সেলিনা হোসেনের উপন্যাসে ভাষা আন্দোলন
অনন্ত পৃথ্বীরাজ
প্রাক্ সাতচল্লিশ ও বিভাগোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যের ধারায় আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯), সোমেন চন্দ (১৯২০-১৯৪২), সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭১) থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্তÑ বিগত সাত দশকে যাঁরা গদ্য লিখেছেনÑ তাঁদের সাহিত্য পর্যালোচনা করলে আমরা বাংলাদেশের বাংলা কথাসাহিত্যের অঙ্কুরিত অবস্থান থেকে বৃক্ষপ্রতিম হয়ে ওঠার বিষয়টি সহজেই উপলব্ধি করতে পারি।
পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশের কথাসাহিত্য যে অর্ধস্ফূট আবছা অবয়ব নিয়ে দেখা দেয় ষাটের দশকে তা’ সুস্থির মৃত্তিকার উপর দ-ায়মান হয়। গ্রামীণ বিষয় ও ঘটনার উপকরণের পাশাপাশি নাগরিক মধ্যবিত্তের বহির্জীবন ও অন্তর্জীবন এই কালের কথাসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের (১৯০৭-১৯৭৪) ক্ষমতা দখলজনিত কারণে সৃষ্টি হয় এক ভীতিকর বাক্রুদ্ধ পরিবেশ। এই পরিবর্তমান সমাজপ্রেক্ষিত ও রাজনৈতিক বাক্রুদ্ধকর পরিবেশে ষাটের কথাশিল্পরা পরোক্ষরীতির আশ্রয় নেন এবং নির্মাণ করেন ভিন্নতর প্রতিবাস্তবতা। বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের ইতিহাসে ষাটের দশকই সবচেয়ে সফল ও নিরীক্ষামূলক দশক। বিশ্বযুদ্ধোত্তর শিল্পরীতির অঙ্গীকারে ষাটের দশকের কথাসাহিত্যিকেরা আধুনিক। আবু জাফর শামসুদ্দীন (১৯১১-১৯৮৮), শওকত ওসমান (১৯১৭-১৯৯৮), আবদুল হক (১৯১৮-১৯৯৭), আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০৩), আনোয়ার পাশা (১৯২৮-১৯৭১), আহমদ রফিক (জন্ম: ১৯২৯), শামসুর রহমান (১৯২৯-২০০৬), মুর্তজা বশীর (১৯৩২-২০২০), হুমায়ুন কাদির (১৯৩২-১৯৭৭), হাসান হাফিজুর রহমান (১৯৩২-১৯৮৩), জহির রায়হান (১৯৩৩-১৯৭১), আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী( জন্ম: ১৯৩৪), সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬), আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯), বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর (১৯৩৬-২০২০), হাসান আজিজুল হক (জন্ম: ১৯৩৯), জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত (জন্ম: ১৯৩৯), আব্দুস শাকুর (১৯৪১-২০১৩), রশীদ হায়দার (১৯৪১-২০২০), আহমদ ছফা (১৯৪৩-২০০১), আবদুল মান্নান সৈয়দ (১৯৪৩-২০১০), সেলিনা হোসেন (জন্ম: ১৯৪৭) প্রমুখ ঔপন্যাসিক ও গল্পকার এ দশকে দ্রুতি ছড়িয়েছেন। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ বাংলার রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ৫২’ এর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি আত্ম-উন্মোচন করতে সক্ষম হয়। আর একাত্তরের রক্তাক্ত মুক্তির সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ; বাংলাদেশ। তাই শিল্প সাহিত্যেও ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। বাদ যায়নি বাংলা ছোটগল্প ও উপন্যাস।
মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ ও অনন্য শিল্পদ্রষ্টা সেলিনা হোসেন (জন্ম: ১৪ জুন, ১৯৪৭)। সেলিনা হোসেনের জন্ম রাজশাহীতে। পৈতৃক নিবাস লক্ষীপুর জেলার হাজিরপাড়া গ্রাম। পিতা এ. কে মোশাররফ হোসেন ও মাতা মরিয়ম-উন-নিসার নয় সন্তানের মধ্যে সেলিনা হোসেন ছিলেন চতুর্থতম। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে করতোয়া ও পদ্মা বিধৌত নদী অববাহিকা রাজশাহী শহরে।
রাজশাহীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ¯œাতক (সম্মান) ও ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা যেমন ছিল, ততোধিক আগ্রহ ছিল সাহিত্যে। ১৯৬৯ সালে ছোটগল্পবিষয়ে প্রবন্ধ রচনার জন্য সেলিনা হোসেন ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক লাভ করেন। জীবনের নানামাত্রিকতায় তিনি অনুধাবন করেছেন সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবেশকে। সেই অনুধাবনের বিরল ঐশ্বর্য বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শোনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, এ চেতনাতেই লালিত হয়েছেন জীবনব্যাপী।১
নিজের জন্ম ও সাহিত্য সাধনা সম্পর্কে সেলিনা হোসেনের সহজ স্বীকারোক্তি স্মরণযোগ্য :
‘১৪ জুন, ২০১৭। একাত্তর বছরে পা দিলাম। জন্মগ্রহণ করেছিলাম সাতচল্লিশ সালে। বড় হয়ে জেনেছি দেশভাগ হয়েছে। পাকিস্তান নামের একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। এই অর্থে আমি দেশভাগ দেখেছি। ভাষা আন্দোলন বুঝিনি। বাহান্নোর সেই সময়ে নিজের ভাষায় কথা বলেছি। কিন্তু মাতৃভাষার মর্যাদা বোঝার বয়স ছিল না। মহান মুক্তিযুদ্ধের একাত্তর আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। একাত্তর আমার জীবনের একটি সংখ্যা বা শব্দ মাত্র নয়। শব্দটি আমার অস্তিত্বের অংশ। এ কারণে একাত্তর বয়সের সূচনার জন্মদিন আমি ভিন্নমাত্রায় দেখছি।’২
সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও কথাশিল্পী হিসেবেই তিনি সমধিক খ্যাত। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের নিরন্তন শিল্পসাধনায় তিনি নির্মাণ করেছেন নিজস্ব এক শিল্পভুবন। কথাকার সেলিনা হোসেন বিষয়গৌরবে যেমন বিশিষ্ট্য, তেমনি প্রকরণকলাতেও অনন্য। সেলিনা হোসেন সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক বিশ্বজিৎ ঘোষ- এর মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য:
ইতিহাসের গভীরে সন্ধানী আলো ফেলে ঔপন্যাসিক প্রতিবেদন সৃষ্টিতে তাঁর সিদ্ধি কিংবদন্তীতুল্য। বস্তুত ইতিহাসের আধারেই তিনি সন্ধান করেন বর্তমানকে শিল্পিত করার নানামাত্রিক শিল্প-উপকরণ। সমকালীন জীবন ও সংগ্রামকে সাহিত্যের শব্দ¯্রােতে ধারণ করাই সেলিনা হোসেনের শিল্প-অভিযাত্রার মৌল অন্বিষ্ট। এক্ষেত্রে শ্রেণি অবস্থান এবং শ্রেণিসংগ্রাম চেতনা প্রায়শই শিল্পিতা পায় তাঁর ঔপন্যাসিক বয়ানে, তাঁর শিল্পÑআখ্যানে। কেবল শ্রেণিচেতনা নয়, ঐতিহ্যস্মরণও তাঁর কথাসাহিত্যের একটি সাধারণ লক্ষণ। উপন্যাসে তিনি পৌনঃপুনিক ব্যবহার করেছেন ঐতিহাসিক উপাদান, কখনো-বা সাহিত্যিক নির্মাণ।৩
সাহিত্যিক নির্মাণকে ভেঙ্গে নতুন সাহিত্য সৃষ্টির ধারায় সেলিনা হোসেন রেখেছেন প্রাতিস্বিক প্রতিভার স্বাক্ষর। তাঁর উপন্যাসে রাজনৈতিক সময় বা আন্দোলন অধিকতর পরিপ্রেক্ষিত অর্জন করে। নারীর শাশ্বত দৃষ্টি, সনাতন আদর্শ বজায় থাকে তাঁর লেখায়। তবে রাজনৈতিক অনুপ্রেরণাটি অর্জিত হয় সমকালীন বুর্জোয়া শ্রেণিচরিত্রের স্বার্থান্বেষী রূপটি অতিক্রম করবার প্রচেষ্টায়। এ ক্ষেত্রে তিনি স্বদেশ ও স্বজাতির ঐতিহ্যের প্রতি দৃঢ় ও দায়িত্বশীল। এমন প্রত্যয়ে স্বাধীন ভূখন্ড, স্বায়ত্তশাসিত-বৈষম্যহীন সমাজ ও জাতীয় আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল পর্বগুলো উন্মোচিত হয় কাহিনীগোত্রে। কখনো কখনো জাতীয় চরিত্র প্রতীকায়িত হয় আদর্শের আশ্রয় থেকে। এরূপ প্রস্তাবনায় তাঁর উপন্যাস অনেকক্ষেত্রে সরলকৃত কিংবা পূর্বফলপ্রসূত। ইতিহাসের পুননির্মাণ কিংবা স্বেচ্ছাচারী স্বৈরশাসকের প্রতিমূর্তির প্রতীকায়ন তিনি যেভাবে ঘটান সেটা অনবদ্য এবং অভিনব। ইতিহাসের নান্দনিক প্রতিবেদন বিনির্মাণে সেলিনা হোসেনের সিদ্ধি শীর্ষবিন্দুস্পর্শী। সেলিনা হোসেন তাঁর ‘নিজস্ব ভাবনায় ইতিহাসকে সমকালের সঙ্গে বিম-িত করেছেনÑইতিহাসের কঙ্কালেই নির্মাণ করেছেন সমকালের জীবনবেদ। ইতিহাস ও শিল্পের রসায়নে সেলিনা হোসেন পারঙ্গম শিল্পী। ইতিহাসের সঙ্গে সমকালীন মানবভাগ্য বিম-িত করতে গিয়ে সেলিনা হোসেন, অদ্ভুদ এক নিরাশক্তিতে, উভয়ের যে আনুপাতিক সম্পর্ক নির্মাণ করেন , বাংলা উপন্যাসের ধারায় তা এক স্বতন্ত্র অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। তাঁর উপন্যাস পাঠ করলে বিস্মৃত হতে হয় কোনটা ইতিহাস আর কোনটা কল্পনা।৪
সেলিনা হোসেনের প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা চল্লিশটি। এসব উপন্যাসে যে শুধু ইতিহাস আর রাজনীতিই উঠে এসেছে তা কিন্তু নয়Ñতাঁর লেখনিতে আমরা জীবন ও সমাজ বাস্তবতার চমৎকার মিলবন্ধন লক্ষ্য করি। ‘জীবন যেখানে যেমন’ সেলিনা হোসেন এই আদর্শে বিশ্বাসী। তাই শিল্পমানের চেয়ে জীবনের রূঢ় বাস্তবতা আর উপন্যাসে গল্পের প্রাণ সঞ্চার করে। ইতিহাসের পরতে পরতে যে রিরংসা, লোভ, ধ্বংসের হাতছানি তিনি তাঁর উপন্যাসে এ বিষয়গুলো উপজীব্য করেছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক বেদনাঘন অথচ গর্বের দিন। এ দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেÑ মায়ের মুখের ভাষার জন্য বুকের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে গবেষক অনিক মাহমুদ লিখেছেন:
বাঙালির জাতীয় চেতনার উদ্বেলনে যখন ঘনীভূত হল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, তখন নিরুপায় শাসকচক্র নতুন করে শুরু করল ষড়যন্ত্র। সা¤্রাজ্যবাদের জটাজালের মতই হিং¯্র হয়ে উঠল তাদের জাতিসত্তাবিরোধী সাংস্কৃতিক তত্ত্ব। বাংলা বানান সংস্কারের নামে উদ্ভট পরিকল্পনা কিংবা আরবী হরফে বাংলা লেখার ষড়যন্ত্র করতেও তারা দ্বিধা করল না। এভাবে ক্রমাগত তিনটি বছর রাজনৈতিক ডামাডোলে বাংলা ভাষার আন্দোলনকে ধামাচাপা দিয়ে তারা এ ভাষার মূলোৎপাটনে অনমনীয় হয়ে ওঠে। ১৯৫১ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের (১৮৯৬-১৯৫১) তিরোধানের পর খাজা নাজিমউদ্দীন (১৮৯৪-১৯৬৪) তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। ১৯৫২ সালে ২৬ জানুয়ারি ঢাকার এক জনসভায় বক্তৃতাকালে তিনি জিন্নাহ্’র কথার পুনরাবৃত্তি করেন এবং উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার পূর্ণ ঘোষণা দেন। তখন দেশব্যাপী শুরু হল দুর্মর আন্দোলন। ছাত্র-যুবক-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল এই সংগ্রামের দাবদাহ : ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’। এর মধ্যে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি ৪ঠা ফেব্রুয়ারিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২১ শে ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ভাষার দাবীতে ধর্মঘট পালিত হবে। ২০ শে ফেব্রুয়ারি সরকারী ভ্যান থেকে সন্ধ্যার আগে ঘোষণা করা হল যে, সরকার দেশে ১৪৪ ধারা জারী করেছে। সভা-সমিতি, মিছিল কিংবা একসঙ্গে দশজন একত্র হওয়া নিষিদ্ধ। ১৪৪ ধারা শুধু ঢাকা শহর নয় একমাসব্যাপী সমগ্র দেশ জুড়ে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে দেশব্যাপী হরতালের ডাকে শাসকচক্র আশ্রয় নিল দমননীতির। মাতৃভাষার মহাসংগ্রামে ক্ষাত্রশক্তির জারীকৃত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ধাবমান ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ চালল গুলি। ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হল রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতের মতো তরণ ছাত্র-যুবার বুকের রক্তে।৫
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ঘটনা প্রবাহে ঔপন্যাসিক জহির রায়হান লিখেছেন ‘আরেক ফাল্গুন’ (১৯৬৯) এবং কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান লিখেছেন ‘আর্তনাদ’ (১৯৮৫) প্রভৃতি উপন্যাস। সেলিনা হোসেনের ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক দুইটি উপন্যাস হচ্ছে ‘যাপিত জীবন’ (১৯৮১) ও ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ (১৯৮৭)। ‘যাপিত জীবন’ উপন্যাসে সমকালীন রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বস্তুরূপের উপস্থাপনার সাফল্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করা হলেও এ উপন্যাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যতিক্রমী প্রাণ প্রবাহের সুর অনুরণিত হয়েছে। এ উপন্যাসের শুরু উনিশ সাতচল্লিশ সালের দেশ বিভাগের পর। আর সমাপ্তি ঘটেছে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সেলিনা হোসেন সময়ের ইতিহাসকে চরিত্রের মধ্যে প্রবিষ্ট করেন। সেখানে ‘সময়’ই চরিত্র। সোহরাব হোসেন, মারুফ ও তার স্ত্রী সুমনা, জাফর, আঞ্জুম এসব চরিত্র পারিবারিক জীবনে দৈনন্দিনতার ভেতরে নিজস্ব মূল্যবোধ ও রুচির চর্চা করে। সেখানে রাষ্ট্রের আন্দোলন সংগ্রামের সাথে তাদের সম্পৃক্তিও বাড়ে। চরিত্রগুলো যেন সমস্ত ঘটনার অংশ হয়ে যায়। ‘যাপিত জীবন’ উপন্যাস প্রসঙ্গে প্রথমা রায় ম-লের মন্তব্যটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য:
নতুন দেশে জীবনযাপন শুরু হয় নতুন অস্তিত্বে। ব্যক্তিগত ভালোবাসা ও স্বদেশ প্রেমে একাকার হয়ে বাঙ্গময় হয়ে ওঠে; সঙ্গে আসে সমকালীন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক ঘূণাবর্ত। উপন্যাসের সূচনায় যে ভয়-ভীতির চিত্র উদ্ভাসিত তা থেকে বেরিয়ে আসার মধ্য দিয়ে উপন্যাসের পরিসমাপ্তি।৬
‘যাপিত জীবন’ উপন্যাসের পটভূমি ’৫২-র ভাষা আন্দোলন। উপন্যাসের নায়ক জাফর জীবনের কথা বলে জীবনেরই বিনিময়ে। ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন জাফরের স্বচ্ছ প্রতীকচিত্রে বাঙালির শেকড় আর অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করেছেন তাঁর এ উপন্যাসে। বিজ্ঞান ও বিজ্ঞাপনের এ যুগল মাত্রায়, তরঙ্গসঙ্কুল রাজনৈতিক পটভূমিতে দাঁড়িয়ে নিজের চাষের ভূমিতে প্রতিনিয়ত ঘুরে ঘুরে একজনশিল্পীর অজানা প্রদেশের নিত্য উদ্ভাবন-কর্মের শিল্পীতরূপ ‘যাপিত জীবন’। এ উপন্যাসের নায়ক প্রতিটি মুহূর্তে ঘোষণা করে বেড়ায় তাঁর বাঙালি অস্তিত্ব। এখানেই তাঁর শেকড় প্রথিত রয়েছে। উত্তরাধিকারসূত্রে এদেশেই তাঁর বসবাস ও বেড়ে ওঠা। জন্মের পর থেকে এদেশের আলো-বাতাসে সে বড় হয়েছে। মুখে বুলি ফোটার সাথে সাথে সে শিখেছে নিজের মায়ের ভাষা বাংলাকে। তাই মায়ের ভাষাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে রাষ্ট্রীয় ফরমান সে মেনে নিতে পারে নি। নিজের মৃত্তিকারসে জারিত স্বকীয় বিকাশের সমস্ত প্রয়াস ভর করে বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিনিধি জাফরের মাঝে। জাফর তখন হয়ে ওঠে বাঙালির প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। জন্ম নেয় নতুন শ্লোগান : রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। পটভূমির দিক থেকে বিচার করলে এ উপন্যাসের কাহিনী আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য খুবই গুরুত্ববহ। পড়তে পড়তে ভাষা আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে চলে যাওয়া যায়। বিশ^বিদ্যালয়ে পড়–য়া একজন ছাত্রের জীবনে ভাষা আন্দোলন; পারিবারিক ও রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে ‘যাপিত জীবন’ উপন্যাসে। ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসের একটি প্রধান বাধা হলো কল্পনায় চরিত্রগুলোর মধ্যে ইচ্ছে মতো প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা। মূল চরিত্র জাফরের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে। কাহিনীর যোগসূত্রে জাফরের চাইতে উপন্যাসে তাঁর বাবা-মা অথবা বড় ভাইয়ের চরিত্র যেন বেশি জীবন্ত মনে হয়। ‘যাপিত জীবন’ উপন্যাসে একটি সাধারণ পরিবারের টুকরো টুকরো নানা ঘটনার সাথে জাতীয় আন্দোলনের সম্পৃক্ততা আমাদের হাজার বছরের পারিবারিক বন্ধন ও রাজনৈতিক সচেতনতার ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছে।
শ্রেণিবিন্যস্ত বেড়িপরা সমাজে উৎকণ্ঠিত জাফরের বিবেক-কল্পনা ও মণীষা। মহৎ আদর্শের জন্য ছোট ছোট জাগতিক মোহকে বিসর্জন দিয়ে উপবাসী জাফর জন্মের ঋণ পরিশোধ করে রাজপথে-মিছিলে মৃত্যুর সাথে আত্মীয়তা করে। ঔপন্যাসিক ঐতিহাসিক সত্যকে সাহিত্যে জীবন্ত করে রাখার জন্য ভাষা আন্দোলনে যোগদানকৃত ভাষা শহিদদের প্রতীকী চরিত্র হিসেবে জাফরকে সার্থক করে তুলেছেন। স্থির, নিথর, নিশ্চল, নিস্পন্দ, নিঃশব্দ দৃষ্টি তাঁর। বিহ্বল, অবিন্যস্ত অর্থনীতির জমাট ধূসর মেঘের মাঝখানে সচেতন ধারালো তির্যক আলোকরশ্মির মতো সেলিনা হোসেন যেন পরিব্রাজকের দৃষ্টিতে এ উপন্যাসের চরিত্রগুলো নির্মাণ করেছেন। ইতিহাসের সাথে মিল রেখে কল্পনা ও বাস্তবের এক অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে ‘যাপিত জীবন’ উপন্যাসের ঘটনা আবর্তে।
ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেনের রাজনৈতিক সচেতনতা এবং ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আরও একটি সার্থক উপন্যাস হলো ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’। ১৯৮৬ সালে উপন্যাসটি রচিত হলেও এর কাহিনী ও ঘটনা বাঙালির অতীত ঐতিহ্য স্পর্শ করেছে। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পরে ঢাকা কেন্দ্রীক সাহিত্যচর্চা; রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দিয়ে উপন্যাসের কাহিনী শুরু। ঘটনা আবর্তিত হয়েছে উনিশ বছর বয়সী টগবগে যুবক ও তরুণ সাহিত্যিক সোমেন চন্দকে নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়া সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যে কয়জন মস্তিষ্ক চাষি কলম ধরেছিলেন সোমেন চন্দ ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন মার্কসবাদী আদর্শের অনুসারী। মিডফোর্ট মেডিকেল কলেজের মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও টাকার অভাবে পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি। তবু, কারও কাছে দ্বারস্থ নন। অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত না করা এই যুবক বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন দৃঢ়ভাবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বলি হতে হয় সচেতন এই মানুষটিকে। উপন্যাসের বর্ণনায় তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া কিছু পরিবারের চিত্র নিখঁতভাবে আঁকা হয়েছে। ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ উপন্যাস সম্পর্কে গবেষক আমিনুর রহমান সুলতান লিখেছেন:
‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ উপন্যাসে সেলিনা হোসেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রস্তুতিকাল এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবে তাঁদের উত্থানের সাফল্য ঐতিহাসিক চরিত্র (সোমেন চন্দ) বিকাশের মধ্য দিয়ে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন। ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ উপন্যাসে ঢাকার প্রগতিশীল আন্দোলনের পটভূমিতে ভাষা আন্দোলনে প্রগতিশীল মধ্যবিত্তের যে ভূমিকা এবং ক্রমবর্ধমান গতিবেগ সঞ্চারিত ছিল তা উঠতি মধ্যবিত্তশ্রেণিকে কেন্দ্র করেই সংঘটিত হয়েছে। এ উপন্যাসের প্লট রচিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু পূর্বকাল থেকে এবং সমাপ্তি ঘটেছেÑ ১৯৫৩ সালে জেলখানায় বসে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটক লেখা হচ্ছে এ পটভূমিতে।৭
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্রনেতা মুনীর। আসাদ, সালাম, রাহাত, বেণু, নীলা, রেণু এরা উপন্যাসের মূল কাহিনির সাথে কেন্দ্রীয় ভূমিকার সহায়ক শক্তি রূপে কাজ করেছে। মাত্র তিন দিনের ঘটনা প্রবাহে আমরা দেখতে পাই একুশের চেতনা কীভাবে তিমির বিনাশী আয়োজনে প্রগতিশীল ছাত্রদের আগামীর পথ নির্মাণে এগিয়ে যায়। তিন দিনের কাহিনীতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষক গোষ্ঠীর নিপীড়ন, দমননীতি, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শোষকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও দমননীতি পাশপাশি মুক্তিকামী বাঙালির অপ্রতিরোধ্য সাহসিকতা যেমন ফুটে উঠেছে তেমনি বাঙালির চেতনাকামী ঐতিহ্য কিভাবে উত্তরাধিকার খুঁজে পেয়েছে তা বিধৃত হয়েছে। এ উপন্যাসের ভূগোল নির্মিত হয়েছে ঢাকার বুকে। ব্যক্তিগত অনুভব, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের পথ আবিষ্কার করেছে প্রেমময় পথ ধরে, রোমান্টিক মনের আবহে।
বাংলার ইতিহাস হাজার বছরের ইতিহাস। ব্রিটিশ রাজত্বে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে বাঙালি তাঁদের আত্মপরিচয়ের সন্ধান পায়। বঙ্গভঙ্গ রদ হয় বটে কিন্তু বাঙালির বুকে নিজেদের অস্তিত্ত্ব অনুসন্ধানের বাসনা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় এদেশের মানুষ অবদান রাখতে শুরু করে। কিন্তু ধর্ম তাঁদের কাছে আজীবন পরম শ্রদ্ধার জায়গা। আর ব্রিটিশ বেনিয়া এই ধর্মকে পুঁজি করেই হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা বাধিয়ে দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে হিন্দু-মুসলমানের বৃহৎ ঐক্য বিভক্ত করার মানসে ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান (ভারত)-এর জন্ম হয়। এরপরও বাঙালির জাতীয় জীবনে স্বস্তি আসেনি। শুধু ধর্মের মিলের কারণে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানের সাথে যৌথ জীবনযাপন শুরু করলেও তা বেশি স্থায়ীত্ব লাভ করেনি। বাঙালির মানসে প্রথমেই যে আঘাত আসে তা হলো, ভাষার প্রশ্ন। পশ্চিম পাকিস্তানিরা ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত দেশের ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি এক করতে গিয়ে বাঙালির ওপর চাপিয়ে দেয় প্রবল বৈষম্য। পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (১৮৭৬-১৯৪৮) উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে দেশভাগের পরপরই ঢাকা উত্তাল হয়ে ওঠে। মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় পুরো ঢাকা শহর। ছাত্র সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সে দিনের সেই আন্দোলনে সোমেন চন্দ ছিলেন না; কিন্তু মুনীর চৌধুরী ছিলেন। উপন্যাসের প্রথমাংশে সোমেন চন্দ, আসাদ, সালামদের প্রাধান্য থাকলেও দ্বিতীয়াংশের নায়ক লেখক মুনির। সোমেন চন্দের লেখার প্রশংসা করতেন মুনীর। তিনি নিজেও লেখালেখি আর রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বায়ান্নার ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন বলে তাকে জেলে যেতে হয়। কারাগারের অন্ধকার কুঠিতেও তাঁর কলম থামেনি। তিনি লিখতে শুরু করেন ‘কবর’ নামে একটি নাটক। লেখা তখনও শেষ হয়নি। উপন্যাসে এই অংশের বর্ণনায় সেলিনা হোসেন লিখেছেন:
এখনো শেষ হয়নি নাটক, মুনীর লিখছে, আর অল্প বাকি। বাহান্নর একুশের পটভূমিতে রচিত হচ্ছে নাটক। জেলখানায় ঘণ্টা ঢং- ঢং করে জানিয়ে যায় সময়। থেমে থেমে ঘণ্টা বাজে লেখা থামে না, কলম এখন যাদুর প্রদীপের ঘষা, একটা শিল্পিত দৈত্য বেরুচ্ছে। রচিত হচ্ছে মুনীরের ‘কবর’।৮
বাংলাদেশের সাহিত্যের ধারায় সেলিনা হোসেন, প্রকৃত প্রস্তাবেই নির্মাণ করেছেন নিজস্ব একটা শিল্প ভুবন। সাহিত্যিক হিসেবে তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতাকে কখনই ভুলে যাননি। ফলে তাঁর সকল রচনার পশ্চাতে আমরা অনুভব করি সামাজিক অঙ্গীকার, থাকে প্রগতিশীল ভাবনা। তাঁর শিল্পীমানসে সবসময় সদর্থক ইতিহাস চেতনা জাগ্রত থাকে বলে মানুষকে তিনি ম্যাক্রো-ভাবনায় আয়ত চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। মাইক্রোভাবনা প্রাধান্য পায়নি বলে তাঁর মানুষেরা কখনো খ--জীবনের আরাধনায় মুখর হয়নি, নষ্ট হয়নি জীবনের উপাসনা। যে জীবন সাধারণের কিংবা বড় কারো সে জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে আন্দোলিত হয় তাঁর বিষয়-বৈচিত্র্য। প্রবল মুন্সিয়ানায় ঘোরেন চেনা জগতের অচেনা পথে। ফিরে ফিরে দেখেন আপন-আলোয় উদ্ভাসিত নানা জীবনের কল্পরূপ। ষাটের শেষপ্রান্ত থেকে ঘর্মাক্ত কলমে, অগ্রসরমান, প্রস্তুতিতে প্রতিক্ষণের জায়মান জীবন-সমস্যার সমাধানকল্পে প্রতিবাদের পোস্টার সেঁটে চলেছেন গদ্য-মজুর সেলিনা হোসেন। নিজের অন্তর্গত রক্তক্ষরণের বিন্দু বিন্দু ঋণ পরিশোধ করেন তিনি নিজেরই প্রতিবাদী দর্শনের শিল্পিত রূপ দিয়ে। তাই সেলিনা হোসেন সমকালীন বাংলা কথাকলার অন্যতম প্রতিভাধর বহুমাত্রিক শিল্পী অভিধায় ভূষিত হয়েছেন।
সহায়ক গ্রন্থ ও পত্রিকা :
১ . কামরুল ইসলাম, ‘বহুমাত্রিক কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন’ বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত সেলিনা হোসেনের ৭০তম জন্মবার্ষিকী পত্রিকা। প্রকাশকাল: ১৪ জুন, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ।
২ . সেলিনা হোসেন, ‘ফিরে দেখা আপন ভুবন’ বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত সেলিনা হোসেনের ৭০ তম জন্মবার্ষিকী পত্রিকা। প্রকাশকাল: ১৪ জুন, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ।
৩ . বিশ্বজিৎ ঘোষ, ‘সেলিনামঙ্গল’ বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত সেলিনা হোসেনের ৭০তম জন্মবার্ষিকী পত্রিকা। প্রকাশকাল: ১৪ জুন, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ।
৪ . শহীদ ইকবাল, ‘বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিহাস’ (১৯৪৭-২০০০), ২০১৪, পৃষ্ঠা ১৫৫-১৫৬, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা।
৫ . অনিক মাহমুদ, শওকত ওসমানের কথাসাহিত্যে জাতীয় আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯১, ঢাকা, উত্তরাধিকার, ১৯শ বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা (মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ সম্পাদিত), কার্তিক-পৌষ ১৩৯৮/ অক্টোবর-ডিসেম্বর ১৯৯১, বাংলা একাডেমী, পৃ. ৩-৪
৬ . প্রথমা রায় ম-ল, ‘সেলিনা হোসেন ও বাংলা সাহিত্য’, সঞ্জীব কুমার বসু সম্পাদিত, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, বৈশাখÑআষাঢ় ও শ্রাবণ, আশ্বিন সংখ্যা, ১৪০৫, কলকাতা, পৃষ্ঠা ২৮২ ।
৭ . আমিনুর রহমান সুলতান, ‘বাংলাদেশের উপন্যাস নগরজীবন ও নাগরিক চেতনা’, ২০০৩, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১১৯।
৮ . সেলিনা হোসেন, নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি, ১৯৮৭, কথামেলা প্রকাশন, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১২০।
* অনন্ত পৃথ্বীরাজ, কবি, কথাকার ও এম ফিল গবেষক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর। মোবাইল নং : ০১৭২৫৪১২১৮৬ , ইমেইল : ধহড়হঃড়ঢ়ৎরঃযারৎধল@মসধরষ.পড়স