একুশের পদাবলি

একুশের পদাবলি


বাঙালি
লুৎফুন নাহার লোপা

সমুদ্রের জল মিশে যায় আরেক সমুদ্রে
আমি দূর থেকে শালিকের ওড়াওড়ি দেখি,
কোন ভাষায় কথা বলে তারা - পরস্পর,
সচ্ছ কাচের মত ভোর নেমে আসে গাঁয়ে
পথে সুপারিগাছগুলো চলে আমার সাথে, 
আমি তাদের বাঙালি ভেবে ‘ভালোবাসি’ বলি।


বায়ান্নর শিশু
মিসির হাছনাইন

রক্তিম আকাশে মৃদু নগ্ন সূর্য ডোবার পর,
পশ্চিমের কোল থেকে যে সন্ধ্যা আসে,
কাক চোখ কালো সেই সন্ধ্যার মগ্ন ঘোর,
তারপর হঠাৎ পৃথিবীর বুকে নেমে আসে বহুদর্শী ভোর।

নাপাক পৃথিবীর অসুস্থ সংস্কৃতি,
প্রাচীন অন্ধ বিশ্বাসে বাড়ন্ত সমাজ,
দেখছে বারবার প্রতিচ্ছবি। মরচে
পরা ঘুমন্ত স্মৃতি এখনও শকুনের দলে।

চর্চিত মায়াজালে নেংটা মানুষ
যাদের দখলে ভীনদেশী গান!
তাদের শীতল রক্তে কি নেই?
সেই দিনের জন্ম নেওয়া শিশু।

আহতিমাখা হতভাগ্য জমিনে
কাল্য বা দৈনিক নেমে আসে মহামান্য       
বায়ান্নর শিশু। মানুষ, তিনি দেখে নিয়েছেন!
হয়তো, তিনি আজ পৌঢ়।

একুশের কাব্যিক স্মারক
বজলুর রশীদ

কল্পের ছবি গুন গুন করে বসন্তের কৃষ্ণচূড়ায়,
কচি পাতার শব্দ শোনে ফাগুন ঝরা রোদ
রচনা করে বেয়ারা রঙতুলি।

আকাশে রূপালি মেঘের ভেলায় বসে
কাঙ্খিত ইচ্ছেগুলো শতাব্দীর রূপ
এঁকে যায় একুশের কাব্যিক স্মারকে।

রক্তদানে- কেনা বর্ণমালা
অক্ষরিত হোক হৃদয়ের ক্যানভাসে।


সবুজ আবছায়া
সাদ সাইফ

দক্ষিণ বাতায়নে নীলচোখা মন,
সবুজ মিতালির অন্দর ভাসে ঢেউ খেলানো সাজে।
অবাক চাহনিতে জড়তা কেটে যায়; নীলসমুদ্রের নীলাভ জলে।
লিলুয়া বাতাসের ফিরফির ছন্দ, ঢুকে পড়ে অবাক দরজা দিয়ে।
রোমকুপ পেয়ে যায় মৃদু আস্তাকুঁড়।

জীর্ণতা ভুলে অবারিত চাদরে বসে পড়ি।
বুঁদ হয়ে রই চাদোয়া শামিয়ানাতে।
তখন অবুঝ তালা লাগে সবুজ ছিটকিনিতে, থেমে যায় ক্লান্তির ছাদ।
রঙিন পৃথিবী রঙের আচ্ছাদনে আঁশটে হয়ে যায় সবকিছু,
তখন খুঁজি এক টুকরো সবুজ আবছায়া।


পর্যবেক্ষণ
শোয়াইব শাহরিয়ার

আমার ঘুম আসে না। ঘুম চলে যায় উবে। মন পুড়ে যায় বিষণœতায় ডুবে। ব্যথার
শহর জাগেÑ বুকের ভেতর তপ্ত বালুচর। ব্যথায় ডুবে থাকি। কেউ আসে না বাঁচাতে।
কেউ দেখে না কাঁদতে। তবুও কাঁদি। তবুও আমি ডুবে আছি জলে।

তবুও আমি জলের ভেতর সাঁতরে বেড়াই ‘একুশ’ আয়ু।


নিকোটিন
মীর সাহাবুদ্দীন

পাখি গুলো উড়ে যায়, উড়ে যায় শশ্য ছেড়ে
ব্যাঙ, সাপ, কোকিল ময়নারা নিকোটিন ছাড়ে
মাছরাঙা ও কাঠঠোঁকরা গর্ত খুড়ে দেহ
অবশেষ যত মধু জমা পড়ে
চেটে পুটে খেয়ে নেই ।



একুশের দলিল
নূরনবী সোহাগ

অজস্র একুশের মাঝে একজন একুশ রাজসাক্ষী হয়ে থেকে যায়- ফেব্রুয়ারীর শরীরে।
সে একুশ শোকসভা ডাকে; তিনিই বক্তা। বাংলার রণাঙ্গনে তিনি কতটা রক্তের সাক্ষী হয়েছেন- সেটাই বলবেন। সভায় দূর-দূরান্ত থেকে মিনার আসে, সৌধ আসে- এমনকি আসে শহীদের যেকোনো স্মৃতি। একুশ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন- ‘তোমরা যাদের স্মরণে গর্ভ ভরেছ ফুলে; তারা একদিন শ্লোগানরত ছিল এই রাজপথে। এখন ভাষার মাঝে ডুব মেরে আছে। কেন! অক্ষরের শরীরে টের পাওনা তাদের অস্তিত্ব ?’


প্রাণের প্রণতি নাও হে মাতৃভাষা

প্রাণের প্রণতি নাও হে মাতৃভাষা

প্রাণের প্রণতি নাও হে মাতৃভাষা
ইলিয়াস বাবর

গুরুজি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাতাসের ভেতর থেকেও বায়ুর উপস্থিতি টের পাই না বলে যে কথাটি জানানÑ তা যুগের স্বপক্ষে বদলে নিয়ে বলতে পারিÑ মাতৃভাষার মায়াময় আবহের মধ্যে থেকেও হয়তো বুঝতে পারি না তার টিকরে পড়া সৌন্দর্যের কথা। হয়তোবা বুঝি কখনোসখনো। একবার বিদেশি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষায় বিপুল বিদেশী ভাষার মাঝে অ আ দেখে অপার্থিব আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলাম; অব্যক্ত উল্লাসে ঘেমে একাকার হয়েছিলাম নাতিশীতোঞ্চ অঞ্চলে থাকবার পরেও! চাটগাঁ নগরের রাস্তায় যানযটবহুল সময়েও কি এক অপরিমেয় সুখানুভূতি নিয়ে ঘরে এসেছিলাম সেদিন। এভাবেÑ প্রথম বলতে শেখবার সময়, প্রথম প্রেমে পড়বার সময় কিংবা প্রথম প্রেমপত্র কি কবিতা লেখবার সময় মধুসিক্ত হর্ষরা ভর করে; অত:পর আমরা জেনে যাই মাতৃভাষার পবিত্রতাÑ পেয়ে যাই অবগাহন করবার শক্তিও।

বৈজ্ঞানিক নানাবিধ আবিষ্কারের ঠেলায় আমাদের সুবিধা যেমন হাজার পদের, অসুবিধাও খুব কম না! এই যেÑ আজকের দিনের ফেসবুকিয় ভাষা তো একেবারে বিশ্রি! যেনতেনভাবে আমরা লিখছিÑ যেকোনভাবে ভাবটা দেখাতে পারলেই হলো! তাতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে মুঠোফোনে দেয়া নানা কিছিমের বর্ণমালা-সম্ভার। মূলত আমাদের প্রিয় বাংলা দিনেদিনে সমৃদ্ধ হয়েছে নানা ভাষার ভান্ডার থেকে প্রয়োজনমাফিক শব্দ নিয়ে। অবশ্য পৃথিবীর যেকোন দেশ তার সংস্কৃতি-ভাষাকে বলবান করে প্রয়োজনের নিরিখে, বিশ^গ্রাম ধারণায় এ প্রথাটি অন্যাবশ্যকও নয়। সেদিক দিয়ে নেয়ার সুবিধা যেমন আছে, দেউলিয়া হওয়ার ইতিহাসও কিন্তু একেবারে কম নয়। আকাশ-সংস্কৃতির চরম গ্রাসে পুঁজিবাদি ব্যবস্থার হুজুগে অনায়াসে ঢুকে পড়ে অবাঞ্চিত বিষাশয়টুকুও। তবে যারা, বোঝে বাস্তবতার স্বরূপ, তারা সমুখের পথকে চিনে নিয়েÑ সময়কে ধারন করে এবং যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গের সাথে বাঁচিয়ে রাখে প্রাণের ভাষাও। এতে অভ্যস্থ হতে না পারার বেদনা বিরাট, বিপুল বোঝা নিতে উদাহরণ হতে হয় সমুখের ইতিহাসচর্চায়। লোকপ্রচলিত অনেক ভাষাই হারিয়ে যাচ্ছে অব্যবহৃত হবার যন্ত্রণায়, ভাষা-গবেষকেরা তার ফসিল দেখিয়ে অন্যদের ভয় দেখায়Ñ আদপে ভয়ের কাজ নয় বরং জয়ের কাজই হতে পারে ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখাটা। আমরা হয়তো আশাবাদি হতে পারিÑ আমাদের দেশে জনসংখ্যা তো দিনদিন হুহু করে বাড়ছে, বিশ^ব্যাপি বাড়ছে বাঙালির সংখ্যা; সুতারাং আমাদের ‘নাই’ হবার সম্ভাবনা একেবারেই নাই। তা হতে পরে নাÑ বিশেষ করে আমাদের প্রজন্মের দৈনন্দিনের ভাষাকে কোনভাবেই ভাষাপ্রেমের নমুনায় ফেলা যায় না। আমরা ভাষার জন্য রক্ত দেয়া জাতি বলে যে চেতনা লোকমুখে দেখাই তা-ই যদি ভেতরকার দর্শন হয়, তো মাথার তাজ কিন্তু রক্তাভ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যার জন্ম-উত্থান-প্রসার তার জন্যে চাই আলাদা কিছু। বলাবাহুল্য আমরা ফেনা তুলতে প্রস্তত, বানান ভুলে পাঠ্যপুস্তক কিংবা বিজ্ঞাপনবিল তুলতে পারি আবার সেটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভুল বানানটিই ভুল করে থাকি! আসলে আমাদের শংকর-মানসে ভর করে থাকে  বাচ্চাকাচ্চাসহ মামদোভূত!

ভাষা-বিষয়ক ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে আমরা প্রায়ই কথা বলি, দরদ দেখাই কিন্তু ফেব্রুয়ারি চলে গেলেই তো ভুলে যাই চেতনতাজাত কর্তব্যের কথা! আমাদের সবকিছুই কি তবে অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে? একুশ তারিখের পর খুব একটা কথা বলি না মায়ের ভাষা নিয়ে। শিক্ষবর্ষ শেষ হলে কি করে ছেলেকে ইংরেজি শিক্ষাকেন্দ্রে ভর্তি করা যায় তা নিয়ে ভাবি, অর্থের অনৈতিক লেনদেন করি এবং দিনশেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি এই ভেবেÑ আমার সন্তান পড়ে অমুক বিদ্যায়তনে! যুগের প্রয়োজনকে অস্বীকার করবার স্পর্ধা বলতে গেলে সামাজিক মানুষের থাকে না, নানামুখি হাত-পা নিয়ে সে বাঁধা থাকে তারই বলয়ে কিন্তু যুগের কাজি দ্বীন মুহাম্মদ স্যার নেই যে বানানের শুদ্ধি অভিযান চালাবেন! ফলত, সামনে আসে লেখকদের ভূমিকার কথাটুকুও। যুগে যুগে লেখকেরা তো ভাষার সেবা করে যান বিনা স্বার্থে, বিনা অজুহাতে। শাহ মুহাম্মদ ছগিরের সে ঐতিহাসিক কবিতা কখন লেখা? হয়তো আমাদেরই বন্ধু-ভাই-পরিজনেরা যখন উর্দু-সংস্কৃত বা অন্যান্য ভাষা নিয়ে ব্যস্ত তখনই তার এ ঘোষণা জাগিয়ে দিয়ে যায় রীতিমতো। তারও পরে, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের নাম বিস্মৃত হওয়া মানে বড়ো রকমের অপরাধ করার কাতারেই পড়ে। পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ক্রমাগত মাতৃভাষার স্বপক্ষে বিবৃতি-বক্তৃতা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনায় নিজের জীবনকে স্বার্থক করেছেনÑ তখন হয়তো আজকের মতো চেতনাজাত ব্যবসায়িক চিন্তাপুঞ্জ ছিল না, ছিল মা-মাটির প্রতি দায়বদ্ধতা। অনেকেই, ভাষাদিবস আসলেই, ফাগুন মাসের কথা বলেন, তা আসলে ভাববার আগে বাস্তবতাকে ধারণ করা দরকার। যেখানে আমাদের দেশের আদালত সমূহ রায় ঘোষণা করেন ইংরেজিতে, কৃষকেরা আর বাংলা মাসের হিসেব রাখেন নাÑ সেখানে বাংলা পঞ্জিকা অনুসরণের ইতিবাচকতা কতটুকু তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। বৃটিশেরা আমাদের মাথায় তাদের শিক্ষাব্যবস্থা-আইনকানুন ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে সুচতুরতার সাথে, বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠনও করে যাচ্ছেÑ আমাদের দেশিয় বীজ নিয়ে দিচ্ছে নানাজাতের বিদেশি বীজ; ফলে বাংলা মাসের দিনতারিখ অনুসরণ করবার সুযোগ ব্যাপকহারে সংকোচিত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দৃষ্টিবান নেতাদেরÑ বিশেষ করে যারা শিল্প-সংস্কৃতির পথে নিয়োজিত তারা বাংলা ভাষার ব্যাপকতাকে কীভাবে বিশ^ব্যাপি ছড়িয়ে দেয়া যায় সে বিষয়ে অনুসন্ধান করা। হানা টমসন, মারিয়া হেলেন  বেরা, ক্লিনটন কি সিলি প্রমুখ বিদেশীরা এমনে এমনে বাংলা ভাষার প্রেমে পড়েন নাÑ তারা এ ভাষার রূপমাধুরিতে উৎফুল্ল, ভেতকার সৌন্দর্যে আন্দোলিত। আমাদের যারা রাষ্ট্রপরিচালনা বা রাষ্ট্রীয় এসব দফতর দেখেন তারা চাইলে বিদেশীদের বাংলা ভাষা চর্চা ও গবেষণার বিষয়টিকে সম্প্রসারিত করতে পারেনÑ তাতে আমাদের ভাষার সৌন্দর্য যেমন বিশ^ব্যাপি টিকরে পড়বে তেমনি আরো অনেকেই উদ্বুদ্ধ হবেন বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করতে। ভাষার মাস, বইমেলার মাস বলে খ্যাত ফেব্রুয়ারিতে সারাদেশেই বইমেলা ও এ-জাতীয় নানা আয়োজন দৃশ্যমান হয়। লেখক-পাঠকেরা অপেক্ষা করেন নতুন বই দেখবার-পড়বার এবং জানবার। কিন্তু অনেক বিশ্লেষক তো মুখের উপরেই বলে দেন মানহীন বই প্রকাশের কথা, ভুল বানানে বই প্রকাশের কথা। যেহেতু বইয়েই ভাষা লুকিয়ে থাকে তার যাবতীয় গুপ্তধন নিয়ে, আমাদের আরো মনোযোগি হওয়া উচিত। লেখকেরা চেষ্টা করে যান নিরন্তর, কেউ পাঠকেরÑ সমগ্র ভাষা অনুসারিদের মানোস-আকাক্সক্ষাকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন কেউবা ব্যর্থ হন। ব্যর্থ হওয়া অন্যায় নয়, তবে মাতৃভাষা নিয়ে ছেলেমি করা অবশ্যই দোষের। কেননা, পাঠের পর যে অনুভূতি তা পবিত্র, প্রভাব ফেলে বাস্তব জীবনের নানা ক্ষেত্রে।


বাংলা ভাষার শত্রুমিত্র নামে হুমায়ুন আজাদ মহোদয়ের বিখ্যাত বই আমরা দেখি বিভিন্ন বই বিপনিকেন্দ্রে। কিন্তু এই সময়ে, আজকের দিনে বাংলা ভাষার শত্রু কারা? এরকম প্রশ্নে অনেকেই ভ্যাবাচ্যাক খেলেও একেবারে অবাস্তব নয় এটা অবতারণা। উর্দু না হয় ইসলামাবাদে উড়ে গেছে, চলে গেছে শিকড়বাকড়সহ। কিন্তু হিন্দির যে দোর্দন্ড প্রতাপ তা কী দিয়ে রুখা যাবে? আমাদের মায়েরা-মেয়েরা হিন্দি নাটকে যেভাবে আসক্ত হচ্ছেন তার তাৎক্ষণিক ফলাফলে আর কিছু না পাই অন্দরে হিন্দি ভাষা চর্চার হিড়িক দেখতে পাওয়া যায়। কম বয়েসি বাচ্চারা হিন্দি বলতে চেষ্টা করছে, করছেও অহরহ। ইংরেজি আগে থেকেই আছে কিন্তু বিষয়টার প্রাতিষ্ঠানিক একটা ভিত্তি তো আছে! আমরা হিন্দি শিখবো, প্রতিবেশির অনেক গুন-দোষ নিজ ঘরে আসাটা স্বাভাবিকও বটেÑ তাই বলে যে শিশুটির মুখ-ফোটার সাথে সাথেই হিন্দি বুলিতে বোঝাতে চায় দৈনন্দিনতা তা ভবিষ্যতের জন্যে মারাত্মক হুমকি হয়েই থাকবে। আমরা সব ভাষা থেকে প্রয়োজনমাফিক শব্দ নেবো, নিজেদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করবার জন্যেÑ তাতে যদি দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা জেগে উঠে তো ভয়াবহ! বক্তৃতা দেয়া সহজ, সমালোচনা করাওÑ পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তর করা আসলেই কঠিন। জব্বার-শফিক-রফিকদের রক্তের ঋণ কিছুটা যদি এতেই শোধ করা যায় খারাপ কিসে!

সবচেয়ে আনন্দের বিষয় আমাদের সাহিত্যকর্মি, ছোটকাগজকর্মি কিংবা দৈনিকগুলোর ভাষাপ্রীতি অত্যন্ত উঁচু দরের। অন্তত ভাষার মাস আসলেই নানা রকম সংখ্যা হয়, বিশেষ সংখ্যা হয়। এ সমস্ত আয়োজন আর কিছু করতো না পারুকÑ আমাদের মতো হুজুগে জাতিকে ভাবাতে সাহায্য করে, চর্চা করার সুযোগ উন্মেচিত করে, একটু পেছনের দিকে দৃষ্টি দিতে বাধ্য করে। আরো মজার ব্যাপার তরুণেরদের বৃহৎ একটি অংশ ভাষা নিয়ে চিন্তা করে, নতুন নতুন সাহিত্যকর্ম সৃষ্টির মাধ্যমে, নতুন নাটক বানাবার মাধ্যমে, ছবি আঁকার মাধ্যমে মায়ের ভাষাকে তুলে ধরতে চেষ্টা করে প্রাণপণে। নান নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে তারা ভাষার অবদানকে বিশ^মঞ্চে উপস্থাপিত করছে নতুন ব্যঞ্জনায়। একটি নতুন চলচ্চিত্র যখন বিশ^মঞ্চে স্বীকৃতি পায়, একজন শিল্পী যখন বিদেশে থেকেও হাতের তুলিতে আঁকে নিজদেশের পাতাকার আদল, কেউ উড়ায় এভারেস্টে উড়ায় বাংলাদেশের পতাকাÑ তাও মায়ের ভাষায়, আমরা পেরেছি বলে, সত্যিই আনন্দিত হতে হয়। কে না জানে আজকে অর্জনের পেছনে আছে মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার নিজস্বতা অর্জনের ইতিহাস। হয়তো উপরতলার মানুষদের কাছে মাতৃভাষা বাংলা উপেক্ষা করবার মতোন কিন্তু নিচুতলার মাটির মানুষেরা এখনো পায়ে যদি কোন বইয়ের ছেঁড়াপৃষ্টা পড়ে তো তিনবার কপালে-বুকে লাগায়, সালাম দেয়, প্রাণের প্রণতি জানায়। আদাব-সালামের জায়গায় প্রিয় ভাষাটি যতদিন থাকবে ততদিন কি এ-ভাষাটি হারিয়ে যেতে পারে?



গল্প- আসামী

 গল্প- আসামী


 আসামী
 জাহিদ হোসেন

ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে পনের বছরের তমিস্রাকে। তমিস্রা দশম শ্রেণীর ছাত্রী। ছিপছিপে গড়ন,ফর্সা, দেখতেও বেশ সুন্দরী। তমিস্রার বাবা রাহাত সাহেব একজন প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার। তিনি তরি মেয়েকে অপহরণ অতপর হত্যার দায়ে বিচার চেয়ে মামলা করেছেন। তিনি সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে প্রশাসনের নিকট কাড়ি কাড়ি টাকাও খরচ করছেন। তাই প্রশাসনের চোখে ঘুম নেই। দিন-রাত আসামীদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। উপরের আদেশে শহরের আনাচে কানাচে গোয়েন্দা মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু কোন আসামীর হদিস মিলছে না। রাহাত সাহেব সন্দেহমুলকভাবে শামীম, ডলার, হায়দার,শাকিল,হিটলার এর নামে মামলা করেছেন। কারণ এরা গলির মোড়ে বাদশার চা’য়ের দোকানে আড্ডা দিত। এরা মেয়েদের দেখলে অসভ্য কথাবার্তা, চিঠি দেয়া,শিস্ দেয়া ছাড়াও নানাভাবে উত্যক্ত করতো। তমিস্রা এদের বিরুদ্ধে তার বাবার কাছে নালিশও করেছিলো কয়েকবার। রাহাত সাহেব বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দেননি। তবে রাহাত সাহেবের শ্যালক অর্থাৎ তমিস্রার মামা দিনু মিয়া ছেলেদের বারণও করেছে কয়েকবার। কিন্ত কে শোনে কার কথা। কোন কাজই হয়নি তাতে। বরং ছেলেরা রায় পেয়ে আরো মাথায় উঠে বসেছে। কারণ এরা অস্ত্রধারী ক্যাডার। এদের বিরুদ্ধে কেউ যেতে চায় না। এরা চাঁদাবাজ,সন্ত্রাসী,মাস্তান। প্রতিমাসে এখানকার বাড়িগুলো থেকে বখরা আদায় করে। কোন বাড়িতে চাঁদা চাইতে গেলে কোন রকমের ঝুট-ঝামেলা না করে তাড়াতাড়ী বিদায় করতে পারলেই বাঁচে। আবার কেউ কেউ এদের হাতে রাখার জন্য দাওয়াত করে খাওয়ায়। কিন্ত রাহাত সাহেব এদের তোয়াক্কা করে না। রাহাত সাহেবের কাছেও একদিন চাঁদা চাইতে গিয়েছিলো। তিনি সরাসরি না করে দিয়েছেন।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসব ঘটনাই মনে পড়ছে শামীমের। সেই সাথে মা’র কথাও মনে পড়ছে। বাড়ি থেকে আসার সময় মায়ের সে কি কান্না। মনটা তার দুমড়ে মুচড়ে ওঠে। শামীম মামার বাসায় থেকে দু’তিনটে প্রাইভেট পড়ায় আর ভার্সিতে পড়াশুনা করে। মামা-মামীকে সব ঘটনা খুলে বলেছে। ঘটনার মাস খানেকের মতো হয়ে গেল। কুড়ি দিনের মাথায় হায়দার ধরা পড়েছে। পত্রিকায় খবরটি পড়ে তার ভয় ধরে যায়। গুটিশুটি মেরে বিছানায় পড়ে থাকে। আট-নয় বছরের মামাতো বোন অংকন এসে ডাকে - ‘ভাইয়া সারাদিন শুয়েই থাকবে, আজ বেড়াতে যাবে না।’
-যাবো চল।
-ভাইয়া,কল্পনা আপু দু’দিন ধরে পড়াতে আসছে না । কেন আসছে না জানি না। কল্পনা আপুর সাথেও দেখা করতে হবে।
-ও আচ্ছা,চল দেখা করে আসি।

কল্পনার মেস বেশী দূরে নয়। মাত্র পাঁচ-সাত মিনিটের পথ। কিন্ত মেসে এসে কল্পনাকে পাওয়া গেল না। দারোয়ান বলল, আফা একটু বাইরে গেছে। দেখা না পেয়ে ফিরে আসছে দুজনে। কারো মুখে কোন কথা নেই। পথ হাঁটছে দু’জনে। বিকেল বেলাটায় অনেক ছাত্রছাত্রীকে হাঁটতে দেখা যায় এই রাস্তায়। অংকন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হঠাৎ একটি টি-স্টলের দিকে আঙুল তুলে-ভাইয়া ঐ যে কল্পনা আপু। কল্পনা কয়েকজন বান্ধবীকে নিয়ে চা খাচ্ছে। অংকন তোমার আপুকে গিয়ে বলো,-শামীম ভাই এসেছেন। কল্পনা অংকনকে দেখেই- আরে অংকন তুমি, একা এসেছো ?
-না, শামীম ভাই এসেছেন। আপনাকে ডাকছেন।
-কই চলো তো।
-আরে শামীম তুমি কখন ? এসো, এসো রেষ্টুরেন্টে বসি। চা খেতে খেতে গল্প করা যাবে।


    ওরা একটা রেষ্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। শামীম চা’য়ে চুমুক দিয়ে- কল্পনা, আমি তো একটা জরুরী কাজে ব্যস্ত থাকায় তোমার সাথে দেখা করতে পারিনি। তা তুমি নাকি দু’দিন থেকে অংকনকে পড়াতে যাচ্ছো না। আর দু’দিন বাদে ওর পরীক্ষা। ওর দিকে এ সময় ভালোভাবে কেয়ার না নিলে ও তো ভালো রেজাল্ট করতে পারবে না।
- আমার জ্বর হয়েছিলো, তাই যেতে পারিনি।
-ভুলে যেওনা কল্পনা, আমাদের সম্পর্কটা কিন্ত সেখান থেকেই শুরু হয়েছে।
-তুমি আমাকে ভুল বোঝ না প্লিজ। তোমাকে সেদিন দেখতে না পেরে আমার মাথায় আগুন ধরে গিয়েছিলো। তুমি তো জান তোমাকে একদিন না দেখলে আমি থাকতে পারি না। মুহূর্তের জন্যে হলেও  তোমাকে দেখার জন্য এ হৃদয়  ছটফট করতে তাকে। সেদিন তোমার জন্য পিচগলা রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার জ্বর এসে গিয়েছিল। তবু তো আসোনি। এমনিতেই তো খুব বলো- কল্পনা, তুমি আমার ময়না ! আমার ময়না পাখি। কথা বলতে বলতে কল্পনার চোখে পানি এসে চোখের কোণ দু’টো চিকচিক করছে।
-আহা! তুমি এতটা ইমোশনাল হচ্ছো কেন। টেক ইট ইজি। আমি তো তোমার কাছে কৈফিয়ত চাইনি। আমি তোমাকে তোমার চেয়ে দশগুণ ভালোবাসি।
-দশ গুণ না ছাই। আমি তোমাকে তোমার চেয়ে শতগুণ ভালোবাসি। রিমেম্বার দ্যাট, আই লাভ ইউ মোর দ্যান আই কেন ছে। এভরি ডে এন্ড এভরি মোমেন্ট। আই লাভ ইউ এন্ড আই লাভ ইউ।
-আচ্ছা, ঠিক আছে বুঝলাম না হয় তোমার জ্বর হওয়ার কারণে অংকনকে পড়াতে যেতে পারোনি। তবে আগামীকাল তো সিওর যাচ্ছো নাকি ?
-হ্যাঁ, আগামীকাল যদি সুস্থতা ফিল করি তাহলে যাবো।
-ও,কে। আসি তাহলে।
রাতে শামীম শুয়ে শুয়ে ভাবে কল্পনাকে সব কথা খুলে বলবে। জমে থাকা কথাগুলো হৃদয়ের মধ্যে ভীষণ চাপের সৃষ্টি করছে। কল্পনাকে ঘটনাটা খুলে বললে হয়তো নিজেকে কিছুটা হালকা মনে হবে। হঠাৎ শামীমের খবরের কাগজে চোখ পড়তেই দেখে হায়দারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। স্বীকারোক্তিতে হায়দার সব কিছু অস্বীকার করেছে। আরো সপ্তাহখানেক পর আকস্মিকভাবে শাকিল ধরা পড়ে। শামীম অস্বস্থি বোধ করে। কোন কিছুই ভালো লাগে না তার। মনে হয় নিজে পুলিশের কাছে গিয়ে সারেন্ডার করি। কিন্ত বাসায় অসুস্থ মা। ধরা দিলে মাকে দেখবে কে। দু’তিনটে টিউশনি করে যা পাই তার সবই মায়ের কাছে পাঠাই। সেই টিউশনি জোগাড় করে দেয়ার জন্য কল্পনার কাছে কৃতজ্ঞ আমি। সে না থাকলে কী যে হত। আর ভাবতে পারে না শামীম। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে থাকে। কল্পনার কথায় শামীমের সম্মতি ফিরে আসে- ও তুমি রুমেই আছো ? অংকনকে পড়ালাম। কিন্ত তোমার কোন সাড়াশব্দ পেলাম না। কি হয়েছে তোমার। শরীর খারাপ করেছে ?
কল্পনাকে সব কথা বলতে চেয়েও পারছে না শামীম। মুখে বলল, কই কিছু না তো। শরীর ঠিকই আছে।
-তাহলে কি সব চিন্তা করছো। সব চিন্তা বাদ দিয়ে ইনজয় করো। ইনজয় ইওর সেলফ। দেখবে মনটা ফ্রেস হয়ে আসবে। দুনিয়াটা ক’দিনের বলো, ক’দিনেই বা বেঁচে থাকবো আমরা। শামীমের বুকের উপর শুয়ে আলতো করে চুমু খেলো কল্পনা।
-আমাকে পৌঁছে দেবে চলো।
-চলো।
সপ্তাহখানেক পরে ডলার ও হিটলার কিভাবে ধরা পড়লো তা জানতে পারলো না শামীম। টেনশন শুধু বাড়ছে শামীমের। হঠাৎ খবরের কাগজে চোখ পড়ে তার। গা শিউরে কাঁটা দিয়ে ওঠে শামীমের। ‘দিনাজপুরের ইয়াসমিন ধর্ষন ও হত্যা মামরার রায়ে তিনজনের মৃত্যুদন্ড।’ শামীম ভয়ানক ঘাবড়ে গেল। দু’দিন সেই ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়নি, শুয়ে শুয়েই কাটিয়েছে। কল্পনাও এখন আর আসে না কারণ অংকনের পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

প্রায় মাসখানেক পর শামীমকে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। খুশি খুশি ভাব। কেউ ভীষণ আনন্দ পেলে পরনের শার্ট কিংবা বেল্ট খুলে মাথার উপরে বোঁ বোঁ করে ঘোরায়, কেউবা আনন্দে নাচানাচি, লাফালাফি করে কিন্ত শামীম তা করলো না। তাড়াতাড়ী করে পোশাক পরে খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে ছুটলো কলেজের দিকে।
- কল্পনা, কল্পনা শোন- তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে।
- তোমাকে আজ খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে। ব্যাপারটা কি ?
- ব্যাপার তো একটা আছেই। চলো গাছের ছায়ায় বসি।
- আরে না, না । এখন আমার ক্লাস আছে।
- রাখো তোমার ক্লাস। আগে শোনই না ব্যাপারটা। আমি তোমার কাছে একটা ব্যাপার গোপন করেছি। তার বোঝা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি। তোমাকে বলিনি কারণ, তুমি যদি আমাকে অবিশ্বাস করো বা সন্দেহ করো। আমি চাই না আমাদের ভালোবাসায় অবিশ্বাসের ছোঁয়া লাগুক।
- আচ্ছা, থাক সেসব। এখন আসল ঘটনাটা বলো, কল্পনা বলল।
- প্রায় এগারো মাস আগে তমিস্রা নামের একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।
- মানে, তোমাদের মহল্লায় ?
- হ্যাঁ, আমাদের ওখানে। মজার ব্যাপার হলো একই নামে আমরা দু’জন একই মহল্লায়.....

ক্যাম্পাসে গোলাগুলি শুরু হয়েছে, কল্পনা শুয়ে পড়ো। ওরা দু’জন শুয়ে পড়ে ঘাসের বিছানায়। পরস্পর মুখোমুখি হয়ে কথা বলে ঘাসের সাথে।


বাংলা আমার আজন্মের অহংকার

বাংলা আমার আজন্মের অহংকার


বাংলা আমার আজন্মের অহংকার
শরীফ সাথী

      ২১-শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিনটি সমগ্র বাঙালি জাতির মুখের মিষ্টি ভাষা, মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষা’র ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হয় ভাইয়ের বুকের তরতাজা রক্তের বিনিময়ে। বিশ্বে কখন ও এমন ঘটনা ঘটেনি। পাকিস্তানের চাপানো উর্দ ভাষা বাঙালিরা সেদিন মেনে না নিয়ে এই ভূখন্ডের ভাষা, বাংলা ভাষা’ মমতাময়ী মায়ের মুখের ভাষা, বাংলা ভাষার স্বাধীনতা আদায়ে ঢাকার রাজপথে “ রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” মিছিলের উত্তাল স্লোগানে পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী গুলি চালালে  - সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ দামাল ছেলের রক্তে রক্তাক্ত হয় রাজপথ। ক্ষতাক্ত করে সমগ্র বাঙালির বুক। ব্যথা কাতর হৃদয়ে শহীদ হওয়া ভাইদের নিয়ে ছন্দ ছড়ায় জীবন পরিচয়--

মিষ্টি ছেলে রফিক উদ্দিন মানিকগঞ্জের তাজ,/বাদামতলির বাবার ব্যবসায় করতে আসে কাজ।/ফেব্রুয়ারি মাসে;/রাষ্ট্র ভাষা ‘বাংলা চাই’ চোখে মুখে ভাসে।/মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা
শ্রমিক কুলি হোক্ না চাষা কে না ভালোবাসে?/ভাষার দাবীর মিছিলেতে কাজ ফেলে সে আসে।/পুলিশের গুলি, মাথায় লেগে মৃত্যু হলো তাঁর,/বাংলা ভাষা দিয়ে যেতে/ হয়নি কোন হার! মায়ের ছেলে গাঁয়ের ছেলে রতœ অলংকার,/ভাষার জন্য জীবন দেওয়া স্বপ্ন অহংকার।
২        
ময়মনসিংহ গফরগাঁও এর বিদেশ ফেরত একটি ছেলে,/ শাশুড়িকে দেখতে ঢাকায় ছুটে আসে ডানা মেলে। / বঙ্গ দেশের সব বাঙালি, বাংলা ভাষার প্রাণ কাঙালী।/ভাষার জন্য হচ্ছে মিছিল প্রাণটি কাঁদে তাঁর,/ স্বদিচ্ছাতেই যোগ দিয়েছে/ শোনে কথা কার? তাঁর শরীরে লাগল গুলি, এসব কথা কেমনে ভুলি!/হাসপাতালে নেওয়া হলো,/চিকিৎসাও দেওয়া হলো।/মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ল,/বাংলা বাংলা বলে পড়ল।/মা’ মুখে ডাক ছিল,/প-াকার্ড-হাতে রাখছিল।/ভাষার জন্য জীবন দেওয়া-/রক্তে ভেজা কাফন নেওয়া-/ভাষা শহীদ এই ছেলেটি/আবদুল জব্বার ছিল,/বঙ্গ মায়ের ঘরে আলো/জ্বেলে জীবন দিল।

ঢাকার ছাত্র শ্রদ্ধার পাত্র/আবুল বরকত নাম,/জীবন সপে দিয়ে গেল/মাতৃভাষার দাম।/ বাংলা মায়ের ভালবেসে-/ভাষার জন্য ছুটে এসে-/মিছিলে যোগ দিল,/এক গুলিতে বুকের মাঝের/প্রাণটি কেড়ে নিল।

ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম/ফেনি জেলায় বাড়ি,/চাকরীর জন্য ঢাকায় থাকে/নিজের জেলা ছাড়ি।/ভাষার টানে যায় মিছিলে/একুশ ফেব্রুয়ারি,/তাঁর শরীরে লাগল গুলি /করুণ আহাজারি!/দেড় মাসেরও বেশী সময়
চিকিৎসাধীন ছিল,/রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চেয়ে/বলী জীবন দিল।
সালাম বরকত রফিক জব্বার/অমর হলো নাম,/ভাষার জন্য জীবন দিয়ে/বিশ্বে পেল দাম।/বঙ্গ মায়ের সোনার ছেলে/রাখল বাংলার মান,/তাইতো তাদের স্মরণে গায়/ফেব্রুয়ারির গান।/ফেব্রুয়ারির গান।।
আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো /একুশে ফেব্রুয়ারি,/আমি কি ভুলিতে পারি!!
 ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য জীবন দেওয়া শহীদ ভাইদের স্মরণে
স্মৃতিচারন করি। শহীদ মিনার ফুলে ফুলে সাজায়। প্লাকার্ড হাতে রাজপথে ভাষার দাবীর মিছিলে শহীদ রক্তে রাঙানো বুকে, মুখে মায়ের বাংলা ভাষা আদায়ে সকলের প্রতি---স্মরণে গায় আজি আমরা একুশের গান।
মা মাটির এই বঙ্গ দেশে/প্রাণ খুলে হাসতে পারি,/মায়ের ভাষায় কথা বলে/সবার ভালো বাসতে পারি।
মেঠো পথে চাইতে চাইতে/সবুজ মাঠে যাইতে পারি,/মাতৃভাষা বাংলা ভাষায়/আনন্দে গান গায়তে পারি।/মায়া মাখা নিবিড় ছায়ায়/মা’ বলে, ডাকতে পারি;/শ্যামল শোভার সবুজ হাসির/রুপের ছবি আঁকতে পারি।/অ আ ক খ বর্ণ গুলো/বাংলা ভাষা মায়ের ভাষা,/কৃষক-শ্রমিক এই বাঙালির/মুখের ভাষা সুখের ভাষা-/হাসির ভাষা দুখের ভাষা-/বঙ্গ দেশের গাঁয়ের ভাষা।


মাগো আমি এসেছি তোমার কথায় তোমাকে মা’ বলে ডাকতে তুমি আদর করে খোকা বলে আমায় ডাকো। খোকা! এসেছিস? হ্যা মা--- আমার ভাষা বাংলা ভাষার প্লাকার্ড হাতে রাজপথ ঘুরে ভাষার মিছিলে গুলিবিদ্ধ  রক্তে রঞ্জিত বুকে দাবী আদায় করে ফিরে এসেছি----তোমায় মা’ বলে ডাকতে। তাই বলতে ইচ্ছে করে--
বাংলা ভাষা মায়ের ভাষা/শহর বন্দর গাঁয়ের ভাষা/সুখের ভাষা দুখের ভাষা/মা’ জননীর মুখের ভাষা।
নতুন কথার আলো আসা/বঙ্গ ঘরের ভালবাসা।/এই ভাষারই জন্য শহীদ/হয়েছিল ভাই;/ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ/ভাষার মিছিল গিয়ে-/সালাম বরকত রফিক জব্বার/বুকের রক্ত দিয়ে-/স্বপ্ন চোখের জলে মুক্ত/বাংলা ভাষা পাই।/তাইতো এখন স্বাধীনভাবে/বাংলা ভাষা বলতে পারি!/দূর-দিগন্তে মনের মতন
মিষ্টি হেসে চলতে পারি!
ফেব্রুয়ারি এলে ফিরে পায় মা ও সন্তানের মমতাবোধ জেগে উঠি নব উদ্যমে। মায়ের মুখের মিষ্টি শব্দের চাদর মোড়ানো আদর অনুভূতি স্মৃতিফ্রেম ফিরে পায়। ফিরে পায় মায়ের মুখের, সুখের বাংলা কথার জন্য জীবন দেওয়া হারনো ভাই। স্বাধীন বাতাসের গন্ধে, ছন্দের আবরনে ফুলে ছাওয়া শহীদ মিনার।
শ্যামল মায়ার ছায়া ঘেরা/সবুজ বনের মাঠে/শহর বন্দর ঘাটে/বাংলা ভাষায় কথা বলে/আনন্দে দিন কাটে।
চির-সবুজ এই বাংলার/মা জননীর মুখের ভাষা/বাঙালিদের প্রাণের আশা/স্বপ্ন চোখের সুখের ছোঁয়ায়
বুকের মাঝের ভালবাসা/বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা।/বাংলা মায়ের ভাষার জন্য
জীবন দিয়ে হলো ধন্য/সালাম বরকত রফিক জব্বার/তাদের কি আর ভুলতে পারি?
আমি বাঙালি। আমি বাংলায় কথা বলি। এ ভাষায় কথা বলতে শিখিয়েছে, অ আ ক খ বর্ণমালা চিনিয়েছে আমার মা। যখন শুনি ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এই বাংলা ভাষার জন্য রাজপথে মিছিল হয়েছে, শহীদ হয়েছে আমার ভাই। সন্তান হারিয়েছে আমার মা। তখন চোখের বাঁধভাঙা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে দু’গালে। তাই হৃদচিত্তে স্মরণে বলি--
যে ভাষাতে কথা বলে/অন্তরে সুখ পাই,/বঙ্গ মায়ের সে ভাষাকে/বিশ্ব দিল ঠাঁই।/মায়ের মুখে হাসি ঝরা
স্বপ্ন দু'চোখ চাই,/এই জগতে মায়ের মত/আর তো কেহ নাই।
সেই মায়েরই ভাষার জন্য /জীবন দিল ভাই,/ফেব্রুয়ারির স্মরণ দিনে/ভাষার-ই গান গায়।/রক্তে ভেজা/সবুজ বনে/শীতল ছোঁয়া পায়,/শহীদ মিনায় দলে দলে/পুষ্প দিতে যায়।/শোকে কাতর শোকে’ /পাথর /ছেলে হারা মা’য়,/উর্ধ্ব গগন চেয়ে আজো/বলে খোকা আয়।
চোখের লোনাজলে শিশির¯œাত নতুন সকালের উদিত ‘বাংলা ভাষা’ আদায়ের এদিনে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ মিনার। বিশ্বব্যপি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি জাগ্রত করুক সকল মানুষের হৃদয়--এই প্রত্যাশায়


আত্মকথন : বেদনা আমার জন্ম সহোদর

আত্মকথন : বেদনা আমার জন্ম সহোদর

আত্মকথন : বেদনা আমার জন্ম সহোদর
ফরিদুর রেজা সাগর

ওর জীবনের গল্প বলার ভঙ্গিটাই আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। কোনো রাখ ঢাক  নেই। জীবনের বাস্তব ঘটনাগুলো দ্বিধাহীন, অকপট ভঙ্গিতে বলে গেছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। একবার মনে হয়েছিল ছেলেটি কী এমন মর্যাদায় নিজেকে দাঁড় করিয়েছে যে এখনই জীবন কাহিনী লিখতে হবে? ওর এখন তরুণ বয়স। কবিতা লিখে। মফস্বল সাংবাদিকতার সাথে জড়িত। এই তো মোটামুটি পরিচয়। এই পরিচয়ে, এই বয়সেই জীবনের গল্প নিয়ে ঢাউস সাইজের একটা বই লিখেছে। এক ধরনের বাড়াবাড়ি নয় কী? কিন্তু ওর বই পড়ে আমি যার পর নাই মুগ্ধ। হ্যাঁ, ইজাজ মিলনের এই বইখানি তার জন্য যতনা দরকারি তার চেয়ে বেশি দরকারী হয়ে উঠতে পারে তরুণদের জন্য। যারা জীবন সংগ্রামে একটুতেই হাঁপিয়ে যায় তারা বোধকরি উপকৃত হবে মিলনের এই বই পড়ে।
আমরা অনেকে যখন একটু বড় হই, সমাজে নাম-ডাক হয় তখন বেমালুম ভুলে যাই পিছনের কথা। শেকড়কে অস্বীকার করতে থাকি কেউ কেউ। কিন্তু ইজাজ মিলন তা করেনি। ওর বইখানি শুরু হয়েছে জীবনের এক সত্য ভাষণ দিয়ে। ‘ রিকশাওয়ালার পোলা বলে প্রায় সময়ই আমাকে গালি দেন দু’একজন বন্ধু কিংবা ঘনিষ্ঠজন। প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে বহুবার গালিটি আমাকে শুনতে হয়েছে। এটা শুনে এখন আর আমার খারাপ লাগে না। এক সময় খারাপ লাগত। অপরাধী মনে হতো। ভাবতাম, রিকশাওয়ালার ঔরসে জন্ম নিয়ে যে অপরাধ আমার হয়েছে কার কাছে ক্ষমা চাইলে বন্ধুরা আর আমাকে এই বলে গালি দিবে না। অবশ্য এ অপরাধের জন্য কখনও আমার ভেতরে অনুশোচনা কাজ করেনি। গালিটা ছিল আমার কাছে এক ধরনের প্রেরণা, এক অর্থে উৎসাহও...’
কি অকপট স্বীকারোক্তি। ক’জনই বা পারে এভাবে কষ্টের অতীতকে মহিমান্বিত করতে? এই তরুণকে আমাদের উচিত সহায়তা করা। তার পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত। দেশের বিশিষ্ট দৈনিক পত্রিকা ‘সমকাল’ এর গাজীপুর প্রতিনিধি হিসেবে সে এখন সাংবাদিকতা করছে। নিয়মিত কবিতা লিখে। সাংবাদিকতায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রবর্তিত ‘ বজলুর রহমান স্মৃতিপদক ’ পেয়েছিল। পুরস্কার প্রদান কমিটির একজন নিয়মিত বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওর ব্যাপারে জানতে পারি। আত্মকথন গ্রন্থ ‘বেদনা আমার জন্ম সহোদর’ ওর জীবনের বেদনা দূর করে অন্যদের জীবন সংগ্রামেও প্রেরণার উৎস হয়ে উঠুক এই শুভ কামনা থাকলো।



আত্মকথন: বেদনা আমার জন্ম সহোদর
লেখক: ইজাজ আহমেদ মিলন
প্রকাশ: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮
প্রচ্ছদ: বোরহান আজাদ
প্রকাশনী: প্রিয়মুখ
পৃষ্ঠা: ৩৩৬
মূল্য: ৫০০ টাকা

ফরিদুর রেজা সাগর
শিশু সাহিত্যিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চ্যানেল আই

গল্প- অপবাদ

গল্প- অপবাদ


অপবাদ
মোহাম্মদ অংকন

একটা সময় ছিল, যখন প্রতিদিন বিকালে নদীর তীরে গিয়ে জামগাছের নিচে বসতাম। এখন আর নদীর তীরে যাওয়া হয়না। কেন যাওয়া হয়না সে কথাই আজ বলব।

নদীর তীরে বসে যা যা লক্ষ্য করতাম তা আগে বলা যাক। এক মধ্যবয়সী সুন্দরী নারী প্রতিদিন নদীর ঘাটে আসত। কখনও সে হাড়ি পাতিল পরিষ্কার করত, কখনও সে মাছ, তরি-তরকারি ধুতে আসত কিংবা দুপুরের গোসলের কাপড় ধুতে আসত। আমি কিন্তু এসব মোটেও লক্ষ্য করতাম না। মোটের ওপর আমি জানতামই না যে নদীর ঘাটে কোনো মেয়ে আসে। যা জানার তা জেনেছি বিষাদময় ঘটনাটি ঘটার পর।

আমি নদীর তীরে রোজ আসি, একাকী বসে থাকি। কখনও সূর্য ডোবা দেখি, কখনও পাখিদেও নীড়ে ফেরা দেখি কিংবা দেখি কাজ শেষে বাড়ির দিকে ধেয়ে চলা পরিশ্রমী মানুষগুলোকে। নদীতে নৌকা খুব একটা চোখে পড়ত না। শুধু চোখে পড়ত দু একজন ছোট নৌকার জেলেকে। আমি নদীর তীরে যাই দেখিনা কেন, মানুষ জন আমাকে দেখত যে আমি নদীর তীরে বসে থাকি। কেউ হয়তো ভাল মনে করে, কেউ হয়তো ঠাট্টা কওে বলে, কবি বসে আছে কবিতা লিখছে। কারও কথাই ওভাবে আমি বিচার করতে যাইনা। কেননা, নেতিবাচক তা আমার একদম অপছন্দ।

কিন্তু এমন নেতিবাচক তা আমি কখনো আশা করিনি। কেউ একজন আবিষ্কার করে বসল, আমি ঐ মধ্যবয়সী নারীকে দেখার জন্য রোজ নদীর তীরে আসি, বসে থাকি। সে আরও আবিষ্কার করল, আমার আর ঐ নারীর মধ্যে নাকি অবৈধ প্রেমের দূঢ় সম্পর্ক রয়েছে। এসব আবিষ্কার করেও ক্ষান্ত থাকেনি। সব কিছু সাজিয়ে গুছিয়ে একটি গল্প বানিয়ে বলে দিয়েছে ঐ নারীর পরিবার ও স্বামীকে। সামাজিক নিয়মে তারপর যা হবার তাই হওয়ার কথা। প্রথমত নারীটিকে তার স্বামী ডিভোর্স দেয়। অতঃপর নারীটি আত্মহত্যার মত কঠিন পথ বেছে নেয়।

জানতে চাইবেন না, এত বড় দূর্ঘটনা ঘটে গেল আর আমার ওপর কোনো প্রতিক্রিয়া এল না? বলছি তাহলে পরের কথা। নারীটিও আসলে জানত না যে আমি নদীর তীরে এসে বসতাম। তার কাজ সে করত আর আমার কাজ আমি করতাম। কখনও কোনো দিন চোখে চোখওপড়েনি। কিন্তু লোকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে স্বামীর ঘরের সাথে জগৎস্বামীরও ঘর ত্যাগ করতে বাধ্য করল। এ অপবাদে হয়তো তার অনেক আক্ষেপ ছিল। কিন্তু পুরুষ শাসিত সমাজে তার সত্য কথাগুলো যেমন কেউ কানে নেয়নি, তেমনি আক্ষেপের অবসান ঘটাতে পারেনি।

প্রতিটি আত্মহত্যামুলক ঘটনায় কোনো না কোনো ইঙ্গিত বা চিরকুট রেখে যায় আতœহননকারী। এ ঘটনায় তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। পাওয়া যায় একটি চিরকুট। তাতে লেখা থাকে, ‘তোমরা আমাকে অপবাদ দিয়েছ। বেশ ভাল করেছ। আমি তা মাথা পেতে নিয়েছি। কিন্তু নির্দোষ ঐ যুবক যেন মিথ্যা অপবাদে পড়ে আমার মত আত্মহত্যার মত জঘন্য পথ বেছেনা নেয়। চিরবিদায় পৃথিবী।’

মৃত্যুর সময় কেউ মিথ্যা কথা বলেনা বা বলতেপারেনা। তাই এই ধ্রুব সত্যগুলো সকলকে কষ্ট কওে হলেও মেনে নিতে হয়। সকলে ভুল বুঝতে পারে। ঘটনাগুলো আমি যখন অনুধাবন করতে পারি, তখন নিজেকে আবিষ্কার করতে থাকি, আমি কি ঐ মধ্যবয়সী নারীর উপযুক্ত ছিলাম? আসলে এগুলো আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের কিছু ভ্রান্তধারণা। কিভাবে একটি সংসারকে ভেঙ্গে দিল? একটি অপবাদই যথেষ্ট। তারপর আমি ভাবতে থাকি, না আমার একার পক্ষে এসব কুসংস্কার দূর করা সম্ভবপর নয়। অতঃএব এ নদীর তীরে আমার আর না আসাই যুক্তিগ্রাহ্য। তাই আর এক যুগ ধরে নদীর তীরে যাওয়া হয়না এই ভেবে যে আবার যদি কারও হৃদয়ে অপবাদের কলঙ্ক লেপন হয়!