ই-পেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ১৭৫

ই-পেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ১৭৫

 তারুণ্যের শিল্প সরোবর : ধানশালিক : সংখ্যা ১৭৫

শুক্রবার, ০১ অক্টোবর ২০২১


















এক বিরল ব্যক্তিত্ব ও একটি অনন্য প্রতিভা : অধ্যাপক আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.)

এক বিরল ব্যক্তিত্ব ও একটি অনন্য প্রতিভা : অধ্যাপক আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.)

 



এক বিরল ব্যক্তিত্ব ও একটি অনন্য প্রতিভা

অধ্যাপক আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) 


প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইলিয়াছ ছিদ্দিকী


যে সকল গুণে গুণাম্বিত হয়ে একজন মানুষ সফলতার উচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত হয়ে মহৎ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন কিংবা মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকেন তাদের মধ্যে একজন আল্লামা ফখরুদ্দীন। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ জ্ঞানসাধক ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের অগণিত জ্ঞান পিপাসুদের হাদীছ, তাফসীর, ফিকহ, আরবী ভাষায় ও সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান বিতরণ করে তাদের তৃপ্ত করেছেন। বিষয় ভিত্তিক জ্ঞানের গভীরতায় পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সকল জিজ্ঞাসার সঠিক সমাধান দিতে কখনো পিছপা হননি। শুধু একমাত্র শিক্ষার্থীদের নয় বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের ধর্মীয় বিষয়ের নানাবিধ জটিল প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে কখনো কার্পণ্য করেননি। তিনি ছিলেন এ যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‘আলিম, খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, আদর্শ শিক্ষক, বিজ্ঞ হাদীসের প-িত এবং দক্ষ প্রশাসক। তিনি বাংলা, আরবী, ঊর্দূ, ইংরেজী ও ফার্সী ভাষার মহাপ-িত ছিলেন। তিনি নম্র, ভদ্র, বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে। এ সকল বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা’আলা তাঁকে দান করেছেন তার জীবন ধারায়। তিনি ছিলেন অধিক পরহেযগার এবং সকলের নিকট সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী বিজ্ঞ এক প্রশাসক। যার চরিত্র মহান ও উন্নত, সে সর্বাধিক সম্মান পাওয়ারও উপযুক্ত। আল কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানীত যে ব্যক্তি অধিক তাকওয়াবান। এ কারণেই তিনি তাকওয়ার  প্রতি অধিক যতœবান  ছিলেন। এ ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে যাবার সুযোগ আমার হয়নি। তবে আমার ছোট্টবেলা থেকেই মাওলানার যথেষ্ট সুনাম শুনে আসতেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মরহুম প্রফেসর ড.আনওয়ারুল হক খতিবীস্যার থেকে উনার ব্যাপারে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছি। স্যারের অধীনে গবেষণা করার কারণে স্যারের সাথে প্রায়ই এসব মহামণিষীদের বিষয়ে কথা হতো। বিশেষভাবে অধ্যক্ষ মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন, অধ্যাপক ড. আবু বকর রফীক, অধ্যাপক ড. সামশুল আলম, অধ্যাপক ড. ফজলুল হক এবং অধ্যাপক মাওলানা ফখরুদ্দীন (রহ.)-এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। আমি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় চাকুরী করার সুবাধে আল্লামার কর্মস্থল চট্টগ্রাম ছোবহানীয়া আলিয়া, ঢাকা সরকারী আলীয়া এবং সিলেট সরকারী আলীয়া মাদরাসাসহ হাজারের অধিক মাদরাসা পরিদর্শন করার সুযোগ হয়েছিল বিধায় মরহুম আল্লামা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। তাছাড়া শেষ জীবনে আমার এলাকার চুনতী হাকিমীয়া আলীয়া মাদরাসায় বেশ কিছুদিন শায়খুল হাদীস হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় মাওলানা সম্পর্কে অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছে। সে গুলোর কয়েকটি দিক তুলে ধরার প্রয়াস পেলাম, যা আমাদের জীবন গঠন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

 আল্লামা ফখরুদ্দীন  একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, মুফতী, মুফাস্সির,বিজ্ঞ মুহাদ্দিস, দাঈ ইলাল্লাহ এবং দক্ষ প্রশাসক। তাঁর জীবন, কর্ম, মন ও মানসে স্বীয় একজন প্রকৃত ‘আলিমের প্রভাব সুস্পষ্ট।  তিনি ন¤্র, ভদ্র, বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি শিক্ষকতা জীবনে তুলনামূলক কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মুকাদ্দামায়ে মুসলিম, তাফসীরে বায়জাভীসহ বেশকিছু বিষয়ের গবেষণাধর্মী দারস প্রদান করতেন। মাওলানার পাঠদান পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হল, তিনি বিভিন্ন বিষয়ের উদাহারণ দিয়ে কঠিন ও দুর্বোধ্য বিষয়কে খুবই সহজভাবে উপস্থাপন করতেন। কোন বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে নিজের পা-িত্য  জাহির না করে কিতাব দেখে পরবর্তী সময়ে এর সমাধান দিতেন। স্বীয় প্রতিভা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সহকারী মাওলানা, প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক, মুহাদ্দিস, উপাধ্যক্ষ এবং অধ্যক্ষের পদও অলংকৃত করেন। ফলে  তিনি একজন  প্রাজ্ঞ শিক্ষক এবং দক্ষ প্রশাসক। সারা বাংলাদেশে জেনারেল বিষয়ে সনদ অর্জন না করে শুধুমাত্র কামিল পাশ করে যেই ২/৩ জন আলিম অধ্যাপক পদ লাভ করেন তন্মধ্যে তিনি অন্যতম। সিলেট সরকারী আলীয়া মাদরাসায় কর্মরত অবস্থায় সহযোগী অধ্যাপক পদে প্রমোশন লাভ করে উপাধ্যক্ষ পদে বগুড়া সরকারী আলিয়া মাদরাসায় বদলী করায় সিলেট মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং এলাকাবাসী আল্লামার বদলী ঠেকাতে মাঠে নেমে যায় এবং সিলেটের প্রভাবশালী মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে বদলী ঠেকায়। কত বড় জনপ্রিয় শিক্ষক হলে এ ভালবাসা অর্জন করা সম্ভব। অথচ সরকারী কলেজ-মাদরাসায় কত শিক্ষক আসে যায়, কার খবর কে রাখে, কেউ কারো খবর রাখে না, বাইরের কেউ চেনে না। তিনি এতই সাহসী আলিম ছিলেন সিলেটের ছোট-বড়, এমপি,মন্ত্রী কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলতেন না। সত্য কথা অপকটে সাহসিকতার সাথে বলে ফেলতেন। বিশেষ করে সিলেটে মাওলানার বিশাল প্রভাব ছিল। সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসা হতে মাওলানা বিদায় নিয়ে আসার পর হতে সিলেট আলিয়ার লেখাপড়াও মনেহয় চট্টগ্রামে চলে এসেছে। মাওলানার সময়ের সেই ঐতিহ্য সিলেট আলিয়ায় আর নেই। তিনি বিভিন্ন ইসলাম বিষয়ক সংকট নিরসনকল্পে, মাদরাসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, শিক্ষণীয় বিষয় অর্জন, বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ, তাঁদের সময়কার ও বর্তমানের পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে, দ্বীন প্রচারের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানসমূহ ভ্রমণ করেছেন। তিনি ‘ইলমুল ফুরুআতে একজন পারদর্শী ‘আলিম এবং অসাধারণ মেধাবীর অধিকারী ছিলেন। তিনি আহলুস্সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পূর্ণ অনুসারী। তিনি মাযহাবের ইমাম চতুষ্টয়কে সমানভাবে আহলে হক হিসেবে মর্যাদা প্রদানের নীতিতে বিশ্বাসী। ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবন-বিধান। ইসলামে রয়েছে যুগ-জিজ্ঞাসার জবাব। এতে আছে আদর্শ ব্যক্তিনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, যেখানে অন্য সবাই ব্যর্থ। একথাটি বিভিন্ন যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিতেন। মাওলানা  বলতেন, শুধু আসর জমানোর জন্য অন্যের দোষত্রুটি বর্ণনা ও অন্যের সমালোচনায় কোন কল্যাণ নেই। এগুলো বাদ দিয়ে নিজের চিন্তা করো, নিজেকে সংশোধন করো। আর আসলে সমাজ সংস্কারের পদ্ধতি এটাই। স্থান-কাল-পাত্রের উপযোগিতা অনুধাবন, অকৃত্রিম ও ইখলাসপূর্ণ বিনয়ী উপস্থাপনা, প্রতিটি সমস্যার যথাযথ সমাধান, তুলনামূলক সহজ ও গ্রহণযোগ্য সমাধানই মাওলানার বর্ণনার বৈশিষ্ট্য। তিনি ছিলেন নিলোর্ভ। টাকা পয়সার তিনি কোন তোয়াক্কা করতেন না। তিনি বেতনের টাকা দিয়ে অনেক অসহায় ও ইয়াতীম ছাত্রদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন। যা আধুনিক সময়ে কল্পনা করা যায় না। তিনি মনে করেন রাজনীতি ও ইসলাম এক ও অভিন্ন। রাজনীতি ইসলাম থেকে আলাদা নয় বরং ইসলামের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর মতে, আল্লাহ তা’আলা এক একজনকে এক এক বিষয়ে খিদমাত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। যেমন কাউকে রাজনীতি, কাউকে চিকিৎসা সেবায়, কাউকে শিক্ষকতা আবার কাউকে তাবলীগে দ্বীনের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। মাওলানার সাথে সকল মতাবলম্বী এবং সকল রাজনৈতিক দলের সাথে সুসম্পর্ক ছিল। জ্ঞানের ক্ষেত্রে মাওলানা সঠিক বিষয়টি প্রকাশ করেতেন। তিনি প্রতিটি ‘আলিমগণকে সম্মান করতেন এবং তাদেঁর যুক্তিপূর্ণ কথাকে মূল্যায়ন করতেন। মানুষের প্রতি ভালবাসা (মুরব্বীদের সম্মান ও ছোটদেরকে  স্নেহ  করতেন। নবী করিম (সা.) এর সুন্নাহ অনুযায়ী হুবহু ‘আমল করেন)  প্রদশর্নের ক্ষেত্রে তিনি সব সময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন। যাকে যতটুকু সম্মান করার তিনি তাকে ততটুকু সম্মান করতেন এবং যাকে স্নেহ করা প্রয়োজন তাকে স্নেহ করতেন। লেনদেনের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন। লেনদেনের স্বচ্ছতার প্রতি তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করে চলেছেন। সিলেট আলীয়ায় জীবনের সিংহভাগ সময় অতিবাহিত করা সত্বেও মাদরাসা কিংবা ভিন্ন কেউ বলতে পারে নাই। মাওলানার সাথে আর্থিক লেদনদেনে অসচ্ছতা রয়েছে। বিনয় ও নম্রতা তাঁর প্রধান স্বভাব। মানুষের হকসমূহ যথাযথভাবে আদায়, বন্ধু কিংবা শত্রুর সাথে তাঁর ব্যবহার, বিরোধিতা ও সহযোগিতার সীমারেখা, মুসলমানদের সামগ্রিক বিষয়ে তাঁর সংশ্লিষ্টতার কর্মপদ্ধতি, বিনীত ও কঠিন আচরণ, বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্যের মাঝে সমতা বিধানে এযুগে মাওলানার মত লোকের বিরল। তিনি মানুষের স্বভাব, রুচি ও প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে কাজ করতেন। সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের তিনি সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করতেন। তিনি ছিলেন আদর্শ শিক্ষক এবং যুগসচেতন ‘আলিমেদ্বীন। যুগের চাহিদার আলোকে উপস্থিত সঠিক সিদ্বান্ত নিতে ও সমাধান দিতে ছিলেন বাকপটু। সারা বাংলাদেশে তাঁর হাজার হাজার ছাত্র বিভিন্ন খিদমাতে নিয়োজিত রয়েছেন। এমনকি বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর নানা প্রান্তে মাওলানার অসংখ্য ছাত্র রয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারী বড় বড় পদে মাওলানার অসংখ্য ছাত্র রয়েছে। তিনি ছিলেন উদার হৃদয়ের অধিকারী। ‘উলামায়ে কিরামদের মধ্যে ঐক্যের সুদৃঢ় সেতুবন্ধন রচনাই একমাত্র মাওলানার কাম্য ছিল। কথিত আছে যে, তোমাদের মাঝে কোন মেহমান আসলে তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলুন, তাদেরকে সম্মান করুন, তা মাওলানার মাঝে বিদ্যমান ছিল। তিনি (মাওলানা) নবী করিম (সা.)-এর হাদীসকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করতেন। আর তা হলো; নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন,  ‘যে আল্লাহ তা’য়ালা এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার উচিত মেহমানদের সম্মান ও সমাদর করা।’  রাতের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কুরআন তেলাওয়াত তাফসীর, হাদীস অধ্যয়ন এবং বিভিন্ন কিতাবাদী দিন ও  রাতের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অধ্যয়ন করতেন। তিনি কঠিন বিপদের মুহূর্তেও ধৈর্য্যহারা না হয়ে বরং সকলের সাথে পরামর্শ করে তার সমাধান করে নিতেন। তবে তিনি মনে করতেন কুরআনের বাণী “নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা  তিনি সাহায্যে বিপদের মোকাবিলা করতে সক্ষম। যেমন আল্লাহর বাণী “ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” এ  বাণী পালন করে চলার চেষ্টা করেছেন। নিম্মোক্ত আয়াতটিকেও জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে ও দু:খে সুখে স্মরণ করে থাকেন। আর তা হলো, “ কল্যণকর যা কিছু এসে থাকে, তা আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ হতে আর অকল্যাণকর যা কিছু এসে থাকে, তা নিজেদেরই কৃতকর্মেরই ফল।”    তাই এব্যাপারে কোন দুঃখ করে লাভ নেই। আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় স্বরূপ বার বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ‘সুবহানাল্লাহ’ ‘আল্লাহু আকবর’ প্রকাশ করে থাকেন এবং অকল্যাণকর বা মন্দ প্রাপ্তির জন্য আল্লাহ তা’য়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা স্বরূপ ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ প্রকাশ করে থাকেন।

উল্লেখ্য যে, মাওলানার জানাযায় অংশপ্রহণ করা আমার সৌভাগ্য হয়েছিল। জানাযায় প্রচুর লোক হয়েছিল। যার সংখ্যাধিক্য ছিল দেশের নামকরা ‘আলিমগণ। সমগ্র বাংলাদেশে যে বিশিষ্ট কয়েকজন ‘আলিমে দ্বীন কুরআন ও হাদীসের সঠিক পথ নির্দেশনায় পথহারা মানুষকে আলোকদীপ্ত সোনার মানুষ গড়ার জন্যে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছিলেন এবং নিজেকে মানব সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে আল্লামা ফখরুদ্দীন ছিলেন অন্যতম। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক আদর্শ মানুষ। শিক্ষকতায়-প্রশাসনে, জ্ঞান সাধনায়, সমাজ সেবায়, মানব সেবায়, মেহমানদারীতে, সমাজ সংস্কারে, ইবাদত-বন্দেগীতে, পাঠদানে, লিখনীতে, গবেষণায়, কুরআন-হাদীস ও ফিকহ চর্চায়, শিক্ষামূলক রসালো ইসলামী কাহিনী বর্ণনা এবং যুক্তিতর্কে তিনি ছিলেন ঈর্ষনীয়। তিনি ছিলেন ‘আশিকে রাসুল, আল্লাহর ওলী এবং ধর্ম প্রচারক। তিনি নিষ্ঠাবান, পরহেজগার ব্যক্তি, জ্ঞান বিতরণ, আত্মীয়তার  বন্ধন রক্ষায়, দ্বীনের দাওয়াত ও ইসলামের আলো সম্প্রসারণে নিরলস কাজ করেছেন। বস্তুত: বিশুদ্ধ তা’লীম-তারবিয়্যাত, কঠোর অধ্যবসায়, পর্যাপ্ত মুজাহাদা, নির্জনে শেষ রাত্রে আল্লাহর জন্য কান্নাকাটি করা, ইখলাছ ও লিলল্লাহিয়াত ও মানব সেবায় একজন জনদরদীর তালিকায় তিনি স্থান লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।

এ মহান জ্ঞান সাধককে আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।



চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবেক ডীন, ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


যেভাবে খেলার সাথী হারিয়ে গেলো...

যেভাবে খেলার সাথী হারিয়ে গেলো...

 



যেভাবে খেলার সাথী হারিয়ে গেলো...

সাহেদ বিপ্লব


আজ সুমির কথা বেশ মনে পড়ছে। কি মায়াবী ছোটখাটো মুখটা ছিলো তার! সে ছিল আমার খেলার সাথী। ছোটবেলায় বাবা মাকে হারিয়েছে। আমার থেকে পাঁচ ছয় মাসের ছোট। একদিন আমাদের বাসা ভাড়া নিতে আসলেন তার নানা। সে মাকে বলল অনেক খোঁজাখুঁজি করে আপনাদের বাড়িটা আমার ভালো লেগেছে। এই কারণে আপনাদের বাসাটা ভাড়া নিতে চাই। আমার নাতনি আপনাদের বাড়িতে আপনার মেয়েটির সাথে দিব্বি খেলতে পারবে। আমার নাতনিটির এই জগতে আপন বলে কেউ নেই। বাবা নেই মা নেই। কোথা থেকে দানবের মত একটা গাড়ি এসে তাদেরকে কেড়ে নিলো। আমি এখন মেয়েটাকে নিয়ে কি যে করি।

