পদাবলি

পদাবলি


পুরস্কার
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

মিথিলা আমাকে বললো, তুমি সাহিত্যে নোবেল পাবে কবে?
আমি বললাম, যেদিন তোমাকে ভুলে যাবো।
মিথিলা আর্তস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো, গুষ্টি কিলাই তোমার পুরস্কারের।
আমি হাসি, টেনে রাখি বুকের বামপাশে-
তুমিই আমার পুরস্কার, তোমাকেই চেয়েছি জনমভর।



আই কনফেস
শাহীন মাহমুদ

বেদুঈন পাখি পালক ফেলে  যায় গন্দম বাগানে
স্বপ্নলোক পানসি  ভিড়ায় তীরে
লখিন্দর বাসর ঘরে ঘুমচোখ
কাঁচ ভাঙ্গা শব্দে কেঁদে উঠে বেহুলা
লীন হয় ভালোবাসা ভুজঙ্গ মায়ায় ।
একদিকে ফুলসিরাতের সাঁকো
অন্যদিকে হাউজে কাউসার
মাঝখানে শিরির ফরহাদ; তৃষ্ণার ধাপাধাপি
দুর থেকে ভেসে আসে ভুতুড়ে বিভ্রাট

আই কনফেস... আই কনফেস ।



সংজ্ঞা
সাঈদ সাহেদুল ইসলাম

দীপ জ্বালিয়ে
যতই খোঁজো আলো,
অন্ধকারে থাকবে পড়ে
মন যদি হয় কালো।

মুখের কথায়
যতই বলো ভালো,
মন পাবে না শুদ্ধ জলে
মন যদি না ঢালো।




বর্ণহীন ভালোবাসার প্রান্তরে
বজলুর রশীদ

বোধের জগতে জন্মেছে
ভুল পথের সিঁড়ি,
মনের জানালা জুড়ে এলোমেলো
বির্বণ পঙক্তিমালা-
অধরা তৃষ্ণায় কেটেছে এ জনম
কবিতা ‘তোমার’ ভাবনায়।

বিরহের বাঁশিতে
পূজালোভী তোমাকে কতভাবে ডেকেছি,
তবুও সাড়া নেই আজন্মধ্যানে মগ্ন।
অনেক সাধ ছিল ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকব
আর তুমি সাড়া দিবে।
তোমাকে ভালোবাসি ভিন্ন শিরোনামে
তোমারই দুর্বোধ গানে।

আর কত নামে ডাকলে
ভাঙবে তোমার ধ্যান-মগ্ন
জানা হবে তোমারই
গতি ও গন্তব্যের শুভ যাত্রাপথ।

আজ বিশ্বাসের জ্যামিতিক অঙ্কে
মাঝে মাঝে মনে হয়-
আবার ফিরে যাই আগের
বর্ণহীন ভালোবাসার প্রান্তরে।



উষ্ণ সন্ধ্যার উপাখ্যান
জাহিদ হোসেন

আনন্দের প্রশাখা দু’হাতে সরিয়ে
দেখে আসি উৎসবে ভালোবাসার ভোর;
আমাদের উঠোনের আকাশে আজ বলাকারা হাসে।
বিকেল আর সন্ধ্যার পার্থক্য না বুঝে
সন্ধ্যার নিমজ্জিত আঁধারে
হারিয়ে যাওয়া উষ্ণতায়-
প্রাণ খোঁজো কুসুম কুসুম ভালোবাসার।

আনন্দ ভালোবাসার প্রাণবন্ত মুহূর্তের দিকে ঝুঁকে
তৃপ্তির সাধ গ্রহণ করো অবিরত।
আর আমি বান্ধবসহ মৌলিক জলসায়
আনন্দ ভাগাভাগি করি।


ঢং
আকিব শিকদার

‘আমার বৈঠা ভেঙে গেছে, তোমার নায়ে আমায় তুলে নাও’
এই কথাটি প্রথম যেদিন বলেছিলাম
অবজ্ঞা আর অবহেলায় বললে তুমি- ‘যাও...’।

চন্দনের গন্ধ পেতে চিতা জ্বালায় এমন বোকা ক’জন আছে...!
শুনলে যে কেউ হাসবে...
তোমার ভ্রুয়ের কোঁচকানো ভাব দেখতে পেলেই
বুঝতে পারি ঘরভাঙা ঝড় আসবে।

যখন তুমি কারণ-অকারণ আমার ওপর ঝাল ঝারো
দুঃখে আমার কান্না আসে, তুমি বলো- ‘ঢং ছাড়ো’।



কবিতার খরা
যাহিদ সুবহান

দীর্ঘশ্বাসটুকু তোমার জন্য নয় নিশ্চয়
হৃদয়ের হাহাকারটুকুও নিজেরই গড়া
সুখগুলো চলে যায় অবকাশে শুধু
দুঃখের নেই কোনো অবসর
ভেবোনা হারিয়ে যাবো যন্ত্রনায়
কতকিছু দেখালে গো শেষ সময়ে
মাটি দেখে দেখে তুমি গল্প বলো
অথচ আমার কবিতার খরা...



যদি ফিরে আসো কখনো
স্বপন শর্মা

তোর থাকা, না-থাকা দিনগুলো নিয়ে বসে আছি,
ছেঁড়া সম্পর্কের প্রতিটি খাঁজে নোনা গন্ধ।
সদ্য জন্ম নেওয়া ছোট্ট নদীতে ভেলা ভাসিয়ে,
স্বেচ্ছায় চলে গেলি যেদিন।
সেই প্রাচীন ঢেউয়ের ¯্রােত আটকে তোকে জানানো হলো না,
আকাশ কোনদিনই আমাদের ছিল না।
তবু দ্যাখ প্রথম পুরুষের মতো ক্যামন দিগন্তে শুয়ে আছে ...

তোর চলে যাওয়ার পর একা সেই চার দেয়ালের মস্ত এজলাস।
সেই নুন হলুদের বেহাগ যাপন;
নিজের চোখ বেঁধে নিজের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা।

স্মৃতিগুলোকে নিয়ে শহরের চারদিকে ছুটি,
ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে খুব গোপনে তাদের শুইয়ে আসি জংধরা বেঞ্চে।

শব্দহীনতার কিছু কথার টুকরো তুলে রাখি;
যদি কখনো ফিরে আসিস কিছু দাবী নিয়ে।


প্রশ্রয় দাও আমায়
এস এম নূরনবী সোহাগ

প্রশ্রয় দাও আমায়; ধনুকের মত নিশানা চাই তোমার বুকে।
তোমার বুকে বিদ্ধ হবো ঋদ্ধ করা সুখে
প্রশ্রয় দাও! আরো প্রশ্রয় দাও আমায়
ঝর্ণার স্নানঘরে খুনসুটি চাই; দ্বৈত সত্তায়
অতর্কিত চুম্বনে লুফে নেবো হিতাহিত বোধ
অনাবৃত চুলে নামবে হিন্দোল।
স্নায়ুবিক বিকার ভেঙ্গে এলিয়ে পরবে প্রেমানুভুতির ¯্রােত!
প্রশ্রয় দাও শিশুর মত আদর খুঁজবো তোমার গভীরে
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরবো তোমার অস্তিত্ব অনুভব করে!


ছুঁয়ে আমায় দাও
লাভলী ইসলাম

কখনো কি মগ্ন হয়ে রাতের শেষ প্রহরে আকাশ তারাদের মেলাতে সেই তারাটি খুঁজো ?
যার আড়ালে ছদ্মবেশে আমি থাকি লুকিয়ে অগোচরে তোমাকে দেখবো বলে
ব্যালকনির প্রণয়ী গ্রিলের ফাঁকে।
ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের গানে গানে রাত জাগা পাখিদের আলিঙ্গনে তুমি দাঁড়িয়ে কি থাকো  ?
আমার প্রতীক্ষায় রাত জেগে কি ভাবো ?
আমার শূন্যতায় বুকের পাঁজরে কি কোন চিনচিনে
ব্যথায় কখনো মুষঢ়ে পড়ো ?
আমি দিন রাত্রি পূর্ণিমায় অমাবস্যায় মেঘলা আকাশেও চেয়ে বসে থাকি
আর তোমাকেই কাছে ডাকি;
তুমি দেখতে কি পাও হৃদয়ের সলতে মন প্রদীপে বুকের গোপন ক্যবিনে আমাকে ছুঁয়ে কি দাও
বলনা গো কখনো কি আমায় খুঁজে পাও ?


ভুলতে কি পারি ?
শারমিন আক্তার

রাতটাও জেগে আছে গল্প শুনবে বলে,
আর আমাদের গল্প বলার রাত
সারসেরা পাখে পোড়ে বাতাসী কুয়াশা
শীতরাত্রির হিমেল তাপাবে সেও।
          বুকখোলা বাতাসে-
       মন পেতে বসে আছ তুমি
এলোকেশে তোমার হাসি খেলে যায়
       ঠিক বুঝতে পাই।
ছাদটাতে জমে আছে তুমি, তুমি জোৎস্না
থাক, জমে থাক নির্বিকার
নিরবধি, শেষ অবধি,
তোমাকে ভুলতে কি পারি?


গল্প- যদি

গল্প- যদি


যদি
মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ

বটতলার বকুল চাচার চায়ের দোকানটা আবার জমে উঠেছে। বিকেল থেকেই বেচাবিক্রির ধুম। উত্তর পাড়া থেকে সুমন রাজন মনির হেদু মিয়া সবাই এসেছে। দক্ষিণ পাড়ার কালু মিয়া দুপুর থেকেই বসে আছে বকুল চাচার চায়ের দোকানে। মাঝ পাড়ার শরীফ শেখর হই হুল্লোড় করে বটতলা জমিয়ে তুলেছে। সবার মধ্যমণিতে বসে আছেন হাস্যোজ্জ্বল সবার প্রিয় সকলেরই শ্রদ্ধার পাত্র আবার সকলেরই বন্ধু চারু দাদা।
বয়সের ভারে ন্যুজ হলেও চারু দাদার মনটা তরুণ। ১০০ বছর বয়সে একজন বৃদ্ধ লোকের শরীরের বয়সের যে ছাপ পড়ে থাকে চারু দাদার বেলায় তার ব্যত্বয় ঘটেনি। তবে তিনি সবার মাঝে আশার সঞ্চারের প্রতীক হিসেবে থাকেন।
প্রযু্িক্তর ছোঁয়া থাকলেও সবুজে ঘেরা শান্ত সুনিবিড় গ্রামে বকুল চাচার চায়ের দোকানটা এই এলাকার বিভিন্ন যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। সবাই এখানে এসে চারু দাদার খোঁজ খবর নেন। তিনি অসুস্থ্য। তাই নিত্যদিনকার বিকেলের আড্ডায় এখন আর চারু দাদা আসেন না। এক মাস জ্বরে ভোগেন চারু দাদা। এই এক মাস বকুল চাচার চায়ের দোকানটা তেমন জমেনি।
মধুপুর গ্রামটি আকারে বড় নয়। তাই গ্রামের ছোট বড় সবাই সবাইকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায়। আবহমান কাল থেকে এখানকার সামাজিক মুল্যবোধ সম্প্রীতির গন্ডির ভেতর দিয়ে চলমান। আজ প্রায় ৩০ বছর গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানের  দায়িত্ব পালন করছেন চারু দাদা। দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থাকায় গ্রামের অনেক সমস্যায় জট লেগেছে। আবার নতুন ভাবে কেউ চারু দাদার ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে একটি সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে আরও তিনটি সমস্যা তৈরি করেছেন। এই এক মাসে চারু দাদার অভাব অনুভব করেছে ছোট-বড় ধনী-গরীব অনেকেই। শুক্রবার জুমার নামাজের পর গ্রামের সবাই মিলে মসজিদে দাদার জন্য দোয়া করে। ইমাম সাহেব দীর্ঘ মুনাজাত করেন। পরপারে গত হওয়া ময়মুরুব্বিদের জন্য। এখানেও বিপত্তি। ইমাম দুরুদ কম পড়েছেন। দোয়া দীর্ঘ করেছেন। মিলাদে কিয়াম করেন নি। নানান সমালোচনা। অথচ যিনি সকালে ফজরের নামাজ পড়েন নি তিনিই সবার আগে ইমামের দোষ ধরেন।
রাশেদ মিঞা বিড় বিড় করতে করতে মসজিদ থেকে বের হয়ে যান। সমাজটা গেছে রসাতলে। তিন হাজার টাকা ইমামের বেতন। চুলা প্রতি একশত টাকা মাসে। তাও আবার রতন মোড়লের ছয় মাস বাকি। এখন মাতব্বরও সে; আবার ইমামের বেতনও বাকি!
বটতলায় ছায়া পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে দীর্ঘ হচ্ছে। গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে শেখর কথা শুরু করে।
হেদু মিয়া শেখরকে থামিয়ে দিয়ে রাজনকে কথা বলার সুযোগ দেয়।
হেদু মিয়া বলে, এই রাজন পনের দিন আগে তোর ব্যাপারে যে অবিচার করা হলো, অন্যায় ভাবে রায় দিল তার বেবকটা চারু দাদারে খুইল্যা ক। রতন মাতব্বর নতুন মাতব্বরি কইরা সমাজের কত ঝামেলা বাড়াইছে তার সবটা কইয়া দে।
মনির বলে- চারু দাদা থাকতেই সমাজের এহেন অবস্থা। পরে কি অইব আল্লায়ই জানে।
কালু মিয়ার এক কথা, যুগ যুগ ধরে চলে আসা গ্রামের ন্যায় বিচার আর সম্প্রীতি কোন অবস্থাতেই দুই একজন অমানুষের হাতে তুলে দেয়া যায় না।
দাদা চুপ করে আছেন। আস্তে আস্তে চা খাচ্ছেন। মনে মনে বর্তমান থেকে কয়েক যুগ বা শতাব্দীর পরের ছবি আঁকছেন। কালু মিয়ার টিপ্পনিতে সম্বিত ফিরে পায় চারু দাদা। কালু মিয়া মাঝে মাঝেই দাদীকে নিয়ে টিপ্পনি কাটে। দাদা তখন মুচকি হাসেন। দাদা মুচকি হাসলে কালু মিয়ার টিপ্পনি আরও বেড়ে যায়। দাদা তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না। ফুলবানুর ফুলের অকৃত্রিম ভালোবাসায় চারু দাদা এখনো চিরসবুজ।
কালু ভাই তোমরা আমার চেয়ে তোমার দাদীর জন্য দোয়া করো বেশি। সে ভালো থাকলেই তো আমি তোমাদের মাঝে হাসি খুশি থাকি ।

চারু দাদার বৃদ্ধ ভালোবাসায় ঘরপালানো জোয়ানরাও চুপসে যায়।
কথায় ছেদ পড়ে চারু দাদার। গলাটা কেশে এদিক ওদিক তাকিয়ে রাজনকে ডাক দেয়।
রাজন মান্যতা বজায় রেখে দাদার সামনে এসে বসে। দাদা রাজনকে তার উপর অবিচার হওয়ার ঘটনা বলতে বলেন।
রাজন বলতে শুরু করে-
আমার বাবা চাচা মিলে তিন ভাই। আমার বাবা সবার বড়। বাবা ইহধামের মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে গেছেন আমার কথা বলা শেখা আগেই। পিতৃ¯েœহ বঞ্চিত এই আমি বড় হয়েছি মায়ের আদর, এই বনবাদাড় আর এই সহযাত্রিদের মায়া মমতায়। আমি একটু কম বুঝি। তাই তেমন কিছু করতে পারি না। আমার মেঝে চাচা আমাদের বাড়ির মতব্বরি করে থাকেন সব সময়ই। আমরাও সব সময় চাচাকে মান্য করেই আসছি। আমি সখ করে একটি লাল রঙ্গের গরু পালন করি। আমি গত ষোল সতের দিন আগে চাচার ভূট্টা ক্ষেতের পাশে আমার গরুটা ঘাষ খাওয়ার জন্য বেঁধে রাখি। চাচার ভূট্টা ক্ষেত থেকে আমার গরু প্রায় দুই হাত দূরে অবস্থান করছিল। এমতাবস্থায় চাচা উত্তর পাড়ার সেন্টুকে সাথে নিয়ে ভূট্টা খেতে পারে এমন আশংকা করে গরুটা নিয়ে যায়।


কথার ফাঁকে ফাঁকে দাদা চায়ে চুমুক দেন। আবার হুকায় টান দেন। মাঝ খানে থামিয়ে রাজনকে জিজ্ঞেস করেন- তো তোর গরু কি ছমিরের ভূুট্টা খেয়েছিল?
রাজন- না দাদা। গরু তো খুঁটি দিয়ে বেঁধে রাখা ছিল।
ঐদিন রাতেই আমার বিরুদ্ধে সালিশ বসায়। সালিশে আমার কোন জবানবন্দি দেয়ার সুযোগই রাখা হয়নি। রতন মোড়লের পক্ষে বিচারকের আসনে বসে উত্তর পাড়ার সেন্টু।
সালিশে চাচা চেয়ারে বসে হুকায় টান দেয়। অতঃপর ধুয়া ছাড়ে। হুকার ধুয়ায় চারদিক যেন অন্ধকার হয়ে যায়। সেই অন্ধকারের মতই সেন্টু একটি আজগুবি রায় ঘোষণা দেয়। যদি রাজনের গরু ছমির চাচার ভূট্টা খেয়ে ফেলতো তখন চক্রবৃদ্ধি হারে ছমির চাচার অনেক ক্ষতি হতো। যার মূল্য এমন তিনটি গরুর সমান হবে। তাই আপন ভাতিজা হিসেবে রাজনকে দু’টি গরু মাফ করে দেয়া হলো। ভূট্টা খেতের পাশে গরু বেঁধে রাখায় ফসল হানির যে আশংকা তৈরি হয়েছে তার জরিমানা স্বরূপ এখন থেকে রাজনের গরুর মালিকানা ছমির চাচার।
রাজন প্রতিবাদী হয়। সেন্টুর মুখের উপর কথা বলতে চায়। কিন্তু চাচা তাকে থামিয়ে দেয়।
রাজন, সেন্টু বয়সে কাঁচা হলেও কথাগুলো অংকের হিসেবে পাকা। সুতরাং কথা না বাড়িয়ে গরুটা আমার গোয়ালে এনে রেখে যা। নইলে ছুতা নাতা বের করে বাড়ি ছাড়া করবো হতচ্ছাড়া কোথাকার। বিচারকের মুখের উপর কথা। কুড়হাসির ফাঁক গলে কথাগুলো বের হয় ছমির চাচার মুখ থেকে।
বকুল চাচা এক কাপ আদা চা এগিয়ে দেয় দাদার হাতে। একটু খেয়ে নেন। গলাটা পরিষ্কার হবে। শরীরটাতে তেজ পাইবেন।
চারু দাদা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চারদিকটা দেখে নেন। কেমন যেন একটা নিরবতা কাজ করছে। রাজনের কথাগুলো যেন আমেরিকার আফগানিস্তান আক্রমন অথবা রাসায়নিক অস্ত্রের মিথ্যা অজুহাতে ইরাক ধ্বংস কিংবা রাখাইনে বৌদ্ধদের মানবতা ধ্বংসের পূর্ব রিহার্সেলের পান্ডুলিপি। নিজেদের শহর, গাঁও গেরামে এমন নীতি বিরুদ্ধ কাজের দহরম মহরম তো হরহামেশাই হচ্ছে। দিন দিন সুবিধা ভোগীদের জয় যাত্রা বেড়েই চলেছে।
শেখর সুবিধাভোগীদের জয়যাত্রা মানতে রাজি নয়। সমাজে সেন্টু তো মাত্র একজন, আর কয়জন চেলা।
ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি। আমরা যুবকরা এক হলে আর চারু দাদার মতো বয়ষ্করা আমাদের পরামর্শ দিলে সেন্টুরা লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হবে।


শরীফ কথাকে এগিয়ে দেয়। শেখর তুমিতো বোঝই সেন্টুদের পক্ষেই থাকে থানা পুলিশ। তুমি কিভাবে সৎ কাজ করবে। তোমাকে ফাঁসানোর ফন্দির শেষ নেই।
মনির থেমে যাবার পাত্র নয়। লেখাপড়া কম জানে, তবে হতাশ নয়। ভালো কাজে সবসময় এগিয়ে থাকে। এতে ঝাক্কি ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে অনেক। কিন্তু থেমে যায় নি। দাদার মুখের দিকে চেয়ে কি যেন বলতে চাইলো। দাদা মনিরকে থামিয়ে দিয়ে বকুল চাচার চায়ের বেচাবিক্রি দেখে নিল। এই বকুল সবাইকে চা দে। আজ কি শুধু অভিযোগ শুনবো। কিছু আনন্দও করবো। মুর্শিদি গাইবো। ভাবের গান ধরবে হেদু মিয়া।
হেদু তুমিই আগে শুরু কর।
হেদু মিয়া গান ধরে-
পরের জায়গা পরের জমি
ঘর বানাইয়া আমি রই
আমি তো এই ঘরের মালিক নই।
গানের ভেতর দিয়ে একটি ভাবের আবহ তৈরি হয় বটতলায়।



জাগতিক ক্ষোভ, অপ্রাপ্তি, সামাজিক অনাচার কিছু সময়ের জন্য ভুলে যায় বটতলার উপস্থিতিরা।
সন্ধা ঘনিয়ে আসে। দাদাকে রাত বাড়ার আগেই ঘরে ফিরতে হবে। নতুন ভোরে যুবকদের নতুন ভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন চারু দাদা। আগামীকাল প্রথম কাজ হবে রাজনকে দিয়ে। সবাই সকালে রাজনের বাড়িতে যাব। সেন্টু রতন মোড়ল আর ছমিরের হিসেব দিয়েই শুরু হবে মধুপুর গ্রামের শুদ্ধি অভিযান।

গল্প- গাই

গল্প-  গাই


 গাই
 লুৎফুন নাহার লোপা

অগ্রাহায়ন মাসের শেষ।  ভোর হলেই এখন হালকা কুয়াশায় পথ ঢেকে যায়। শহরের চেয়ে গ্রামে শীতের রাজত্ব বেশি থাকে। নদীর পার ধরে হিমেল বাতাস কদভানুর ঘর পর্যন্ত চলে আসে । দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো,রোদের আচ কমলো।  সাঁই সাঁই করে বাতাস কদভানুর ঘরে ঢুকে গেল। কদভানু উঠানে বসে একদৃষ্টে গোয়াল ঘরের দিকে চেয়ে রইল।  ভাবতে লাগলো - গাইডা বিয়াইলে সংসারডা যদি ভালো মতন চলত...।এমন সময় পাশের বাড়ির রহমতের মা এসে বলল-কিরে কদভানু রান্দন চরাবি না?
-  কি রানমু, ঘরে কিছুই নাই
- রাবেয়ার বাপ কনে?
-হের কতা আর কইয়ো না, কামলা দিবার গেছে। হের বাড়ির চিন্তা নাই। কাম করবার জাইয়া খালি গপ্প করে,আইতেসুম গঞ্জে থিকা চা,বিড়ি খায়। বাইত্তে যে আমরা না খাইয়া মরি হেই চিন্তা ওই বেটা জীবনেও করে নাই।
-কি আর করবি,  সারা জীবন তো কম কষ্ট করলি না, এহন নু আমগোর বাড়িত,কয়ডা আলু দিয়া দেই, আইজক্যা বত্তা দিয়া কোনরহম চালা।

কদভানুর চোখে পানি এল। পোলায় শীতের কাপড় চাইছে দিতে পারে নাই, মাইয়ার স্কুল এর ফিস বাকি, এদিকে গায়ের খেতাডাও ছিঁড়া গেছে। চারজনের খাওয়া পরা আর কামাই করে একজন। দু চোখে আন্ধার দেখে কনভানু। চোখের জল মুছে সে আলু ধার করতে চলে যায়।

জুলহাস কামলা দিয়া বাড়ি ফেরার পথে ২০ টাকায় ২টা ফুলকপি কেনে,২০ টাকার আলু আর ১৫০ টাকা দিয়া ১ টা পাংগাস কেনে। ৪০০ টাকা কামাই কইরা পথেই অর্ধেক শেষ করে। বাড়ি ফিরেই সে রাবেয়া কে ডাকে- রাবু..  ওই রাবু...
- আব্বা কি কও
- ধর বাজার রাখ, তর মায়ে কো?
-ওই বাড়িত গেল
- ওই বাড়িত গেল মানে,হারা দিনই পাড়া বেড়ান লাগবো নাকি?
- বাড়িত কিছু নাই দেইখা মা ওই বাড়িত আলু চাইবার গেছে।
-কিয়ের আলু চাইবার গেছে,দেগগা কোন বাড়িত গিয়া ফাও প্যাঁচাল পারতাছে।
কদভানু বাড়ি এসে দেখল জুলহাস চৌকিতে পা মেলে বসে আছে। তাকে দেখেই জুলহাস বলে উঠল - কিরে পাড়া বেড়ান শ্যাষ অইলো তোর?
-কি কন,পাড়া বেড়াবার কেরা গেছে? ঘরে কিছু নাই দেইখা খাওনের ব্যাবস্থা করবার গেছিলাম।
- তর কি মুরাদ, ওইডা আমার জানা আছে।  আমি কামাই না করলে যে গলা দিয়া ভাত উঠবো না হেইডা বুঝা শ্যাষ। হারাদিন কামকাইজ ছাড়া থাকসতো তাই পাড়া বেড়ানি আহে,
- কতা হুইনা গাও জইলা যায়, ২ জন পুলাপান, আবার গাইডা রে দেহন লাগে। হারাদিন মরবার সময় নাই...
- বেশি চাপা করিস না কইলাম, আমার চান্দি গরম অইতাছে, তাড়াতাড়ি রানবার যা কদভানু পাকঘরে ঢুকলো। জুলহাস চিল্লাইয়া কইলো পাঙাশ টা আলু দিয়া ঝোল করিস কিন্ত।

২.
রাবেয়া স্কুলে এসেছে। স্যার আজো তাকে ফিসের জন্য দার করিয়েছে। রাবেয়া বলল- কাইল দিমু স্যার। স্যার বলল - কাইল দিমু, কাইল দিমু কইরা তো জনম পার করলি, তোর কাইল কবে হবে বল দেখি?।  ছাত্রছাত্রীরা রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে ফেললো। রাবেয়া লজ্জা পেয়ে চুপ করে রইল। টিফিনের সময় সব ছেলেমেয়েরা সদাই কিনে খায়। রাবুর খেতে ইচ্ছা করে কিন্তু মায়ের কাছে টাকা চাওয়ার সাহস হয় না। কেও সদাই কিনতে ডাকলে কোন দিন মাথা ব্যাথা, কোন দিন পেটে ব্যাথা বলে কেটে পরে। মনে মনে ভাবে- যেদিন আমাগো মেলা টাকা হবো সেদিন ইচ্ছামত সদাই খাইতে পারুম। চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে দিয়া যাওয়ার সময় পাকা দালান দেখে ভাবে - ইশ যদি আমাগো এমন একটা বাড়ি থাকতো।
বাড়ি ফিরে রাবেয়া মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে - মা,  ও মা, আমার ইস্কুলের ফিস দেওন লাগবো। কাইল না দিলে স্যার কইছে ফাইনাল পরীক্ষা দিবার দিবো না। কদভানু মেয়েকে বলে- দিমুনি মা। বাবেয়া বলে- আমারে সদাই খাইবার টাকাও দিও কইলাম।কদভানু গোয়াল ঘরের দিকে চেয়ে বলে- রাবু আমাগো গাইডা বিয়াইলে দুধ বেইচা তোর সব আবদার মিটামু। রাবু কল্পনায় চলে যায় -" নতুন জামা পড়ে রাবু স্কুল যাচ্ছে, স্যার তাকে আদর করছে। বাড়ি ফিরে দেখে মা তার জন্য একবাটি পায়েস বেড়ে রেখেছে "। মা রাবুর মাথায় হাত দিলে তার ভাবনা কাটে। কদভানু মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেয়,বলে- তোর ভাই ম্যাট্রিক পাশ করলে গার্মেন্টসএ কাম নিব।  আমাগো আর অভাব থাকবো না। কদভানুর ছেলে নুরনবি এসে বলে - মা আব্বারে কইয়া আমারে একটা শীতের জ্যাকেট কিনা দেও।কদভানু টাংক থিকা শশুরের রেখে যাওয়া পুরান চাদর টা বের করে দেয়।  ছেলে সেটা গায়ে জড়ায় না।  বলে- দোস্তোরা তারে নিয়া তামাশা করে, এই পুরান চাদর আর কতদিন গায়ে দিব। কদভানুর বুক ফেটে যায়।  ছেলেকে বলে - গাই বিয়াইলে দুধ বেচে সব আবদার মিটাবে। ছেলে তার রাগ করে বাহির হইয়া যায়।
৩.
ভোর সকালে কদভানু বেড়িয়ে পরে বাশি ভাতের খোঁজে।  বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাশি পচা ভাত এনে গরুটারে  যতœ করে খাওয়ায়। দুপুরে ক্ষেতে যায় ঘাস কাটতে। গরুকে খাওয়ায় আর শরীর হাতায়।গরু লেজ দিয়ে মশা তাড়ায়, কদভানু ভাবে গাইডার জন্য রাবুর বাপকে কয়েল আনতে কইবে।
জুলহাস সন্ধায় বাড়ি ফেরে। মনে মনে ভাবে কদভানুর কথা-বউডারে হুদাউ বকা দিছিলাম, বেচারি কোন দিন কোন আবদার করে নাই। বিয়ার পর থিকা ঠিকমতন ভাত কাপড় দিবার পারি নাই। এ বাড়ি ও বাড়ি কাম কইরা দুই পয়সা জমাইয়া কাপর কিনছে, তাও কোন দিন কিছু চায় নাই। যা কামাই করছি তাতে খাওয়াই চলে নাই। কদভানুর জন্য মায়া হয়  জুলহাসের, বুকের ভেতর ভালোবাসা জাগে। ভাবতে ভাবতে বাড়ির উঠানে চলে আসে সে। দরজায় টোকা দিলে রাবু দরজা খুলে দেয়। ঘরে ঢুকে দেখে কদভানু নতুন পাটিতে বসে ভাত বারতেছে। জুলহাস হাত ধুয়ে খেতে বসে।  খেতে খেতে বলে- নতুন পাটি পাইলি কই?
-কিনছি।
- কত নিছে?
- ১৮০ ট্যাহা
-কি কইলি? ট্যাহা কি গাছে ধরে?
- আমার জমাইনা কিছু ট্যাহা আছিল, হেইডা দিয়া...
-বিছানার নিচে যে ১০০ ট্যাহা রাখছিলাম, হেইডা কো?
কদভানু চুপ করে থাকে। জুলহাসের রাগ আরো বেড়ে যায়। বলে- মাগি আমার ট্যাহা তুই এবা কইরা নষ্ট করস?
-আমি কি করছি যে মুখ খারাপ করেন? সংসারের একটা জিনিস কিনছি। নিজে তো জিন্দিগিতে কিনেই না আবার আমি কিনলেও দুষ
- তুই কি বুঝবি টেহা তো আমার যায়।
-পাটি না কিনলে এহন কিয়ে বইয়া ভাত খাইতেন?
-মাটিতে বইয়া খাইতাম,তোগো মত জমিদার না আমি
জুলহাসের রাগ বেড়ে যায়।  উঠে দুই কিল বসায় কদভানুর পিঠে। কদভানু কানতে কানতে ঘরের বাহির হয়। নদীর ধারে যায় ঝাপ দিয়া মরতে । ভাবে এ জীবন রেখে কি লাভ।  কিন্তু মরন এত সহজ না বলে হয়ত সে মরতে পারে না ।  সারারাত নদীর ধারে দারিয়ে কাটায়।
৪.
নুরনবি স্কুলে যায় বন্ধুদের সাথে। চেহারা ভালো থাকায় তার চোখে মুখে দারিদ্রতা ধরা যায় না।  কখনো কোন বন্ধুকে সে নিজ বাড়িতে যেতে বলে না। ভাবে ম্যাট্রিক পাশ করে ঢাকা চাকরি করতে চলে যাবে। নিজের খরচ নিজে চালাবে। তাছাড়া ভারায় সি এন জি তো আছেই। সংসারের এ টানাপোড়েন অল্প বয়সেই তার মানসিকতা পাল্টে দিয়েছে। স্কুলের স্যার রা বলে তোমার বাবা কে একটা প্রাইভেট মাষ্টার রাখতে বলো। নুরনবি বাড়ি গিয়া বলে না, কারন উত্তর তার জানা। ক্লাসের রুবি তাকে মাঝে মাঝে কলম ধার দেয়,  কাছে গিয়ে নুরনবি কে বলে - তোমাকে আমার ভালো লাগে, তোমার চেহারা অনেক সুন্দর।  নুরনবি জবাব দেয় না।  জানালা দিয়ে বাহিরে তালগাছটার দিকে তাকিয়ে থাকে। রুবি তাকে মুখ ভেংচি দিয়ে বলে- এত অহংকার জীবনে দেখি নাই। নুরনবি তাও জবাব দেয় না। রুবি স্কুল ছুটির পর তার পেছন পেছন অনেক দূর আসে, তাও সে রুবি কে বাড়ি আসতে বলে না। মনে মনে ভাবে এইতো আর কটা দিন, তারপর সকল বন্ধুকে দাওয়াত করে খাওয়ালেও তার অসুবিধা হবে না।





৫.
জুলহাস আজ কাজ পায় নাই। চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে সে বাড়ির দারোয়ান তাকে ডেকে বলে - বাইর বাড়ির বেড়া টা ভাইংগা গেছে,ঠিক করলে ২০০ টাকা পাবি,করবি নি? ।  জুলহাস বলে - একটু বাড়াইয়া দিও।দারোয়ান তাচ্ছিল্য করে বলে-তাইলে রাস্তা মাপো।  জুলহাস বাধ্য হয়ে কাজে রাজি হয়। বেড়া দিতে দিতে মাগরিব পার হয়। চেয়ারম্যান বাড়ির ভেতর থেকে মাংস পোলাওয়ের গন্ধ আসে । জুলহাসের খেতে সাধ হয়। কিন্তু দারোয়ান তাকে ২০০ টাকা দিয়েই বিদায় করে দেয়। রাস্তা দিয়ে আসার সময় জুলহাস বিড়ি কিনে ধরায়। হাটতে হাটতে মনে পড়ে গত রাতের কথা।  কদভানু কে অজথাই মেরেছিল সে। সে বউয়ের পছন্দের বাদাম টানা আর গাইয়ের জন্য কয়েল কিনে বাড়ি ফেরে।
৬.
কদভানু স্বামীর জন্য চিন্তায় থাকে। রাত হয়ে গেছে তবুও তার স্বামী ঘরে ফেরে নাই।  নুরনবি ও রাবু বাশি ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।  জুলহাস এসে কড়া নাড়ে। কদভানু দরজা খুলে দেয়। জুলহাস বও এর হাতে সদাই দিয়া বলে- কাইল রাতে বকছিলাম কিছু মনে নিস না,। কদভানু ঠোঙা হাতে নিয়া মুচকি হাসে। তারপর স্বামীকে নিয়া গোয়ালে যায় গাইডারে দেখতে।  যতœ করে কয়েল জালায়।  কিন্তু পাশেই পাটখড়ির বোঝা সরাইতে তাদের চোখে পরে না।
কনভানু আজ স্বামীর পাশে ঘুমায়। হঠাৎ গরমের তোরে কদভানুর ঘুম ভাঙে। চেয়ে দেখে ঘরের দরজায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সে চিৎকার করলে জুলহাস চেতন হয়।  পোলাপান নিয়া কোন রকম বাইর হয় তারা। জুলহাস পানির কলস ভরতে পুকুরে যায়। এসে দেখে কদভানু গোয়ালের দিকে ছুটে যাচ্ছে। জুলহাসের হাত থেকে পানির কলস ছিটকে  পরে যায়। কদভানু আগুনের গোয়ালে ঝাপাইয়া পরে।নুরনবি কোন রকমে তার মা কে টেনে বের করে আনে। পাড়ার লোকেরা এসে ঘর বাচাইতে চেষ্টা করে। কিন্তু হায় - সব শেষ হয়ে যায়। গাভিন গাইয়ের পোড়া শরীর দূর্বল কে আরো দূর্বল করে তোলে।
৭.
কদভানু চেয়ে দেখে সে হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে আছে।মনে পরে গাইডারে বাচাইতে গিয়া আগুনে ঝাপ দেওয়ার কথা।  ভাবে-আহারে গাইডা না জানি কত কষ্ট পাইয়া মরছে,বোবা জানোয়ার কিছু কইবার পারে নাই। খোদা যদি তার জবান দিত তাইলে শুনতে পারতাম, না জানি আমারে কত বার নাম ধইরা ডাকছে। আর কিছু মনে করতে পারে না সে। জানালা দিয়া বাইরে তাকায়। নীল আকাশে সাদা মেঘ দেখে তার বুক কাপে। জানালার ভেতর দিয়ে হালকা বাতাস এসে তার মুখে পরশ বুলায়। তার চোখের কোনা দিয়া টলটল করে জল ঝরে পড়ে। মনে মনে খোদাকে  বলে- "কেন তুমি অসহায়ের সম্বল এমন কইরা কাইরা নিলা।এ তোমার কেমন বিচার"।খানিক পরেই আবার ক্ষমা চায় খোদার কাছে।
জুলহাস গঞ্জে গঞ্জে জায় সাহায্য তুলতে। রাবু আর নুরনবি যায় বাড়ি বাড়ি। সন্ধায় হাসপাতালে ফেরে তারা। রাবু মায়ের কাছে গিয়ে বলে- বাড়ি চল মা। কদভানুর কলিজা ছিরে যায়। সেই বাড়ি সেই সংসার আর নাই। জুলহাস পাশে নিশ্চুপ বসে রয়। রাত বাড়ে, একসময় চোখে ঘুম নেমে আসে সবার।
ভোরের আলো কদভানুর চোখে লাগে। স্বামীর হাত ধরে স্বামীকে জাগায় সে। বলে- আমি ভালা অইছি, চলো  ভিটায় ফিরি। জুলহাস কথা কয় না, চুপচাপ হাসপাতালের বিল মিটাইতে চইলা যায়। ফিরে এসে বলে- তরে আমি কই নিমুরে বউ?। কদভানু মুচকি হাসে আর বলে- জীবন মানেই ভাঙনের খেলা, চলেন নতুন কইরা ঘর বানমু।



গল্প- ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট

গল্প- ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট


ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট
সাফি উল্লাহ্

প্রায় হাজারখানেক মানুষের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ঝুলে আছে। ঝুলিয়ে রেখেছি- ব্যাপারটা এমন না। কর্তৃপক্ষের বেধে দেয়া পাঁচ হাজার এর কৌটা পেরিয়ে যাওয়াই ঝুলে আছে। নামগুলো একএক করে পড়তে লাগলাম। অমি রহমান নামটার কাছে গিয়ে চোখ আটকে গেল।
মেয়েটাকে অনেকবার রিকুয়েস্ট পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন তখন ফেসবুকে তার অ্যাকাউন্ট ছিল না। গ্রামে সে সময় অনার্সে ওঠার আগে মেয়েদের হাতে ফোন দেয়া হতো না। কিন্তু যখন জানতে পারি সে অ্যাকাউন্ট খুলেছে, তখন রিকুয়েস্ট পাঠাতে গিয়ে আর পারিনি। তার পাঁচ হাজারের কৌটা পূরণ হয়ে গেছে। ছেলেদেও চেয়ে মেয়েদের বন্ধুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। নির্দিষ্ট কৌটা পার হয়ে গেলেও ফলোয়ারের সংখ্যা আকাশচুম্বি হতে থাকে। বাড়তে থাকে লাইক কমেন্টের সংখ্যা।
তবে তার ফ্রেন্ডলিস্টে যুক্ত হওয়ার জন্য বারবার ইচ্ছে হতো। মাঝরাতে জেগে উঠে ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক করতাম। এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। বারবার মনে হতো- এই বুঝি এখনই আমাকে রিকুয়েস্ট পাঠাবে। সে ইচ্ছে করলেই তার নিষ্ক্রিয় বন্ধুদেও দু-একজনকে আনফ্রেন্ড করে অনায়াসে আমাকে অ্যাড করে নিতে পারে। কিন্তু না। তেমনটি কখনো হয়ে ওঠে নি।
এর মধ্যে অনলাইন নিউজ পোর্টালে চাকরি হলো। পার্ট-টাইম। তেইশ দিন কাজ করার পরে ছেড়ের দিলাম। চাকরিটা করার সতেরতম দিনে কাটাখালিতে বাস দূর্ঘটনায় তিন কলেজ ছাত্রী নিহত হওয়ার নিউজ হাতে এলো। ট্রাকের ধাক্কায় বাস খাদে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে একজন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসাপাতালে আরো দুজন মারা যায়। হাসপাতালে মারা যাওয়ার দুজনের একজন অমি। আমি থমকে গেলাম। কাপাশিয়া থেকে কাটাখালি অল্প দূরত্বের। তবে কি সে বাসে ওঠার পরপরই এই দূর্ঘটনা! নাহ। এসব কিছু ভাবতে ইচ্ছা করল না। আব্বাকে ফোন দিলাম। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া উচিত। কিন্তু কল দিতেই সাবলীল কণ্ঠে এক মেয়ে জানালো, আপনার ফোনে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স নেই। আর কল করা হলো না। বিকেলে অফিস শেষ করে ফোন দেব- এইটা ইচ্ছে। কিন্তু দুপুরের পরপরেই চার্জ না থাকার কারণে ফোন বন্ধ হয়ে গেল। মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ এসে জাদুঘর কোয়ার্টারে একটা ছাত্রীকে পড়িয়ে রুমে ফিরলাম। চার্জে লাগিয়েই ফোন অন করলাম। আব্বাকে কল দিতে চেষ্টা করছি কিন্তু ফোন ব্যস্ত দেখাচ্ছে। একটু পর আব্বার নম্বর থেকেই ফোন এলো। আব্বা সেই বিকেল থেকে আমাকে কল দিতে চেষ্টা করছে। জানালো, এখন অমিদের বাড়িতে। অমি একটি বাস অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে।
আব্বা আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল। মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বাকিটা আমি বললাম।
সেই অমি প্রথম মেয়ে যাকে আমি চিনেছিলাম। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, তখন তার সাথে প্রথম দেখা। আমাদের বাড়িতে তখন দু-টি ঘর। মেহমান এলে আমার ঘরে বসত। অমি আমার ঘরে বসেছিল বলে খানিকটা লজ্জা, খানিকটা সঙ্কচে সারাদিন বাড়িতে এসেছিলাম না। একটু বেশিই লাজকু ছিলাম বোধ হয়। আমি এইচএসসি পাশ করার পর ওদের বাড়িতে প্রথমবারের মত গিয়েছিলাম। হ্যাঁ, এবং সেবারই জীবনের প্রথম কোন মেয়ের সাথে ছাদে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করেছিলাম। কী গল্প করেছিলাম, মনে পড়ে না। তবে, পাশের পোল্ট্রি ফার্মের ছাদ থেকে ছেলেরা যে তাকে উত্যক্ত করার বেশ চেষ্টা করত, এ ব্যাপারে কথা হয়েছিল। ছাদের এক দিকে পা ঝুলিয়ে বসে, কিংবা রেলিংয়ে হেলান দিয়ে, সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, তার সাথে গল্প করেছিলাম। আমার বার বার মনে হচ্ছিল, এমন জায়গাতে দাঁড়িয়ে গল্প করা উচিত, যেখান থেকে বাসার সবাই দেখতে পাবে। সে আমার সঙ্কোচের কথা বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু সঙ্কচ কাটিয়ে ওঠার জন্য যখন তার রুমে বসে গল্প শুরু করলাম সঙ্কোচটা আরো বেড়েই চলল। আমি এই সঙ্কোচ কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় নিয়েছিলাম বলেই দীর্ঘদিন তাদের বাড়িতে যেতে পারিনি। কিংবা যাইনি। দতবে যেতে বারবার ইচ্ছে হতো। ইচ্ছে হতো, কিছু একটা বলি। কিন্তু কী বলা যায় কিংবা কিভাবে বলা যায়, এসবের স্পষ্ট ধারণা ছিল না বলেই বলা হয়ে ওঠেনি।
শেষবার একটি অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। অতিথি হিসেবে আমি গিয়েছিলাম। ঢাকা থেকে। আর কৃতী ছাত্রী হিসেবে অমি বক্তব্য দিয়েছিল। কিন্তু মুখোমুখি কথা হয়নি। ভালো আছি কি না তা একবার জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি ঘাড় নেড়ে উত্তর দিয়ে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম। সে ভালো আছি কি না প্রশ্নের সাথে আরো কিছু জানতে চেয়েছিল কি না, সেটা জানতে খুব ইচ্ছে করছিল। কিন্তু কখনো কিছু নিজ থেকে জানতে চাওয়া হয়নি বলে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। আবার অজুহাতের কথা মনে হলে নিজের প্রতি বিরূপ ধারণা আসে। অন্তত কেমন আছি, সেটা বলতে পারতাম। কিংবা সে কেমন আছে, সেটাও জেনে নেয়ার সুযোগ ছিল। অথবা কথা আরো অনেক দূর, কত দূর সেটা জানিনা, কিন্তু অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারতাম। 
অমির সাথে আর কখনো কথা বলা হয়নি। সচেতনে। কিন্তু কিছু একটা বলতে চাইতাম। কখনো রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারিনি কিন্তু মনে হতো রিকোয়েস্ট বোধ হয় সে-ই পাঠাবে।
হ্যাঁ, পাঠিয়েছে। বছর দুয়েক হয়ে গেল। তবে কি সেই ব্যস্ততামুখর তেইশ দিনের চাকরি জীবনে সে এসেছিল!  আমি তার টাইমলাইন ঘুরে দেখি। একবার আমার মেসেজ রিকুয়েস্ট অপশনে গিয়ে অনেকগুলো মেসেজ দেখতে পাই। সেখানে অমি লিখেছে, কায়েস ভাই। আমি অমি। রিকুয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করেন না ক্যান! হুহ।
আমি দেখি। কিন্তু কিছু বলতে পারিনা। কেন সে সময় মেসেজ রিকুয়েস্ট চেক করিনি, নিজেকে অপরাধী মনে হয়। অপরাধটা কী, স্পষ্ট না... 
অমি মারা যাবার ছ-মাস পর ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কাকি ওকে নিয়ে কতই না স্মৃতিচারণ করলেন। আসার আগে আামাকে বললেন, আবার এসো বাবা। আমি বললাম, কাকি আসব। এবার তিনি হুঁহুঁ করে কেঁদে উঠলেন। বললেন, বাবাওে, অমি হাসপাতালে শুয়ে। চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই। নাকে অক্সিজেনের নল। জ্ঞান ফেরার সময় ডাক্তার নল খুলে দিয়েছিল। অমি চোখ তুলে তাকালো। তাকিয়ে বলল, ও মা। মাগো। দেখো, আমি ঠিকই সুস্থ হয়ে যাব।
তার তিন মিনিট পরে সে মারা গেল।

‘সুকুমার বড়ুয়া’ বাংলা ছড়ার দিকপাল

‘সুকুমার বড়ুয়া’ বাংলা ছড়ার দিকপাল

সাহিত্যবিশারদ সুহৃদ চট্টগ্রাম’র সংবর্ধনায় ড. মাহবুবুল হক
‘সুকুমার বড়ুয়া’ বাংলা ছড়ার দিকপাল
 

৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে চারটায়, চট্টগ্রাম একাডেমি মিলনায়তনে সাহিত্যবিশারদ সুহৃদ চট্টগ্রাম আয়োজিত ছড়া-জাদুকর সুকুমার বড়ৃয়ার ৮০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন, বিশিষ্ট গবেষক-প্রাবন্ধিক ড. মাহবুবুল হক। ড. আনোয়ারা আলমের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন, কবি-শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ, কবি-সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, কবি-সাংবাদিক আবু তাহের মুহাম্মদ। ড. মাহবুবুল হক তার বক্তব্যে আরো বলেন, সুকুমার বড়–য়া আমাদের গর্ব, তিনি একাই বাংলা সাহিত্যের ছড়াকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তার ছড়ায় কী নেই, আনন্দ-বেদনার সবটুকুই পাওয়া যায় সুকুমার বড়–য়ার ছড়ায়। অসাধারণ গুণি এ মানুষের ছড়া নিয়ে আমাদের কৌতূহলে শেষ নেই। আরমানউজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সুকুমার বড়–য়ার জীবনী থেকে পাঠ করেন মোস্তফা হায়দার। সুকুমার বড়–য়ার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন ইলিয়াস বাবর।

কামরুল হাসান বাদল বলেন, আমরা যে চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি, যে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন জাতির পিতা তা, সুকুমার বড়–য়া তার দীর্ঘ ছড়াজীবনে যা দেখেছেন, বিভিন্ন ইঙ্গিতে তা বলে যাচ্ছেন ছড়ায়। তার জন্যে আমাদের অবারিত শ্রদ্ধা। আবু তাহের মুহাম্মদ বক্তব্যে বলেন, তার ছড়ায় শব্দ প্রয়োগ অসাধারণ। বিশেষ করে আঞ্চলিক শব্দের ব্যতিক্রমি ব্যবহার তাকে করে তুলেছে একেবারেই আলাদা। রাশেদ রউফ বলেন, ছড়া-জাদুকর সুকুমার বড়–য়া তার ছড়ার মধ্য দিয়েই আমাদের যাপনের কথা বলে যান প্রতিনিয়ত। তার শব্দ চয়ন, চমৎকার অন্ত্যমিল এবং রসভাব তার ছড়াকে করেছে ছড়াকারদের আদর্শ। শুধুমাত্র ছড়া দিয়েই তিনি অর্জন করেছেন যত পুরষ্কার আর ভালোবাসা-শ্রদ্ধা। সুকুমার বড়–য়া তার বক্তব্যে বলেন, আমি চট্টগ্রামেরই সন্তান, চট্টগ্রামেরই সাহিত্যবিশারদ সুহৃদ যে আয়োজন করেছেন তাতে আমি আনন্দিত। সারা জীবনই আমি ছড়ায় বলতে চেয়েছি মানুষের আনন্দ-বেদনার কথা। মনের আনন্দে লিখেছি, তাতে অনেকেই অনেকভাবে আমার ছড়া নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। আসলে শিল্প হয় মনেরই খেয়ালে। আমি আশা করবো, আমাদের তরুণ প্রজন্ম ছড়াতে তুলে আনবে তাদের স্বপ্নের কথা, আশার কথা। সাহিত্যবিশারদ সুহৃদ চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে সুকুমার বড়–য়াকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন ড. মাহবুবুল হক, উত্তরীয় পরিয়ে দেন ড. আনোয়ারা আলম, নগদ অর্থ তুলে দেন রাশেদ রউফ। এছড়াও বক্তব্য রাখেন কবি-শিশুসাহিত্যিক শেখ সাইফুল্লাহ রুমী ও সাংবাদিক আবু ওবাইদা টিপু। সুকুমার বড়–য়ার জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের বিশেষ সংখ্যা প্রদান করেন, সাহিত্যসম্পাদক কবি অমিত বড়–য়া, সাপ্তাহিক স্লোগানের  বিশেষ সংখ্যা নির্বাহীসম্পাদক গল্পকার ইফতেখার মারুফ, দৈনিক ইনফো বাংলার বিশেষ সংখ্যা সিনিয়র রির্পোটার রাজু চৌধুরী। সুকুমার বড়–য়াকে নিবেদিত লেখাপাঠ, আবৃত্তি ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় অনেক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন। সুকুমার বড়–য়ার হাত দিয়েই মোড়ক উন্মোচন হয় আরমানউজ্জামানের শিশুতোষ বই ফুলপরীর উপহার। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. আনোয়ারা আলম বলেন, সাহিত্যবিশারদ সুহৃদ সত্যিকার অর্থেই একজন কিংবদন্তী নিয়ে আজকের আয়োজন করেছে। আমাদের তরুণেরা শ্রদ্ধায়-নিবেদনে সাহিত্যের উজ্জ্বল এ নক্ষত্রের সংবর্ধনা দিয়েছে, তার জন্যে তারা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। সুকুমার বড়–য়া এভাবেই নতুনদের সাথে মিশে আছেন আয়োজনে, পঠন-পাঠনে। তাকে আমাদের অশেষ শ্রদ্ধা।


বার্তাপ্রেরক
ইলিয়াস বাবর