পদাবলি

পদাবলি


দুই নদীর কাব্য
শাহীন মাহমুদ

ধরো তুমি আমি দুটি নদী
নদীর আপন দুটি ধারা ভিন্ন ভিন্ন গতিপথ
একি মোহনায় মিল মিশে একাকার ।
এবার তোমার সীমানা তুমি বুঝে নাও নদী, পারবে?
এক নদী আরেক নদীরে সুধায় ;একি মিলন মোহনা
না কি জলের বিলাপ;তেলিবাড়ির অভিশপ্ত বউ শুশুক বালা
বনে যায়-খোলা স্তনে বিস্ময়ে ভেসে উঠে আবার ডুবে ।
অবিকল মানবী ।
গহীন জলের সীমানা মাপে সে আবার কোন সার্ভেয়ার !
এক নদী আরেক নদীরে সুধায় ;যদি পারো করে নাও তোমার
সীমানা উদ্ধার ।    
শুশুক নারী মিলন মোহনায় মালটিকালার ঝড় দেখো
জলের গহীনে যাও...দূরে যোজন যোজন দূরে ।  


মায়ের মুখ
বিবিকা দেব

বট বৃক্ষের ন্যায় ছায়া সুশীতলতা ঘিরে রেখেছে ভূমিষ্ঠ
আদুরে সন্তানদের । হাসিতে প্রশান্তি, শাসনে অগ্নিবর্ণ আর
সাফল্যে আনন্দময়ী । শৈশবে ফিরে যায় মায়ের গায়ের গন্ধে ।
শত কষ্টে জর্জরিত আঁচলে খুঁজে পায় স্বগীর্য় অমিয় ধারা ।
সদা দু’হাত তুলে নিবেদনÑ “সন্তান যেন দুধে ভাতে থাকে”
সূদুর দিগন্তে পাড়ি অপলক দৃষ্টিতে ভাসে শান্ত ¯িœগ্ধ মমত্ববোধ
আমার প্রিয় মায়ের মুখে ঊষার আলোয় মৃয়মান হাসি ।


বৈকল্য ভালোবাসা
এস এম এ হাফিজ

বৈকল্য ভালোবাসা হামাগুড়ি দেয়
বঞ্চনার নগ্ন তপ্ত বালুকাবেলায়
অজ¯্র স্বপ্নের পাখিরা ডানা ভাঙা কষ্টে
মুখ থুবড়ে পড়ে মূক বেদনায়।

তুমি কি পাষাণে গড়া প্রালহীন প্রতিমা?
সহসা কষ্টের অগ্নিপাতে আমাকে
ঝলসাও নৈর্ব্যত্তিক অহংকারে
তোমার অবহেলার নিষ্ঠুর শরে
ঢলে পড়ে সযতেœ  গড়া আমার
গহীণ আরণিক ভালোবাসা...


তুমি আমার ঘামের কালি
যাহিদ সুবহান

আমি তো শ্রমিক শ্রেণির
আমার গাঁইতি কুঠারের জীবন
তুমি অভিজাত, তোমার প্রভুর আসন
তোমার হৃদয়ের বেখেয়াল হাঁটে তাই
সস্তায় কেনো-বেঁচো আমাকে প্রতিদিন
তুমি আমার শ্রেষ্ঠ কবিতার পান্ডুলিপি
তোমাকে পাঠ করি নিশিদিন
জুঁই তুমি আমার ঘামের কালি
আমি সেই কালিতে লিখে যাই জীবনের কবিতা ...

ইশারা
সাজ্জাক হোসেন শিহাব

একদিন ফেসবুকে দেখি মেয়েটার প্রেমছবি-
আকাশভাঙ্গা বৃষ্টিতে ভিজে দেহে লেপ্টে থাকা জামা
নিয়ে এক ছবি এলো আমার ইনবক্সেও। জলের
তা-বে আমি এমনি অস্থির হয়ে রই। আমি তো
লালন নই। মেয়েটি জলছবি দিয়ে বলে- কবি,
কেমন হয়েছে? আমি জলের তা-বে ভেসে বলি-
শিরা-উপশিরায় ঝড় তোলার মতো। ষোড়শী চুপ
থাকলো কিছুক্ষণ। সে নীরবতা এখনও আছে-
মাঝখানে ঘটে গেছে এক ঘটনা। মেয়ে একটা
কবিতা লিখেছে। যার নাম হলো- কবির অপেক্ষা।
কবি আজো অপেক্ষায়। মেয়েটি হয়তো জানে না যে
কবিরা বয়সী হলে লালন হয়, লালন হয়।


যাপিত জীবন
মাহদী হাসান

দুপাশে দু’টো পাহাড়- মাঝে বিস্তৃত কালো রাজপথ। ভ্রুণের গতিতে ছুটে চলছে তৃষ্ণার্ত মন। জংলী ফুলের বুনো সুবাসে আমি পৌঁছে যাই চরম মূহুর্তে, ঠিক আরশে মোয়াল্লার কাছাকাছি। সরলরেখায় একটা নির্দিষ্ট ভগাঙ্কুরের দিকে ধাবিত হতে হতে- নব্বই ডিগ্রি এঙ্গেলে বাঁক নেয় কালো রাজপথ। এখানে আমি বুক ভরে নিতে পারি বিশুদ্ধ নিশ্বাস। তারপর, হঠাৎ করে মনে হলো- আমি উত্তাল সমুদ্রে রোমাঞ্চিত এক সওদাগর। আমাকে ধেয়ে নিয়ে চলা বজরা উঠছে, আর নামছে। মউজের তালে তালে দুগ্ধফেননিভ ঘন কুয়াশার রেশ লেগে থাকে আমার ঠোঁটে। আমি প্রত্যেক বন্দরে সওদা করি। একই জমিন, স্বাদে ভিন্নতা! যেতে যেতে আমি রেখে যাই পদচিহ্ন। কাঁদতে থাকে আগ্নেয়গিরি হতে উদগিরিত  লাভা। তাদের কোথাও ঠাঁই নেই। উচ্ছিষ্ট বীজ। মরা বীজ।

এখানে প্রকৃতির অর্গাজমে স্নান সারে আমার মতো অসংখ্য পাপী। আমার উচ্ছলতায় স্বর্গীয় হুর-গেলমান এসে শরিক হয়। ধরা দেয় নিষিদ্ধ গন্ধম। লবণাক্ত জলে ফের ছুটে চলা- তওবায় ফিরে পাই যৌবনের দীপ্ত জ্যোতি। ক্ষুধা তাগাদা দেয়। আবার সওয়ার হই, নির্দিষ্ট ভগাঙ্কুরের দিকে।


প্রশান্তির খোঁজে
নাফছি জাহান

এক অফুরন্ত শান্তির নেশায়, আজ ধাবমান আমি-
আমার ছোট্ট গাঁয়ের সীমানায়।
যেখানে আমার জন্যে অপেক্ষমান আছে
প্রশান্তিময় বায়ু আর অতি নিগূঢ় ভালোবাসার মিশ্রণ,
নদীর পাড়ের ছোট্ট আঙিনায় আছে এক ছোট্ট ছাউনি,
যেখানে বধূ আমার পথ চেয়ে আছে, আছে গভীর প্রতীক্ষায়।
যেখানে লাল পাড়ের শাড়ি পড়ে
বধূ আমার- উনুনের জ্বলন্ত আগুনে রাঁধবে পরম যতেœ,
পিড়িতে বসে আমি- দেখব তাকে মাতোয়ারা হয়ে।
নাকে নোলক, হাতে কাঁচের চুড়ির ঝনৎকার,
পায়ে আলতা,আর চুলে লাল ফিতা।
আহা! কি অপরূপ সাজে সজ্জিত হবে বধূ আমার,
লাজুক চাহনীতে ক্ষণে ক্ষণে দৃষ্টি দেবে আমার পানে।
বহু বিস্তৃত পথ পাড়ি দিয়ে
গন্তব্য আমার- ছায়াঘেরা গাঁয়ের পথে...
এ গাঁয়ে সন্ধ্যে হলে জোনাক জ্বলা মিটিমিটি আলো
আলোকিত করে দেবে- বিদ্যুৎহীন গ্রামকে।
ছায়াঘেরা কুটিরের আঙিনায় দাঁড়িয়ে,
বধূর সহিত আকাশের চাঁদ দেখব অপলকে।
শহরের কোলাহল, উত্তপ্ত বায়ু হতে
কিছুটা মুক্তি পাব, নির্মল বায়ুতে-নিঃস্বাস নেব।


বোধ
দেলোয়ার হোসাইন

বেদনার কোন আদালত নেই
মন আর মোহের রিরোধ নিয়ে
আমরা ‘নীল’ আদালতে
আত্মসমর্পণ করি...!

২.
সব চোখেই নদী আছে কিন্তু
সব নদীতে পানি নেই
কিছু নদী মরা, কিছু নদী
অভাগা আর কিছু নদীতে
মানুষ শুধু কামড়াকামড়ি করে...!

৩.
দুঃখের কোন রঙ থাকতে নেই
কেননা সব রঙের মানুষ
দুঃখ লালন করে...!



শ্যাওলা ভর্তি পদ্ম
ফখরুল হাসান

খাটিয়াল বিলে চলে সোনালী মাছের জল উৎসব
হঠাৎ উড়ন্ত চিলের ঠোঁটে শোভা পায় বিলের মাছ
ওপারের নিতাই বাবুর পুকুরে ঠোঁট থেকে খসে পড়ে ।
পদ্ম ফোঁটা জলে দেখবে না কেউ সোনালী মাছের নৃত্য
কখনো আর হবে না সাদা বকের প্রণয়ের ডুবসাঁতার
ডানা ভাঙ্গা বকের চোখে মুখে বেদনার নীল জল ।
নেত্রপল্লবে সাঁতার কেটে কেটে ক্লান্ত সাদা বক ।
আহত বক ভেসে যায় ছাতল বিলের ঘোলা জলে
ডানা ভাঙ্গা বকের অশ্রুর জোয়ারের ভেসে যায় পদ্ম বিল ।
স্রোতে ভেসে খালের কিনারে পরে রয় স্মৃতির পান-কৌড়ি ।
বুকে শ্যাওলা ভর্তি পদ্ম নিয়ে উড়ে যায় উড়ন্ত চিল
ডানায় শ্যাওলা মেখে পরে থাকে নিঃসঙ্গ বক পাখি  ।
প্রণয়নের বিলে নিজেকে বিসর্জন দেয় ডানা ভাঙ্গা বক ।




কবি
শাহিন আলম

আমাকে আর যা-ই বলেন
অন্তত কবি বলবেন না
কবিদের হৃদয় খরগোশের মত নরম
কবিদের অনুভূতি
পুলসিরাতের মত ধারালো

কবিরা জানে
নীল গোলাপের সুবাস
কতদূর থেকে পাওয়া যায়
আমি তা জানিনা
আমি জানি
একটা গ্রেনেড বিস্ফোরণে
ঝরে যেতে পারে কতটা প্রাণ

কবিরা জানে
এ জগত সংসারে দুঃখ কাকে বলে
আমার সিলেবাসে দুঃখ বলে কিছু নেই
কারও মৃত্যু যন্ত্রণা দেখলে
আমি হো হো করে হাসতে থাকি
লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের গর্বে ভরে ওঠে মন।

আমাকে আর যা-ই বলেন
অন্তত কবি বলবেন না
একজন কবি ভালবাসার জন্য
মাথার চুল ছিঁড়তে পারে
ভোরের শিউলী কুড়িয়ে গাঁথতে পারে মালা
রক্ত রাঙা চোখ নিয়ে কাটাতে পারে রাত
অথচ আমি
রাতের আঁধারে হাঁটতে থাকি
বারুদের গন্ধ মাখা বাতাসে
নিঃশ্বাস করি চাষ

কবিদের সাথে রয়েছে আমার ব্যাপক ব্যবধান
কবিরা জীবনের কথা বলে
আমি মৃত্যুর কথা বলি
মৃত্যুকে বয়ে বেড়ায় পিঠে
তাই সম্মানিত পাঠক
আমাকে আর যা-ই বলেন
অন্তত কবি বলবেন না।


গল্প- স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা

গল্প- স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা



স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা
নূরে জান্নাত

-আমি স্টেশনে এসেছি কন্যা।
-একটু অপেক্ষা করুন আসছি।
ফোনে স্ক্রীনে এস এম এস শেষে কন্য রওনা হয় স্টেশনের উদ্দেশ্যে।
আজ তার বন্ধু আসবে।এক সময় স্টেশনের আশে পাশে চারটি চোখ খুজে বেরাচ্ছে দুটো মুখ কে।
ফোনে কথা শেষে হঠাৎ মুখো মুখি হয় দুই বন্ধু।এক পলকেই চিনে ফেলে দুজন দুজন কে।অথচ কেউ কাউকে চিনত না।
কন্যা সালাম দিয়ে...
-স্বচ্ছ বন্ধুত্বের জগতে আপনাকে স্বাগতম।
বন্ধু হেসে...
-থ্যাংক ইউ।
এর পর ব্যাগের পকেট থেকে কয়েকটা চকলেট বের করে বাচ্চাদের মত মুষ্টি খুলে উন্মুক হাতের তালুতে রাখা চকললেট তুলে ধরে বন্ধুর দিকে।
বন্ধুও কন্যার ছেলেমানুষি আচরণে সায় দিতে হাত পাতে।কন্যা টুপ করে বন্ধুর হাতের তালুতে চকলেট গুলো দিয়ে...
-আসুন আমার পিছু পিছু,এখান থেকে বাসা পর্যন্ত হেটে যেতে হবে।সমস্যা হবে কি?
-একদম না।
রাস্তায় হাটতে হাটতে টুক টাক কুশল বিনিময়।সিরি বেয়ে চার তলায় উঠতে দুজনেই হাপিয়ে যায়।রুমে ঢুকে ফ্যান ছেরে বন্ধু ছোফায় আর কন্যা ধাপ করে ফ্লোরে বসে পরে।ফ্লোরে বসতেই কন্যা বেশি পছন্দ করে।
হালকা জলযোগ শেষে আবারো গল্প।
লান্সে মনে ররাখার মত কান্ড ঘটিয়ে ফেলে কন্যার বন্ধুটি।কন্যাতো
অক্ষমের ঢেকি কিছুই পারে না,সার্ভ ও করতে পারেনা।বন্ধু নিজের প্লেটে খাবার নেবার সময় কন্যা বন্ধুর প্লেটে খাবার না
সার্ভ করতে দিয়ে নিজের প্লেট এগিয়ে পট পটিয়ে বলে....
- আমাকে দিতে হবে।
বন্ধু হেসে..
--অবশ্যই।
খাবার সময় বন্ধু তার প্লেট থেকে এক পিস মুরগি কন্যার প্লেটে তুলে দেওয়াই আপ্লুত চোখে তাকিয়ে থাকে বন্ধুর বদন পানে।
খেতে বসে অনেক জোকস,বাস্তব হাস্যকর
কথায় খাবার চ্যাপ্টার টার সমাপ্তি হয়।
হাত ধুয়ে এসেই কন্যা তার বন্ধুত্বে স্টাইল
এর অংশিদার বানায় বন্ধুটিকে।
হাত মুষ্ঠি করে দুইরকম স্টাইলে ডিস্যুম ডিস্যুম ই তার বন্ধুত্বের এক্সক্লুসিভ স্টাইল।
ভাবতে পারছে না দুই বন্ধু সামনা সামনি পাশাপাশি বসা।
দুপুর গরিয়ে বিকেল।এক সময় প্রবল বর্ষন,দমকা হাওয়া,ও বজ্রপাত।
কাচের জানালাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে বর্ষনের ফোটা ফোটা অস্পষ্ট স্পর্শ।
ভীষন ইচ্ছে করছিল কন্যার জানালার কাচে আঙুল ছোঁয়াতে,ছাদে গিয়ে বন্ধুর সাথে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভিজতে আর রবীন্দ্র সংগীত শুনতে।দূরে বিল্ডিংয়ের
চিলে কোঠায় ভেজা কাকেদের দেখছিল কন্যা।
ইচ্ছেগুলো চাপা রেখে ফ্লোরে বসেই বন্ধুর কন্ঠে আবৃত্তি ও রবীন্দ্র সংগীত শুনছিল..
‘আমি চিনিগো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী..."
যেমন আভা থাকতে হয়,তেমন সুরেলা আভা ছিল ও কন্ঠে।
ছোফা ছেরে কন্যার তালে তাল মিলাতে কন্যার বন্ধু ফ্লোরে বসে।
এক সময় দুই বন্ধুর মাঝে যোজন যোজন
দুরত থাকলেও সে দুরত্ব কিছুই মনে হত না।অথচ আজ এক দুই গজ দুরত্ব কে মনে হচ্ছে লক্ষ কোটি বর্গ মাইল দূরত্ব।
অনেক গল্প,গ্যালারির ছবি দেখা স্বচ্ছ হাসাহাসিতে বিকেল।
বিকেলে মিষ্টি খাওয়া নিয়ে দুই বন্ধুর মত পার্থক্য কালো না সাদা মিষ্টি..?
অবশেষে ভাগ করে মিষ্টি খাওয়া।


বড় রা সব সময় ছোটদের একটু বেশি ভালবাসে।
সন্ধ্যের চুরি যাওয়া আলোয় "বন্ধু " শব্দটিকে স্নান করিয়ে পবিত্র আবেষ্ঠন তৈরিতে বিদায় পালা।
ল্যাম্প পোষ্টের আলোতে জনবহুল রাস্তাটা কেমন অচেনা লাগে।
আইস্ক্রিম খাওয়াতে অন্য পথে হাটা দেওয়া বন্ধুর হাত ধরে টেনে হিচরে রিক্সার কাছে দার করিয়ে রিক্সার অপেক্ষায় ...
কন্যার ভীষন ইচ্ছে ছিল বিদায়ের আগে একটি বার বন্ধুর গোছালো চুল গুলো অগুছালো করে দিতে ।
কিন্তু হল না।  রিকশা ও বন্ধু আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলে গেল।
যাবার বেলায় অভিমানী নিরবতা গুমোট বেধে আবহাওয়াটাকে কেমন যেন ভারী করে তুলেছিল।শেষবারের মত দুই বন্ধুর চোখাচোখি হয়েছিল একবার।কন্যা রুমে ফিরে ডাইরিতে লিখে যাওয়া বন্ধুর অভিমত পরোখ করছিল।লেখার
বিষয় অবাক হবার মত না; আবার অবাক না হলেও চলছে না! ডাইরির পাতা উল্টাতে ঊল্টাতে বেরিয়ে পরে একটি ছবি।
বন্ধুর দেওয়া ছবি।চশমার ফ্রেমের ভেতর
থেকে তাকিয়ে আছে দুটি চোখ এক দৃষ্টিতে।পৃষ্ঠার ভাজ থেকে ছবিটি যদি হারিয়ে যায় সেই ভয়ে কাগজের আভরনে ছবিটি পার্সে রেখে দেয়।
রাতের খাবার সেরে স্বার্থ পরের মত ঘুমিয়ে যেতে নিয়েও সংকল্প করে যতক্ষন বন্ধু বাড়ি পৌছাবে না ততক্ষন কন্যা জেগে থাকবে।বিছানায় শুয়ে খোলা জানালা দিয়ে রাত্রীর অন্ধকার আকাশে মেঘের সাথে তারাদের লুকোচুরি অবলোকনে মগ্ন কন্যা।তারা দেখার উছিলায় যাতে তার চোখে ঘুম চলে না আসে।
গভীর রাত, পাশের স্টেশন থেকে ট্রেনের হুইছেল ভেসে আসে,ফ্যানের বাতাসে জানালার পর্দাগুলো উড়ে উরে উঠছে।
তারার পাশাপাশি ফ্লাইং হওয়া দু একটা প্লেনের লাল টিপ টিপ আলো,ও ভো ভো কেমনন একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে।
তন্দ্রাচ্ছান্ন চোখ হাতের উলটা পিঠে বার বার ডলে জাগ্রত থাকার চেষ্টা করে কন্যা।
প্রশ্ন জাগে মনে...
রাতের বুকে কি অনেক যন্ত্রনা? যার ফলে অত অন্ধকার?অন্ধকার হলে কি হবে?
রাতের বুকেও একপ্রকার শৈল্পিকতা আছে।
ইত্যাদি ভাবনা ভাবতে ভাবতে কন্যা যখন শেষবার ঘড়িতে তাকিয়েছিল তখন
১২.৩০ মিনিট।
চোখের সামনে ভেসে ওঠে বন্ধুকে দেওয়া হলুদ খাম টি স্বজতনে রাখা বুক পকেট টি।যেখান থেকে লোভনীয় ভাবে উকি দিয়ে ছিল হলুদ খামের সৌন্দর্য।
কন্যা বন্ধুর উপহারের কলম বক্সের দিকে একবার তাকায়।কোন দিন এ কলমে সে লিখবে না।স্বজতনে মন মিউজিয়ামে রেখে দেবে ওমর স্মৃতি হিসেবে।
কত শৈল্পিক মনের অধিকারি কন্যার বন্ধুটি।
চাঁদরটা গায়ে ভালবাবে জড়িয়ে নেয়।
জানালার দিকে তাকাতে কেমন যেন একটা ছায়া ছায়া দেখতে পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
হঠাৎ..
ধাপ ধাপ শব্দে কাচের পাল্লা গুলো বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ ও চলে যায়।অন্ধকার ঘর।গা ছম ছমে ব্যাপার।
চাঁদরের নীচ থেকে উকি দিতেই আবারো জানালা খুলে যায়।
টেবিলে রাখা বন্ধুর কলম বক্সটি আপনা আপনি টেবিল থেকে অনেক উপরে উঠে যায়। যা থেকে এক প্রকার অলৌকিক আলো ছড়তে থাকে।কন্যা হাত বারায় ধরতে।
কলম বক্স দূরে চলে যায়।
বিছানা ছেরে আরেকটু আগায়।
এবার কলম বক্সটি আরেকটু দূরে সরে যায়।
অদ্ভূত ভাবে কলম বক্সটিতে দুটো পাখা গজিয়ে যায়।উড়ে জানালা দিয়ে বাইরে চলে যেতে নিলে কন্যা প্রান পনে টেনে ধরে একটি পাখা।
জানালার বাইরের দিকে টানতে থাকে কলম বক্স আর ভেতরের দিকে টানতে থাকে কন্যা।
এ যেন এক তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ!
ঘুম ভেঙে দেখে চাঁদরের এক পাশ ধরে টানছে কন্যার বোন,অন্য পাশ টানছে কন্যা।
ঝাপসা চোখে জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে ঠি দারিয়ে আছে কন্যার বন্ধু...
সকালের বাতাসে ফিল ফিলিয়ে ঊরছে তার চুল গুলো।ঠোটের কোনে মিষ্টি হাসি,
চোখ ভরা স্নেহ মায়া।
ফোন এলার্ম বেজে ঊঠতেই দেখে কোথাও
কেউ নেই।
বিছানায় ঘুমে বিভোর তার বোন।
মাথার কাছে পড়ে আছে ডাইরি কলম,যেখানে কন্যা লিখছিল "স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা " ছোট গল্প।
আরমোর ভেঙে বিছানা ছেরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে উদাস দৃষ্টি তে বাইরে তাকিয়ে কন্যা।
হাতের উপর অলতো স্পর্শে পাশে তাকিয়ে দেখে তার বন্ধু হেসে বলছে...
‘আমি এসেছি কন্যা’।
সত্যিই কি এসেছে কন্যার বন্ধু?
নাকি সবি "স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা......?


এরিস্টটলের কাব্যচিন্তা : পাঠ ও নিরীক্ষা

এরিস্টটলের কাব্যচিন্তা : পাঠ ও নিরীক্ষা


এরিস্টটলের কাব্যচিন্তা : পাঠ ও নিরীক্ষা
অনন্ত পৃথ্বীরাজ

এরিস্টটল (অৎরংঃড়ঃষব) [খ্রীষ্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২ অব্দ] একজন প্রসিদ্ধ গ্রীক দার্শনিক। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং প্রভাবশালী চিন্তাবিদও বলা হয় তাঁকে। তাঁর সময়ে জ্ঞানের পরিচিত সব শাখাতেই তিনি অবদান রেখেছেন। মেসিডনের রাজবৈদ্যের পুত্র এরিস্টটল। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও মৃদুভাষী এক তরুণ। কিন্তু  তাঁর কথাবার্তা, চালচলন ও পোশাক-পরিচ্ছদে ছিল আভিজাত্যের ছাপ। তাঁর আকর্ষণ ছিল বিচিত্র। নগরনীতি, কাব্যতত্ত্ব, চিকিৎসা বিদ্যা, ইতিহাস, তর্কশাস্ত্র, গণিত, ভাষণকলা, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান প্রভৃতিসহÑ জ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রেই তার ছিল অগাধ বিচরণ। সতেরো বছর বয়সে তিনি এথেন্স আসেন এবং সেখানে মহামনীষী প্লেটোর অধীনে কুড়ি বছর দীক্ষা গ্রহণ করেন। সে যুগের শ্রেষ্ঠ মনীষী প্লেটোর সঙ্গে এরিস্টটরের সংযোগ হলে প্লেটো পরিহাসের ছলে বলে ছিলেন, “তাঁর আকাডেমির দুটো ভাগ। এরিস্টটল হলো আকাডেমির মস্তিষ্ক আর অন্য সব ছাত্র তার দেহ।” প্লেটোর মৃত্যুর পর এরিস্টটল কয়েক বছর এশিয়া মাইনরে শিক্ষকতার কাজ করেন। খ্রীষ্টপূর্ব ৩৪২ অব্দে মেসিডোনিয়ার রাজা ফিলিপের শিশুপুত্র আলেকজান্ডারের গৃহ শিক্ষক নিযুক্ত হন তিনি। প্লেটোর নিকট পড়াশোনা করলেও এরিস্টটল গুরুর বিশ্বজনীনতা তত্ত্বের বিরোধীতা করেন। প্লেটো বলেছিলেন,“ কেবলমাত্র ধারণাই যথার্থ অর্থে বাস্তব।” আর এরিস্টটল দাবী করেছিলেন যে, “কেবল স্বতন্ত্র বস্তুই যথার্থ অর্থে বাস্তব।” এরিস্টটলকে সাহিত্য সমালোচনার জনক বলা হয়। পোয়েটিক্স (কাব্যতত্ত্ব) তাঁর একটি অনন্য সমালোচনামূলক গ্রন্থ।
 আমাদের অন্বিষ্ট পোয়েটিক্স (কাব্যতত্ত্ব) গ্রন্থের আলোকে এরিস্টটলের কাব্যচিন্তা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটি আলোচনা উপস্থাপন করা।
এরিস্টটলের ‘কাব্যেরশিল্পরূপ’ সম্পর্কিত প্রবন্ধটি সাধারণত কাব্যতত্ত্ব নামে পরিচিত। এরিস্টটল নিজে কখনো এটিকে প্রবন্ধ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাননি। ধারণা করা হয়, ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি যে সব বক্তব্য দিয়েছেন এটিতে কেবল সেইসব বক্তৃতার স্মারকলিপি লিখিত হয়েছে। যা অসংলগ্ন, বিচ্ছিন্ন, অসুবিধাজনকভাবে সংক্ষিপ্ত এবং অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে পূর্ণ। এতে আবশ্যকীয় ধারণাসমূহ থেকে গেছে অব্যাখ্যাত। এতো সব খুঁত থাকা সত্ত্বেও কাব্যতত্ত্ব একটি চিরায়ত গ্রন্থ। এখানে যুক্তিপ্রণালীর বিকাশ ঘটেছে মহিমাময়ভাবে। যুক্তিপ্রণালিটির গুণে কাব্যতত্ত্ব সাহিত্যের শুধু সর্বপ্রথম পুঙ্খানুপুঙ্খ দার্শনিক আলোচনাই হয়নি, হয়ে উঠেছে পরবর্তী আলোচনাসমূহের ভিত্তি।
দার্শনিক প্লেটো নিজে কবি ছিলেন। তাই তাঁর কবিসত্তা দার্শনিক সত্তায় মিশে গেছে। তিনি কাব্যে বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন। তাঁর বক্তব্য,“কাব্য সত্য থেকে বহুদূরে, কাব্য এক ছায়ার ছায়া, কাব্য অসত্য ও অনৈতিক।” তাই প্লেটোর কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রে কবির স্থান নেই।
এরিস্টটল দীর্ঘকাল ভেবেছেন, প্লেটোর যুক্তিগুলো নিয়ে চিন্তা করেছেন। আর সেই ভাবনাগুলোর পরিণতিই হচ্ছে ‘কাব্যতত্ত্ব’। বিভিন্ন সময় এরিস্টটলের সাথে তর্ক হয়েছে জ্ঞানবৃদ্ধ প্লেটোর। কবিতার সঙ্গে সংগ্রামে যিনি অন্তরে অন্তরে বিক্ষত। কাব্যতত্ত্ব প্লেটোর কাব্য বিরোধীতার বিরোধীতা।
হোমার থেকে গ্রীক সাহিত্যের ইতিহাস শুরু। তাঁকে প্লেটো বন্দনা জানিয়েছেন। এরিস্টটল তাঁকে বলেছেন কবিশ্রেষ্ঠ। হোমার পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দু’টি মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসির রচয়িতা।
কাব্যতত্ত্বের সূত্রগুলো গ্রীক সাহিত্যজ্ঞান থেকে উদ্ভুত হয়ে বিশ্বজনীনতা লাভ করেছে। তবে এর মূলে অবশ্যই এরিস্টটলের অন্তর্দৃষ্টি, বিশ্লেষণের প্রতিভা এবং সাহিত্যবোধের গভীরতার কথা স্বীকার করতে হবে। কাব্যতত্ত্বে আলোচনার প্রধান বিষয় ট্রাজেডি ও মহাকাব্য।
প্লেটোর কথায় কাব্যের বিরোধীতার আভাষ পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন,“কাব্য সত্য থেকে তিনধাপ দূরে। সত্য হলো কতগুলো ভাব বা আইডিয়া। বস্তুজগৎ তার অনুকরণ। দ্বিতীয়ত: কাব্যের আবেদন মনের দুর্বলতার কাছে, মনের শ্রেষ্ঠত্বে কাছে নয়। সে জন্যেই কাব্য আমাদের বুদ্ধি, যুক্তি ও চিন্তাকে বিনষ্ট করে। তৃতীয়ত: কাব্য সমাজ জীবনের আদর্শের বিরোধী হতে পারে।
এরিস্টটল প্লেটোর প্রতিটি বক্তব্য সম্পর্কে গভীরভাবে ভেবেছেন। প্লেটোর চিন্তাজগতকে আশ্রয় করেই তার কাব্যচিন্তার জগৎ গড়ে উঠেছে। এরিস্টটলের কাছে এই প্রত্যক্ষ জগৎ সত্য, মায়া নয়। অতএব, তাঁর মতে কাব্য মূল থেকে আদৌ তিনধাপ দূরে নয়। দ্বিতীয়ত: কাব্য আমাদের আবেগকে জাগায়, চিন্তাকে উদ্বেলিত এবং উত্তেজিত করেÑএকথা সত্য। কিন্তু কাব্যের সত্য বিশ্বজনীন সত্য। অর্থাৎ মানুষকে জানবার ও বুঝবার পক্ষে তার মূল্য অপরিসীম। তৃতীয়ত: কাব্য ও বাস্তবজীবনের ভালো মন্দ বিচারের মানদন্ড হবে স্বতন্ত্র। এরিস্টটলের কাব্যতত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো :Ñ
(১)    শিল্প অনুকরণ। শিল্পে শিল্পে পার্থক্য হয় অনুকরণের মাধ্যমে বিষয়ে অথবা পদ্ধতিতে। (২) কাব্যের উদ্ভব ও বিকাশ ট্রাজেডি ও কমেডির সূচনা। (৩) ট্রাজেডি একটি ষড়শিল্প। কাহিনী, চরিত্র, অভিপ্রায়, ভাষা, সংগীত ও দৃশ্য-এ ছয়টি তার অঙ্গ। (৪) কাহিনির গঠন, কাহিনির ঐক্য, কাহিনির শ্রেণিবিভাগ, কাহিনি গঠনের আবশ্যিক উপাদান। (৫) ট্রাজেডি বহিরঙ্গ। (৬) ট্রাজেডির পরিণামে আবেদন, করুণা ওভীতির উদ্বোধন ও আবেগের পরিশোধন হয়। (৭) চরিত্রের লক্ষ্য চরিত্রের সার্থকতা। (৮) অভিপ্রায়ের সংজ্ঞা। অভিপ্রায়ের সাথে ট্রাজেডির সম্পর্ক। (৯) ভাষার ব্যবহার ও ভাষারীতি। (১০) মহাকাব্যের আকৃতি ও প্রকৃতি, ট্রাজেডির সঙ্গে তুলনা ও ট্রাজেডির শ্রেষ্ঠত্ব। (১১) মহাকাব্যের সত্য, কাব্য ও ইতিহাসের পার্থক্য। (১২) কাব্যের নিজস্ব নিয়ম কাব্যের সমালোচনা পদ্ধতি।
এরিস্টটল বিভিন্ন শিল্পকর্মের মধ্যে তিনটি উপায়ে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। যেমন : বিষয়, মাধ্যম এবং পদ্ধতি। এরিস্টটলের মতে সাহিত্য সত্য, আর সত্য থেকেই আনন্দের বিকাশ। এরিস্টটল শুধু আনন্দদায়ক বলেই কাব্যকে সম্মান করেন নি, তাকে মূল্য দিয়েছেন তা জীবনের সার্বজনীন সত্যকে প্রকাশ করে বলে।
কাব্যতত্ত্বে কমেডি সমন্ধে অল্প কয়েকটি কথা রয়েছে। হয়তো লুপ্ত দ্বিতীয় খন্ডে কমেডি সমন্ধে বিস্তারিত আলোচনা ছিল। গীতিকবিতা সম্পর্কে এরিস্টটল কোনো কথা বলেন নি। কাব্যতত্ত্বের অধিকাংশ স্থান জুড়ে উঠে এসেছে ট্রাজেডি ও মহাকাব্যের আলোচনা। তবে ধারণা করা হয়, কাব্যতত্ত্ব শুধু ট্রাজেডিরই আলোচনা, মহাকাব্য উঠে এসেছে ট্রাজেডির সঙ্গে তার পার্থক্য দেখানোর জন্য।  


ট্রাজেডি ও মহাকাব্যের গঠন একই। তবে ট্রাজেডি নাটকীয়, মহাকাব্য বর্ণনাত্মক। ট্রাজেডির আছে দৃশ্যসজ্জা, এটা লেখা হয় বিভিন্ন ছন্দে। মহাকাব্যে ব্যবহার হয় এক ছন্দ। মহাকাব্যের সব অঙ্গ আছে ট্রাজেডিতে কিন্তু ট্রাজেডির সব অঙ্গ মহাকাব্যে নেই। কাজ্যেই কাব্যতত্ত্ব এক অর্থে ট্রাজেডিতত্ত্ব। কিন্তু পোয়েটিকস্ গ্রন্থের মধ্যে এরিস্টটল নানা মন্তব্য করেছেনÑ যা শিল্পচিন্তার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌন্দর্য সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এরিস্টটল বলেছেন,“সৌন্দর্য নির্ভরশীল আয়তন ও সৌষম্যের ওপর। আয়তনের অতিব্যাপ্তি ও অব্যাপ্তি দুই-ই সৌন্দর্যের অন্তরায়।
আয়তন সম্পর্কে এরিস্টটল বলেছেন,“আয়তন আমাদের ইন্দ্রিয়ের সীমা দ্বারা নিয়ন্ত্রত। আয়তন বলতে বুঝতে হবে সমগ্রতার একটি ধারণা। তিনি শিল্পের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে জৈবিক ঐক্যের কথাও বলেছেন। যদিও এক অর্থে কাব্যতত্ত্ব ‘ট্রাজেডিতত্ত্ব’ তবে বৃহত্তর অর্থে কাব্যতত্ত্ব শিল্প নির্মাণের কৌশল। পট্স সম্ভাবত সেইজন্যেই তাঁর কাব্যতত্ত্বের অনুবাদের নাম দিয়েছেন ঞযব অৎঃ ড়ভ ভরপঃরড়হ।
কাহিনি ও চরিত্র সম্পর্কে এরিস্টটলের দুইটি সূত্র বিশেষ মূল্যবান : অনিবার্যতা ও সম্ভাব্যতা। কাহিনির প্রত্যেকটি ঘটনা, চরিত্রের প্রত্যেকটি আচরণ কাহিনির ভেতর থেকেই উদ্ভুত হবে। বাইরে থেকে কোনো ভাবেই কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। কাহিনির গঠন সম্পর্কেও এরিস্টটলের বক্তব্য বিশেষভাবে অনুধাবনযোগ্য। তিনি কাহিনির কথা বলতে গিয়ে ‘মুখোস’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার অর্থ গল্প। আর আমরা তাকে প্লট বলি। কাহিনিকেই এরিস্টটল ট্রাজেডির প্রধান অঙ্গ বলেছেন। কাহিনিই ট্রাজেডির আত্মা। তবে আধুনিক সময়ে ট্রাজেডির ক্ষেত্রে অনেকেই চরিত্রকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
সাহিত্য বিচারের ক্ষেত্রে এরিস্টটল একটি ব্যাপারে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেটি হলো ভাষার ব্যবহার। ভাষা সম্পর্কে সচেতন ও সতর্কতা কাব্যতত্ত্বের একটি বড় অংশ জুড়ে আলোচিত হয়েছে। এরিস্টটল ট্রাজেডির ক্রিয়ার মধ্যে একটি গভীর ঐক্য থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। তিনি নাটকে তিনটি ঐক্য থাকার কথা বলেছেন। ১. ঘটনার ঐক্য ২. সময়ের ঐক্য ৩. স্থানের ঐক্য।
এরিস্টটলের যেসব উক্তির জন্য পরবর্তী কাল বিপন্নবোধ করেছে তারমধ্যে সবচেয়ে জটিল হলো ‘কাথারসিস’। শব্দটির একটি অর্থ হলো চিকিৎসাশাস্ত্রগত : দেহের পরিশোধন। আর একটি অর্থ হলো নৈতিক ও ধর্মীয় : পবিত্রীকরণ, পরিমার্জন বা পরিশুদ্ধি। সংগীত সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এরিস্টটল বলেছেন যে, দেখা যায় অনেক ব্যক্তি ধর্মীয় উন্মাদনার মধ্যে কাটান। এই উন্মাদনাকে জোর করে রুদ্ধ করা ঠিক নয়। তাতে রুদ্ধ আবেগ আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এরিস্টটল বলেছেন, অবশ্যই মানুষ নাট্যশালায় যায় আনন্দ পেতে। সেই আনন্দ একটা বিশেষ আনন্দ এবং স্বতন্ত্র আনন্দ। ট্রাজেডি ভীতি ও করুণা জাগিয়ে তোলে আর সেই জাগরণেই মনে আসে আনন্দ।
কাব্যতত্ত্বে বহুবিতর্কের মূলে যে শব্দটি রয়েছে তা হলো ‘অনুকরণ’। প্লেটো অনুকরণ বলতে বুঝেছিলেন ‘নকল’ আর এরিস্টটল বুঝেছেন সৃষ্টি। কবিকে প্রতি নিয়ত সৃষ্টি করতে হয়। কবি জীবনকে অনুকরণ করেনÑএই কথাটির অর্থ দাঁড়ায় কবি জীবনকে নতুন ছকে গড়ে তোলেন। ট্রাজেডির ছয়টি অঙ্গের মধ্যে একটি অঙ্গ হলো দৃশ্য। এরস্টিটল দৃশ্যকে সাহিত্য আলোচনায় খুব একটা গুরুত্ব দেননি। তিনি বলেছেন, দৃশ্য হলো প্রযোজনার অঙ্গ।
পরিশেষে, কাব্যতত্ত্ব গ্রন্থটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্য কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপ তথা বিশ্বসাহিত্য সমালোচনার ধারায় শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। এরিস্টটলের মতে, শিল্প আমাদের আনন্দ দেয় কারণ শিল্প সুন্দর। শিল্প একদিকে যেমন ভাবের, বোধের কর্ম, অন্যদিকে শিল্প একটি বৌদ্ধিক কর্ম। শিল্পের বিশ্লেষণের ওপরে এরিস্টটল জোর দিয়েছেন। তবে সব সময় এ কথাটি মনে রেখেছেন শিল্প একটি অখন্ড ব্যাপার। এ অখন্ডতাই তাকে সুন্দর করে সার্থক করে। এরিস্টটলের কাব্যতত্ত্বের গৌরব তাইÑ এই অখন্ডতায়।

গুচ্ছকবিতা

গুচ্ছকবিতা

গুচ্ছকবিতা
রইস মুকুল

রাতগুলো পকেটে রেখে

কয়েকটা আবছায়ার রাত
রঙ মোহে পুড়ে যেতে যেতে বিগত বছর পৌঁছোয় হাতের রেখায়
                                   পোড়বার নিদালি নেশায়।
অনিবার্য গৃহস্থালি ব্যস্ততায় বিভোর নারীর কর্মযোগী হাত
সমস্তদিনের কাজ শেষে জ্বালে তড়িগড়ি সন্ধ্যাবাতি-
বুকেবাজে উৎসবের ঢাক ধুকবুক
বাজে ভাঙনের তালে, তখন
আদরে আঁচড়ে কাছে ধরে কষ ঝরার জঙলাফুলের বোটা, পাতা এবং পাপড়ি-
মধু মৌপোকাদের প্রিয়
        কালো ভুল্লুকদেরও।
   
নিষিদ্ধবাসের এ গল্প
একদিন আচানক বুঝিয়ে দিলো সে
          দোষ সংক্রান্ত নোটিশবোর্ডে বিশুদ্ধ ভুলে-
গল্পের স্বশব্দিত খলপুরুষ কারো অবসাদের অনুযোগ না ডিঙানোর মৌনতায়
ভয়ঙ্কর এক একাকিত্বে
দিগন্তরেখায় হাঁটছে ঘাসের দীর্ঘপথ,
একপাল বন্য শুয়রের ভয় অতিক্রম করেও বারবার তাকায় পেছনে
আবছায়ার রাতগুলো পকেটে রেখে।



পোকাগুলো থাকে নিরাপদ


পুড়ে যাবে বলেই পোকাগুলো আসে
সকাল-বিকাল আর রাত-
               আমার ঘুম-নির্ঘুমের ভাজে ভাজে
ওরা এলেই আগুন জ্বেলে দিই
নরপদী-নিশং বিলে
কুড়িয়াভিটার মাঠে এবং আপন দূর্বৃত্ত মগজে ফাঁদ পেতে রাখি
পোকাদের পোড়াতে পোড়াতে নিজেই পুড়ে যেতে।

না বুঝেই নাচে ওরা
ওদের বাঁশপাতা ঠোঁট বাজে রাগ দীপক শ্রী রাগে
মাঝে মাঝে অন্যরাগেও।
সেরা সতর্কতায় থাকি চুপমেরে ফাঁদের অসৎ শিকারি
    বিবর্ণ হয় বিশ্বাসের রঙ

ঢং ঢং ঘন্টা বাজিয়ে দমকল কর্মিদের গাড়ি আসে না গলির রাস্তায়
সেখানে ঘর-সংসার পোড়ে, পোড়ে গৃহিনীর গল্প
      পুরুষের পোড়ে গহনা, আনমনা কিশোরীর ওড়না-
পোকাগুলো আসলে নিরাপদ দূরত্ব রেখে আসে আর যায়।




আজন্ম অসভ্য মানুষ

চোখে পথ পড়ে আছে
অথবা পথে পড়ে আছে চোখ-
         এক কাকভোরের অস্পষ্ট আলোয়
হাইওয়ের নির্ঘুম রাত্রির যন্ত্রণা
উদোম ভ্যানচালকের কাঁধে চাপিয়ে এই পথেই
তোমাদের উঠোনে পৌঁছে যাবার আগে বট, বাবলা, মেহগনিদের গল্প শেষ হলো না।
অচেনা ভ্যানচালক আহ্বান করে আরো দূরে...

বরাদ্দকৃত সময় সল্প
জরুরি নেমে পড়তে হয়, সমবেত সকলে সাথে
সৌজন্য প্রকাশের দায় সেরে শর্তের যৌনাঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ার আগে
নায়েগ্রার জলে ধুয়ে নিই হাত।
প্লেটে সাজানো আপেল ধরতেই তুমি বললে- এখনই নয়
আনুষ্ঠানিকতার রয়ে গেছে কিছু বাকি,
আর আজন্ম অসভ্য আমি- পূজা কিংবা পূঁজি কিছুতেই যার বিশ্বাস নেই
তাকে নিভৃত করতে পারনি বলে
জড়িয়ে ধরে অদ্ভুত কেঁদেছিলে তুমি।
কান্নায় ভিজে বৃষ্টিতে ভিজে শেষে ফিরে আসি পথেই।


বইমেলায় প্রিয় লেখকের বই

 বইমেলায় প্রিয় লেখকের বই


 বইমেলায় প্রিয় লেখকের বই      

বই মানব-সভ্যতার সর্বোৎকৃষ্ট অবদান। সভ্যতার সমান বয়সী বই। আর এই বই নিয়ে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত হয় বইমেলার। অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ফেব্রুয়ারি সমাগত। লেখকদের লেখা নিয়ে বই, আর বই নিয়ে বইমেলা।

রাবেয়া খাতুন
রাবেয়া খাতুন যশস্বী কথাকার। প্রতি বছরের মতো এবারও সক্রিয় রয়েছেন লেখালেখিতে। এবারের একুশের বইমেলায় আসছে তার উপন্যাস ‘টুকরো ছবির অ্যালবাম’। আরো আসছে দুটি ভ্রমণকাহিনী। অন্য প্রকাশ থেকে ‘জার্মানি’ ও ‘অপূর্ব নিসর্গ নগরী ওমান’ আসছে সময় প্রকাশন থেকে। অনন্যা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ‘শুভেচ্ছা সাত-২য় খণ্ড’ গ্রন্থটি। ‘জীবন ও সাহিত্য’ নামের গবেষণামূলক একটি বই প্রকাশ করছে ইনল্যান্ড প্রেস।


হাসান আজিজুল হক
হাসান আজিজুল হক দেশের প্রধান কথাসাহিত্যিক। তার আত্মজীবনী ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’-এর পর এবার বেরুচ্ছে ‘উঁকি দিয়ে দিগন্ত’। লেখক এটাকে বলছেন স্মৃতিকহন। প্রথমটির দ্বিতীয় খণ্ড। এটি বেরুচ্ছে ইত্যাদি থেকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারগুলো নিয়ে ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ বের করছে সোয়া তিন শ পৃষ্ঠার বই ‘উন্মোচিত হাসান’। এটি সম্পাদনা করেছেন হায়াৎ মামুদ। মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রবন্ধের বই ‘বাচনিক আত্মজৈবনিক’। একই প্রকাশনা থেকে গল্পসমগ্র বেরুচ্ছে দুই খণ্ডে ও ‘দেশভাগের গল্প’ নামের একটি বই। অšে¦ষা করছে ‘প্রবন্ধ সমগ্র’। ইত্যাদি থেকে আরও আসছে ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্পসমগ্র’। একই প্রকাশনী থেকে উপন্যাস ‘আগুনপাখি’র একটি সংস্করণ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নাম অগ্রসর পাঠকমাত্রেরই পরিচিত। প্রতিবারের মতো এবারও বেরুচ্ছে তার একাধিক বই। ‘বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি মধ্যবিত্ত’ নামের বইটি প্রকাশ করছে গ্লোব লাইব্রেরী। প্রবন্ধের বই ‘কত মূল্য লইবে ইহার’ আসছে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে। প্রবন্ধ সংকলন ‘দীক্ষার দিকবিদিক’ করছে অšে¦ষা প্রকাশন। আত্মজীবনী ‘দুই যাত্রায় এক যাত্রী’ আসছে পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে। ইউপিএল থেকে তৃতীয় সংস্করণ বেরুচ্ছে ‘বাঙালির জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক বইটির।


নির্মলেন্দু গুণ
কবি নির্মলেন্দু গুণের এবার একাধিক বই প্রকাশিত হচ্ছে। তার মধ্যে গদ্যের পাশাপাশি রয়েছে পদ্যও। বাংলা প্রকাশ থেকে বেরুচ্ছে ‘গদ্য সমগ্র চতুর্থ খণ্ড’। একই প্রকাশনা থেকে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০-এর ওপর বিভিন্ন লেখা নিয়ে একটি বই বেরুচ্ছে। নাম রাখা হয়েছে ‘বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০’। কাকলী প্রকাশনী প্রকাশ করছে ‘কাব্য সমগ্র- তৃতীয় খণ্ড’। বিভাস থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ‘প্রবন্ধ গুচ্ছ।’ পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স বের করছে ‘১০০ রাজনৈতিক কবিতা’।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
খ্যাতিমান লেখক ও সংগঠক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের এবার একটি বই বেরুচ্ছে। তিনি জানান, এখনো বইটির নাম বা প্রকাশক কোনো কিছুই ঠিক হয়নি। মেলার প্রথম সপ্তাহে বইটি প্রকাশিত হবে।



যতীন সরকার
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে শারীরিক অসুস্থতার শিকার হলেও লেখালেখিতে সক্রিয় থেকেছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক যতীন সরকার। এবার তার ‘রচনা সমগ্র’ দুই খণ্ড বের করছে অনুপম প্রকাশনী। ১৯টি প্রবন্ধ নিয়ে শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ প্রকাশ করছে কথাপ্রকাশ। রূপকুশা প্রকাশনী থেকে বেরুচ্ছে ‘ভাবনার মুক্ত বাতায়ন’ ও ‘বাংলা কবিতার মূলধারা ও নজরুল প্রসঙ্গ’ নামের দুটি বই। ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে আসছে ‘বিনষ্ট রাজনীতি ও সংস্কৃতি’ শীর্ষক একটি বই। গতবারের মতো এবারও রোদেলা প্রকাশনী থেকে তার একটি বই আসছে। নাম ‘বরণীয়জনের স্মৃতি, কৃতি, নীতি’।

আবুবকর সিদ্দিক
শক্তিমান কথাসাহিত্যিক ও কবি আবুবকর সিদ্দিকের বেরুচ্ছে একাধিক বই। ‘কবিতা সমগ্র’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খ-) প্রকাশ করছে নান্দনিক। আর স্মৃতিকথার বই ‘স্মরণের মুখশ্রী’ বের করছে সাকী পাবলিশিং ক্লাব। শিশুসাহিত্য নিয়েও কাজ করেছেন এবার। আসছে একটি ছড়ার বই। নাম রেখেছেন ‘হট্টমেলা’। বইটিও প্রকাশ করছে সাকী পাবলিশিং ক্লাব।

ফরহাদ মযহার
বিশিষ্ট্য কবি ও চিন্তক ফরহাদ মযহারের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হচ্ছে এই মেলায়। সবই প্রকাশিত হচ্ছে আগামী প্রকাশনী থেকে। ৯৯টি কবিতা নিয়ে তার বিখ্যাত কাব্য ‘এবাদতনামা’র পূর্ণসংস্করণ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। একই প্রকাশনা থেকে আসছে উপন্যাস ‘তিমির জন্যে লজিক বিদ্যা’, প্রবন্ধগ্রন্থ ‘প্রাণ ও প্রকৃতি’, ‘বাণিজ্য ও বাংলাদেশের জনগণ’, ‘ক্ষমতার বিকার’. ‘যুদ্ধ আরো কঠিন আরো গভীর’, ‘মার্কস পাঠের ভূমিকা’। আগামী থেকে আরো বেরুচ্ছে কাব্যগ্রন্থ ‘ক্যামেরাগিরি’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ।

আবদুশ শাকুর
খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক আবদুশ শাকুরেরও এবার একাধিক বই আসছে। ‘ভালোবাসা’ নামের একটি উপন্যাস এবং ‘টোটকা ও ঝামেলা’ নামের দুটি প্রহসন আসছে মাওলা ব্রাদার্স থেকে। পাঁচ শতাধিক পৃষ্ঠার ‘আবদুশ শাকুর রচনাবলী- ২য় খ-’ প্রকাশ করছে ঐতিহ্য। তার বিখ্যাত স্মৃতিকথা ‘কাঁটাতে গোলাপও থাকে-২য় খণ্ড’ প্রকাশিত হচ্ছে ঐতিহ্য থেকে। তাঁর বিশটি শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ সংকলন করেছেন স্বকৃত নোমান। ‘আবদুশ শাকুরের শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ’ নামের এই বইটি প্রকাশ করছে রোদেলা প্রকাশনী।
বেলাল চৌধুরী
বরণীয় কবি বেলাল চৌধুরী এবার লিখছেন গল্পের বই। ‘নিজাম ডাকাতের কাহিনী’ নামের বইটি বের করছে ইছামতি প্রকাশনী। ‘মাছের রাত’ নামের আরেকটি গল্পের বই আসছে অনন্যা প্রকাশনী থেকে। ‘নীলদাহ’ নামের একটি উপন্যাস বেরুচ্ছে পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে। রোদেলা প্রকাশনী থেকে আসছে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বইÑ ‘মুহুর্মুহু ভাস্বর’। প্রবন্ধের বই এটি। অপরদিকে, নির্বাচিত গল্প, নির্বাচিত উপন্যাসও প্রকাশিত হচ্ছে। প্রেমের উপন্যাসও লিখেছেন একটি। ‘লীলা’ নামের এ উপন্যাসটি আনছে বিদ্যা প্রকাশ।

মোহাম্মদ রফিক
কবি মোহাম্মদ রফিকের ‘কবিতা সমগ্র’ বেরুচ্ছে ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে। শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ‘জীবনানন্দ’ নামের একটি বই। এটিতে থাকছে জীবনানন্দ দাশের বিভিন্ন কবিতার আলোচনা। আরো প্রকাশিত হচ্ছে বিভাস থেকে ‘১০০ নির্বাচিত কবিতা’ শীর্ষক একটি বই।

মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবালের তিনটি বই বের হচ্ছে এবারের মেলায়। তবে তিনি জানান, এখনো বইয়ের নাম বা প্রকাশক ঠিক হয়নি। ১টি সায়েন্স ফিকশন ও ১টি বাচ্চাদের উপন্যাস বের হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে বের হচ্ছে ‘স্বপ্নের দেশ এবং অন্যান্য’ শীর্ষক ১টি বই।

ফরিদুর রেজা সাগর
বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের বেশ কটি বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে এবারের বইমেলায়। অনন্যা প্রকাশনী থেকে বেরুচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধের সব লেখা’। সময় প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ‘কিশোর সমগ্র-৬-৭’, অন্য প্রকাশ থেকে আসছে ‘এক জীবনে টেলিভিশন’ ও ‘ছয় সাহেবের গপ্পো’।

মহাদেব সাহা
কবি মহাদেব সাহার বেশ কিছু বই প্রকাশিত হচ্ছে এবার। অন্যপ্রকাশ থেকে আসছে ‘গন্ধে বা গুঞ্জনে’ নামের একটি কবিতার বই। অন্যপ্রকাশ থেকে আরো আসছে কবিতা, কিশোর কবিতা, প্রবন্ধ, কিশোর প্রবন্ধ নিয়ে ‘আমার মুজিব’ নামের একটি বই। প্রেমের কবিতার বই ‘আদম হাওয়ার অশ্রুবিন্দু’ নামের কবিতার বইটি বেরুচ্ছে অনন্যা থেকে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লিখিত কবিতাগুলো নিয়ে বের হচ্ছে ‘১০০ রাজনৈতিক কবিতা’। বেরুচ্ছে বিভাস থেকে। ‘মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’ শীর্ষক বইটি প্রকাশ করছে সন্ধানী। ‘১০০ প্রেমের কবিতা’ বের করছে দিব্য প্রকাশ। ‘ভাবনার ভিন্নতা’ শীর্ষক গদ্যের বইটি প্রকাশ করছে গদ্যপদ্য প্রকাশনী। শিশুদের জন্য বাংলা প্রকাশ থেকে বের হচ্ছে ‘গোলাপ ফোটার গন্ধে’। বিভাস থেকে আরো বেরুচ্ছে প্রবাদ প্রবচন নিয়ে করা একটি বইÑ ‘প্রবচন সমগ্র’।

সৈয়দ মনজুুরুল ইসলাম
খ্যাতিমান লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের দুটি বই বেরুচ্ছে এবার। বিগত ৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে লিখিত গল্প থেকে বাছাই করা প্রিয় গল্পগুলো নিয়ে একটি গল্পের সংকলন প্রকাশিত হচ্ছে। ‘সুখ দুঃখের গল্প’ নামের এই বইটি প্রকাশ করছে নীমফ্রিয়া প্রকাশনী। নান্দনিক শিল্পকর্মের ওপর বেরুচ্ছে একটি বই। শিল্পকলার ওপর লেখা অনেকগুলো দুর্লভ প্রবন্ধ এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। ‘রবীন্দ্রনাথের ওপর জ্যামিতি ও অন্যান্য শিল্প প্রবন্ধ’ শীর্ষক এ বইটি বের করছে নান্দনিক প্রকাশন।

সেলিনা হোসেন
ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেনের এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস বেরুচ্ছে ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে। মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের আমলের কবি মীর্জা গালিবের জীবনী ও সে সময়ের পটভূমিকা নিয়ে  উপন্যাস এটি। নাম দিয়েছেন ‘যমুনা নদীর মোশায়রা’। শিশুদের জন্য আসছে ‘ফুলকুলি প্রধানমন্ত্রী হবে’ নামের একটি উপন্যাস। প্রথমা থেকে বের হচ্ছে এটি। কথাপ্রকাশ থেকে বেরুচ্ছে ‘শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ’ ও ‘প্রিয়মুখের রেখা’ নামের দুটি প্রবন্ধের বই। ‘নির্বাচিত গল্প-২’ বের করছে সৃজনী।

শাইখ সিরাজ
স্বনামধন্য কৃষিতাত্ত্বিক, সাংবাদিক ও লেখক শাইখ সিরাজের দুটি বই আসছে এবার। রোদেলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’। আরো একটি বের হচ্ছে, তবে সেটির এখনো নাম বা কোথা থেকে বেরুচ্ছে সেটিও ঠিক হয়নি।


আনু মুহাম্মদ
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের সাতটি বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে এবারের বইমেলায়। ‘পুঁজির অন্তর্গত প্রবণতা’ বের করছে সংহতি। একই প্রকাশনী থেকে আসছে ‘মানুষের সমাজ’। পাঞ্জেরি থেকে বেরুচ্ছে ‘আশির দশকে’। সংহতি থেকে আরো আসছে ‘নারী-পুরুষ ও সমাজ’-এর তৃতীয় সংস্করণ। ‘বিপ্লবের স্বপ্নভূমি কিউবা’র দ্বিতীয় সংস্করণ করছে শ্রাবণ। একই প্রকাশনী থেকে আসছে ‘বৈশ্বায়ণের বৈপরীত্য’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ। আরো আসছে ‘মার্কসের পুঁজি’ নামে একটি বই। এটি বক্তৃতামালার সংকলন। প্রকাশ করছে বাংলার পাঠশালা।
ইমদাদুল হক মিলন
প্রতিবারের মতো এবারও জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের একাধিক বই থাকছে। এবার তার সব বই প্রকাশিত হচ্ছে অনন্যা থেকে। তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘নুরজাহান’-এর শেষ খণ্ড প্রকাশিত হচ্ছে এবার। আরো আসছে প্রেমের একটি উপন্যাস ‘বৃষ্টি নেমেছিল’। শিশুদের জন্য আসছে ‘ভূত কত প্রকার ও কি কি’ নামের একটি বই। ‘পাহাড় কাঞ্চনপুর’ নামের বইটি আসছে শিশু-কিশোরদের জন্য। এটি এ্যাডভেঞ্চারধর্মী বই।

আমীরুল ইসলাম
জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলামের ৮টি বই প্রকাশিত হচ্ছে এবারের মেলায়। অনন্যা প্রকাশনী থেকে আসছে ‘কিশোর গল্প সমগ্র’, ‘ছড়া রচনাবলী-২’, ‘আকাশভরা রূপকথা’, উঠোনে ছড়াগুলো হাসে আর কাঁদে’, ‘এ মুহূর্তে লেখা হলো যে ছড়াগুলো’। ছোটদের মেলা থেকে আসছে ‘আর্জেনটিনা একটি টেলিভিশন ও বিশ্বকাপ’, ‘গাছেরা ম্যাজিক জানে’। সময় প্রকাশন থেকে বেরুচ্ছে ‘ছড়া তোমাকে ছুটি দিলাম’।

লুৎফর রহমান রিটন
খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটনেরও একাধিক বই বেরুচ্ছে এবার। সময় প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ‘হারাধনের ত্রিশটি ছেলে’। অনন্যা থেকে ‘অনেকগুলো মামা’। অ্যাডর্ন থেকে ‘মজার পড়া ১০০ ছড়া।’ অনার্য প্রকাশনী থেকে ‘লাল লাল নীল নীল’। একই প্রকাশনী থেকে বেরুচ্ছে ছোটদের জন্য ‘স্বাধীনতার ছড়া একুশের ছড়া’। সালমা বুক ডিপো থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধের ছড়া’। গল্পের বই ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এর তৃতীয় সংস্করণ বেরুচ্ছে তাম্রলিপি থেকে।

আহমাদ মাযহার
শিশুসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহারের বেশ কটি বই বেরুচ্ছে এই মেলায়। শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে প্রবন্ধের বই ‘ছড়াতত্ত্ব ছাড়া শিল্প’। আবদুল হকের স্মৃতিকথা ও দিনলিপি ‘আমার জীবন কথা’ সম্পাদনা করছেন। এটিও বেরুচ্ছে শুদ্ধস্বর থেকে। তিনি ও পিয়াস মজিদের যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে ‘শামসুর রাহমানের সাক্ষাৎকার সংকলন’। এটিও শুদ্ধস্বর থেকে বেরুচ্ছে। অনার্য প্রকাশনী বের করছে রূপকথার গল্প  ‘মেঘবতীর জন্য’।

অসীম সাহা
অসীম সাহা কবিতার জগতে পরিচিত নাম। পৃথিবীতে দেশত্যাগী শ্রেণীর বিড়ম্বনা নিয়ে তার কবিতার বই ‘সৌর রামায়ণ’ বের করছে গদ্যপদ্য। প্রেমের কবিতার বই ‘তোমারে কমুনা’ প্রকাশিত হচ্ছে আগন্তুক প্রকাশনী থেকে। একই প্রকাশনী থেকে ঝবষবপঃবফ চড়বসং ড়ভ অংযরস ঝধযধ বেরুচ্ছে। লালমোহন ও বিদ্যাসাগরের মাঝামাঝি সময়ের অজানা এক প্রতিভা ডিরোজিওকে নিয়ে বই বের করছে শিশু একাডেমী। নাম রাখা হয়েছে ‘ডিরোজিও’। নোবেলজয়ী কবি অক্টোভিও পাজ ও ডেরেক-ওয়ালকটের কবিতা নামের বইটির অনুবাদ করেছেন তিনি। প্রকাশ করছে গদ্যপদ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শেখ হাসিনা’ নামের একটি বই বেরুচ্ছে প্রথমা থেকে।

জাকির তালুকদার
কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদারের উপন্যাস ‘মুসলমানমঙ্গল’ ২০০৯-এর বইমেলায় বেশ আলোচিত হয়েছিল। এক বছর বিরতি দিয়ে এবার তিনি লিখেছেন ‘পিতৃগণ’। পাঁচ বছর ধরে এই উপন্যাস নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এবার তার মাত্র এই উপন্যাসটিই বেরুচ্ছে। উপন্যাসটি তার অন্যসব কাজ থেকে খানিক আলাদা। এটি আলোচিত হবে বলে প্রকাশকের বিশ্বাস।

মোহন রায়হান
আশির দশকের প্রথম সারির কবি মোহন রায়হানের একটি কাব্য আসছে এই মেলায়। কিন্তু সেটির নাম ও প্রকাশক এখনো ঠিক করা হয়নি।

আনিসুল হক
জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক আনিসুল হক এবার নতুন কোনো উপন্যাস লেখেননি। তবে পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে তার সদ্য লেখা ‘গদ্য কার্টুন’ বেরুচ্ছে। এছাড়া অনুপম প্রকাশনী থেকে অরণ্যে রোদন নামে প্রথম আলোতে যে কলাম লেখেন সেগুলোর একটি সংকলন বের হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখনো নাম ঠিক করেননি।
মশিউল আলম
গল্পকার মশিউল আলমের দুটি বই বেরুচ্ছে এবারের মেলায়। একটি বইয়ের নাম রাখা হয়েছে ‘পাকিস্তান’। এটি বেরুচ্ছে মাওলা ব্রাদার্স থেকে। অন্যটি ‘জাহাঙ্গীর গেট খোলা আছে’ প্রকাশ করছে অনন্যা প্রকাশনী।

মোহিত কামাল
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের তিনটি বই বেরুচ্ছে এবারের মেলায়। সমসাময়িক পারিবারিক জীবন নিয়ে উপন্যাস ‘ঘর’ প্রকাশ করছে বিদ্যাপ্রকাশ। একই প্রকাশনী থেকে আসছে একটি কিশোর উপন্যাস। নাম এখনো ঠিক করা হয়নি। সমকালীন সাংস্কৃতিক পরিবর্তন নিয়ে ‘চাবি’ নামে একটি গল্পগ্রন্থও বেরুচ্ছে। এটিও প্রকাশ করছে বিদ্যা প্রকাশ। তিনটি বইতেই মনস্তাত্ত্বিক ট্রিটমেন্ট থাকবে বলে জানা যায়।

ইরাজ আহমেদ
গল্পকার ইরাজ আহমেদের একটি উপন্যাস আসছে এই মেলায়। নাম রাখা হয়েছে ‘নিরাশ্রয়’। সাহস প্রকাশনী বের করছে এটি।

আহসান কবির
রম্যকার আহসান কবিরের এবার মাত্র একটি বই বেরুচ্ছে। জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিতব্য বইটির নাম রাখা হয়েছে ‘ডিজিটাল হাঁসু বাস্তুহারা পুতুল’।

আহমাদ মোস্তফা কামাল
কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামালের উপন্যাস ‘অন্ধ জাদুকর’ ২০০৯-এর মেলায় বেরিয়েছিল। বইটি কালিকলম পুরস্কার পায়। এর পর তিনি আর উপন্যাস লেখেননি। এবার বেরুচ্ছে তার উপন্যাস ‘পরম্পরা’। প্রকাশ করছে সন্দেশ। গল্পের বই ‘অশ্রু ও রক্তপাতের গল্প’ বেরুচ্ছে শুদ্ধস্বর থেকে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে সম্পাদনা করছেন ‘বাংলাদেশের ছোটগল্প দ্বিতীয় খণ্ড’।

সুমন্ত আসলাম
জনপ্রিয় লেখক সুমন্ত আসলামের এবার ৫টি নতুন বই ও ৪টি পুরনো বই বেরুচ্ছে। সময় প্রকাশনী থেকে বেরুচ্ছে উপন্যাস ‘আজ আমার বৃষ্টি নিমন্ত্রণ’, ‘চার অন্যতমা’। পার্ল থেকে ‘পূর্ণিমার জ্বলে দন্তন্য রুহমান’। একই প্রকাশনী থেকে ‘বাউণ্ডুলে-১০’। কাকলী প্রকাশনী করছে ‘ঘর জামাই এমবিবিএস (মা বাবার বেকার সন্তান)। অনন্যা থেকে বেরুচ্ছে ‘বাপ্পি ভয়ঙ্কর’ ও ‘যখন সন্ধ্যা নামে’। অনুপম থেকে বেরুচ্ছে ‘ভুতবন্ধু’। অšে¦ষা থেকে আসছে উপন্যাস ‘অন্তরতমা’।


হাবিবা নাসরিন
তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় কবি হাবিবার নাসরিন’র কাব্যগ্রন্থ ‘তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ’ বের হচ্ছে এবারের বইমেলায় দেশ পাবলিকেশন থেকে ।




শীতে লেখা পদ্য

শীতে লেখা পদ্য


শীত
শারদুল সজল

এই আদুরে শীতে
আপেলওমে জেগে উঠে আদমশরীর
কেঁপে কেঁপে- ঠোঁটের দ্রবণে
ভিজে যায় পৃথিবী
দাউ দাউ জলে দশটি আঙুল
দশ দিগন্তে- লাফায়  
চুমুরজাহাজ

ভাসে সমুদ্র- ভাসে তৃতীয় থিউরির
হংসিনী স্নান!

বুকের নিঝুমে
ভিড়ছে- টোটেম নগরীর রাত-ওম
ফিসফিস- তন্দ্রাবিমুখ মাধবী ছায়া
সন্ধ্যাতারার ওলানছুঁয়ে
শরীরে শরীরে নামছে মায়া
শর্ষেক্ষেত, কুয়াশা-রোদে
রটে গেছে সেই কথা
মাংসল ত্বকজুড়ে ঘুমিয়ে আছে
ভূগোলবিদ্যার ইবাদতনামা!

এই শীতে
শারমিন আক্তার

আমাদের লেপের তলায় এখন গল্পের মজুদ
ডায়েরিতে গুঁজে থাকা নিশাচর পাতারা নিস্তার পেয়েছে কয়েকদিন,
তুলে দিয়ে যাবতীয় রাগতাল অধ্যুষিত ঘুমের দায়ভারে।
পোকাদের ঠোঁটে কোন রেণু ?
নেই¬ তাই জমে গেছে সুঘ্রাণী আবেগ
কসমস কিবা সওরং।
এসবের ভীড়েও কোন নিস্তরঙ্গ বেদনা- উম খোঁজে সকাল সন্ধ্যা
কোন প্রেমিকের বাজেয়াপ্ত উষ্ণতায়
যদি মেলে ক’ফোঁটা গরম চোখের জল ।

জলের ভেতর এক রাত
শেখর দেব

কাল সারারাত কেটেছে জলের ভেতর
অবাধ সাঁতার দিয়েছি প্রাক্তন পুকুরে
কিছু অনবদ্য ডুব আর
অতল মুক্তার মায়াবী প্রজ্জ্বলন।

আমাদের দ্বৈত ডুবের সংসারে জলকে ভেবেছি হাওয়া
আসনের বিবিধ মুদ্রার ভেতর
প্রবেশ করেছি দেহ থেকে দেহান্তরে
টান টান প্লবতায় অরূপ মৎসক্রিড়া।

টোকা দিয়েছি অন্ধকারে
আধাঁর হতে বিচ্ছুরিত হয় আলোর প্ল¬াবন
আমি আলো আলো বলে ডুবে যাই ঘাটের কিনারে
দেখেছি ষোড়শীর উত্থিত মায়ার প্লাবন
তখন তলপেটে নড়ে উঠে অসভ্য অসুখ
তাকে কখনো সভ্য হতে বলিনি!


শীত এবং আমি
রেবেকা ইসলাম

সেই শীতার্ত হিম হিম ঘোর লাগা ভোরে,
উষ্ণ কফির বুদবুদ মাখা বাতাসের ঢেউয়ে
আমি একাই ভাসতে চেয়েছিলাম,
তোমার আলোয়ানের গন্ধে জড়িয়ে নিভৃতে,
কোন ভাগাভাগি নয়,
কবুতরের বুকের মত শাদা পেলব
কুয়াশার সঙ্গীতে অলকানন্দা হয়ে
শিশিরে পা ডুবিয়ে হেঁটে যাই বিমুগ্ধ আমি,
খুলে যায় আশাবরী মনের দুয়ার
একটু একটু করে নীরবে,
হঠাৎ পাশাপাশি চলে আসে ও
আমি থেমে যাই অতৃপ্তিতে, সেও থামে
ঠোঁটের কোণে ধনুকের সেই চিরচেনা হাসি
তারপর আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে আমার
ডানাহীন অনুষ্ণ বনেদী সুখকে,
আমার শীতের ওম ওম সকাল
দুপুরের মত উদাস হয়ে যায়।



প্রকৃতিও কাঁদে
সৈয়দ মাশহুদুল হক

তুমি কি ছুঁয়েছ কভু ঘাসের ডগায়
বিন্দু বিন্দু শিশিরজল?
শীত সকালে কাক্সিক্ষত রোদের মেলায়
করে যারা জ্বলজ্বল।
তুমি কী দেখেছ রোদের উত্তাপে
শিশিরের করুণ পরিণতি?
শুনেছ কী তাদের আহাজারি-বিলাপ;
নাড়ির স্পন্দনের অবনতি?
সাত সকালে নগ্নপদে মাড়াতে যখন
দূর্বাঘাসের শিশিরজল
দেখেছ কী কভু শিশিরের চোখ দু’টো
ছিলো ছলছল?
ভাবোনি তো? প্রকৃতিও কাঁদে
মানুষের অত্যাচারে, তবুও মানুষ কী কভু
প্রকৃতিকে ছাড়ে?


একটি শীতকালীন প্রভাত
এস এম নূরনবী সোহাগ

সূর্যকে অস্বীকার করে কুয়াশার
গভীরতা। প্রভাত বেড়ে ওঠে গড়পড়তা
মাঠের কোলে ধেয়ে আসে অভিজ্ঞ
পা। অদূরের সবকিছু আঁধার লাগা
মটরশুঁটির লতা রূপোর প্রলেপে
ঢাকা। মেঠোপথ থাকে শান্ত রঙে আঁকা
কোন গৃহস্থ ঘর এখনো ঘুমের গন্ধে
মোড়া। স্থির হয়ে থাকে চঞ্চল প্রকৃতিরা
ধানশালিকের চোখে কুয়াশা এসেছে সেই
কবে! মাথার উপর সূর্যটা তবু চাঁদের মত ধবধবে

শীতে ছ্যাঁকাবুকে
মাহমুদ নোমান

বিবর্ণ রোশনির মরাপাতার দুপুরটিতে
মুচকি হাসির বাতাসের ফড়ফড়ানি
যোনিতে ছড়ানো ছিটানো
মাছের আঁশের উৎকট দুর্গন্ধে
আইল থেকে আইলে উড়ে বসছে বগা
ঘুঘু চরছে ছায়াঘেরা স্যাঁতস্যাঁতে ভিটায়
মনে ভাসছে ছায়াছবির ঝিলমিলে
পারদরেখায় হারানো মুখোশে -
হৃদপাখির বোবা আর্তনাদ,
বেরহম বেদনায় কাতরায় বুকের পশম
পুকুরের জলে...



শীত ও বঞ্চনা
সাঈদ চৌধুরী

অর্থহীন পথের বাঁকে যে কথাগুলো লিপিবদ্ধ থাকে
সে কথাগুলোই জীবনের নিদারুণ সত্য বলে বিবেচিত
রেল লাইনে তীব্র শীতে বাঁচা কুকুরগুলো
একবার রেল চলে যাওয়ার পর লৌহ দন্ডের উষ্মতা নিয়ে বাঁচে
একজন মানুষ, সে খুব ছোট্ট শিশু
এখনও কথা বলতে গেলে ঠোঁটের বাঁকে বাঁকে
মায়ের দুধের বোটা চুষে খাওয়ার মত আলতো ভাঁজ পড়ে
শিশুটির মা অনেক দূরে কাজ করে
আর শিশুটি....?
একটা বৈদিশিক সাহায্যে চলে এমন স্কুলে পড়ে
মায়ের অনেক স্বপ্ন সে বড় হবে
ছেলে তার মায়ের বৃদ্ধাকালের লাঠি হবে,
যে বুক খালি করে মা এত স্বপ্ন দেখে
আদৌ কি তা পূরণ হবে ..?
রেললাইনের কুকুরগুলো লৌহ দন্ডের ঘর্ষনে উষ্মতা থেকে ওম নেয়
শিশুটি মানব শিশু
সে এ সমাজের সুবিধা বঞ্চিত নাম ধারণ করেছে
তার ভাগ্যে তীব্র শীতে উষ্ম কোন বস্তুও জোটেনা
সে হাহাকার করে মায়ের বুক খোঁজে
দুধের গরম খোঁজে
ততক্ষনে মা শিশুটির মুখে ভাত দেওয়ার জন্য
অলিতে গলিতে “অ্যাই শাড়ি নিবেন, শাড়ি...”
বলে বলে চিৎকার করে বঞ্চনার আহাজারি করে
মা কাঁদে, হাসে, অবাক হয়, স্থবির হয়
আবার নতুন ভোরের অপেক্ষা করে ।



শীতশাসন
সুজিত মান্না

এই সমস্ত দৃশ্য আমার ভিতর বছর বছরের
                                               অনুভূতি জাগিয়ে তোলে
জলতলের গতি দেখে বুঝে নিই
হাওয়া কোনদিকে বয়ে চলে

আমি যথেষ্ট লোভী নই , কিংবা দাম্ভিকও নই
তাই এই শীতপ্রবাহ আমায় ঘরমুখো বাদে কিছুই দেয় না

প্রতিটা দিনের ভূমিকা দেখলে মনে হয়
কেন এই দূরত্ব সৃষ্টি করছি

পুকুর কিংবা নদীর তলদেশের কাছে গেলে এমনই মনে হয়
মনের মধ্যে অবতীর্ণ  হচ্ছে ক্ষুদ্রতর পাপ

শরীরের ওপর চাপিয়ে নেওয়া হয়েছে শীতকালীন ভূমিকা
বাতাসের কণ্ঠে কণ্ঠে মিশে গেছে পৃথিবীর বিস্ময়রূপ

আমরা সমর্থন করি কিংবা না
এই বিচিত্র মেঘের বয়স বাড়তে বাড়তে
আমাদের নির্ভর উষ্ণতা প্রান্তর নীচে নেমে আসবে




নীল কুয়াশা
জালাল জয়

১.
কুয়াশার হিমে থাকি চেয়ে
শিশিরে স্বপ্ন মিশে ছুঁয়ে যাই ঘাসে
কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে রোদের নেশায়
ছুঁয়ে হাঁটি ঝরাপাতায়। শীতলা খামে
দেই উড়িয়ে তোমার নামে...
২.
এসো হাঁড় কাঁপিয়ে হিম কুয়াশায়
নদী জলের মায়ায়, ছুটে কাজল ছায়ায়।
এসো উষ্ণতার ভিড়ে ধানশালিকের নীড়ে
এসো মন কাঁপিয়ে- ধরো প্রান ঝাপিয়ে
কুয়াশা কুয়াশায় রুপ লুকিয়ে, প্রজাপতির
রঙ ছড়িয়ে। পুষ্পকাকলী সাজিয়ে আজ
এসা এসো পালিয়ে লাজ
মনের বাঁধনে হিমেলের সাজ।
৩.
এসো খাল বিল জলে-দু’হাত ভরে স্বপ্ন সাজাই
হিমে নীল কুয়াশায়। নগরের ক্লান্ততা ভুলে
এসো ফসলের বুকে- হলুদ শস্যে নিজেকে হারাই
আকাশের নীল খুঁজে কষ্ট পোড়াই।  
৪.
চোখে নীল ঠোঁটে নীল উড়ে যায় গাঙচিল
ঝিলমিল শীতে দিল্ তুমিহীন মুসকিল
স¦প্নতারা জ¦লে নিভে বলে তুমিও কী
যাবে চলে শিরশির কম্পনে আমায় ফেলে...



গল্প- প্রতিজ্ঞা

গল্প- প্রতিজ্ঞা


প্রতিজ্ঞা
জিন্নিয়া সুলতানা

আপনার কি কি প্রশ্ন আছে বলতে পারেন, সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি প্রস্তুত আছি- এক শ্বাসে বলে গেলো উর্মি।
সুনীল মিটমিটিয়ে হাসছে শুধু।
তা দেখে উর্মির খুব রাগ হচ্ছে,কিন্তু সে রাগটা প্রকাশ করলো না।
কারণ সে জেনেশুনেই এসেছে এখানে।যে আচরণ ই করা হোক তার সাথে, সে চুপ করে মেনে নেবে।

কি দেখছেন এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে?- উর্মি অবাক হওয়ার ভাব ধরে বললো।
- দেখার জন্যেই তো এসেছি, দেখতে দেবেন না? সুনীল এখনো সেই মিটমিটিয়ে হাসছে।
- আচ্ছা দেখেন,কিন্তু দেখা শেষ হলে বলবেন।
- হ্যাঁ বলবো, আপনি জানতে চান না আমি কি দেখছিলাম?এটা দেখছিলাম যে হেরে যাওয়া মানুষ গুলি দেখতে কেমন হয়।
- সরি! আপনি কি বুঝালেন আমি ঠিক বুঝলাম না।এবার উর্মি সত্যি অবাক হয়ে গেল।
- আপনি উর্মিলা খান, পড়াশুনা শেষ করে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করা ছিল আপনার এম্বিশন। কিন্তু আর দশটা মেয়ের মতোন আপনিও শেষমেশ পুতুলের মতো বিয়ের পাত্রী হয়ে আমার সামনে বসে আছেন।নিজেকে প্রস্তুত করেছেন সব রকম অপ্রস্তুত প্রশ্নের জবাব দিতে।
- হু,এতে তো আর দশটা ছেলের মতোন আপনিও খুশি হওয়ার কথা।
- তাই দেখছিলাম ,একটা মানুষ কত সহজে নিজের স্বপ্ন থেকে সরে আসতে পারে, কত সহজে হেরে যায়।
- সুনীল সাহেব,আপনি কি আমাকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে এসেছেন?আমি কিন্তু এখন সত্যিই বিরক্ত হচ্ছি।
বলে দিলেই পারেন যে আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি।
- না উর্মিলা, আপনি দেখতে অনেক সুন্দর, স্মার্ট শিক্ষিত, কথাও বলেন সুন্দর।
আপনাকে অপছন্দ করার মতোন কোনো সুযোগ নেই।
- তাহলে আমি কি বাবাকে বলে দিতে পারি আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে, বিয়ের ব্যবস্থা করতে?
- না,বলতে পারেন না। কারণ আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।
- মানে? - উর্মি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।
- আরে এত রাগ করছেন কেন?বসেন বসেন। আমি তো এখনো পুরো কথা বলেই শেষ করিনি, - সুনীল আবার হাসতে লাগলো।
- আমার মনে হয় না আপনার সাথে আমার আর কোনো কথা বলার দরকার।
-কিন্তু আমার মনে হয়,আমার মনে হয় আপনার সাথে আমার অনেক কথা বলার দরকার।
- সুনীল সাহেব,আপনি হেয়ালিপনা না করে ঠিক কি বলতে চান পরিষ্কার করে বলেন প্লিজ।
- আমি চাইনা আপনি এখন ই বিয়ে করে নেন, সেটা আমি হই অথবা অন্য কেউ হোক।
- তাহলে আমি কি করবো? আর আপনি কেন চান না? বুঝলাম না।
- কেন চাইনা সেটা না হয় অন্যদিন বলি?
এখন যা বলার দরকার তাই বলছি শুনুন।
আপনি বিয়ে করবেন অবশ্যই,তবে এখন ই নয়, চাকরী পাওয়ার পর, নিজের একটা আলাদা পরিচয় পাওয়ার পর।
আর সেই চাকরী টা আমি দেবো।
- আপনি আমায় নিয়ে মজা করছেন? নাকি করুণা?নাকি অন্য কোনো কিছু? কোনো ডিল?
- এসবের কোনো কিছুই করছিনা আমি উর্মিলা।কিন্তু আমি মন থেকে চাই আপনি একটা ভালো চাকরী করে নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করেন,যাতে সারা জীবন আপনাকে বাবা স্বামী বা ছেলের পরিচয় পরিচিত হতে না হয়।
এটাই তো আপনার সপ্ন তাই না?
- হ্যাঁ।
- ঠিক আছে। আমি আপনাকে সময় দিলাম , বাসায় গিয়ে নিজের সাথে বুঝাপড়া করে নেন।যদি মনে করেন যে আমার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল,তাহলে আমাকে কল করবেন। নাম্বার আপনার বাবার কাছে আছে।
উর্মিলা সারা রাত ধরে চিন্তা করে ঠিক করলো সে সুনীলের কথায় রাজি হয় যাবে,যদি সুনীল এটা থেকে কোনো সুযোগ নিতে না চায়।
এটা করা ছাড়া নিজের জন্যে তার কাছে আর কোনো অপশন নাই।
উর্মিলা আর সুনীল একটা ক্যাফে তে সামনা সামনি বসে আছে।
উর্মিলা ই প্রথম বলে উঠলো,
- আমি আপনার গল্পটা শুনতে চাই।
- গল্প? - সুনীলের চোঁখে মুখে অবাক হওয়ার স্পষ্ট ছাপ।
- হ্যাঁ গল্প, এসবের অন্তরালে যে গল্পটা রয়ে গেছে আমি তাই শুনতে চাই।
- উর্মিলা আপনি সত্যিই অনেক বুদ্ধিমতী, যতটা সবাই জানে তার চেয়েও বেশি।
সবাই যা বুঝতেই পারে না আপনি তা খুঁজে বের করতে পারেন।
- আচ্ছা,আমার প্রশংসা না হয় পরে শুনি?
সুনীল চেঁয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো,
গুধুলির আলো ছায়ায় এখানে পরিবেশটা অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে, দু তলা ভবনের খোলা ছাদের উপর ক্যাফে।
সুনীল ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে, দৃষ্টি তার অনেক দূরে, যে আকাশে সূর্য অস্ত যাচ্ছে।
আপনি তাহলে শুনতে চান আমার গল্প।
গল্পটা ছিল এরকম,
অনেক দিন আগে এরকম ভাবে আমি একটি সূর্য ডুবতে দেখেছি।
যাকে আর কখনো উদিত হতে দেখা যায় নি।
নাহ্, ওটা মোটেও আকাশের সূর্য ছিল না।
সূর্যটা ছিল আমাদের পরিবারের।
পরিবারের একমাত্র মধ্যমনি ছিল আমার বড় বোন ইলা।
পরিবারের অন্য সদস্যদের ভালো থাকার জন্যে সেই ছিল যথেষ্ট।
আপনি জানেন আমরা তিন ভাই।
কিন্তু তখন আমরা ছিলাম ভাইবোন মিলে চার জন।
বাবার অল্প বেতনের ছোট চাকরিতেই আমাদের সংসার বেশ চলে যেত।
মা বর্তমান থাকা সত্ত্বেও ইলা আপুই আমাকে কুলে পিঠে করে মানুষ করেছে।
মজার কথা কি জানেন?
ইলা আপু আমার চেয়ে ৮ বছরের বড় হলেও সে আমাকে ভাইয় বলে ডাকতো।
ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছি সে একাই কিভাবে সংসার সামাল দিতে পারে।
এজন্যে মা বাবা তাকে নিয়ে অনেক বেশি গর্ববোধ করত।
তখনো আমি বাস্তবিক অর্থে অনেক ছোট, বাস্তবতার কিছুই বুঝিনা।

একদিন আপু আমার কাছে এসে বলল-  ভাইয়া আমি রুদ্রকে ভালবাসি। তুই কি মা বাবা কে রাজি করাতে পারবি?
রুদ্র ভাইয়াকে আমি চিনতাম। বাবার অফিসেই ভালো একটা পোষ্টে কাজ করতো।
মাঝে মাঝেই বাসায় আসত বাবার সাথে।
তাই বাবা মাকে রাজি করাতে আমার তেমন কষ্ট হয়নি।
দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়েটা হয়ে গেল সহজেই।
সে জন্যে আপু অনেক খুশি হলেও আমার এখনো মনে পড়বে, বিদায় বেলায় আপু আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনেক বেশি কেদেছিল।
সব কিছু ঠিক ভাবেই চলছিল, কিন্তু এক বছরের মাথায় হঠাৎ একদিন খবর এলো আপু আর নেই।
আমার মনে হলো আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।
আমি যখন আপুর নিথর দেহের পাশে দাঁড়ানো, হঠাৎ মনে হল আপুর শক্ত হয়ে যাওয়া হাতের মুঠোয় কিছু একটা আছে।
হাতের মুঠো খুলে দেখলাম একটা ছোট্ট কাগজ।
হাতে নিয়ে দেখি আমাকে লিখা তার শেষ চিরকুট।
আমার আদরের ভাইয়া,
আমি তোদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তোদের কে কিছু বলার মতোন মুখ আমার নেই। তবে আমার মত যেন আর কাউকে এভাবে অসময়ে চলে যেতে না হয়, যাওয়ার বেলায় আমার একটাই চাওয়া তোর কাছে।
-তোর ইলা আপু
আপনার জানতে ইচ্ছে করছে না?
কেন কিভাবে আমার বোন মরে গেলো!
হ্যাঁ, ইলা আপু আত্মহত্যা করেছিল।
আমি অথবা আমাদের পরিবারের অন্য কেউ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি ওই পরিবারে আমার বোনকে কী অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
প্রতিনিয়ত তার শ্বশুড় বাড়ির লোক মানুষিক ও শারীরিক ভাবে তাকে অত্যাচার করেছে সে বিয়ের সময় বা বিয়ের পর কোনো যৌতুক নিতে পারে নি বলে।
অথচ আমাদের কষ্ট হবে বলে সে কিছুই জানায় নি।
ওদিকে আপু বেশি পড়াশুনা করতে পারেনি,তাই তার নিজেকে সাপোর্ট দেয়ার মতন কোনো শক্তি ছিল না।
আর আমাদের পরিবার ও তখন তেমন একটা সচ্ছল ছিল না যে তাকে অবিরত যৌতুক দিতে পারবে।
তাই আপু আমাদেরকে কিছু না জানিয়ে নিজেই সব কিছু ছেড়ে চলে যায়।
সেদিন থেকেই প্রতিজ্ঞা করি, অন্তত একটা মেয়েকে হলেও তার নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে সাহায্য করবো, যাতে আর কারো জীবন আমার বোনের মতোন না হয়।
আজকে দেখেন আমার বাড়ি গাড়ি সব আছে।
দুই ভাই বিদেশে গিয়ে পড়াশুনা করছে।
অথচ আমাদের মাঝে আমার ইলা আপু নেই।
সারাক্ষণ এক অদ্ভুত অপরাধবোধ আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, আমি আমার মায়ের মতন বোনকে বাঁচাতে পারিনি।
কাঁধে কারো হাত পড়তেই সুনীল ফিরে তাকিয়ে দেখলো উর্মিলা অশ্রুসজল চোঁখে তার পাশে দাঁড়িয়েছে।
সুনীলের মনে হল অনেক দিন পর ইলা আপুর মতোন অসম্ভব মায়া ভরা চোখে কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে।


এক শীতরাতের গল্প

এক শীতরাতের গল্প


এক শীতরাতের গল্প
আহমদ মেহেদী

তখন  রাত ১২.৪৫ বাজে । খুব শীত পড়েছে।  মোবাইলে সুমির কল আসাতে ঘুম ভেঙে গেল।
-হ্যালো, কি কর?
-সন্ধ্যা থেকে জ্বও; ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
-তোমার কি অবস্থা, রাতে খেয়েছ?  েেতামাকে  খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
-ও... তাহলে চলে এসো, দেখে যাও আমাকে!  দুষ্টামির ছলে 
-যদি সাহস থাকে আসোনা!
সাথে সাথে আমারও একটু জেদ হল, হোক না এত রাত আমি আজ তাকে দেখতে  যাবই। জেদের কথা তাকে আর বলতে গিয়েও  বললাম না। ততোক্ষনে  জ্বর নিয়েই প্রিয়তমাকে সারপ্রাইজ দিতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছি। কুটুম্বপুর-কালিয়ার চর রোডের সাথে আমাদের  নয়নাভিরাম সবুজ  গ্রাম। আমাদের এখান থেকে সুমিদের বাড়ি যেতে পনের টাকা সিএনজি ভাড়া লাগে কিন্তু এতো রাতে তিনশ টাকা দিয়ে ও কিছু পাওয়ার আশা করা নিরর্থক। যেন আজকে মাতাল  জোসনা পড়েছে। বাজারে গিয়ে দোকানদার জসিম কে ডেকে তুললাম। বেচারা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিল। দোকানের দরজা খুলেই বুঝল কেন তার মূল্যবান ঘুম নষ্ট করেছি। এক  প্যাকেট বেনসন এন্ড হেডজেস  নিলাম। 
-কই যাবেন রুবেল ভাই?
-কোথাও যাব না, আছি এইতো বাজারে ই।
-ও আচ্ছা ।
সে দোকান বন্ধ করে দেয়। আমি আস্তে আস্তে হাটতে  শুরু করলাম। বাম কানে হেডফোন লাগিয়ে সুমিকে কল দিলাম। ওপাশ থেকে-
-এখনো ঘুমাওনি তুমি?
-বাজারে এসেছি।
-কেন?
-এমনি!
- যাও, বাড়ি চলে যাও। আমি থাকলে তো মাথায় পানি ঢেলে দিতাম।
এমনি কত কথা!  প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে  কথা বলছি আর হাটছি। সুমি তখনো জানেনা যে আমি তার বাড়ির দিকেই  আসছি । বিপদসংকুল নির্জন পথ, হাতে নকিয়া ফোন , পকেটে তিন হাজার টাকা । ২০০৫ সালে এই তিন হাজার টাকাই অনেক মনে হতো আমার কাছে। এই রাস্তায় কিছুদিন পরপর ডাকাতি হয়, বিকালে দাদী- চাচীরা পাশের বাড়ির মোফাচ্ছেলের বউয়ের  জ্বিন-ভূত ধরা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল  রাস্তার পাশের কবরস্থান আরো সামনে গিয়ে হিন্দুদের একটি চিতাল দেখে উ!  গা হিম হয়ে যাবার মত অবস্থা। মনে মনে আল্লাহর নামে  ডাকছি  আর ভাবছি -কি দরকার ছিল এত রাতে জিদ করার। সিগারেট চলছে একটার পর একটা। মুরুব্বিরা বলে থাকেন- আগুন হাতে  থাকলে নাকি জ্বিন-ভূত কাছে আসেনা। তাই এই সিগারেট জ্বলন -থেরাপি। ৪০-৪৫  মিনিটের পথ এই মুহূর্তে  মনে হচ্ছে কয়েক ঘন্টার।
অবশেষে বাড়ির কাছাকাছি আসার পর সুমিকে জিজ্ঞাসা করলাম ।
-তুমিকোন ঘরে?
-কেন?
-না এমনি, জানার ইচ্ছে হল তাই ।
-বড় ভাবির ঘরে।
-ভাবির ঘরটা কি পূর্ব পাশে?
-হ্যা, আচ্ছা বলতো তুমি কি সত্যি সত্যি এসে পরলে নাকি? তার কন্ঠে অনেক বিস্ময়।
-ভাবির ঘরের পূর্বে কি ইক্ষু ক্ষেত?
ও শুধু আবেগ মাখানো কন্ঠে বলল।
-তুমি কই,প্লিজ জান বলো আমাকে !
ওকে আর টেনশান না দিয়ে বললাম।
-ঘরের পেছনে।
সুমি বলল।
-তাড়াতাড়ি দক্ষিণ দিকের কামরাঙা গাছ বরাবর জানালার কাছে আস!
বলেই ফোনের লাইনটা কেটে দেয় । আমি জানালার কাছে  হাত রাখতে না রাখতেই  সুমি তার কোমল হাতে আমার হাতটা ধওে ফেলে। সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না , নির্বাক  দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শুধু।  আর আমি চাঁদের আলোয় ওর হাসিমাখা মুখটি দেখে কথা বলার শক্তি  হারিয়ে ফেললাম। কিছুক্ষণ পরে তার ডাকে স্বাভাবিক হলাম।
-ভিতরে আস জান!
রুমে ঢুকতেই সুমি পরম মমতায় আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাদতেঁ থাকে। ভোর হওয়ার অনেক আগেই আবার বাড়িতে  চলে আসলাম ।
আজ সে সুমি  আমার কাছ থেকে অনেক দূরে, ভুলে গেছে পবিত্র ভালবাসার কথা! তের বছর হতে চলছে তার সাথে কথা হয় না, দেখাতো দুরের ব্যাপার। ভাবির কাছে  শুনেছি  স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখেই আছে। দোয়া করি সে যেন সবসময় সুখে থাকে। তবে সেই চাঁদনী রাতের সেহেতু  হাসিটা এখনো ভুলিনি আর  আমৃত্যু  ভুলতে পারবও কিনা জানিনা !


গল্প- প্যারিস রোড

গল্প- প্যারিস রোড


প্যারিস রোড
লতিফ জোয়ার্দার 

ইতি বললো, প্যারিস রোডে এসো। সকাল বেলায় রাস্তাটা বেশ নির্জন থাকে। প্রাণ খুলে কিছু সময় কথা বলা যাবে। মোবাইল ফোনটা পকেটে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি বৃষ্টি পড়ছে। ছাতাটা কোথায় রেখেছি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাড়াহুড়ায় কোন কাজই সফল হয় না। দ্রুত অস্থিরতা বাড়তে থাকলো। ঘরে ফিরে আবার ইতিকে ফোন দিবো কিনা ভাবতে থাকি। তখনো বৃষ্টি পড়ছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।  মনে হলো মেঘের অশ্রুপাতে ভেজা একটা নতুন সকাল আমার সামনে। একটা নতুন সম্ভাবনা আমার সামনে। আমি হাত বাড়িয়ে আছি তার দিকে অথচ কিছুতেই তাকে ধরতে পারছি না।  অবশেষে যখন ছাতাটা পেলাম তখন প্রায় ত্রিশ মিনিট চলে গেছে। এত সময় নিশ্চয় একাকী প্যারিস রোডে অপেক্ষা করবে না ইতি।

তারপরও ঘর থেকে বেরুলাম। আমাদের বাড়ি থেকে প্যারিস রোডের দুরুত্ব কিলো দুইয়েক। সবুজে উদ্যানের মত দাঁড়িয়ে আছে প্যারিস রোড। দাঁড়িয়ে আছে বৃক্ষের সারি। ভেজাপথ ধরে কিছুতেই এগুতে পারছিলাম না। থেমে যাচ্ছিল পা। যেতে যেতে বৃষ্টি থেমে গেল। বৃক্ষের পাতা থেকে ঝরে পড়লো জল। সজীব সতেজ মনো-মুগ্ধকর চারপাশ। কোথাও কোন লোকজন নেই। এই বৃষ্টির দিনে কে আর বের হবে ঘরে থেকে। অথচ আমার বিশ্বাস ইতি জলে ভিজে দাঁড়িয়ে আছে প্যারিস রোডে। একমাত্র আমার জন্য। আমাকে কিছু বলার জন্য। অথচ প্যারিস রোডে পৌঁছানোর পর কোথাও ইতিকে দেখতে পেলাম না আমি। ধু-ধু চারদিক। কিছু কিছু বৃক্ষের আলাপন শুনে ফিরে এলাম আমি। 

সেদিনের পরে আর ইতিকে খুঁজে পাইনি। ফোন বন্ধ। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা করবো সে সাহস নেই আমার। কারণ তখন ইতির নতুন সংসার। আমার মত কোন বাউ-ুলেকে নিশ্চয় কেউ আশা করবে না সেখানে। তারপরও বেশ ক’দিন দিন ছুটে গেছি। ইতিদের বাড়ির ছাদে তখন, ইতির ভেজা কাপড় শুকোচ্ছে বৃষ্টি বিরতি সামান্য রোদে। বন্ধ জানালায় চোখ রেখে ফিরে এসেছি আবার। রাস্তায় এসে দেখি ইতির স্বামী বাজারের ব্যাগ নিয়ে ফিরছে তখন। তাকে দেখে একটুও চমকাইনি আমি। স্থির চোখে তাকিয়ে থেকেছি। পোষা বিড়ালের মত নাদুস-নুদুস চেহারা তার। মনো হলো এর আগে কোনদিন দেখা হয়নি তার সাথে।
অপেক্ষার দিন কখনো শেষ হয় না। আমি অপেক্ষা করতে থাকি। স্মৃতির সাথে বসবাস আমার। এক শহর থেকে আরেক শহর। কখনো আবার ফিরে গেছি নিজের কাছে। একাকী কথা বলেছি কত। কখনো মনেই হয়নি ইতি আমার সামনে নেই। অথচ তার সাথে কথা বলি আমি।
বিকেলের রোদে ভিজে চটপটির দোকানে পৌঁছানোর আগে ভো- ভো দৌঁড়ের কথা মনে আছে তোর। আমি কিন্তু এখনো সেইসব পুরনো স্মৃতির কথা ভাবি আর জীবন এত ছোট কেন তার হিসেব-নিকেশ করি। বন্ধু তালিকা খুব একটা বড় ছিলো না আমার। স্কুল ভর্তি গাদা-গাদা ছেলে-মেয়ের মধ্যে কিছুটা অন্যরকম মিজান মেরিনা স্বপন। তুই ছিলি বড় বোকা বোকা। কথা বলতি খুব কম। একমাত্র আমাকে দেখলেই চঞ্চল মেঘের মত এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে যখন তখন আমার হাত ছুঁয়ে দিতি। সেই যে স্কুল জীবন আমার। কতদিন স্কুল পালিয়ে তেপান্তরের পথে ছুটে চলা। সেই যে আমার ছেলেবেলা। আমি এখনো ছুটে যাই তার কাছে। ভো-ভো এক দৌঁড়ে। কিছুতেই তোকে আর খুঁজে পাই না আমি। অথচ এখনো আমরা কত কাছাকাছি থাকি। ভাবনার রাস্তাগুলো খুব সামান্যই হয়। একযুগ তোকে দেখি না আমি। মনে হয় এক কোটি আলোকবর্ষ এখনো দূরুত্ব আমাদের।

একাকী একটা বাড়িতে থাকি আমি। পুরনো সেই দিনের কাছে। নিজে নিজেই রান্না করে খাই। রাত্রী বেলায় কিছুতেই ঘুম আসে না আমার। বাবা-মা কেউ নেই আমার কাছে। দু’জনই ফিরবে বলেই আর ফিরলো না এখনো। ঈদের বাজার শেষ করে অটোরিক্সায় চেপে বাড়ি ফিরছিলো তারা। রাস্তায় ঢাকা কোচের সামনে পড়লো অটোরিক্সা। বাবা সঙ্গে সঙ্গে আর মা হাসপাতালে তিনদিন বেঁচে ছিলো মাত্র। তারপর থেকেই আমি একা। লেখাপাড়াটাও শেষ হলো না আমার। বাউ-ুলে জীবন শুরু হলো। এখনো আমি নির্জন যে ঘরটাতে থাকি। অগোছালো এলোমেলো। ময়লার স্তুপ এখানে সেখানে। ভালো লাগে না আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না।

আমার ঘরের দেওয়ালে বাঁধানো আছে, বেশ পুরনো একটা ছবি। হঠাৎ দেখে কেউ চিনবে না তাকে। ছবিটা কার প্রশ্ন করবে। আমি একাকি কখনো তার সাথে কথা বলি। বেশ ধুলোর আস্তর পড়েছে ছবিটার বুকে। সে কারণে হয়তো চেনা মানুষটাও কেমন যেন অচেনা অচেনা লাগছে। তারপরও বেশ অনেক সময় ধরে তাকিয়ে আছি ছবিটার দিকে। এতদিনে তার টোলপড়া হাসিটা আছে নাকি হারিয়ে গেছে! এ কথা মনে পড়তেই বুকের ভিতর কেমন যেন চিন চিন ব্যথা করে ওঠে। আমি নিজেও তো কতটা বদলে গেছি। কত বিষণœ কত ক্লান্ত লাগে আজকাল। ওজন বেড়েছে বেশ। সকাল-বিকাল হাঁটার পরামর্শ দিয়েছে ডাক্তার। যদিও বেঁচে গেছি! এখনো ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ কোন রক্তচাপ হয়নি আমার। চারদিকে সবার যে অবস্থা!  কখন আবার ওসব রোগ এসে ভিড় করে শরীরে। ও নিশ্চয় ভালোই আছে। তাকে একবার দেখার জন্য বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। অথচ মানুষটা আমার কথা হয়তো একবারও মনে করে না। একবারও ভাবে না! আর মনে করবেই বা কেন! তার তো আবার পিছুটান আছে। দিব্বি একজনের সংসার করছে। আমি না হয় বাউ-ুলে মানুষ। আমার কথা না হয়, বাদই দিলাম। আমার মত একটা অদ্ভুত মানুষের কথা, কেন ভাবতে যাবে সে? কেনই বা মনে করবে আমাকে? আমি জানি ,আমাকে একবারও দেখতে ইচ্ছে করে না তার। জানি মানুষের সব ইচ্ছে সব সময় পূরণ হয় না। একদিন এ কথা সেই আমাকে বলেছিলো ।
-জানিস শাওন, আমার কোন ইচ্ছেই না, কখনো পূরণ হয় না। এই তোর বেলায় দ্যাখ। একসাথে বন্ধু হয়ে আছি আমরা কতদিন। অথচ কতদিন চলে গেল। হয়তো ভালও বাসি তোকে! তারপরও! ভালোবাসি এই কথাটি বলতেও আমার তিন বছর সময় লেগে গেল। আবার হয়তো সংসারের করার কথা বলতে গেলে, একযুগ লেগে যাবে । আর ততদিনে তুই একটা লাল টুকটুকে বউ এনে ঘরে তুলবি! বছর যেতে না যেতে বউয়ের কোলে ফুটফুটে একটা বাচ্চা। ওয়াও ওয়াও করবে।কোলে তুলে তাকে থামনোর চেষ্টা করবি তুই। তোর বউ ছুটে আসবে।
Ñএই তুমি এমন কেন বলো তো, নিজের সামান্য বাচ্চাটাকেও থামাতে পারো না? 
তুই কী আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস ইতি ? কী আশ্চর্য রকম বোকা আমি। তাই না! আমার সামনে তো তুই এখন আর নেই । কেবলমাত্র তোর একটা পুরনো ছবি আছে আমার কাছে আর ফেলে যাওয়া পুরনো কিছু স্মৃতি। আর হৃদয়ে গেঁথে আছে  সেইসব দিনের কথা। সেই ছবির সাথেই কতদিন আমি কত কথা বলি ।  সেই ছবি কী আমার কথা শুনতে পারে! বলতে পারিস তুই? এই যে এত এত সময় ধরে, আমি তোর ছবির সাথে কথা বলছিলাম। ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলাম।  

বোকা-সোকা মেয়েটা কেন যে, আমার এত দূরে চলে গেল। এখনো বুঝি না আমি! অথচ এখনো তার অপেক্ষায় থাকি। এখনো রাত জেগে বসে থাকি। হয়তো তার ফোনের অপেক্ষায়। সব সময় একটা অদ্ভুত ঘোর আমাকে ভেজায়। অল্পদিন হলো ্পুরনো মোবাইলটা চেন্স করেছি আমি। বুড়ো মোবাইলটার বয়স হয়েছিলো ঢের। কবে একেবারে শেষ হয়ে যায় এই ভয়ে বদলিয়ে ফেলেছি তারে। এখন অবশ্য ভালোই হয়েছে। নতুন ফোন কেনার পর, অনলাইন প্রবেশ করতে পারি। ফেসবুকে ঢু মারতে পারি। তোর কী কোন ফেসবুক একাউন্ট নেই? যেখানে তোর প্রফাইলে হাজার রকম ছবি থাকবে  হাজার ভঙ্গিতে। দু-চারটা কবিতার পঙতি থাকবে। আমি তোকে ভাজপত্র লিখবো ।
প্রথম যখন তার সাথে সেই উড়োসংযোগে কথা হতো, তখন মনে হতো ছোট্র এই যন্ত্রটার ভিতর বসে আছে ইতি। আমি ইচ্ছে করলে যখন তখন কথা বলতে পারি তার সাথে। কিন্তু ইতির বাবা-মা ছিলো অন্যরকম। একসাথে বড় হলে কী হবে। যখন তখন ওদের বাড়িতে যাওয়া যেত না। ওর মা নানা প্রশ্ন করতো। প্র্েরয়াজনটা কতটুকু জেনেই তাকে ডেকে দিতো। ওদের ঘরের বাইরে ছোট্র বাগানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পা ব্যথা করতো। অথচ ওর মা একবারও ঘরে ডাকতো না আমায়। বেশ অনেক সময় পর, একবার ইতি এসে জানালায় দাঁড়াতো। তার চোখের হাসি টের পেতাম আমি। কোন নোটবই অথবা বইয়ের বাহানায় অল্প কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকতাম আমরা। আমাদের কিছু দূরে ইতির মা কান খুলে দাঁড়িয়ে থাকতো। মিনিট দশেক যেতে না যেতেই জেলখানার কয়েদীর মত ডাক পড়তো আমার। আমার সময় শেষ। অথচ কিছুতেই তার সামনে থেকে ফিরতে ইচ্ছে করতো না। 

একসাথে এইচ এস সি অবধি আমরা ছিলাম। অতঃপর ইতির বিয়ে হলো, তার খালাতো ভাইয়ের সাথে। সরকারী কলেজে পড়াতো সে। আর আমি তখন পড়ি। আমাদের দুরুত্ব হয়তো এখানেই। তিন মাস যেতে না যেতেই! ইতি তার স্বামীর সাথে চলে গেল নতুন কর্মস্থলে। কিন্তু আমি জানতে পর্যন্ত পারলাম না তার কর্মস্থল কোথায়! এতই খারাপ আমি যে তার কাছে ছুটে যাব। তাকে জ্বালাবো। তাকে পোড়াবো। তবে এখনো কেবলি আমার  মনে হয়। সেদিন প্যারিস রোড়ে কেন আমাকে ডেকেছিলো ইতি। সেদিন কী কথা বলতে চেয়েছিলো আমায়। নাকি! তার বিয়ের খবরটাই দিতে চেয়েছিলো। এর বেশি কিছু ভাবতে গেলেই, এখনো আমার চোখে বর্ষা নামে।

শীত বাস্তবতা

শীত বাস্তবতা

শীত বাস্তবতা
হাসনাত মোবারক

শীতকাল আমাকে আলসে করে দেয়। অসহ্য বেদনার এক ঋতুর নাম শীতকাল। তবে ভোজনরসিকদের জন্য এই ঋতুটি অনুকূলের। হরেক রকমের পিঠাপুলি তৈরি ও ভোজনের সময় শীতকাল।  পিঠা উৎসবের একটা আমেজ লাগে গ্রামে গ্রামে। গঞ্জে ঘাটে  যেখানে লোক সমাগম ঘটে সেখানে শীতের পিঠা বিক্রীর ধুম পড়ে যায়। এই ঋতুর বৈষয়িক সব সুবিধার চেয়ে শীতের তীব্র তীর আমাকে ফালা ফালা করে দেয়। তাই শীতকে কখনো প্রিয় ঋতু মনে হয় না। ভালো লাগে তারা ভরা রুপালি রাত। কুয়াশা জীবন যাপনকে স্থবির করে দেয়। তবে হালকা ঈষৎউষ্ণ শীত আমার ভালো লাগে। এ সময়ে নদীর জলধারা ধীরে বহে। আমিও ধীর গতিতে চলি। চলেছি আমার শৈশবের অপাঙক্তিও রেখা ধরে। কুয়াশার  চাদর ভেদ করে প্রকৃতির উপাদান -ডালিয়া, ক্রিসেন্থেমাম, বাটন, কারনেশন, জিনিয়া, কসমস, পিটুনিয়া, হলিহক, এস্টার, সুইটপি, ফ্লকস্, পর্টুলেখা, ভার্বেনা  বোতাম, এসব নামধামের ফুল তো এখন এসে চিনেছি। কিন্তু  বেড়ে উঠেছি আলপথের ধারে বেড়ে ওঠা  ঝলমলে হলুদ, হলদে কমলায় মেশানো গাঁদা আর আমাদেরই নিজস্ব ফুল, দশবাইচন্ডীর রূপ আর রঙ দেখে। পল্লী বাংলার পথঘাট, জলারধার ধরে হেঁটে হেঁটে পৌঁছেছি  বিল বাওরের ওপার। কী যে অসহনীয় দুর্ভোগ! যেখানে বাংলাদেশের একমাত্র গোচারণ ভূমি অবস্থিত। বাথান ভুমির দক্ষিণে চলে গেছে একটা নদী। কুয়াশচ্ছন্ন নদী পথে ভুটভুট করে দূর থেকে অতিদূর চলে এসেছে, চলে যাচ্ছে  শ্যলো মেশিন তোলা নৌকা। শ্যলো মেশিনের চালক হতে চাইতাম। এসব আমার শৈশবের তীর্থ¯স্থান ও তীব্র আকাক্সক্ষ। আমাদের রুজি আর রোজগারের লালনভূমি। বিল দাবুনার ওপার। একটা যুগ মাঠেঘাটে খেতখামারে কাটিয়েছি। তাই শীত যে কী জিনিস তা বুঝি। বুঝেছি শীতের নিদারুণ কষ্ট। দুর্বা ঘাসের ওপর মুক্তোদানার মতো শিশির বিন্দু। শিশিরের ওপর নাম নিওর। আমরা বলতাম নেঙর। ওই শিশিরে ধুয়ে দিয়েছে শিউলি ফুলের গা। আমি সে দুর্বলতার কথা গোপন রাখলাম। রেখেই চলেছি আজ অবধি। শীতে শরীরে থর থর কাঁপন ওঠে। শীতবাস্তবতাকে উজিয়ে কৃষক , ঝেলে মজুরদেনর শাঠে নামতে হয়।  জলডোবার পাড়ে অবহেলিত ও স্বদ্যোগে বেড়ে ওঠা মটমটির ঝাড়ের ভেতর থেকে  মাথা উঁচিয়ে থাকা বেগুনি ফুলের মায়াবী চেহারাও শীতদুর্বল মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠে না। 
শীত গ্রাম আর শহরের মানুষের কাছে ভিন্নভাবে হাজির হয়। তবে শীতের অনুভূতি সব জাগয়ায় একই। শীতের প্রলেপ গ্রাম আর শহরে কিছুটা তফাৎ। ঋতুভেদ শহরের মানুষ জানেই না। মানুষ শুধু শীতকালেই জানে বা জানতে পারে, এখন শীতকাল। শীতকালে বাঙের শীতনিদ্রা যাবার প্রমাণই যথেষ্ট। ঋতু-বৈচিত্রের তারতম্যে মানুষের মন আর মেজাজ নির্ভর করে। বসন্ত ভালোবাসার ঋতু। বর্ষায় প্রণয় বা প্রেয়সীকে কাছে পাবার একটা দুর্বার আকাক্সক্ষা থাকে। শরতের নিটোল জলের মহিমা তুলনারহিত। সেক্ষত্রে শীত অনেকটাই নির্মম প্রেষণা দিয়ে থাকে আমাদের। অধিক শীতের প্রকোপ আমাদের রবি শস্যের ভয়াবাহ ক্ষতির কারণ। বীজ ও অঙ্কুরোদগমসম নানান সমস্যা দেখা যায় এই শীতে। পাতাঝরা এই শীতে সৃজনশীল কর্মও সম্পাদন করা হয়ে ওঠে না ঠিকঠাক মতো।