তারপর থেকে সে আমার খেলার সাথী। আমার সুখে দুঃখে। একসাথে ফুলের মালা গাঁথি। এক সাথে পুতুল খেলি। ছোট ছোট নৌকা বানিয়ে বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে  দেই। এটা ছিলো আমাদের বৃষ্টির দিনের খেলা।

আমি স্কুলে যেতাম আর সুমি স্কুলে যেতো না। আমার মায়ের সাথে আঠার মত লেগে থাকতো। মার সব কাজ করে দিতো। বলতো কাকিমা আলুটা কেটে দেই। কলপাড় থেকে পানিটা নিয়ে আসি। মরিচটা  বেটে দেই। কোনদিন মাকে কাজের আদেশ দিতে দেখিনি। মা কিছু বলার আগেই সব কিছু রেডি।

আমি যখন রাতে পড়ার টেবিলে বসতাম সুমি এসে আমার পাশে বসতো। আমি কীভাবে পড়ি সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতো এবং মাঝে মাঝে আমার সাথে পড়ার চেষ্টা করতো।

আমি একদিন জানতে চাই সুমি তুই পড়তে চাস। হ্যাঁ আমি পড়তে চাই। তুমি কি সুন্দর ভাবে মাথা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে পড়ো আমার বেশ ভালো লাগে। আমার মা বাবা বেঁচে থাকলে তোমার মত স্কুলে যেতাম। তোমার মতো পড়তাম বলেই একটা দীর্ঘশ^াস ছেড়ে দিলো।

সুমির কথা শুনে আমি খুব কষ্ট পেলাম।

তোকে আমি পড়াবো। তারপর থেকে ও আমার বই পড়তো আমি ওকে পড়াতাম।

কিছু দিনের ভেতর দেখলাম সুমি আমার চেয়ে অনেক ভালো পড়তে পারে। হঠাৎ একদিন ওর নানা মারা গেলেন। গ্রামের মানুষ এসে সুমির নানাকে গোছল করালো সুমি এক ভাবে নানার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো একটুও চোখ সরালো না। যখন গ্রামের মানুষ সুমিকে টেনে সেখান থেকে সরাতে চেয়েছিলো কিন্তু কোনো ভাবেই সরাতে পারছিলো না।

অবশেষে মা এসে বললো সুমি উঠে আয়। পৃথিবীতে কেউ বেঁচে থাকে না। সবাইকে একদিন চলে যেতে হয়। তোর নানাকে কবর স্থানে নিয়ে যাবে। মার কথা শুনে সুমি উঠে এসে আমার মায়ের বুকে পড়ে অনেক কাঁদলো আর বললো আমার আপন সবাই চলে গেলো আমার তো আপন বলে কেউ রইলো না।

মা বলল তোর কেউ রইলো না মানে কি? আমি আছি রিবা আছে। আজ থেকে আমি তোর মা। আমাকে একবার মা বলে ডাক।

সুমি মা বলে ডাক দিয়ে মার বুকে জড়িয়ে থাকলো অনেকক্ষণ। তারপর থেকে দেখিনি মা আমাকে আর সুমিকে আলাদা ভাবে দেখেছে। একদিন সুমিকে স্কুলে ভর্তি করা হলো। সে এখন আমার সাথে স্কুলে যায় আর বাড়ি এসে মায়ের সাথে আঠার মতো লেগে থাকে। মা বলে এখন যা স্কুলের পড়াটা করতে যা। এখন আমি একাই পারবো।

সুমি বলতো আমার বেশি পড়া লাগে না। একটু পড়লেই মনে থাকে। আসলেই তাই হতো আমি এতো পড়া করতাম কিন্তু সুমি একটু এসে বইগুলো নাড়াচারা করলেই সব পড়া হয়ে যেতো। সবার কাছে পরিচয় দিতাম আমার ছোট বোন হিসাবে। 

আমরা ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম। অনেক চেষ্টা করলাম সুমির চেয়ে ভালো রেজাল্ট করবো কিন্তু হলো না। এস.এস.সি তে ভালো  রেজাল্ট করলো সুমি আমরা কলেজে ভর্তি হলাম। মাঝে মাঝে আমাদের দুই বোনকে দেখতে আসতো। মা চেয়েছিলেন আমাদের দুই বোনকে বিয়ে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচবেন। ছোট বেলা বাবা মারা  গেছে। তাই বিয়েটা হলে মা বাঁচে কিন্তু বার বার যারা দেখতে আসতো তারা সুমিকে দেখে পছন্দ করতো কিন্তু মা চাইতো আমাকে বিয়ে দিবে আগে। সুমিও চাইতো আমার বিয়েটা আগে হোক কিন্তু শেষ পযর্ন্ত সুমির বিয়েটা হয়ে গেলো।

ভালো ছেলেটা দুবাই থাকে অনেক টাকা। বিশাল বাসা অনেক করে সাজিয়েছে। সুমি খুব খুশি মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসলে সারাক্ষণ সেই বাসার গল্প করতো আর বলতো তোমাদের ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারবো না। তোমাদের জন্য আমার কপালে এতো সুখ। আমি বলি বাদ দে সেসব কথা তোর কপালে ছিলো তাই হয়েছে।

ওর স্বামী বিয়ের ছয় মাস পর দুবাই চলে গেছে। এখন সুমি একাই বাসায় থাকে। সাথে কাজের বুয়া। মাঝে মাঝে ফোন করে টাকাও পাঠায়। একদিন খবর এলো সুমির একটা মেয়ে বাচ্চা হয়েছে। আমরা খুব খুশি। একদিন আমারও বিয়ে হলো গেলো। আসা যাওয়া অনেক কমে গেছে। আমি আমার সংসার বিয়ে ব্যস্ত আর সুমি তার সংসার নিয়ে। একদিন মা মারা গেলে আমরা দুইবোন অনেক কাঁন্না করে মাকে কবর দিয়ে এলাম।

একদিন আমার সাথে দেখা করে গেলো বললো কাল দুবাই  স্বামীর কাছে চলে যাচ্ছি। আমি মন ভরে দোয়া করলাম। মেয়েটাকে অনেক আদর করলাম। বললাম দেখতে তোর মতো হয়েছে। সুমি হাসলো। এর পর কয়েক বছর দেখা নেই। বলা চলে যোগাযোগ নেই।

হঠাৎ একদিন পাঁচ ছয় বছরের একটি মেয়ে নিয়ে একটি বৃদ্ধ লোক আমার ঠিকানায় এসে হাজির। বৃদ্ধ জানালো দুবাইতে সুমির বাসায় পাশের রুমে থাকেন। তারপর একটু থেমে আবার বললো তোমার নাম কি রিবা?

জি¦ হ্যাঁ।

সুমি তোমাকে এই চিঠিটা দিয়েছে।

আমি চিঠিটা খুলতেই চোখ পড়লো গোটা গোটা অক্ষরে লেখা। এই লেখা আমার অনেক বছরের পরিচিত।

প্রিয় বোন,

আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমরা আমাকে সুখি করতে জীবন ধরে চেষ্টা করেছ কিন্তু আমার কপালে সুখ সইলো না। যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল সে ভালো না। বাংলাদেশ থেকে এই ভাবে বিয়ে করে কিছু দিন ঘর করে তারপর দুবাইতে এনে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়। আমাকে বার বার বিক্রি করে দিতে চেয়েছে কিন্তু আমি মেয়ের দোহাই দিয়ে এত দিন থেকেছি আর বলেছি পাঁচ ছয় বছর মেয়েটির বয়স হলে কোথাও কারো কাছে পাঠিয়ে দিবো তারপর তুমি আমাকে বিক্রি করে দিও। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম তোমার কাছে পাঠিয়ে দেবো। যাতে আমার মেয়ে জানতে না পারে তার মা একজন পতিতা। তাই তোমার কাছে আমার মেয়েকে পাঠালাম। আমার মেয়েকে তোমার পরিচয়ে মানুষ করবে। 

ইতি

সুমি।

চিঠি পড়া শেষ করে সুমির মেয়েকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে আমি অনেকক্ষণ কাদলাম এবং বৃদ্ধর কাছে জানতে চাইলাম সুমি এখন কেমন আছে? বৃদ্ধ কেঁদে দিয়ে বলল সুমি তো নেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই কথা শুনে মাথা ঘুড়তে লাগলো তারপর কি হলো বলতে পারবো না। এক সময় ভালো লাগছে তারপর চোখ মেলে দেখি অনেকগুলো মানুষ আমার আশে পাশে চুলগুলো ভিজা। মনে হলো জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলেছিলাম। তারপর সুমির মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে বললাম আজ থেকে আমি তোর মা। 


পদাবলি

পদাবলি

 




বসন্ত কাহিনী

নূর এ সিকতা 


লোকে বলে-

বসন্ত এলে ফুল ফোটে, 

সুবাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় আশে-পাশে;

পাখিরা গায়, ভ্রমর আসে, ফুলে ফুলে সাজে উদ্যান।


লোকে বলে তাতে কি?

মূর্খ পথিক তো জানে

বসন্ত কাহিনী।


বসন্ত এলে-

ঘর ছাড়া পথিকের ভাবনা বাড়ে

রোদে পুড়ে শ্যামল দেহ

পুকুর শুকিয়ে যায় 

বক পক্ষীর চিন্তা ধরে

কাঠ ফাঁটা রোদে শুকনো খাল-বিল। 


জল নেই-

তৃষ্ণার্ত কাকের কা কা ধ্বনির অস্থিরতা

বাড়ে, হাপিত্যেশ করে জন-মানব।

নৌকা উজান বেয়ে চলে না আর

মাঝিদের ঘাম ছুটে দর দর।


বসন্ত এলে-

শুকিয়ে যায় বুক

বৈশাখের আগমন মনে তুলে ভয়

চালা ঘর জরাজীর্ণ 

উড়ে যায় কোন সময়।

 

বসন্ত এলে- 

কোকিলের আনাগোনায়

কাকের ছেলে হারানোর ভয়।

ঘরে ঘরে জল বসন্ত 

ছেলে, বুড়ো যন্ত্রণায় অস্থির। 


বসন্ত এলে- 

ব্যথায় ককিয়ে ওঠে মন

ছেলে হারা মায়ের স্বকরুণ চিৎকারে।



সম্পর্কের কথা

মহাজিস মণ্ডল


সে এক সবুজপাতার ভিড় পেরিয়ে

হেঁটে চলেছি ধানশালিকের দেশে

নদী তার বুকের শব্দে গেঁথেছে গান

চারপাশে ছড়ানো নীল নির্জতার অক্ষর 

আর আমি আকাশের রোদ্দুরের আলোকে  

লিখে রাখছি যাবতীয় সম্পর্কের কথা

হৃদয়ের অনন্ত নক্ষত্রমালার গভীরে...



যান্ত্রিকতা

রুশো আরভি নয়ন


আমার কথার কম্পন হাওয়াতে ভেসে ভেসে এখানে ওখানে ছুটে বেড়িয়েছে বহুকাল। ছুঁয়ে এসেছে নীল আকাশ, ছুঁয়ে এসেছে পৃথিবীর সীমান্ত, তবু তোমার তুলতুলে কান স্পর্শ করতে পারেনি কখনো।

তোমার কান স্পর্শ করছে ফেসবুক, টুইটারের নোটিফিকেশন আর তুমুল যান্ত্রিকতা। 

এই যে রোদপোড়া দুটো হাত দেখছো, এই হাত দুটো তোমার কোমল হাত ছুঁতে চেয়েছিলো বহুবার। নানান অজুহাতে প্রত্যাখ্যান করেছে তোমার পাষাণ হৃদয়। আমার হাত ছুঁয়ে এসেছে সবুজ ঘাস আর ভেজা মৃত্তিকা, তিনশো পাতার বইটাও ছুঁয়ে এসেছে কয়েকশবার, তবু তোমার কোমল হাত স্পর্শ করতে পারেনি কখনো।

তোমার হাত স্পর্শ করেছে ল্যাপটপ, মোবাইলের আবরণ আর কঠোর যান্ত্রিকতা।  

তোমার বাম পাশের স্তনের ঠিক নিচে, মন নামক জায়গাটিও ছুঁতে চেয়েছে বেয়ারা মন। কোনভাবেই একবিন্দু ঠাঁই দাওনি তুমি, ছুঁড়ে ফেলেছো চিলেকোঠার বাইরে। আমার মন ছুঁয়ে এসেছে গরীব কাঙাল, রাস্তার টোকাইকেও ছুঁয়ে এসেছে বারংবার, তবু তোমার কংক্রিট মন স্পর্শ করতে পারেনি কখনো। তোমার মন স্পর্শ করছে অবাধ্য বিলাসিতার আস্তরণ আর অসহ্য যান্ত্রিকতা।




নিয়তিবাদ

মো. জাহিদ মিয়া


সমুদ্র ডাকে না । আমি ডাকি অহর্নিশ।  সহজ ধাঁধায় পায়ে আঁকি ঝর্ণার প্রতিচ্ছবি। নদী গড়াবে নারীর যোনিগৃহে; স্বাভাবিক। পুরুষ দেবতাদের আধিপত্যেই ভিজে উঠবে ক্লেদার্ক্ত নজিরার কালো চোখ।

পৃথিবীর পাখিরা ঠোঁটের নৈপুণ্যে খোঁজবে খড়; এটা অনিয়তিবাদী কাঠামো। জীবনের স্বার্থে পিঁপড়ের সমরনীতি আর বৃষ্টির গতানুগতিক পয়ারেই প্রতিষ্ঠা পায় কৃষকের স্বপ্ন ও গতিপথ।

নিয়তির কপোলে জুতা সেলাই- ব্যর্থতারই চক্রান্ত। সময়কে ডেকোনা- সে আপন গতিতেই বহমান। চাঁদের কলংক খোঁজা মানে নিজেকেই শিকোয় ঝুলিয়ে রাখা; আঘাট ঘাট হয়ে উঠার গল্পই বিরল।

নিয়তি কখনো ঝরে না। আমরা ঝরায় বলেই সে প্রাসঙ্গিক। ধৃষ্টতার যেমন নিজস্ব আড়ৎ নেই

তেমনি মাছবাজারে পান বিক্রির ছুতা এক গাছের বাঁকল অন্য গাছে লাগানোর মতোই পেরেশানি।


আমরা নিয়তির ঈশ্বরকে ডেকে কাইল। গাঙ্গের মরা কোডাদা ট্যাইনা আনি মহাসড়কের পৈঠায়।




নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে

ইসলাম সাইফুল


তোমার আকাশ কতটুকু সুউচ্চ

দেখিতে আমি সিঁড়ি হতে চাই

আকাশের শরীরে যতো রং

মন চায় মায়াবী চোখে রংয়ের ধরণের গণিত শিখি

রং কেলিতে ছোপচুপে নিজেকে ভিজাই

ডায়েরির পাতায় পাতায় শুধুই তোমার ইতিহাস লিখি

তোমার চোখের পাতায় সৌন্দর্য অপলক দেখি

তোমার লিপস্টিক ঠোঁটের বাহার ছবি আঁকি

তোমার মধুময় কন্ঠধ্বনি শুনি বারবার

জ্ঞানের গভীরতায় ডুব দিয়ে ভিজি বার বার কিছু শিখি

সুবাস নিই নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে হাতে জুঁই।




নক্ষত্রের গোপন অভিমানপত্র 

অনিন্দিতা মিত্র    

                                                    

রাতের আকাশ থেকে ঝাঁক ঝাঁক নক্ষত্রের অভিমান ফিরে আসে মাটিদেশে, কালপুরুষের সুডৌল গ্রীবায় স্মৃতির আদিম ক্ষত। তোমার চোখের তারার মাঝে বিষাদের নির্মল অশ্রুবিন্দু। তুমি ঠিক জলভেজা সাঁঝবাতির মতো ! ক্ষয়ে ক্ষয়ে ছড়িয়ে দাও কামরঙা রঙের মৃদু আলো। বনভূমির নির্জন প্রান্তরে ভিজতে থাকে স্মৃতির অভিমানপত্র।                     

২ 

শ্রাবণের ঔদ্ধত্যপূর্ণ খেলা চলে তোমার শরীর জুড়ে, জল নূপুরের শব্দ বাজিয়ে এগিয়ে আসে শরতের মেঘ, তোমার দুচোখে শিশির ধোয়া আকুতি, ভালোবাসা আড়াল খোঁজে। মৃত জোনাকি মরে গিয়েও আলো দেয়, একার ভেতর একা হতে হতে পুড়তে থাকি আমি।  




আলোক বর্ষ দূরত্ব

জাহিদ আজিম


হৃদয়-বাঁধনটা ছিড়ে যেথায় আজ তোমার অবস্থান

সেটা তোমার জন্য স্বপ্নে স্বপ্নে ছাওয়া এক সুখ-নীড়,

ভালোবাসার সুবাস মেলে কতো ফুল’ই হেথায় ফোটে

সকাল-সাঝে মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির গানের ভীড়।


আজ তুমি যে অন্য কারো জীবন জুড়ে নব-নক্ষত্র

যেমন চেয়েছিলে ঠিক তেমনি সে প্রতিদিন সাজায়,

তুমি তো আলোড়িত হও নিশিদিন আনন্দ-হিল্লোলে

ঝর্ণার ঝিরিঝিরি গান, দক্ষিণা বাতাস শিস বাজায়।


আজ আমি তোমার হতে এক আলোক বর্ষ দুরত্বে

ছায়া পথে চলতে গিয়ে কৃষ্ণগহ্বরেই ডুবি বার বার,

সুখ তারাটা এখান থেকে বড় ঝাপসাই যেনো লাগে

কল্প-জোনাকটার সাধ্য কি আছে তোমাকে ছোবার?



ঘুমের ঘোরে 

আতিক এ রহিম 


আশ্বিনের শেষ বিকেলে বৃষ্টি হচ্ছিল 

তন্দ্রা আসে আমার চোখে 

শরতের উচ্ছলতা প্রাণের স্পন্দন লাগে আমার নাকে মুখে 

আমি বিভোর ঘুম কাতুরে হয়ে ডুবে আছি আকণ্ঠ পর্যন্ত

তুমি এলে আমার কাছে  শিউলি ফুলের কাছ ধরে আমার শিয়রে।

আমিতো অপেক্ষায় আছি বহুদিন ধরে তোমার জন্য 

প্রথম দেখা হয়ছিল যেমন আকুতি ভরা বোবা কান্নায়

কাউকে বুঝতে দেইনি না আমি, না তুমি 

ভালোবাসার রূপ কী এমনই সুখ, দুঃখ সংমিশ্রণে দলিতমথিত! 

দেখ আশ্বিনের মধু পূর্ণিমা রাত অথচ; জৌলুস হিন পৃথিবীর মানুষেররা গভীর ঘুমে নিমগ্ন 

তুমিবিনে আমার আজও রাতের চাঁদ, জোসনা, ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনে শুনে অশ্রু পতিত হচ্ছে 

এর নাম কী তুমি বলতে পার? 

আমি বলি এর নাম প্রেম, ভালবাসা, বিচ্ছেদ, বির্সজন না ঘুমের ঘোরে বসবাস।


শান্তি দিবসে শান্ত কথা...

 শান্তি দিবসে শান্ত কথা...

 



 শান্তি দিবসে শান্ত কথা

ওবায়দুল মুন্সী


২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত ৫৫/২৮২ নম্বর প্রস্তাব অনুসারে ২০০২ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব শান্তি দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। শান্তি সবার অধিকার’ ( জরমযঃ ঃড় চবধপব) শান্তির জন্যেই বিধাতা এই মহাবিশ্ব আর মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন। ‘ইসলাম’ মানে ‘শান্তি’, সনাতনে ‘ওঁম শান্তি, বৌদ্ধের ‘অহিংসা নীতি, ইত্যাদি সব ধর্মের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে শান্তি। ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই! সংঘাত শুধু ধর্মজীবী ও মানুষের মধ্যে। কিছু মানুষ শান্তি প্রতিষ্ঠা করে আর কিছু মানুষ অশান্তি সৃষ্টি করে শান্তিময় পৃথিবীকে অশান্ত করে তুলেন। তাই সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য মানসিক ‘শান্তি’ মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগায়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে সব মৌলিক বিষয়গুলো থাকে তার মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘শান্তি’। আমরা কতদিনই বা বাঁচি অথচ একটু সুখ বা শান্তির আশায় কতো চেনা অচেনা পথ পেরোতে সম্মুখিন হতে হয় নানান পরিস্থিতির। বিশ্ব তথ্যমতে  শান্তিপ্রিয় দেশগুলো হলো- পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, কানাডা, অষ্ট্রিয়া, নিউজিল্যান্ড, আইসল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, কানাডা, জাপান। আসলেই কী উল্লেখিত দেশসমূহে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?

অদৃশ্য শত্রু করোনা ভাইরাসের আক্রমণে  সারাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন। চিনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া অদৃশ্য এই ভাইরাস বিশ্বের অনেক উন্নত  দেশকে ল-ভ- করে দিয়ে গেছে। অনেকে নিজের দেশ ছেড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে, অন্য মহাদেশে জীবিকার সন্ধানে ঘুরছে। এগুলো আমাদের পীড়িত করে। ৭৩ বছর পূর্বে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই  জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এবার ৭৩ তম শান্তি দিবস পালিত হবে। । ১৯৪৫ সালে যে লক্ষ্য নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এখন তা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ! আন্তর্জাতিক সংকটকালে সশস্ত্র সংঘর্ষের অবসান যারা চায়, জাতিসংঘকে  তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক আইন কাঠামো প্রণয়নের মাধ্যমে মানবাধিকার সংরক্ষণের দ্বারা জাতিসংঘ ব্যবহার করে কুটনৈতিক নিবারক। জাতিসংঘ সহযোগিতা করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গণতন্ত্রায়ণে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে জাতিসংঘ যুদ্ধের নেপথ্য কারণ বা উৎসসমূহ নির্মূল করে এবং শান্তিকে সংরক্ষণ করার কৌশল বাস্তবায়ন করে। পাশাপাশি মানবিক সাহায্য, শরণার্থী প্রত্যাবর্তন, জাতীয় অবকাঠামো মেরামত এবং পূর্ণগঠনে জাতিসংঘ সহযোগিতা করে এবং নির্মাণ করে শান্তির ছবি। 

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা, বিশ্ব শান্তি রক্ষার প্রয়াস জোরদার করে তোলা, বিরোধ সমুহের শান্তিপূর্ণ নিস্পত্তি এবং আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে বহু সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা। এইসব সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা কখনো ছিলো কার্যকর আবার কখনো বা অকার্যকর! বর্তমান জাতিসংঘকেক তাদের কাজের মাধ্যমে স্বীয় লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। 

১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের এক ঘোষণায় বলা হয়, স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত নীতিমালার প্রতি অশ্রদ্ধাই আর্ন্তজাতিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী। বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্তে নিন্দা করা হয়েছে শ্রদ্ধাবোধ। 

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জাতিসংঘের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হচ্ছে ১৯৮০ সালে ‘সান জোম্বে কোষ্টারিকায়’ শান্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। সেই সঙ্গে বার্ষিক উদ্বোধনের দিনকে আর্ন্তজাতিক শান্তি দিবস ঘোষণা। নিরন্ত্রীকরণ তৎপরতা, স্থল আইন নির্মূল অভিযান, বিভিন্ন দেশের সৈনিক, বেসামরিক পুলিশ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, মাইন পরিস্কারক, মানবাধিকার পর্যবেক্ষক, বেসামরিক প্রশাসন, ও যোগাযোগ বিষয়ক অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ সমন্বিত শান্তি রক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আইনগত ও রাজনৈতিক পদক্ষেপসহ শান্তি প্রসারে একটি নিরাপদ পৃথিবীর জন্য জাতিসংঘের কার্যক্রম বিশাল ও ব্যপক। সফলতা ও ব্যর্থতার স্বাক্ষী হচ্ছে দীর্ঘ ইতিহাস। তাই আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য একটি দূষণ মুক্ত শান্তির পৃথিবী উপহার দিতে পারলে তবেই বিশ্ব শান্তি দিবস সার্থক হয়ে ওঠবে। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সারা পৃথিবী হোক শান্তিময় ও সুখের আবাসস্থল, বিশ্ব শান্তি দিবসে এটাই কামনা রইলো।

হাছননগর, সুনামগঞ্জ।


শব্দমালা : সাদিক আল আমিন

শব্দমালা : সাদিক আল আমিন

 



শব্দমালা

সাদিক আল আমিন



একটা কবিতা ছাড়া আর কিছুই নেই দেবার


জন্মদিনে একটা কবিতা ছাড়া আর কিছুই নেই দেবার 

সতেরো বসন্ত পেরিয়ে ফুটলো যখন নতুন দিন,

তখন একটা কবিতাই বলে গেছে সব কথা কানে কানে

যদি কখনো আমাদের হতো দেখা!

দিতে পারতাম সতেরোটা গোলাপ, দিতে পারতাম ভাগ্যের রেখা...


জন্মদিনে একটা কবিতা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারি না

আমার তো নই ঈশ্বর!

হলে মুক্তোর মতো দানা দানা ঐশ্বর্য দিতাম

দিতাম তরতাজা কৃষ্ণচূড়া গুজে খোঁপায়

দিতে পারতাম সমুদ্রের সবুজ, আকাশের নীল

দিতে পারতাম শীতল বাতাস, হাসি অনাবিল

কিন্তু আমাদের দেখাই বা হলো কবে!

দিতে পারলাম না তাই জোনাকিঘুম, অবাধ মুগ্ধতার মাঠ

অপার প্রান্তরজুড়ে শালিকের ওড়াওড়ি, মৌন বৈরাগ্যপাঠ

পারলাম না দিতে এক টুকরো পাহাড়, আমার প্রিয় নদী

পারলাম না দিতে একটা শিমুল, পারতাম দিতে যদি!


জন্মদিনে আর কিছুই দিতে পারলাম না 

একটা কবিতা ছাড়া

অথচ দেখো, কবিতার নাম করে 

কতো কিছুই না দিলাম তোমায়!

হোক সেটা কল্পনায়, না দিতে পারার বেদনায়...



আত্মোৎসর্গে রাজি আছি তবে


যে বাঁধ জেগেছে এতোদিনে, ক্ষণে ক্ষণে

বুকের ভেতরÑ যে দূরত্বে দুটো পাখি উড়ে

গেছে পরস্পরকে ফেলে, সেসব আনমনে

আমি হারিয়ে ফেলেছি সত্যই, দূরত্বের কিছু 

অনাগত দিন আঁকড়েই আছি বেঁচেÑ

নাকি আরও ছিল কিছু শূন্যপ্রাপ্তির খাতায়?

জানা নেই বলে নরোম দুঃখ ছিটিয়েছি দানা দানা...

পাখিদিন উড়ে এসে তুলে নিলে অন্নশোক,

আমার প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেছে ভাবিÑ

ভাবি, যদি আবার কখনো বুকের ধমনীগুলো

থামিয়ে দেয় সূর্যরক্ত চলাচল, অনুভূতির খোরাক;

যদি মনপাখি আবার ধরা দেয় আগন্তুক শিকারিকে,

তখন আবার নিজের নির্যাসটুকু ছেঁচে ছেঁচে

তৈরি করবো অন্নশোক, অন্তিম আহার্য

ছদ্মবেশী দেবতারা আসলে নেমে, 

খুঁটে খুঁটে ভক্ষণ করবে আমাকে ওরা

হৃদয়বাঁধের পাশে, চিরচেনা মনদূরত্বে...

যেখানে পরস্পরকে ফেলে সরে গিয়েছিল

দুটো বিশ্ব, দুটো সত্ত্বা, দুটো অবয়ব 

কোনো এক কালে... 


আমাকে চিবিয়ে খেলেই যদি ঘুঁচে যায়

তোমাদের পারস্পরিক বিরোধ,

আমি আত্মোৎসর্গে রাজি আছি তবেÑ



চাইলেও আর পারো না


চাইলেই চলে যেতে পারি সবুজ পাহাড়ে, দূর মেঘদলে

চাইলেই চলে যেতে পারি অতল জলধিতে, আরও দূর নীলে

আত্মকথনের বুলি ভেসে থাকে তার দীঘল শরীরে 

চাইলেই পারি যেতে চলে অফিস-আদালত, কোর্ট-কাচারিতে

নগরে, বন্দরে, সীমান্তের একাকী প্রহরী হয়েও থাকতে পারি বেশ

পারি হতে বৃষ্টিভেজা ঘাস, ব্যস্ত সড়কের ওপর অবহেলায় 

পড়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া অথবা ঝরাকদম

পারি হতে নৈমিত্তিক ব্যবহার্য আসবাবÑ চশমা, মানিব্যাগ, সিগারেট

কিংবা তোমার নীলাভ সুগন্ধি রুমাল, নেইলপলিশ অথবা ভ্যানিটিব্যাগ


কেমন করেই যেন জড়বস্তু আমি খুঁজে পাই সমস্ত প্রাণ

কেমন করেই যেন তুমি টের পাওÑ কোথাও একটা ফাঁক আছে তবু

আমি চাইলেই যেতে পারি গোলাপ বাগানে, শুভ্র প্রাসাদে

চাইলেই দখিনের দীর্ঘতম শ্বাস হয়ে তোমাকে ছুঁতে পারি খুব...


অথচ তুমি চাইলেও পারো না সেসব

আমার এ অব্যক্ত আহ্বান তোমার পৃথিবীতে ঠোকর খেয়ে আসে ফিরে

এমন অদৃশ্য এক বাঁধ বলয়জুড়ে তৈরি করেছো যে,

চাইলেও আর পারো না বলয় ভেঙে মুক্তপ্রাণ ভালোবাসতে