যাকাত হোক সুন্দর এবং সুন্দরতম
যাকাত হোক
সুন্দর এবং সুন্দরতম
হাসিসা সুরমা
মহান আল্লাহ পাক তার ইবাদতের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর আনুগত্য, আদেশ মেনে চলা এবং নিষেধ থেকে দুরে থাকার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ প্রিয় থেকে আরো প্রিয় হয়ে উঠে। মহান রব ইরশাদ করেছেন,”আমি তার প্রাণশিরা অপেক্ষা অধিক নিকটে আছি” (সুরা কাফ : ১৬)। আর ইবাদত শারিরীক এবং আর্থিক দু’ধরনের হয়ে থাকে। যাকাত হল আর্থিক ইবাদত, যা সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে বান্দা মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। যাকাত গরীব দুঃখীদের হক বা পাওনা। যা মহান আল্লাহর পক্ষ হতে গরীবদের প্রতি ধনীদের জন্য অর্পিত দায়িত্ব। মুসলিম জাতির জন্য এক বিশাল নেয়ামত, যা গরিবের অভাব মোচন এবং ধনীদের সম্পদ বাড়িয়ে দিতে এক বিশাল ভূমিকা পালন করে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, “হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করো সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো রকম বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না” (সুরা বাকারা: ২৫৪)।
যাকাত কখন কিভাবে ফরজ হয় এসব বিষয়ে সকলে অবগত হলেও যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু অবহেলা বা অসাবধানতার কারনে এই বিশাল নেয়ামত থেকে পিছিয়ে পড়ছে মুসলিম সমাজ। দেখা যায়, যাকাত দেয়া হয় লোক দেখানো, সোস্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রচার প্রচারণা, যশ খ্যাতি ইত্যাদি লাভের আশায়, যা খুবই নিন্দনীয় এবং গর্হিত কাজ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, “হে বিশ্বাসীরা! তোমরা দানের কথা প্রচার করে এবং (দান গ্রহণকারীকে) কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করে দিয়ো না, ঠিক ঐ লোকের মতো যে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যেই দান করে।“ (সুরা বাকারা: ২৬৪)
যাকাত মুসলিম জাতির জন্য মহান রবের নির্দেশ। যাকাত দিতে হবে এমন পন্য যা (কাপড় হওয়া শর্ত নয়) আপনি নিজের জন্য পছন্দ করবেন। যাকাত দিতে কার্পন্য একজন মুসলিম মুমিনের জন্য কোনভাবে সমীচিন নয়। যাকাত আদায়কারীর এমন মনে করা উচিত নয় যে আমার অর্জিত সম্পদ থেকে তাকে দান করছি। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা যা কিছু দান করো তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করো, আর যা কিছু তোমরা দান করো, তার পুরস্কার পুরোপুরি প্রদান করা হবে।’ -(সুরা বাকারা : ২৭২)
যাকাত হচ্ছে একজন গ্রহীতার অধিকার বা পাওনা। যা কখনোই দাতার অংশ হতে পারে না। সুতরাং যাকাত দিতে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, আপনি যা দিচ্ছেন তা যেন গ্রহীতার কাজে আসে অথবা এমন কিছু দেয়া উচিত যা তার খুব প্রয়োজন। যাকাত মানেই অল্প দামের শাড়ি বা লুংগি নয়। দুঃখের সাথে বলতে হয় মার্কেটে আলাদা করে নিম্নমানের কিছু কাপড় দেখা যায় যেগুলো যাকাতের জন্য নির্ধারিত। যেই কাপড়গুলো কেউই কিনে না, মানে খারাপ কিন্তু দামে সস্তা। এগুলো একসাথে ১০/২০/৩০ জনের জন্য যাকাত দেয়ার উদ্দেশ্যে কেনা হয়, যা কয়েক ধোয়াতে আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। এক্ষেত্রে গ্রহীতার কোন লাভ না হলেও দাতা তার পরিবার, সমাজ, সোস্যাল মিডিয়ার গর্বের সাথে বলতে পারে ৩০ জনকে যাকাত দিয়েছি। এমন দানের শিক্ষা ইসলাম আমাদের দেয় নি। নবী করীম (সা.) বলেছেন, “কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তিন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন না। তাদের মধ্যে একজন হলো, (দান করে) অনুগ্রহ প্রকাশকারী ব্যক্তি।“-(মুসলিম: ১০৬)
যাকাত দেয়া মানে দাতার দানে গ্রহীতা আনন্দিত হওয়া। যাকাত হতে পারে ১০টি পরিবারকে নির্দিষ্ট কিছু টাকা দেয়া, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাজার করে দেয়া, একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়া ইত্যাদি। যাকাত একজন মুসলিম ভাই থেকে অন্য ভাইয়ের প্রাপ্য।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নিজের আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব যারা অভাবী, তাদের বাদ দিয়ে এমন জায়গায় দেয়া হয় যেখানে দিলে নিজের প্রচারণা বাড়বে, মানুষ জানতে পারবে, লোকজন বাহবা দিবে, নামের আগে কয়েকটি উপাধির সংযোজন হবে। এমন লোকের যাকাত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে কখনোই কবুল হবে না। যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে নিজের কাছের মানুষ, আশেপাশের মানুষ অগ্রাধিকার পাবে। সুন্দর হোক মানুষগুলো, সুন্দর থাকুক পৃথিবী।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম।
শেষ থেকে শুরু
শেষ থেকে শুরু
আহাদ আদনান
-ফাঁসির আগে আমার শেষ ইচ্ছে জানতে চেয়েছিলো। তোমার সাথে একান্তে সময় কাটাতে চেয়েছিলাম।
-পঞ্চান্ন মিনিট চলে গেছে। আর পাঁচ মিনিট আছে।
-আমার মরণের পর সব ভুলে যেও। আরেকটা বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করো।
-হুম, করবো।
-করবো মানে? সব ঠিক করে ফেলেছ?
-ঠিক।
-কার সাথে?
-শোভন।
-কোন শোভন? টাওয়ার পারের সেই ছেলেটা?
-হুম।
-যার সাথে পরকীয়া করতি, তার বন্ধুকেও ছাড়লি না। তোকে ভালোবাসি বলে কোর্টে তোর কোনো কেচ্ছা ছড়াতে দিইনি। আর তুই একটার পর একটা নাগর জুটিয়ে যাচ্ছিস?
-একটার পর একটা না। একটাই। শোভনকেই আমি ভালোবাসি। সুজন বন্ধুকে সাহায্য করতে যেয়ে তোমার কাছে ফেঁসে গিয়েছিল।
-কী বোকা আমি? সবাই বিশ্বাস না করলেও মরার আগে বলে যাই। খুনটা কিন্তু আমি করিনি। গলা চেপে ধরেছিলাম, কিন্তু সুজন ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছিল।
-জানি।
-জানিস মানে?
-শোভন বলেছে। গ্লাভস পরে সুজনের শ্বাসনালীটা ওই ভেঙেছে। তোমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নষ্ট হতে দেয়নি।
-সেদিন সন্ধ্যায় পার্কে তুই তাহলে শোভনের সাথে ছিলি?
-হুম। সুজন বলতে এসেছিল তুমি পরকীয়ার ব্যাপারটা জেনে গেছ। ফোন বন্ধ পেয়ে বন্ধুকে সতর্ক করতে এসেছিল। শোভন বলেছিল আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে। হঠাৎ তুমি আসায় সব ওলটপালট হয়ে গেল। ওর গলা চেপে ধরলে আর আমি ভয়ে চিৎকার দিলাম। লোক জড়ো হওয়ার আগেই সুজন ফস্কে দৌড়। আমার গালে চড় মারতেই লোকজন এসে দেখল একজন রাগে হল্লা করছে, মেয়েটা মাথা নিচু করে কাঁদছে, দুইশ মিটারের মধ্যে ঝোপের পিছনে লাশ পড়ে আছে। চতুর্থ ব্যক্তির অস্তিত্ব কেউ জানতেও পারল না। পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ সুজনের গলায় তোমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেয়ে গেলো। ফুড আইটেমের ফ্যাক্টরির সুপারভাইজার বলে শোভনের পকেটে গ্লাভস থাকে। ভিক্টিম আছে, সাসপেক্ট হাজির, মোটিভ পরিস্কার, প্রমাণ মিলে গেল, কোথায় পালাবে তুমি?
-তুমি ইচ্ছে করলে কোর্টে আমাকে বাঁচাতে পারতে।
-ফরেনসিক যেখানে প্রমাণ পেয়ে গেছে আমি সেখানে মিথ্যা সাক্ষীর কেস খাব নাকি?
-এখন ইচ্ছে করছে তোকে খুন করি। ফাঁসিটা জায়েজ করি।
-সেটা তুমি পারবে না।
-কেন?
-তোমার চোখ বলছে, এখনো ভালোবাসো আমাকে। প্রকৃত প্রস্তাবে চোখ একটি জলজ প্রাণী। স্বাধীন মনপ্রজাতন্ত্রী স্বত্বা। ওর আদেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
হঠাৎ খুলে যায় দরজা।
-ওয়েলডান। গোপন টেপে সব রেকর্ড হয়ে গেছে। ম্যাডাম, ইউ আর আন্ডার এরেস্ট। অফিসার, মিস্টার শোভনকে গ্রেফতার করতে স্টেপ নিন। কেসটা রি-অপেন করতে হবে। দোস্ত আমি যখন কেসটার চার্জ নিয়েছি তোকে বের করে আনবোই।
ঢাকা।
পদাবলি
কুকুর ও বিবর্তনমুখী রাষ্ট্র
দ্বীপ সরকার
কুকুরগুলো ইদানিং সরছেনা-
নাকের ডগায় হেসে ভেসে দিচ্ছে ঘেউ ঘেউ
উঠোনে কার যেন পা পড়েছে আজ
পীতরঙা মেঘের ভেতর কে হেঁটে বেড়ায়
কোমলমতি রোদের মাহফিলে কে এসেছে?
কে কন্ঠ মিলিয়ে কুকুরের সাথে রাষ্ট্রের গান গায়?
আমাদের এইখানে-এই রাষ্ট্রে
মজার এটা ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে
কুকুরগুলো গা ঘেঁষে বসে সামাজিক হতে চায়
আমারা সুযোগ দিচ্ছি কিংবা দিচ্ছি না
অথচ কুকুরের মুখে লালার বদলে
বির্বতনের জল গড়িয়ে পড়ছে
খুব চিকচিকে এবং ফিকফিকে
জন্মের দাগ
সাব্বির আহমাদ
অযাচিত প্রশ্নের সম্মুখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি।
আকাশচুম্বী উপত্যকা ঘেঁষে
গলে গলে পড়ছে সহস্র বছর পুরনো আলোকবর্ষের দোষ।
জন্মের দাগ রেখে পালিয়ে যাচ্ছে বছর।
ঐ পথে মায়েদের চোখের ভিতর
জমা হচ্ছে বিষাক্ত ছোবলের আঘাত।
সময়ের কোলে বসে অকাতরে কাতরাচ্ছে
আহত চিৎকার-
আমাদের বঞ্চিত সব অধিকার।
এরপর ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে;
রাতের নির্জনতা গাঢ় হতে হতে
নিস্তব্ধ হয়ে যায়ে কুহকের বুক।
একটি পণ্যবীথির আত্মকাহিনি
সোহেল রানা
পুবের হাওয়া যেন গায়ে মাখানো সাবান!
এ-ই চায়ের নেশা আর আড্ডাবাজি’ই সকল নষ্টের গোড়া!
আর ওটা যখন তোমার পেয়ে বসেছে- তুমি শেষ-
দাদা বলতেন।
এখানে শুধু নুন-তেল-সামগ্রীর অভাব পূরণেই নয়,
বরং রাজনীতি, অর্থনীতি ও
দৈনন্দিন কার্যাবলী সম্পাদনের যথার্থ স্থান
খলিল-মকবুলের চায়ের কাপে ঝড়-
দারোগালীর জয়জয়কার!
শুনেছি যাত্রাশিল্পী-নোলে ঘোষের সাথে
দাদারও দহরমমহরম ছিল খুব বেশি!
আর বাবা পরবর্তীকাল আমি...
যার ধারাবাহিকতা অনন্তকাল চলবে।
২
পুবের সূর্য পশ্চিমে ডুবো তারপর রাত ঘনায়-
অন্ধকারে পিষ্ট পথচারী- একটা হায়েনার হাসি!
এবং সাপের ছোবলে বাজপাখির মৃত্যু!
যদিও অজগরটা এখনো হাঁ-করে আছে।
চাপা বিপ্লব
আকিব শিকদার
আধপোড়া সিগারেটে পুনরায় জ্বালাই আগুন, কাচফাটা চশমাটা
নাকের ডগায়, মুখময় বার্ধক্যের জ্যামিতিক রেখা।
কানের গোড়ায় সাদা চুল জানিয়ে দেয় বয়স। আমি যেনো
নিবিড় গুহায় নিদ্রিত বুড়ো সিংহ, পড়ে আছি অসহায়।
তবু অনাচার দেখলেই জ্বলে ওঠে গা, মনে হয়
শরীরময় এসিড, জামার ভেতর কেউ ছেড়েছে মুঠো ভরা বিষপিঁপড়ে।
নক্ষত্র খসে পড়লে আকাশের খুব বেদনা হয়। আমাদের
বেদনা হয় যখন স্বপ্নগুলো বালির বাঁধের মতো গড়িয়ে যায়।
যখন আশার শ্যামল ডগা নেতিয়ে পড়ে, বইয়ের পাতার ভাঁজে
গোলাপ-পাপড়ির মতো শুকিয়ে হয় কাঠ।
যখন আমাদের বালিশ-তলায় চাবির গোছার মতো
যতেœ আগলে রাখা সন্তানেরা
হয়ে যায় হায়েনার শিকার। আমাদের খুব বেদনা হয়...
চলার পথে শত্রুরা ছড়িয়ে রাখে কাঁটা, উটকো পাথর।
ওরা তো জানে, জল ঘোলা করলেই
মাছেরা পড়বে বিপাকে; হঠাৎ আলো নিভে গেলে
যেমন বিপাকে পড়ে পতঙ্গ।
শকুনের চোখ আর ঠোঁটের আঘাতে মুমূর্ষ জীবন, বরফে জাহাজ
এঁটে যাওয়ার মতো স্তম্বিত জীবনের সাবলীল গতি।
যেন কাশের গভীর অরণ্যে বালিহাঁসের
রক্তস্রোত বইয়ে দিলো একটা শিয়াল।
এক ফোঁটা স্নিগ্ধ শিশিরের জন্য, একটা ফুটন্ত গোলাপের জন্য
আমাদের চোখে অশ্রু। যেন আমরা কাচের বৈয়ামবদ্ধ তেলাপোকা
নিঃশ্বাসের যন্ত্রণায় ধুঁকছি ভীষণ।
কাল-গোখরার বিক্ষুব্ধ তা-বে ফুঁসে উঠবই একদিন, প্রতিবাদে
মারবো ছোবল। রক্ত জবার মতো লাল চোখ, রক্তিম দৃষ্টিতে
ঝরিয়ে আগুনের ফুলকি জ্বালাবোই সত্য আলোর শিখা।
মানবো না বেআইনি আইন। যতক্ষণ বাঁচি
চলবো তেজোদ্দীপ্ত ভঙ্গিমায়, যদি মৃত্যু আসে
করবো আলিঙ্গন মরণেরে অগ্নিমুখ পতঙ্গের মতো।
ঝাপসা পৃথিবী দেখতে চাই না আর, ছুঁড়ে ফেলে
ভাঙা চশমা, মুখ থেকে টেনে তুলে বার্ধক্যের ছাপ
পায়ের তলায় চাপা দিয়ে জ্বলন্ত সিগারেট, কালো ধোঁয়ার
কু-লি ভেদ করে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছে করে আমার।
লেবাস
রফিকুল নাজিম
বাজারে সাদা রঙের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে খুব
সুই-সুতার ঘরে কারিগরদের ব্যস্ততাও বেড়েছে খুব।
সাদা পাঞ্জাবিতে পাতি লিডারকে
মনে হয় পূতপবিত্র মানুষ; সাক্ষাত দেবদূত,
সাদা পাঞ্জাবিতে খলনায়ককেও
মহানায়ক উত্তম কুমারের মতো লাগে!
সাদাতে ফটকাবাজ আদম ব্যবসায়ী
সুরত আলীকেও মনে হয়- উদীয়মান সমাজসেবক।
সাদা মানেই পবিত্রতার প্রতীক; সাদা এখন হালের ফ্যাশন।
চতুর্দিকে সাদা পোশাক পরা লাখো মানুষকে দেখি রোজ
আহা! সাদা মনের মানুষগুলো কোথায় যেন হচ্ছে নিখোঁজ।
বদলে যাওয়া সময়ের গান
প্রিন্স মাহমুদ হাসান
আমরা বদলাতে না চাইলেও বদলে যায়
আমাদের হিসেব, বদলে যায় সময়।
শৈশবে যে বৃষ্টিকে দেখে ভিজতে যেতাম
আজ সে বৃষ্টিকে দেখে দৌড়ে পালাই।
আশ্রয় খুঁজি অন্তত একটি ছাতার কাছেও
আমরা ভেতর থেকে যতই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই
নিজের কাছে মিথ্যাবাদী সাজি ততই।
আমরা যারা আমাদের খেলনাপাতি গুছিয়ে
বড়দের আকার ধারণ করে আছি
তারা আজ সত্যিই কত বড় অসহায়!
আমাদের প্রকৃত কোন আশ্রয় নেই
নেই চিরচেনা পরিবেশের আবহ
আঁধারে পথ চেনার দায়িত্ব নিজের
ঘাড়ে নিয়ে দিগি¦দিক ছুটে চলেছি।
আমাদের কান্না পেলে কাঁদতে পারি না
আমাদের ভেতরের কান্না বরফ হয়ে গেছে।
আমি কালো গোলাপ
মারজানা মার্জিয়া
আমি ঝড়ো হাওয়ার মত বেগবান,
আমি কাঠফাটা আগুন ,
বিরোধী আমি শরতের স্নিগ্ধ শুভ্র মেঘ হতে।
যে মেঘ ছায়ায় স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলবে ।
সকল ক্লান্তি-শ্রান্তি অস্থিরতা মুছে যাবে
আমি আগুন ঝরা ফাগুনে তোমায় পোড়াতে রাজি,
আমি রয়েছি বসন্তের দখিনা হাওয়ায়,
মৃদু মহনায় দুজনে হারিয়ে যাওয়ার বাঁধা হতে।
আমি কালো গোলাপ, আমি একগুচ্ছ লাল গোলাপের চির বিরোধিতা করেছি।
যার সুবাস নিসৃত হয়ে দুটি হৃদয় এক হয়; আমি তার মহাশত্রু হয়েছি।
চেয়েছি ঝিরি ঝিরি বাতাসে বয়ে যাওয়া
শাপলা ফোঁটা পুকুরের জলের বাধা হতে,
যার ¯্রােতধারায় মিশে মিলিত হয়,
দুটি হৃদয়ের উষ্ণতা উত্তাল তরঙ্গে।
আমি কালো গোলাপ-
বিরোধীতা করেছি লালগোলাপ সামনে রাখা তোমার প্রেমালাপ।
আমি কালো গোলাপ-
ক্লান্তিকালের হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া, বিলুপ্তপ্রায় সংলাপ।
আমি প্রণয় জীবনের বিদ্ধস্ত বিপর্যস্ত বিক্ষিপ্ত আর মহাশান্তির সংঘর্ষণ।
যত সুন্দরই হোক তোমার প্রাপ্তি,
ঠিক তার চেয়ে বিধ্বংসের ন্যায় ঘটাবো প্রণয় জীবনের সমাপ্তি।
আমি কালো গোলাপ -
পারিনি লালের সৌরভতা ছড়াতে,
শিখেছি রক্ত লালে তোমার হৃদপিন্ড ক্ষতবিক্ষত করতে।
আমি অবহেলিত অপ্রিয়, ভীড়ের মাঝের বিরলমাখা কালো গোলাপ হয়ে জন্মেছি।
প্রণয়ের মহাভয় হয়ে দাড়িয়েছি, সুশ্রী মিলনে চিরবাধা হতে চেয়েছি ।
কিশোরীর তরে প্রেম
মীযান তাসনীম
তোমাকে বলি নি কিছু
কত কথা ছিলো
সময়ের এই স্রোত
সব শুষে নিলো।
ভালো লাগা ছিলো আর
ছিলো কী যে টান
তোমাকে ভেবেই দিল
হতো পেরেশান।
দেখা দিলে মনে হতো
এইটুকু ক্ষণ
বুকে ধরে কেটে যাক
পুরোটা জীবন!
যতটুকু প্রেম ছিলো
বেশি ছিলো ভয়
কিশোরীর তরে প্রেম
এমনই কি হয়?
সূর্যমূখি গান
রজব বকশী
এই জীবনের রাস্তা খুঁড়াখুঁড়ির শেষ নেই
যেভাবে নির্মাণ এগিয়ে যায়
আমাদের অনাগত ভবিৎষতের দিকে
ভোর গড়িয়ে সকালের পথ ধরে
দুপুরের প্রান্তরে জাঁক জমক উপস্থিতি
আহা দুপুরমিত্র! এই জীবনের সোনালি সময়
ফুরালে কেবলি স্মৃতি ও দীর্ঘশ্বাস উঁকি দেয়
হায়! ক্লান্ত বিবর্ণ বিকেল ছায়া ফেলে যায়
দীর্ঘশ্বাসে সন্ধ্যার স্তব্ধতা কুড়াই
একাকিত্বের বিষণণ অক্টোপাস নীলক›ঠ ঢেউ
যথারীতি রাতের গভীরতা স্পর্শ করে
যদিও গন্তব্য উজ্জ্বল ভোরের দিকে
শব্দ ও নৈঃশব্দের যাত্রী হয়ে জেগে উঠি
এই শরীর মনের অভিব্যক্তি প্রস্ফুটিত করে
নিশ্বাসে ছড়াই হৃদ্যতার পারফিউম
চৈতন্যোদয়ে বাড়াই হাত
সূর্যমুখি গান
কবিতা আমার
হাফিজুর রহমান
আমি চাই, আমার কবিতাগুলো বেঁচে থাক;
কথা বলুক ন্যায়ের পক্ষে- অন্যায়ের বিরুদ্ধে
একইভাবে শত-শতাব্দীর পরে শতাব্দী ধরে।
ব্যস্ততম সড়ক ছেড়ে খানিকটা সময়ের জন্য
ঘুরে দাঁড়িয়ে শুনে ভাববে হয়তো কোন পথিক,
অল্পের হলেও এ যেন হয় তারই জীবনের গল্প।
অশ্রু সজল ধর্ষিতার চোখে কবিতা প্রলয়ে
হতে পারে অন্ত্যমিলের গোলযোগ ভীষণ!
তাতে কী? অনিয়মের বিরুদ্ধাচারণে বর্ণগুলো,
ঝাঁঝালো ভাষায় মিছিল করবে এক-জোট হয়ে
একেকটি শব্দ- প্রতিস্থাপন করার তীব্র বাসনায়
মনুষ্যত্বের, অচল যন্ত্রগুলোকে সচল করতে।
আমি চাই, আমার প্রিয় কবিতাগুলো বেঁচে থাক;
অনন্ত সময় ধরে- মেয়াদোত্তীর্ণের ধার না ধেরে।
মুক্ত বিহঙ্গ
মুক্ত বিহঙ্গ
রাতিক হাসান রাজীব
ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে রাতের অন্ধকার। সূর্য কবেই হেলে পড়ছে পশ্চিম আকাশের প্রান্তসীমানায়। অপ্সরা এখনো সমুদ্র পাড়ে একা দাঁড়িয়ে আছে। সাথে কেউ নেই। নেই বাড়ি ফেরার তাগাদা। মাত্র একদিনের ব্যবধানে অপ্সরা নিজেকে নরক থেকে স্বর্গে স্থানান্তরিত করেছে। গতকাল ঠিক বিকেলে সে তার চেয়েও বড় একটি কাজ করে ফেলেছে। যার কারণে আজ যে এখানে।
বয়স যখন তার দশ, বাবা-মা মারা যায় এক সড়ক দূর্ঘটনায়। এরপর থেকে সে চাচা-চাচির সাথে আছে। ঠিক সাথে বললে ভুল হবে। তারা তো তাকে রেখেছে স্রেফ কাজের মেয়ে হিসেবে। দিন রাত চব্বিশটা ঘন্টা তাকে খাটিয়ে মারতো। সারাদিন কাজ করেও একটু ফুরসত পেতো না সে। বিনাবাক্যে তাকে একটার পর একটা করে যেতে হতো। কাজে ফাঁকি তো দূরের কথা সামান্য ভুল হলেই রক্ষে নেই। গায়ে হাত, লাঠির আঘাত তো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আর সেদিন ঘটেছিল লঙ্কা কা-। ঘনিষ্ঠ কিছু মেহমান এসেছে বাড়িতে। বরাবরের মতো রান্নার দায়িত্ব বর্তায় অপ্সরার উপর।
দুই হাতে দশ হাতের কাজ শেষ করেও তার কপালে দুঃখ ঠিকই রয়ে গিয়েছিল। সবগুলো রান্নাই খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু একটি তরকারি লবণ বেশি হয়েছিল বলে অপ্সরার চাচা বেজায় রেগে যায়। মেহমান বিদায় হওয়ার পর যাচ্ছেতাই কথা বলে অপ্সরাকে। শুধু কথা নয়, ইচ্ছে মতো মারধর করেও তাকে। মারধরের এক পর্যায়ে চাচী তার হাতে আগুনের সেক দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে নি। আগুনের জ্বালায় অপ্সরার প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও কেউ একটু পানিও দেয়নি।
শেষমেশ অপ্সরা প্ল্যান করে পালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু যাওয়ার আগে আরেকটি কাজ করে যায় অপ্সরা। তার চাচা-চাচীর ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়ে যায়। কিন্তু এতে তার বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। বরং আনন্দ হচ্ছে, মুক্ত হওয়ার আনন্দ।
আজ থেকে সে আর খাঁচায় বন্দী পাখির মতো নয়, পরাধীনতার শৃঙ্খল ছেড়ে স্বাধীনতার আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ সে। এখন থেকে পুরোটা আকাশই তার। ঠিক পাখির মতো। কিন্তু দিনশেষে পাখি সব ঘরে ফিরে সন্ধ্যা নামার আগে। রাতের আকাশটা যে তাদের না। অপ্সরাও তো পাখির মতো, তাহলে রাতের আকাশ কী তার জন্যও না?
ঠিকানা: মোহনা এ-১৪/১,পাঠানটুলা,সিলেট।