পদাবলি




দীর্ঘশ্বাসের কোনো শব্দ হয় না
অনিন্দিতা মিত্র 

স্মৃতিটুকু থাক; দুঃখগুলো চেনা, সুখগুলোও চেনা। মধ্যিখানে শুধু অগোছালো স্মৃতির নিত্য যাতায়াত। নরম রোদের বাঁকে চাপা পড়ে যায় বিক্ষোভ। অসময়ে বৃষ্টি নামে তোমার আমার শহরে, তোমার ভেজা ঠোঁটে শুধু চুম্বন। তোমার তীক্ষ্ম চোখের ভাষায় আরোপিত অভিমানের ঝড়। বৃষ্টি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে ঘর, বারান্দা তোমার চিবুক হয়ে নীল সমুদ্রে, সমুদ্রের সমস্ত মণিমাণিক্য মিশে যায় নীল রাতের সাথে। ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যায় বেলা অবেলার হাসি। একদিন শেষ হয়ে যায় সব লেনদেন, মনের দেওয়ালে শুধুই রয়ে যায় কিছু অনুচ্চারিত শব্দের আদুরে দাগ। দীর্ঘশ্বাসের কোনো শব্দ হয় না, নিঃশব্দে সে পুড়িয়ে দেয় সবকিছু । হাসতে হাসতে তারারাও হারিয়ে যায় মহাকালের জঠরে, অক্ষয় হয়ে থাকে শুধু পুড়ে যাওয়া স্মৃতিকণা। সর্বত্র শুধু হাহাকারের আত্মকথন।



আগুন নিভিয়ে দাও
মোহাম্মদ আবদুর রহমান

আমার বুকের ভেতর
আগুন জ্বালিয়ে জিজ্ঞেস কর
কেমন আছো?

এত অহংকার কিসের ?
কিসের প্রতিশোধ নিলে
বলতে হবে শুধু তোমাকেই ।

আমার বুকের ভেতরের আগুন
ছড়িয়ে পড়বে
একদিন তোমার হৃদয়ের পৃষ্ঠে
তখন হারিয়ে যাবে সব অহংকার
অনুশোচনায়
বৃষ্টি ঝরবে চোখ দিয়ে
সংশোধনের কোন পথ থাকবেনা ।

এখনও সময় আছে
ঘুরে দাঁড়াবার
ভুল সংশোধনের ।
আগুন নিভিয়ে দাও
ভালোবাসার জল দিয়ে ।


রত্মগর্ভা পুঁথির মাঠ
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ

বিহান বেলা টগবগিয়ে সূর্যের আলো ফুটে
মাঠের বুকে শিশিরগুলো একনিমিষে লুটে
আমন ধানের ক্ষেতে বসে চখা চখির মেলা
কৃষক চোখে স্বপ্নবুনে যায় কেটে যায়বেলা

ফড়িং লাফায় ঘাসে ঘাসে শূণ্যে উড়ে চিল
মাঠভরা সোনার ফসল শাপলা ফোটা বিল
বাতাসপেলে দোলখেয়ে যায় মল্লিকা-বকুল
রোদের ঝলক হাসি ছড়ায় নদীর দুইকূল।

পিঠাপুলি ঘরে বাইরে ওই নবান্ন উৎসব,
পুঁথির মাঠ রতন ছড়ায় পাখির কলরব।
দাঁড়িয়ে আছে কাকতাড়ুয়া দিগ দিগন্ত,
এলোকেশে পুঁথির মাঠ জানায় নেমন্ত।




শরণাগত আবহমান ক্র্যাচ হাতে
রবীন  বসু


ব্যক্তিগত গদ্য থেকে যে মেয়েলি ট্যাটু উঠে এল সে প্লট ফিফটিন ক্যাফেতে উষ্ণতা নয় শীতলতার সন্ধানে ওই বিভাজিকার রহস্যগল্প সুপার্ব সুগন্ধ মেখে মৌতাতে রাত আরও অস্থির করে তুললেও বাক্য-বিনিময়হীন তাচ্ছিল্যে ভরা ঔদাসীন্য অবসাদ অথচ ঘাপটিমারা আবহে অহেতুক অবহেলা নিপাট সম্পর্ক খোঁজে অপরিশীলিত গাঢ়তায় চলমান যাত্রা বাহ্যিক কৌণিক বিন্দু থেকে ক্রমহ্রাসমান উন্নয়নের বিপরীতে হাঁটা সেই আমাদের বোধ অখ- ভারত তাকে যেন বিদ্রুপ করে শরণাগত আবহমান ক্র্যাচ হাতে নিবিষ্ট নিবিড়তায় দিকে দিকে আসন্ন পদযাত্রা আর সমূহ মোমবাতি মিছিল স্থিরচিত্র এঁকে দিলে হাতের সেলফোন ফোরজি নেটওয়ার্ক তখন ব্যস্ত থাকে নীল তিমি আর ব্লু-ভিডিও রাজনৈতিক তর্কাতর্কি ভ্রষ্টাচার সমন্বিত সান্ধ্য বাসর আলোকিত হয় পুনর্বার বুদ্ধিজীবী বিলাসিতার অন্তঃসারশূন্য অসফল সমাবেশে ।


তাই আত্ম-উন্মোচনহীন কবন্ধ ছায়াশরীর থেকে বিচ্ছুরিত মাংসল  গন্ধ অভিমুখ  বরাবর হেঁটে  গেলে ত্রিভঙ্গ মুরারি সংকটের অনিকেত ঝুলে থাকা আমাদের সভ্যতার দিগবিদিক ছুটে চলা মোহময় আবর্ত সৃষ্টির অভিমুখ বরাবর যে চতুরতা প্রাসঙ্গিক কোন সত্যভাষণের তোয়াক্কা না করে আশি ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া আপাত প্ররোচনার এক বর্ণিল সমারোহে বহমান মিছিল থেকে বিপ্লব পরবর্তী যে ম্যানুফেস্টো তাকে শুধু উড্ডীন রাখার যাবতীয় কলাকৌশল ওই  রংদার কর্মসূচি-শোভিত  নিত্যদিন জাবরকাটা অভ্যাস আত্মগত ফেনিল উচ্ছ্বাস নিয়ে সঙ্গমবাহিত অলৌকিক আঁধারে নিমগ্ন স্মৃতি তাকে পটচিত্রের আদল দিল কথন ভঙ্গিমার এক বিচিত্র পরিবেশন সজ্জিত মঞ্চায়ন।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট