পদাবলি : ০২




সর্ষে ফুলের সৌরভে
সোহেল রানা

সকালের স্নিগ্ধতা শরীরে মেখে
পাখির কলতানে হৃদয়ে ভালোবাসার হাওয়া লাগিয়ে,
আমি চলছি প্রকৃতির পথে-প্রকৃতির সাথে।

সর্ষে ফুলের সৌরভে, মৌমাছির গুঞ্জরণে
হলুদে হলুদে চারিপাশ ভরে গেছে,
কৃষান-কৃষানির হাসিতে- সূর্যের সোনা আলোয় তা ঝিকিমিকি করছে;
আর আমি যেন হারিয়ে গেছি শাখাতে-প্রশাখাতে;
কখনো আবার পাখির মতো ডানা মেলে উড়ছি তো উড়ছিই-
ওই দূর আকাশে নীলিমার সাথে সাথে;
কখনো আবার এ মাটির কোলে সবুজ শ্যামলে-
সোনা ফলা ফসলে সোনালি প্রভাতে-
খোলা বাতাসে; ভালোবাসার হাওয়ায় শরীর ভিজিয়ে
প্রাণ খুলে নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস নিয়ে নিয়ে-
আমি চলছি প্রকৃতির পথে প্রকৃতির সাথে।

অবশেষে সকাল পেরিয়ে, দুপুর গড়িয়ে,
অপরাহ্নের হিমেল মাদকতায় কৃষান-কৃষানি ঘরে ফেরে
হলুদ বর্ণ শরীরে মেখে; মৌমাছি মধু নিয়ে মৌচাকে
আমিও ফিরি ঘরে; প্রকৃতির স্নিগ্ধতা শরীরে মেখে।

ফিরতেই বিষন্নতায় মন ধরলো আঁকড়ে !
প্রকৃতির নিস্তব্ধতা নেমে আসে সন্ধ্যাতে-
সকালের স্নিগ্ধতা, দুপুরের সোনা আলো, বিকেলের
হিমেল মাদকতা, হৃদয়ে জাগে বারে বারে !

আসা যাওয়ার পথে হৃদয় নদীর মাঝে
এ কি খেলা খেলে-
                  কখনো প্রেমে কখনো বিরহে !

রাতের নিস্তব্ধতার পরে যেমন দিনের আলো জ্বলে
সুখ পাই তবে প্রকৃতি তোমায় দেখে।




বনসাই জীবন
আহমেদ ইউসুফ

ছায়াতরু আশ্রিত জীবনের মাহাত্ম্য
বিটপীর ছায়াতল পর্যন্ত বিস্তৃত
এ বলয় অতিক্রম করার ক্ষমতা
ক্রমশ হারিয়ে, গত হয়ে যায় সময়।

ঝড়-ঝাপটার দাপট থেকে বেঁচে বেঁচে
হৃদয়ে হৃদয় সন্নিবেশিত
ভরসার প্রদ্যোত প্রদীপের আবডালে
থেকে যায় প্রমাদ ভয়।

তরুতলে বেড়ে উঠা বামন বনসাই যেন
প্রাচীন প্রাকারে অর্গালিত ঘরে বেষ্টিত
নিদ্রাতুর নিনাদে অস্তিত্বের হাহাকারে
একদিন জেগে উঠবে নিশ্চয়।

সেদিন শাখা-প্রশাাখা বিস্তৃত হতে হতে
ফুলের সৌরভে মাতিয়ে সমীরণ
মৌমাছিদের নিরুপম আনাগোনায়
ফলিত ফলফলাদি নিয়ে
স্বীয় অস্তিত্বের স্বীকৃতি পেয়ে 
ভুবনময় তুলবে এক বিস্ময়কর বিজয়।



আকাশের আর্শিতে
শাহীন রায়হান

আকাশের আর্শিতে ঝিকিমিকি তারা
ধুয়ে যায় বৃষ্টিতে জেগে থাকে যারা
ফুল ফোটে গাছে গাছে নীল পরী নাচে
চাঁদ হাসে মিটিমিটি তারাদের কাছে।

এলোমেলো হাওয়া বয় জোনাকি জ্বলে
ঘুম ভাঙা পাখিরা নানা কথা বলে
সাদা মেঘ উড়ে উড়ে করে বাজিমাত
বুকে জমা কথাগুলো বলে যায় চাদঁ।


মেঘমালতি ফুল
মিসির হাছনাইন  

১.
পাশের বাড়ির চোরা করিম্মার বউ শরীফা খাতুন এককালে আমার প্রেমিকা ছিল। খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকতো বুকের উপর। লাজ লজ্জা ছিলো না তাঁর, বলতো- এই দেহ নাকি তাঁর। রাতদিন শুধু বলতো- ‘তোমারে ছাড়া আমি বাঁচুম না, তুমি আমার প্রাণ, তুমি আমার কলিজা’। আমার লজ্জা ছিল, সে ভালোবাসতো লজ্জাবতী ফুল, আর আমি ভালোবাসতাম দূর আকাশের মেঘ। তাই তো আদর করে নাম দিয়েছিলাম মেঘমালতি।
সেদিন আকাশে দশ পাহাড়ের সমান কালো মেঘ জমেছিল দক্ষিণের কহুয়া বিলে, চারদিকে এমন এক অদ্ভুত অন্ধকার নেমেছিল, মনে হয়েছে- ইস্রাফিল দিয়েছেন সিঙায় ফু। আমার মেঘমালতি দৌড়ে এসে ঢুকে পড়লো বুকের ভিতর। বিদ্যুৎ চমকাতে থাকলো, হঠাৎ একটা বিকট শব্দ! অনুভব করলাম- কে যেন বুকের কলিজাটা টান দিয়া ছিঁড়া নিয়া গেল...
তারপর....!!! পরের ঘরে বড় হচ্ছে মেঘমালতি ফুল...




বুঝে নিতে পারো জলের ভাষা
তারিক ফিজার 

চাইলেই এ বৃষ্টিতে তোমাকে ফোন করে
বলে দিতে পারি- হৃদয়ের কথা।
কিন্তু- কেন বলব?
তুমি তো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে
বুঝে নিতে পারো- জলের ভাষা।

কাম নয়- শুধু পাশাপাশি বসে
দু’চারটা কথা বলা,
জলময়ূরের মতো-
আমাদের হৃদয়ের খুনসুটি।

চাইলেই এই বৃষ্টিতে তোমার হাতে নিজেকে- সপে দিতে পারি।
কিন্তু কেন দিবো?
তুমি তো ‘টু লেট’  দেখে বাইরে থেকে ভেতরের অনুনয় বুঝে নিতে পারো।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট