শেষ কথা বলা হয়নি

 


শেষ কথা বলা হয়নি

আসহাবে কাহাফ


পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যার সহজাত অভ্যাস প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন এবং অনাবিষ্কৃত হলেও ব্যথার অনুভূতিগুলো বরাবরই অভিন্ন! বুঝেছ রাশেদ? এমন একটা ব্যাক্যে গল্প শুরু করবো, রাশেদ কখনো ভাবেনি, তবুও শুরু করতেই হল। কারণ, যার সাথে আলাপ করতে যাচ্ছি, আমার সে বন্ধু পেশায় একজন মনোচিকিৎসক। ব্যক্তিগত স্ট্যাডি রুমে বসে, দীর্ঘদিন পরে তার সাথে আবার আড্ডা দিতে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সে আমার রুমমেট ছিল, এরপরে দুইজনের পেশাগত জীবনের ভিন্নতার জন্য, আলাদা হলেও মাঝে মাঝে দেখা স্বাক্ষাত হত। আর যখনই তার সাথে কথা হত, অবশ্যই কোনো না কোনো ভিন্ন টপিক নিয়ে আমাদের কথা হবেই। এ জীবনে যতটুকু উপলব্ধি করেছি, মনোচিকিৎসক, আধা-পাগল এবং সিদ্ধপুরুষ, এ তিন শ্রেণির মানুষের কাছে কখনোই গল্পের অভাব থাকে না। মনস্তুাত্ত্বিক সিদ্ধান্তের অভাব থাকে না। তারা জানুক বা না-জানুক, আপনাকে একটা সিদ্ধান্ত দিবেই। এ জন্যই আমি প্রায় সময় বিভিন্ন বিষয়ে রাশেদের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিই। আমি যে, সবসময় ওর সিদ্ধান্ত মেনে নিই তা নয়, তবে ওর সাথে আলোচনা করলে অনেক বিষয় পরিস্কার হয়ে যায়, যার জন্য আমার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। যদিও আমার বন্ধুকে আজকেও দাওয়াত করেছি, অন্য একটা বিষয় নিয়ে আলাপ করার জন্য। তবুও ভাবলাম, সরাসরি সে বিষয় যাওয়ার আগে একটু ভণিতা করাই শ্রেয়। এতে ব্যক্তি এ পরিবেশের হালচাল কিছুটা হলেও আঁচ করা যায়। যেহেতু,  মানুষের সমস্যার শেষ নেই, তাই কারও সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হলেই প্রথমেই কাজের কথা না বলে, অবস্থা বুঝেই কাজের কথা বলা উচিত। আমি লেখালেখি করি বলেই বলছি না, প্রতিটি মানুষের ভেতরেও একটা মানুষ থাকে! যখন ভেতরের মানুষ আর বাইরের মানুষ চিন্তাভাবনায় এক হতে পারে; তখন মানুষটা স্বাভাবিক থাকে। অন্যথায় ভেতরের মানুষ একজন বাইরের মানুষকে কখনোই স্বাভাবিক থাকতে দেয় না। সে কিছুটা নিচু স্বরে বলল- তুমি ঠিক বলেছে।’  আমি আবার তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, ‘কীভাবে বুঝেছ, আমি ঠিক বলেছি?’ এবার সে আর প্রতিত্তোর করল না। কিছুটা সময় নিচ্ছে, হয়তো একটু পরেই সবিস্তারে বলবে। এটা ওর স্বভাবসুলভ ভঙ্গি! ভার্সিটি জীবনেই দেখেছি, ও যেকোনো বিষয়ে প্রথমে কিছুটা নিরব আছে মানেই, একটু পর গরগর করে নিজের সঞ্চিত সব জ্ঞান উগরে দিবে। আমিও তাকে সময় দেওয়ার জন্য বললাম, চা না কফি? সে বলল, কফি!  আমার উদ্দেশ্য,  ওকে চা খাওয়ানো বা সময় দেওয়া নয়, পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়া। যার জন্য ‘ঠিক আছে’ বলে আমি কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলাম। 


আমি যখন কফির মগ হাতে ফিরে এলাম, দেখি সে কী যেন একটা লিখছে। আমার স্ট্যাডি টেবিলে সবসময় কাগজ-কলম থাকেই, সে একটু এগিয়ে এসেই হয়তো টেনে নিয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, কী কর? সে শুধু এতটুকুই বলল, ‘কিছু না!’ আমি দুটো  মগ টেবিলের উপর রাখতেই, সে একটা হাতে নিয়ে সে বলল, মানুষ সম্পর্কে তুমি কী জান?’ আমি একটু ইতস্ত বোধ করলাম।  পরক্ষণেই বললাম, মানুষ সম্পর্কে আমি যা জানি, তুমি ত তার চেয়েও বেশি জানার কথা! হাজার হোক, তুমি একজন মনোচিকিৎসক। হঠাৎ আমাকে এ প্রশ্ন কেন? অবশ্যই এর কারণ আছে! তাই জিজ্ঞেস করলাম। না, এ মুহুর্তে আমার পক্ষে উত্তর দেওয়া সম্ভব না। তুমিই বল। আচ্ছা, এবার বইমেলায় তোমার কোন বইটা আসবে? কেন? বল না। এবার আমি গল্প সমগ্র আনছি। ভাবছি, কিছু একটা হয়ে যাওয়ার আগে, সবগুলো গল্প একত্র করে পাঠকের হাতে তুলে দিই। ভালো,  আচ্ছা, সে গল্প গুলোর মধ্যে এমন কোনো গল্প আছে, যেটার জন্য, তোমাকে এখনো ভাবতে হয়? হ্যাঁ,  হয়। সে গল্পটা আগে বল, তারপর তোমার প্রথম প্রশ্নটার উত্তর দিব। আসলে, আমরা কবি সাহিত্যিকরা যেভাবে মানুষকে যাচাই-বাছাই করি, ডাক্তার কিন্তু সেভাবে করে না! আবার ডাক্তার যেভাবে করে, পুলিশ কিংবা উকিলও আবার সে একইভাবে করে না। নিশ্চয় এর একটা কারণ আছে। আমি তাই গল্পটা বলা শুরু করলাম।


২০১৩ সালে ক্লোজ আপ কাছে আ্সার গল্প নামক ফেইসবুক পেইজে আমার লেখা ‘জোনাকির আলো’ নামের গল্পটি পোষ্ট করার প্রায় এক ঘন্টা পর আমার মোবাইলে একটা কল আসে। রিসিভ করতেই, ভাইয়া আপনার গল্পটি অনেক  ভালো হয়েছে। আমি ধন্যবাদ দিয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনি কে? ভাইয়া আমি আতসী। আমি আপনাকে আমার আর তন্ময়ের কাছে আসার গল্প শুনাতে চাই। আমি সহসাই উত্তর দিলাম, ‘ঠিক আছে,কাল শুনব।’ সারারাত আমার ঘুম হয়নি। পরের দিন যথারীতি সকাল হল। যদিও আমি কিছুটা সন্দিহান ছিলাম, আতসীর আমাকে ফোন করা নিয়ে। ঠিক দশটার সময় মোবাইলের রিং হতেই স্কিনে ভেসে ওঠে আতসী। নামটা আমি গত রাতেই সেইভ করে রেখেছিলাম। আমি হ্যালো বলতেই, ভাইয়া আমি আতসী। ভাইয়া আমি কি আপনার সাথে পরিচিত হতে পারি? দেখুন আমি কোন সেলিব্রেটি না, আগের গল্পে আমার পরিচয় দেওয়া আছে। প্লিজ আপনি গল্পটা বলুন। শুরু হল আতসীর গল্প।  

             

       আতসী সবেমাত্র রংপুর কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হল। দশম শ্রেণী পর্যন্ত বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার কারণে কোনো ছেলেকে ভালোলাগার সুযোগ তার হয়ে ওঠেনি। ফলে, প্রথম দিনই কলেজের ক্যাম্পাসে তন্ময়কে দেখে আতসীর ভালো লেগে যায়। তন্ময় দেখতে এতটা সুদর্শন ছিল যে তাকে একবার দেখলে আর চোখ ফিরানো যেত না। পরের দিন আতসী যখন তার  বড় ভাই রিমনের সাথে কলেজে যাচ্ছে পথিমধ্যে আবার তন্ময়ের সাথে দেখা। তন্ময়কে দেখে রিমন সালাম দিয়ে বলল, ভাইয়া ভাল আছেন? আতসী তার বড় ভাইকে তন্ময়ের সাথে কথা বলতে দেখে মনে মনে ভাবল ছেলেটা নিশ্চয় ভালোই হবে। যেহেতু, তার বড়োই নিজেই ছেলেটাকে সালাম দিচ্ছে, কথা বলছে। এক্ষেত্রে আতসী তন্ময়ের প্রতি আর বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে, প্রায় মাস তিনেক পরে ঈদ উল ফিতর চলে আসে। ঈদের পরের দিন আতসী তার ছোট ভাইকে নিয়ে ফুফির বাড়ি থেকে বাসে করে বাসায় ফিরতেছিল। মাঝপথে ঠিক একই গাড়িতে তন্ময় সহ আর ও দুইটা ছেলে ওঠে। তন্ময়কে গাড়িতে ওঠতে দেখে আতসীড় চোখ বার বার তাকে খুজে বেড়াচ্ছে। বিষয়টা কিছ্টুা বুঝতে পেরে তন্ময় আতসীর কাছাকাছি চলে আসে। সেদিন তন্ময় আতসীর মোবাইল নাম্বার চাইলে আতসী দেয়নি। পরে তন্ময় তার নাম্বার সংবলিত একটা কার্ড আতসীকে দেয়। তবে, কখনোই অতসী তন্ময়কে ফোন করেনি। কারণ, আতসীর এতদিন কোনো মোবাইল ছিল না, তাই সে তন্ময়কে কল করতে পারেনি। সেদিন থেকে প্রায় আরও আট মাস পরে আতসীর বাবা তাকে একটা মোবাইল কিনে দেয়। মোবাইল হাতে পাওয়ার পরের দিনই আতসী তন্ময়কে কল করে। এরপর থেকে দুজনের মধ্যে নিয়মিত কথা ও দেখা হত, তবে তন্ময় আতসীর সাথে দেখা করত যাতে রিমন কোনোভাবেই জানতে না পারে।


     হঠাৎ একদিন আতসী অসুস্থ হয়ে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি হয়। যেহেতু রিমনের সাথে তন্ময়ের পূব পরিচয় ছিল সেহেতু তন্ময় রিমনের সাথে নিয়মিত মেডিকেলে আসত এবং বিভিন্ন উপায়ে আতসীর সেবা করত। তন্ময়ের আসা-যাওয়া দেখে, রিমন তাদের দুজনের সম্পর্কের কথা বুঝতে পেরে আতসীকে বলল, বোন যা কিছু কর তুকে যেন কোনো দিন কাদতে না হয়। রিমন কেন এ কথা বলেছে, অতসী সেটা কিছুই বুঝতে পারেনি। কিছুদিনের মধ্যে আতসী সুস্থ হয়ে বাসায় চলে আসে। তন্ময় এখনও আগের মত আতসীকে দেখার প্রায় রিমনদের বাসায় চলে আসে। আতসীর মা-ও এখন তাদের সম্পর্কের কথা কিছুটা জেনে গেছে, কিন্তু তিনি কোনো বাধা দিলেন না। কারণ, তিনি মনে মনে ভেবে বসে আছে, ছেলেটা ইতিমধ্যে অনার্স ফাইনাল দিয়েছে। খারাপ কী! যদি ছেলেটার হাতেই মেয়েকে তুলে দেওয়া যায়। দেখতে দেখতে আতসী ও ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ফেলল। তন্ময়ের অনাসের্র রেজাল্ট হওয়ার পর ঢাকায় চলে যায় মাস্টার্স করার জন্য। আতসী ও রংপুর কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়। এরমধ্যে আতসী সিদ্বান্ত নিল, সে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিবে। আতসীর ইচ্ছা ছিল অন্যান্য পরীক্ষার মত এইবারও তন্ময় তাকে পড়ালেখার ব্যাপারে সাহায্য করুক। তবে তন্ময় ব্যস্ততার কারণে আসতে পারবে না বলে আতসীকে বুঝাতে সক্ষম হয়। পরীক্ষার দিন যথাসময়ে আতসী আর তার বড় ভাই কেন্দ্রে যায়, যখন আতসী কেন্দ্রে ঢুকে যাচ্ছে তখনই  পিছন থেকে ডাক আসে। রিমন, ওকে একা ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছ কেন?  আতসী শুনেই বুঝতে পেরেছে, তন্ময়ের আওয়াজ। পিছনে ফিরে তাকাল আতসী, সেই আগের তন্ময় এখনও আছে।


       সেদিনের মত তন্ময়  আবার ঢাকায় ফিরে যায়। কিছু দিন পর আতসীর মোবাইলটা নষ্ট হয়ে গেলে, এবার তন্ময় আতসীর মা, চাচী সহ পরিচিত সবার কাছে ফোন দিয়ে আতসীর খোজ খবর নেওয়া শুরু করল। এই বিষয়টি নিয়ে একদিন আতসীর চাচা পরিবারের সবাইকে অনেক বকুনি দেয়। সেদিন সন্ধ্যায় আতসী তার এক বান্ধবীর নাম্বার থেকে তন্ময়কে ফোন করে বলে, আমার সাথে কিছুদিন কথা না বলে থাকতে পারনি? এইভাবে সবার মোবাইলে কল না দিলেও পারতে। তুমি কি জান তোমার জন্য আমাদের পরিবারে কত সমস্যা হয়েছে? আমিতো বলেছি, আমি ঢাকায় চলে আসি, তারপর দুজনে বিয়ে করে নিই। তখন ত কিছু বল না। এসব ধুনে তন্ময় শুধু একটি কথা বলল, তাহলে আমি তোমার পথের কাটা হয়ে গেছি? হ্যা, তুমি এখন তাই। অভিমানে ফোন কেটে দেয় তন্ময়।


       পরের দিন সকালে তন্ময় তার বাবাকে, আতসীর কথা জানায় এবং সে এ কথাও বলছিল, আমি আতসীকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করব না।  তন্ময়ের বাবা, ছেলেকে পাল্টা জবাব দেয়, আমার বড়ো ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করেছি, প্রয়োজনে আর একটা আতœহত্যা করবে তবুও আমি এটা মেনে নিব না। ওদিকে সারা রাত থেকে আতসী তন্ময়কে ফোনে চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু মোবাইল বন্ধ। সকালে আতসী তন্ময়কে একটা বার্তা পাঠায়, প্লিজ আমি সরি, আসলে গতকাল আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমি এখন তোমার সাথে কথা বলব, প্লিজ মোবাইল্টা অন কর। কোন উত্তর এল না। এদিকে সবাই যখন অফিসে চলে যায়, বাবার উপর রাগ করে, তন্ময় গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করে। সন্ধ্যায় আতসীর কাছে একটা কল আসে, তন্ময় আতœহত্যা করেছে। তন্ময় আতœহত্যা করার পুর্বে দুইটা চিরকুট লিখে রেখে গেছে। একটা তার বাবাকে, অন্যটি আতসীর জন্য, অতসীর চিরকুটে লিখা ছিল, ‘আতসী আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি তোমাকেই ভালোবাসব, তুমি অন্য কাউকে নিয়ে সংসার কর, আমি ঐ পারে তোমার অপেক্ষায় থাকব।’ এতটুকু বলেই মেয়েটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আর কিছুই সে বলতে পারেনি।


    আমি মনে মনে ভাবছি, হয়তো তন্ময় মরে গেছে অভিমানে!  আতসী এখন পাহাড় সম চাপ নিয়ে বেঁচে আছে। কী করবে সে? তন্ময়ের কথা মত কাউকে বিয়ে করবে? না ঐ পারে অপেক্ষমান তন্ময়ের কাছে চলে যাবে? আমি অপেক্ষা করছি,  অতসীর কান্না থামার জন্য, পাশাপাশি ভাবছি, আমিই আতসীকে বিয়ে করব। এটা তারুণ্যের একটা গুণ। তরুণ বয়সে যেকোনো কেউ যেকোনো পরিস্থিতি ও পরিবেশে নিজেকে যেকোনো ঘটনার নায়ক কিংবা ত্রাতা ভাবতে পছন্দ করে। অথচ,  মানুষ তার নিয়তি দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। অতসী কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে, আমি আবার আতসীকে প্রশ্ন করলাম, কি করতে চান এখন? আতসীর একটাই উত্তর, তন্ময়ের কাছে যাব। সেদিন আমার সে মনের সে গোপন কথাটা আর অতসীকে বলা হয়নি। পরে বিদায় নিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। 


     এ পর্যন্ত বলে, আমিও একটু থামলাম। এবার আমার দিকে তাকিয়ে রাশেদ একটু মুচকি হাসি হাসল! হাসিটার মধ্যে একটা রসবোধ আছে। দুজনেই বুঝেছি, কিন্তু কী সেই রসবোধ তা বুঝানোর সাধ্য কারও নেই। তারপর, সে প্রশ্ন করল; এর পরে কি তুমি গল্পটা লিখেছ? আমি জবাদ দিলাম। হ্যাঁ।  ভালো,  ত গল্প লিখে অতসীর সাথে কখনো যোগাযোগ করনি? আমি করেছি। সে কী বলল? সে আরও করুণ এক কাহিনি!  আপাতত বলতে চাই না। আমি জানি না, মানুষ কেন অতীতকে সামনে আনতে চাই না। আমি জানি; অতীতের গল্পগুলো সবসময় নিদারুণ এবং কষ্টের। তারপরও রাশেদের জোরাজোরিতে আবার বলা শুরু করলাম। 


         ২০১৪ সালে ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ পেইজে যখন গল্পটি প্রকাশিত হল, আমিই আতসীকে ফোন করি। ফোনটা রিসিভ করেছে অন্য কেউ।  রিসিভ করে আমার পরিচয় জানার পর, যে উত্তর দিয়েছে, আমি তার জন্য একেবারের অপ্রস্তুত। অতসী ২২শে ডিসেম্বর গত হয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি আতসী তন্ময়ের কাছে গেছে, ঠিক যে তারিখে তন্ময় গত হয়েছিল। সেদিন বুঝলাম,  কাউকে কিছু বলতে চাইলে, সে কথা সাথে সাথেই বলা উচিত। হোক সেটা গ্রহণযোগ্য অথবা না।’ কেননা, আজকের সে মানুষটা আগামী দিন নাও থাকতে পারে।


আচ্ছা, ঠিক যদি ঐদিন অতসীকে ফোনে পেতে, তবে কী বলতে?

কেবল এতটুকুই বলতাম, ‘আতসী তোমাকে নিয়ে লেখা গল্প প্রকাশিত হয়েছে, তুমি পড়বে না? এভাবে, আমার চোখেও জল এনে তুমিও তন্ময়ের কাছে চলে গেলে? হয়তো সেদিন আমি এও বলতে চেয়েছিলাম, আতসী তুমি আমাকেই বিয়ে কর, পারিনি। বুঝেছি, তন্ময় যেমন, তোমাকে শেষ কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেছে, তুমিও আমাকে সেই সুযোগ দিলে না।  এক জীবনে হয়তো এ এক আপসোস থেকেই যাবে!


এখন কি তার কথা মনে পড়ে? আমি বললাম, ‘না!’ এই যে ‘না’ এটা যে কত বড়ো মিথ্যা তা রাশেদ বুঝতে পেরেই বলল, ঠিক আছে।  এবার তোমার প্রশ্নের উত্তরে আসি। তুমি যে বললে, ‘ব্যথার অনুভূতি সব মানুষের কাছে এক!’ আজকের তুমিই তার প্রমাণ।  হয়তো অতসী বেচে থাকলেও তন্ময়ের স্মৃতি আওড়াতো, চোখের জল ফেলত; সে একই কাজ এখন তুমিই করছ। যাক, বাদ দাও সেসব কথা! এখন বল, কেন আসতে বলেছ? সে মনোচিকিৎসক, সে বুঝে; আমি তাকে কিছু বলতে চাই, বলার জন্যই ডেকেছি। অথচ, এখন পরিস্থিতি এমন, আমার আর কিছুই বলার মতন নেই। তাই আর কিছু না ভেবেই বললাম, ‘থাক, অন্য একদিন!’ এ যে অন্য একদিন বলার জন্য যে কথা মানুষ চেপে যায়, তা কি সে সত্যিই অন্য একদিন বলতে পারে? পারবে?



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট