অপার্থিব



অপার্থিব
জুয়েল মাহমুদ

ভোরেই ঘুম থেকে উঠলাম। আমি ও সজল দুজনেই সকাল সকাল উঠি। সজল একটু মোটা তাই স্বাস্থ্য কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মেনেই সকাল সকাল ওঠার অভ্যাস গড়ে তুললো।
আমরা নিয়মিত পার্কে গেলেও আজ বস্তি এলাকায় ঘুরে আসার ভূত চেপেছে। আমার বস্তির একেবারে ভিতরে প্রবেশ করি। সে কী নোংরা। নাক চেপে ধরে চললেও মনের গহীনে অজানা এক ক্ষত যেন মনকে পুড়াচ্ছে। এই পরিবেশে কীভাবে মানুষ থাকে এই কথাটা ভাবতেই যেন চোখের কান্নার স্রোত আমার চক্ষুর সম্মুখে এসে গেল।
একটি ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ কিছু খেতে দিতে মাকে চেপে ধরেছে শিশু। আহা! কত কষ্ট তাদের জীবন। হঠাৎ থমকে গেলাম। পা আর এগুচ্ছে না। সজল অবাক হয়েই তাকিয়েই রইল ছোট একটি উপচে পড়া কুড়ে ঘরের দিকে। সজল যা দেখছে আমিও কী তাই দেখছি। আমি যা দেখছি সজলও কী তাহলে তাই দেখছে? এই কথাগুলো ভাবতে লাগলাম।
কেউ একজন আমাকে আর সজলকে দেখে নিজেকে কুড়ে ঘরে আড়াল করে নিল।
আমরা অনেক খুঁজেও পাইনি তাকে। তবে কী আমাদের ধারণা বা চোখ ভুল কিছু দেখেছে? না!  আমার ভুল হতে পারে কিন্তু সজলতো ভুল দেখতে পারেনা।
পরের দিন আমরা স্কুলে গেলাম। কাউকে কিছুই বললাম না । আমাদের টার্গেট আমরা খোঁজ রাখবো এবং প্রমাণ করব আমাদের দেখা ভুল ছিলনা।
স্কুল ছুটি হলো। আমরা দুজন আজ ঠিক করেছি বস্তির ভিতর হয়েই বাসায় যাব। আমরা অর্ধেক পথ পর্যন্ত লক্ষ ঠিক রেখেই এগিয়ে যাই। হঠাৎ মোড় পার হতেই আমাদের টার্গেট মিস হয়ে গেল। আজও আমরা পারেনি আমাদের দেখা সত্য প্রমাণ করতে। কেননা এটা আমাদের প্রমাণ করতেই হবে। কারণ আমরা সবাই একটি ভুলের ভিতরে মনে হচ্ছে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি।
আমি আর সজল বাড়ি ফিরে আসলাম। আমরা দুজন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ রাতে আমরা বস্তিতে যাব। এবং আমাদের দেখা যে সত্যি তা প্রমাণ করব। আমরা দুজনবের হলাম । রাতে বস্তিতে নানান রকমের মানুষ দেখা যায়। সজল একটু মোটাও লম্বা হওয়ায় দেখতে যেন হ্যান্ডসাম কোন যুবক । তাকে এক মহিলা বলল কী চাই এখানে? খদ্দের নাকি? আমরা কোন কথা বললাম না। একটু পথ পার হতে এক নারীর কান্নার আওয়াজ। আমি ভাবছি অসুস্থ হয়ত। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি তার স্বামী  তাকে প্রহার করছে । মাতাল স্বামীর পা ধরে কাঁদছে মহিলাটি। তার ছোট দুটি শিশু কাঁদছে তার এমন অবস্থা দেখে।
বস্তিতে এসব নাকি নিত্যনৈমিত্তিক কাজ।
এসব দেখতে দেখতে আমরা আমাদের সেই খোঁজ করা কুড়ে ঘরটির সামনে এসে পৌছলাম। কিন্তু এ যেন আমাদের দেখা সত্যিটার ঘোর মিথ্যা প্রতিফলন। হতাশ হয়েই ফিরে এলাম।
সজল আর আমি আরো অনেকবার গিয়েও তার কোন হদিস পেলাম না। সজল একদিন আমাকে বলল আমাদের উচিত সবাইকে কথাটা বলা।
আমি বললাম না, আমাদের দেখাটা ভুলও হতে পারে। এমনও হতে পারে এটি ভৌতিক কোন ঘটনা। সজল ভয় পেয়ে  গেল। এভাবেই আমাদের এক অজানা গল্পটা কেটে গেল আটটি বছর। সজল ইন্টারমেডিয়েট পাস করেই তার পছন্দের মেয়েকে পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করে নেয়। তার বাবার প্রচুর টাকা পয়সা আছে বলেই তার কাছে উচ্চ শিক্ষার কোন গুরুত্ব ছিলনা। আমি অনার্স শেষ করে ছোট একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। আমার দুই বছরের একটি ছেলে আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চায়ে চুমুক দিতে দিতে পত্রিকা এসে হাজির।
পত্রিকার পৃষ্ঠা উল্টাতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো বস্তিতে দেখা সেই কুড়ে ঘরের ভৌতিক কাহিনি।
না! আজ কোন মিথ্যা নয়। সেদিন নিজ চোখে দেখেও সরাসরি ঘটনা দীর্ঘ আট বছর রহস্যের মনে হলেও আজ পত্রিকার পাতায় সেটি বাস্তবিক একটি কাহিনী।
বিশাল শিরোনামে:- বস্তিতে থাকা, রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পড়া রাসেল ইঈঝ এ প্রথম। সাথে হাসিমাখা তার ছবি।
অথচ এই রাসেল আমাদের সেদিন বুঝতে দিলনা সে যে বস্তির ছেলে। নিজের দারিদ্র্যকে আড়াল করে শিক্ষাকেই প্রাধান্য দিয়েছে। মুকুল স্যারেই শুধু জানতো সে যে বস্তির ছেলে।
                                                                                                                                 


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট