করোনা বিষয়ক শব্দমালা

করোনা বিষয়ক শব্দমালা



‘করোনার’র দিনগুলিতে প্রেম

এতটা দূরত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াবে ‘করোনা’
আমি ভাবতেও পারিনি কভু!
অবিশ্বাস্য লাগছে যাপিত দিনগুলো-
একই পথে দাঁড়িয়ে দুজন; অথচ স্পর্শ নেই
কিছুটা দূরত্বে দুজন; বাতাসের বিপরীতে মুখ।

ঐ ঠোঁটে চুমু না এঁকে কখনো আমি ফিরিনি
বড় খরা যাচ্ছে ভালোবাসায়;
ঝাঁপটে ধরার আকাক্সক্ষা বড় পীড়া দিচ্ছে; সুযোগ নেই
‘করোনা’র দুর্বিনীত ছোবল নিঃস্ব করতে সক্ষম প্রেমের বন্ধন।

‘করোনা’র দিনগুলিতে প্রেম সত্যি আমাকে ভাবিয়ে তুলছে
পাশাপাশি বসা নেই যোজন যোজন দিন; এমন মনে হচ্ছে।
কবে কাঁটবে এই ঘোর অমানিশা?
তোমার আমার প্রেমের জন্য তো বটেই-
আমাদের প্রেমের স্বীকৃতি দিতে বাঁচুক পৃথিবীর মানুষেরা।



করোনা’র চে ওরা ভয়ঙ্কর!

করোনাভাইরাসের করালগ্রাসে বিপর্যস্ত সবাই যখন-
প্রতিরোধের নাম করে মানুষ পিটাচ্ছে ওরা তখন।
সরকারের ঐ পুলিশ-প্রশাসনই জানে না-ক ঠিকটা
মাস্ক পরলে করোনা যায়- বলেছে কোন লোকটা?
নিদের্শনায় আছে- রোগী ও ডাক্তারগণ পরবে মাস্ক
সুস্থ মানুষ পরবে কি’না ওরা কখনো করেছে আস্ক?
(ভূঁয়া মাস্কে সয়লাব দেশ, দাম বাড়িয়েছে সি-িকেট
করোনা’র চে ওরা ভয়ঙ্কর, কাঁটছে মানুষের পকেট।
শুধু এন-৯৫ মাস্ক করোনাভাইরাসকে পারে রুখতে
এই মাস্ক কেনার সাধ্য নেই জনগণের, হবে বুঝতে।)
খেটে-খাওয়া মানুষগুলো পেটের দায়ে কাজে নামছে
কানধরা, লাঠিপেটানোর পর পুলিশ-প্রশাসন থামছে!
কর্মবিহীন মানুষগুলোর মুখে আহার দেওয়ার বদলে-
প্রহার করে ছবি তোলে ওরা কোন সে ক্ষমতার বলে?
জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে যাদের ওপর করবে সবাই নির্ভর
ও রে ভাই দেখছি একি- করোনা’র চে ওরা ভয়ঙ্কর!!


 জীবাণুযুদ্ধ

যুদ্ধ লেগেছে তামাম বিশ্বে; অস্ত্র-গোলাবারুদবিহীন যুদ্ধ-
কারো হাতে রাইফেল নেই, কোথাও নেই বোমাবাজি,
মানুষে মানুষে সংঘাত নেই, দেশে দেশে শত্রুতা নেই,
তবুও যুদ্ধ শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। অবাক কা- দেখছি!

চীনে লাশের মিছিল; ইতালি, স্পেন সব ছাড়িয়ে উর্ধে-
বাংলাদেশ, ভারতেও বাজছে যুদ্ধের দামামা।
যুদ্ধটা দেশ-মহাদেশ ছাপিয়ে বিশ্বব্যাপী এখন-
কেউ জানে না থামবে কবে? আর কত মানুষ মারবে?

উত্তর কোরিয়া যুদ্ধ মোকাবিলায় পরমাণু নিয়ে প্রস্তুত!
না, তাতেও কাজ হচ্ছে না। 
পরমাণুর মহরা এ যুদ্ধের কাছে তুচ্ছ, এ অদৃশ্য যুদ্ধ!

এ যুদ্ধ জয়ের হাতিয়ার নাকি ঘরবন্দি থাকা-
নিজেকে যতবেশি পরিষ্কার রাখা, হাত ধোঁয়া,
জনসমাগম থাকা চলবে না মাঠে-ময়দানে-হাটে-ঘাটে।
এ কেমন যুদ্ধ? অবাক-বিস্ময়কর! ঘটনা কি?

জীবাণুযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে বিশ^ আজ দিশেহারা-
এটা তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ; জাতি নিধনে সক্রিয়।
এ যুদ্ধেই তামাম বিশ্বের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সক্ষম-
পরমাণুর বিষবাষ্প হটিয়ে এ যুদ্ধ ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার।



 কারফিউ

কারফিউ জারি হয়েছে- তোমাকে স্পর্শ করার ক্ষমতা নেই।
দূরত্ব বজায় রাখা এখন বাধ্যতামূলক,
ক’দিন কারফিউ চলবে? জানি নে।
কবে হাসপাতালের নার্স হেক্সিসোল নয়, ফুল হাতে দাঁড়াবে?

শহরের অলিতে-গলিতে জুবাইদাকে দেখি না
তোমার জন্য কেনা হয় না ফুল; সে টাকা বিদ্যানন্দকে দিয়েছি।
সজল মামার চায়ের দোকানে কেউ বসছে না;
সে-ও কেঁদে বলে, ‘মামা, খাওনের টাহা নাই।’
(মানিব্যাগে যা ছিল দিয়েছি।)
শহরের কর্মহারা মানুষগুলো লকডাউন মানছে না-
ট্রাকের ডালায় ফিরছে বাড়ি; ভিড়েও করোনা’র ভয় নেই।

জনশূণ্য শহরে তোমাকে নিয়ে চক্কর দিতে মন চাচ্ছে,
নগর পুলিশের টহলে সব ইচ্ছে মিয়্রমান আজ।
অতএব, প্রেম না হওয়ার দিনগুলো মনে করি;
যখন ছিল আমাদের ভালোবাসার কারফিউ।



করোনা বিষয়ক গদ্য

করোনা বিষয়ক গদ্য


কেমন লেখি জানিনা।সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে বলেই কবিতার জমিনে চাষবাদ করতে আসা।করোনা নিয়ে অনেক ভাইরাল হয়েছি।আসুন আমরা মুক্তির পথ খুঁজি

মানুষ তো তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তবে কেন আমরা এতো ভীতুগ্রস্ত? আমরা কি হেরে যাবো? মানুষকে
কখনো হারতে শিখিয়েছে হেরা পর্বতের আলোক
আমি তো জানি মানুষ হেরে যায় অবিশ্বাসের দায়ে

কোথায় ছিলাম জন্মের আগে?কিভাবে এলাম এই পৃথিবীতে? আবার কোথায় চলে যাবো?নাকি অন্য কোনো রূপে অন্য কোনো বেশে ফিরে আসবো? কখনো কি ভেবেছি হে অন্ধ মানুষ?

বিজ্ঞান আমাকে আধুনিকতার অলংকার পড়িয়ে দিতে পারে কিন্তু রূহ জগতের ডানার কাছে ঠিকই পরাজিত।জন্ম-মৃত্যুর রহস্য নিয়ে ভেবে কি পেলো মানুষ? বরং তাঁর কাছেই ফিরে এসেছি বারবার।

অতপর নিজের ভিতরেই ভ্রমণ করুন।দেখবেন - পৃথিবীর সব আলো খোলে দিয়েছে উন্মুক্ত দ্বার।


যে ভুল ছিল ইটালীর !

যে ভুল ছিল ইটালীর !


প্রথম দিকে যখন করোনা ভাইরাস  ধরা পড়ে ইটালীতে তখন বেশ সফলতার সঙ্গেই ইটালী তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে  ।
সাবধানতা অবলম্বন হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র ইটালীই চীনের সাথে সকল ফ্লাইট বাতিল করে দেয় অতি দ্রুত ।
বিমান বন্দরে থার্মাল ক্যামেরা বসান হয় একমাত্র ইটালীতেই তখন ।
ইটালীর প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্প কোন্তে
বলেছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আমাদের ব্যবস্থা সব চেয়ে শক্তিশালী এবং কার্যকর ।
আসলে প্রথম দিকে এমনটাই ছিলো সমস্ত কার্যক্রম ।
তবে এত সাবধানতার ভেতরেই মস্ত বড় একটা ভুল ছিল চীন বা আক্রান্ত কোন দেশ থেকে তখন যে সব পর্যটক বা যাত্রী আসতো তাদের ঠিক তখনই হোম কোয়ারেন্টাইনে চৌদ্দদিন থাকা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিলে তা হত ইটালীর জন্য এক যুগান্তকারী কার্যকর পদক্ষেপ ।



কিন্তু প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ এবং চিকিত্সা ব্যবস্থা না করে এদের এয়ারপোর্ট থেকে ছেড়ে দেয়াই হয়েছিল ইটালীর চরম এক ভুল ।
সৃষ্টিকর্তার এটাই ছিল ইশারা ।
যে দুজন পর্যটক মিলান বিমান বন্দর  থেকে রোমে এসেছিলেন তারাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সর্বপ্রথম ।
আরেকজন ইটালীয়ান উহান থেকে ফিরে অসুস্থ হন ।
তখন তারা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান ।
আর যে বিশেষ এক রোগী কডোনা শহরে সামান্য রকম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন তাকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয় ।
ঠিক তার দুদিন পর পরই এই রোগীর মারাত্মক শ্বাস কষ্ট শুরু হলে রোগী ফের হাসপাতালে ভর্তি হন ।
আগের রোগী এবং পরে এই রোগী যখন হাসপাতাল আর বাসায় আসা যাওয়া করেছিলেন তখন এই রোগীদের প্রতি কোন রকম সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি । যার ফলশ্রুতিতে উক্ত হাসপাতালের ডাক্তার নার্স ষ্টাফ রোগী সহ পুরো কডোন শহরে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাসটি ।
আর সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে লোম্বারডী বেরগামো মিলানো সহ আশ পাশের সব এলাকা ।
হয়ত অতীতের এমন কোন কর্মের ফল আজ এ ভাবে ইটালীকে কড়া গন্ডায় দিতে হচ্ছে । ইতিহাসের অনেক সাক্ষ্য তাই বলে ।
সৃষ্টিকর্তা ক্ষমা করুন ।

এ ছাড়া ও ছিল আরও কিছু ভুল যা বুঝতে গিয়ে সময় ক্ষেপণ হয়েছে যথেষ্ট ।
ঐ সব আক্রান্ত এলাকা গুলোতে লক ডাউন করে বর্ডার বন্ধ করে দিলে ভাইরাস রোম শহর পর্যন্ত বিস্তৃত হতো না ।
মিলানো থেকে এক বন্ধু তার রোমের বন্ধুর বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলে পরবর্তীতে রোমের বন্ধু ও আক্রান্ত হয়ে পড়ে । আর এ ভাবেই ভাইরাসটি রোমে অবস্থান নিতে সক্ষম হয় ।
যখন রোমে ভাইরাস চলে আসে আর অবস্থা বেগতিক হয়ে যায় ঠিক তখনই পুরো ইটালী হয়ে যায় লক ডাউন ।
বর্তমানে সেই সব আক্রান্ত এলাকা সমূহের অবস্থা খুবই ভয়াবহ । সেই সব শহরে এত মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে যে তাদের কবরের জায়গা হচ্ছে না । সেনাবাহিনীর বহর লাশ নিয়ে লাইন ধরে যাচ্ছে অন্য শহরে ।
তবে এটা ইটালীর স্বচ্ছতা । কারন একমাত্র ইটালীই দেখাচ্ছে সরাসরি কতজন মারা যাচ্ছে প্রতিদিন এবং লাশ গুলো স্থানান্তরিত করে সেনাবাহিনী নিয়ে যাচ্ছে অন্য শহরে এবং সেখানে কি ভাবে কবর দেয়া হচ্ছে । পক্ষান্তরে চীন সহ অন্য কোন দেশের এ সব ব্যাপারে তেমন কিছু দেখা যায়নি বা যাচ্ছেও না স্বচ্ছতা ।



প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্প কোন্তে বলেছেন
আমরা মহামারীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে মারা গেছি.আর কী করতে হবে তা আমরা জানি না। পৃথিবীতে সমস্ত সমাধান শেষ হয়ে গেছে। একমাত্র সমাধান আকাশের কাছে।
কায়মনপ্রাণে প্রার্থনা করছি ইটালী সহ সব দেশ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য ।
নিজের পদচারণায় নিত্য যে পথ মুখরিত হতো অসংখ্য টুরিষ্টদের ভীড়ে সেই দেশ ইটালীকে আল্লাহ্ যেন ক্ষমা করেন এবং শেষ রক্ষা করেন ।