে নিমজ্জিত, আমাদেরই আপনজনেরা ভ্রাতৃহন্তারকে পরিণত হচ্ছে দিনকে দিন। সুন্দর একটি হাসির সাথে কখনো তুলনা চলে না রাজ্য জয়ের, একটি বুক খালি করার বিনিময়ে অর্থের থলি বদল যেন আমাদের নিত্য কামনায় স্থান করে নিতে না পারে। এক জীবনে কী আর চাওয়ার থাকে? ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’ এরচেয়ে বড় প্রার্থনা সঙ্গীত আর কী হতে পারে আমাদের! সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা, সৌহার্দ্যময় পরিবেশে জীবন যাপন করাটা হোক দীর্ঘ, বিয়োগের ব্যথায় নয়, মিলনের সুরে একিভূত হোক আকাক্সক্ষার সেতু।
গাছের শরীরে কৈশোরে দুষ্টমতি কেউ এঁকে দিত তার নামের সাথে যোগ চিহ্ন দিয়ে তারই ক্লাসে পড়–য়া পছন্দের বা নিচের-উপরের কারো নামের অক্ষর। রাস্তার ধুলোয়ও দেখা যেত এমনতর চিহ্ন। আহা, যদি একবার সে দেখে! একবার যদি তার নেকনজরে পড়ে! এই ধুলোমাখা আবেগ এখন বিদেয় নিয়েছে স্মার্টফোনের রাতজাগা সময়। চেনা নেই, জানা নেই, হৃদয়ের দরদাম করা নেইÑ টুপ করে হয়ে যায় যুগল! কেউবা অনেককেই একসাথে ধরে রাখে প্রেমের সম্পর্ক নামক জালে। আর্ন্তজালিক এ জ¦ালাময় বিভায় আমাদের প্রেম এখন অনেকটাই এমনÑ ‘সুরঞ্জনা,/ তোমার হৃদয় আজ ঘাস/ বাতাসের ওপারে বাতাস/ আকাশের ওপারে আকাশ।’ আকাশের ঠিকানায় চিঠি না লেখুক, ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে না রাখুক তবুও ঠিকানাহীন হচ্ছে সময়ের মানুষের মানুষগুলো। আবেগের বাড়াবাড়িতে গদগদ হয়ে হাতে-পায়ে ধরতে গিয়ে দিব্যি ভুলে যাই মনে ধরার কথা। অথচ মানুষের চেয়ে বড়, মানুষের চেয়ে মহিয়ান আছে আর কে? এরচেয়ে বড় জাদুকর আর কে হতে পারে তবে? ‘সে তোমার পাওনা এতটুকু পরোয়া করে না,/ খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানোর ইচ্ছায় দেখায়,/ ডাহুক উড়ায়া দিয়া তারপর আবার ধরে না,/ সোনার মোহর তার পড়া থাকে পথের ধূলায়।/ এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর/ যে তার রুমাল নাড়ে পরাণের গহীন ভিতর।’ প্রেমিকের সুগন্ধি রুমালে জড়িয়ে থাকে প্রেমিকার নিঃশ^াসের সবটুকু, প্রেমিকার আঁচলে লুকিয়ে থাকে প্রেমিকের কবিতার খাতা। তা না হলে কেন এমন বলে কবিÑ ‘তোমার দু’হাত মেলে দেখিনি কখনো/ এখানে যে ফুটে আছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গোলাপ,/ তোমার দু’হাত মেলে দেখিনি কখনো/ এখানে যে লেখা আছে হৃদয়ে গাঢ় পঙক্তিগুলি।’ প্রেম করে কেউ কবি হয়, কেউবা বোবা, কেউবা চালাক। তবুও প্রেমিকের হৃদয়ের আর্তি এক পৃথিবীর স্পর্ধা নিয়ে আমাদের শোনায়Ñ ‘ভালোবাসতে বাসতে ফতুর হয়ে যাবো/ ভালোবাসতে বাসতে ফতুর করে দেব।’

ভালোবাসা থেকেই এই পৃথিবীর জন্ম। ভালোবাসা থেকেই আমাদের আগমন। অশান্ত পৃথিবীর বুক ভালোবাসায় ভরে উঠুক, প্রেমের বীণায় বাজুক তবে মিলনের সুর। আমাদের ছোট অথচ প্রেমময় জীবনটা হোক ভালোবাসাময়। পৃথিবীর কোন বালুচরে শিশুর লাশÑ আমার ভায়েরই লাশ! পৃথিবীর কোথাও লাঞ্চিত নারীর কান্নাÑ আমার বোনরেই আহাজারি! পৃথিবীর কোন স্বাধীন দেশের মানুষ গৃহহীন হওয়া মানেইÑ আমার সভ্যতার অপমান। আমাদের প্রথমে নিজেকে ভালোবাসতে হবে, তারপর অন্যকে। নিজের প্রতি, স্বজাতির প্রতি, স্বদেশের প্রতি, সমগ্র মানবজাতির প্রতি ভালোবাসই হোক আমাদের পরিচয়ের হাতিয়ার, চলনের মূলমন্ত্র। প্রকৃতিনিধনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই আমাদের ভালোবাসা, পরিবেশ রক্ষার প্রতি দায়বদ্ধতাই আমাদের ভালোবাসা, দেশের চালিকাশক্তিগুলো ঠিক রাখাই আমাদের ভালোবাসা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেয়াই আমাদের ভালোবাসা। ¯্রষ্টা তো বলেই দিয়েছেন, তিনি জগতমাজারে বিরাজমান। তারই সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসাই হোক আমাদের অহংকার। কবি তাই বলেনÑ ‘তোমাকে দেখার ছলে যতোবার আকাশে তাকাই/ ততোবার দিগন্তের মেঘ এসে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সম্মুখে।’



 

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট