পদাবলি : ০১



প্রভাতদূত
আহমাদ সোলায়মান

নীরবতা যখন প্রেমপত্র দিয়েছিল তৃতীয় হাতে
অজান্তে তা গ্রহণ করেছে অবাধ্য মন,
সূর্যের ক্লান্তিঘুম থেকে যে যৌবনখেলার শুরু
মধ্যপ্রহর অন্ধকারের অশ্রুস্নানে তার শেষ খুঁজে;
দুঃস্বপ্নের সাগরে ডুবে অর্ধনিশি শেষ সময়ের পরিত্রাণ
আর সেখানে রংধনুর মত ইচ্ছে নিয়ে আছে প্রভাতদূত।


অবহেলা
পার্থ কর্মাকার

এভাবেই বোধহয় অবহেলা কুড়াতে কুড়াতে
একদিন মৃত অন্ধকারে নিখোঁজ হবো!



নিখোঁজ হৃদয়ের প্রতি সমালোচনা
নিঃশব্দ আহামদ


একটা হৃদয় থাকে, কখনো সে ভিজে আমি অনুভব করি ¯্রােতের মতো তাজা রক্তে, ক্ষরণে এবং দাগে-কখনো উষ্ণ হয়, কাম-তাপ রসায়নে। আর সে হৃদয়খানি জুড়ে থাকে সম্মোহন; ঠিক বলি যাকে প্রেম।

কখনোবা ভাঙে, বিচূর্ণ কিনা ঠিক কাঁচ চূর্ণরুপ
অথবা ধপাস শব্দে পতিত যে পাত্রটিরও অবশিষ্টাংশ কাজে লাগানো ভার, এমনো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া হৃদয় এক আমার, ধড়ফড় রোজ মরে যায়।

না পাখা নেই, তবু উড়াউড়ি বিরান-
হারায় উদ্দেশ, নিরূদ্দেশ কোনো হৃদয়
ঠিক আরও কোনো হৃদয়ের ছোঁয়া পেতে হলে মরিয়া
উড়তে থাকে ব্যথায়, যখন কোনো মানুষ থাকে অধরায়।

মানুষের একটা হৃদয় থাকে শুনি, বন্ধু এবং প্রেমিকারও
সময় ফুরোয়, আরও আরও আগামি দখলে ব্যস্ততায়
নাহ বন্ধু নেই, না কোনো প্রেমিকা-শুধু একা
শুধু সময়টুকু নাড়ায় হৃদয় অতঃপর, অথচ সবখানে দ্যাখে গেলাম কেবল অভিনয়।

হৃদে হৃদে লাগুক জোড়া, হায়! ভাঙন না এতোটা আর
মৃত্যুসম শোক বাজে হৃদে, কে শুনিবে কান পেতে বুকে আমার।


চিরযৌবনা 
মিশির হাবিব 

তোমার তখন বিয়ে হয়ে গেছে,
লাল শাড়ি, লাল চুড়ি আর মেহেদীর লাল রঙে
তোমাকে একটা আস্তো লাল গোলাপের মতো দেখাচ্ছে,
অথচ আমার মনে হচ্ছে, আমি শুধু তোমার রাতজাগা চোখ দেখছি,
তোমার ক্লান্ত ঢলে পড়া মাথা আমার কাঁধে বিশ্রামের ভালোবাসায় নুয়ে পড়তে চাইছে।

তুমি তখন একটা ছেলে সন্তানের ‘মা মা’ শুনছো,
সবাই বলছে, তোমার শরীর ভেঙে গেছে
মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো কমে এসেছে তোমার চেহারায় চাঁদের ঝিলিক;
অথচ আমার মনে হচ্ছে, আমি শুধু তোমার পদ্মফুলের মতো ঠোটের তিরতির কাঁপন দেখছি,
তোমার চুলের মেঘে কালো হয়ে ঢেকে আসছে আমার নীলিম আকাশ।

তোমার বয়স তখন ষাটেরও অনেক বেশী,
মখমলের মতো নম্র গাল ভেঙে ঢুকে গেছে চোয়ালের ভেতর;
একদিনকার আবলুসের মতো চুল দেখলেই লোকে বলছে পাটের আঁশের কথা;
হাসতে গেলে মনে হয় কান্নায় ভেঙে পড়ছো তুমি,
অথচ আমার মনে হয়,
তুমি সূর্যের মতই চির ঝাঁজালো,
ইচ্ছে হয় তোমার হাসিতে গায়ে মৃত্যুর রঙ মেখে খুন হই নিযুত কোটিবার;
মনে হয় আরো একটিবার তোমার প্রেমে পড়ি।


তুমি আমার আস্ত একটা কবিতা
ইয়াকুব শাহরিয়ার

তোমার আধখোলা পিঠে লেখা হয়
আমার কামনার সাতকাহন।
মেঘের মতো ঢেউ খেলানো চুল
নীল শাড়ি, চুড়ি আর মেহেদি রাঙা ধলা হাত;
লিখে চলে প্রেমের ইতিহাস।

সমস্ত দেহ যখন খেলে বেড়ায় কবিতা হয়ে-
স্বভাবতই আমি কবি বনে যাই।
কবি হওয়াই আমার স্বভাব
তোমায় পাওয়ায় আমি কবি। স্বঘোষিত কবি এক।

ফর্সা হাতে নীল চুড়ি, দেহভর্তি নীল শাড়ি
আর রূপায় তৈরি ঘুঙুরি নূপুর।
সবটাই যেনো আস্ত কবিতা একটা।
আমি, হ্যাঁ- আমিই সেই কবিতার কবি।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট