এরিস্টটলের কাব্যচিন্তা : পাঠ ও নিরীক্ষা
অনন্ত পৃথ্বীরাজ
এরিস্টটল (অৎরংঃড়ঃষব) [খ্রীষ্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২ অব্দ] একজন প্রসিদ্ধ গ্রীক দার্শনিক। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং প্রভাবশালী চিন্তাবিদও বলা হয় তাঁকে। তাঁর সময়ে জ্ঞানের পরিচিত সব শাখাতেই তিনি অবদান রেখেছেন। মেসিডনের রাজবৈদ্যের পুত্র এরিস্টটল। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও মৃদুভাষী এক তরুণ। কিন্তু তাঁর কথাবার্তা, চালচলন ও পোশাক-পরিচ্ছদে ছিল আভিজাত্যের ছাপ। তাঁর আকর্ষণ ছিল বিচিত্র। নগরনীতি, কাব্যতত্ত্ব, চিকিৎসা বিদ্যা, ইতিহাস, তর্কশাস্ত্র, গণিত, ভাষণকলা, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান প্রভৃতিসহÑ জ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রেই তার ছিল অগাধ বিচরণ। সতেরো বছর বয়সে তিনি এথেন্স আসেন এবং সেখানে মহামনীষী প্লেটোর অধীনে কুড়ি বছর দীক্ষা গ্রহণ করেন। সে যুগের শ্রেষ্ঠ মনীষী প্লেটোর সঙ্গে এরিস্টটরের সংযোগ হলে প্লেটো পরিহাসের ছলে বলে ছিলেন, “তাঁর আকাডেমির দুটো ভাগ। এরিস্টটল হলো আকাডেমির মস্তিষ্ক আর অন্য সব ছাত্র তার দেহ।” প্লেটোর মৃত্যুর পর এরিস্টটল কয়েক বছর এশিয়া মাইনরে শিক্ষকতার কাজ করেন। খ্রীষ্টপূর্ব ৩৪২ অব্দে মেসিডোনিয়ার রাজা ফিলিপের শিশুপুত্র আলেকজান্ডারের গৃহ শিক্ষক নিযুক্ত হন তিনি। প্লেটোর নিকট পড়াশোনা করলেও এরিস্টটল গুরুর বিশ্বজনীনতা তত্ত্বের বিরোধীতা করেন। প্লেটো বলেছিলেন,“ কেবলমাত্র ধারণাই যথার্থ অর্থে বাস্তব।” আর এরিস্টটল দাবী করেছিলেন যে, “কেবল স্বতন্ত্র বস্তুই যথার্থ অর্থে বাস্তব।” এরিস্টটলকে সাহিত্য সমালোচনার জনক বলা হয়। পোয়েটিক্স (কাব্যতত্ত্ব) তাঁর একটি অনন্য সমালোচনামূলক গ্রন্থ।
আমাদের অন্বিষ্ট পোয়েটিক্স (কাব্যতত্ত্ব) গ্রন্থের আলোকে এরিস্টটলের কাব্যচিন্তা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটি আলোচনা উপস্থাপন করা।
এরিস্টটলের ‘কাব্যেরশিল্পরূপ’ সম্পর্কিত প্রবন্ধটি সাধারণত কাব্যতত্ত্ব নামে পরিচিত। এরিস্টটল নিজে কখনো এটিকে প্রবন্ধ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাননি। ধারণা করা হয়, ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি যে সব বক্তব্য দিয়েছেন এটিতে কেবল সেইসব বক্তৃতার স্মারকলিপি লিখিত হয়েছে। যা অসংলগ্ন, বিচ্ছিন্ন, অসুবিধাজনকভাবে সংক্ষিপ্ত এবং অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে পূর্ণ। এতে আবশ্যকীয় ধারণাসমূহ থেকে গেছে অব্যাখ্যাত। এতো সব খুঁত থাকা সত্ত্বেও কাব্যতত্ত্ব একটি চিরায়ত গ্রন্থ। এখানে যুক্তিপ্রণালীর বিকাশ ঘটেছে মহিমাময়ভাবে। যুক্তিপ্রণালিটির গুণে কাব্যতত্ত্ব সাহিত্যের শুধু সর্বপ্রথম পুঙ্খানুপুঙ্খ দার্শনিক আলোচনাই হয়নি, হয়ে উঠেছে পরবর্তী আলোচনাসমূহের ভিত্তি।
দার্শনিক প্লেটো নিজে কবি ছিলেন। তাই তাঁর কবিসত্তা দার্শনিক সত্তায় মিশে গেছে। তিনি কাব্যে বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন। তাঁর বক্তব্য,“কাব্য সত্য থেকে বহুদূরে, কাব্য এক ছায়ার ছায়া, কাব্য অসত্য ও অনৈতিক।” তাই প্লেটোর কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রে কবির স্থান নেই।
এরিস্টটল দীর্ঘকাল ভেবেছেন, প্লেটোর যুক্তিগুলো নিয়ে চিন্তা করেছেন। আর সেই ভাবনাগুলোর পরিণতিই হচ্ছে ‘কাব্যতত্ত্ব’। বিভিন্ন সময় এরিস্টটলের সাথে তর্ক হয়েছে জ্ঞানবৃদ্ধ প্লেটোর। কবিতার সঙ্গে সংগ্রামে যিনি অন্তরে অন্তরে বিক্ষত। কাব্যতত্ত্ব প্লেটোর কাব্য বিরোধীতার বিরোধীতা।
হোমার থেকে গ্রীক সাহিত্যের ইতিহাস শুরু। তাঁকে প্লেটো বন্দনা জানিয়েছেন। এরিস্টটল তাঁকে বলেছেন কবিশ্রেষ্ঠ। হোমার পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দু’টি মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসির রচয়িতা।
কাব্যতত্ত্বের সূত্রগুলো গ্রীক সাহিত্যজ্ঞান থেকে উদ্ভুত হয়ে বিশ্বজনীনতা লাভ করেছে। তবে এর মূলে অবশ্যই এরিস্টটলের অন্তর্দৃষ্টি, বিশ্লেষণের প্রতিভা এবং সাহিত্যবোধের গভীরতার কথা স্বীকার করতে হবে। কাব্যতত্ত্বে আলোচনার প্রধান বিষয় ট্রাজেডি ও মহাকাব্য।
প্লেটোর কথায় কাব্যের বিরোধীতার আভাষ পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন,“কাব্য সত্য থেকে তিনধাপ দূরে। সত্য হলো কতগুলো ভাব বা আইডিয়া। বস্তুজগৎ তার অনুকরণ। দ্বিতীয়ত: কাব্যের আবেদন মনের দুর্বলতার কাছে, মনের শ্রেষ্ঠত্বে কাছে নয়। সে জন্যেই কাব্য আমাদের বুদ্ধি, যুক্তি ও চিন্তাকে বিনষ্ট করে। তৃতীয়ত: কাব্য সমাজ জীবনের আদর্শের বিরোধী হতে পারে।
এরিস্টটল প্লেটোর প্রতিটি বক্তব্য সম্পর্কে গভীরভাবে ভেবেছেন। প্লেটোর চিন্তাজগতকে আশ্রয় করেই তার কাব্যচিন্তার জগৎ গড়ে উঠেছে। এরিস্টটলের কাছে এই প্রত্যক্ষ জগৎ সত্য, মায়া নয়। অতএব, তাঁর মতে কাব্য মূল থেকে আদৌ তিনধাপ দূরে নয়। দ্বিতীয়ত: কাব্য আমাদের আবেগকে জাগায়, চিন্তাকে উদ্বেলিত এবং উত্তেজিত করেÑএকথা সত্য। কিন্তু কাব্যের সত্য বিশ্বজনীন সত্য। অর্থাৎ মানুষকে জানবার ও বুঝবার পক্ষে তার মূল্য অপরিসীম। তৃতীয়ত: কাব্য ও বাস্তবজীবনের ভালো মন্দ বিচারের মানদন্ড হবে স্বতন্ত্র। এরিস্টটলের কাব্যতত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো :Ñ
(১) শিল্প অনুকরণ। শিল্পে শিল্পে পার্থক্য হয় অনুকরণের মাধ্যমে বিষয়ে অথবা পদ্ধতিতে। (২) কাব্যের উদ্ভব ও বিকাশ ট্রাজেডি ও কমেডির সূচনা। (৩) ট্রাজেডি একটি ষড়শিল্প। কাহিনী, চরিত্র, অভিপ্রায়, ভাষা, সংগীত ও দৃশ্য-এ ছয়টি তার অঙ্গ। (৪) কাহিনির গঠন, কাহিনির ঐক্য, কাহিনির শ্রেণিবিভাগ, কাহিনি গঠনের আবশ্যিক উপাদান। (৫) ট্রাজেডি বহিরঙ্গ। (৬) ট্রাজেডির পরিণামে আবেদন, করুণা ওভীতির উদ্বোধন ও আবেগের পরিশোধন হয়। (৭) চরিত্রের লক্ষ্য চরিত্রের সার্থকতা। (৮) অভিপ্রায়ের সংজ্ঞা। অভিপ্রায়ের সাথে ট্রাজেডির সম্পর্ক। (৯) ভাষার ব্যবহার ও ভাষারীতি। (১০) মহাকাব্যের আকৃতি ও প্রকৃতি, ট্রাজেডির সঙ্গে তুলনা ও ট্রাজেডির শ্রেষ্ঠত্ব। (১১) মহাকাব্যের সত্য, কাব্য ও ইতিহাসের পার্থক্য। (১২) কাব্যের নিজস্ব নিয়ম কাব্যের সমালোচনা পদ্ধতি।
এরিস্টটল বিভিন্ন শিল্পকর্মের মধ্যে তিনটি উপায়ে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। যেমন : বিষয়, মাধ্যম এবং পদ্ধতি। এরিস্টটলের মতে সাহিত্য সত্য, আর সত্য থেকেই আনন্দের বিকাশ। এরিস্টটল শুধু আনন্দদায়ক বলেই কাব্যকে সম্মান করেন নি, তাকে মূল্য দিয়েছেন তা জীবনের সার্বজনীন সত্যকে প্রকাশ করে বলে।
কাব্যতত্ত্বে কমেডি সমন্ধে অল্প কয়েকটি কথা রয়েছে। হয়তো লুপ্ত দ্বিতীয় খন্ডে কমেডি সমন্ধে বিস্তারিত আলোচনা ছিল। গীতিকবিতা সম্পর্কে এরিস্টটল কোনো কথা বলেন নি। কাব্যতত্ত্বের অধিকাংশ স্থান জুড়ে উঠে এসেছে ট্রাজেডি ও মহাকাব্যের আলোচনা। তবে ধারণা করা হয়, কাব্যতত্ত্ব শুধু ট্রাজেডিরই আলোচনা, মহাকাব্য উঠে এসেছে ট্রাজেডির সঙ্গে তার পার্থক্য দেখানোর জন্য।
ট্রাজেডি ও মহাকাব্যের গঠন একই। তবে ট্রাজেডি নাটকীয়, মহাকাব্য বর্ণনাত্মক। ট্রাজেডির আছে দৃশ্যসজ্জা, এটা লেখা হয় বিভিন্ন ছন্দে। মহাকাব্যে ব্যবহার হয় এক ছন্দ। মহাকাব্যের সব অঙ্গ আছে ট্রাজেডিতে কিন্তু ট্রাজেডির সব অঙ্গ মহাকাব্যে নেই। কাজ্যেই কাব্যতত্ত্ব এক অর্থে ট্রাজেডিতত্ত্ব। কিন্তু পোয়েটিকস্ গ্রন্থের মধ্যে এরিস্টটল নানা মন্তব্য করেছেনÑ যা শিল্পচিন্তার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌন্দর্য সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এরিস্টটল বলেছেন,“সৌন্দর্য নির্ভরশীল আয়তন ও সৌষম্যের ওপর। আয়তনের অতিব্যাপ্তি ও অব্যাপ্তি দুই-ই সৌন্দর্যের অন্তরায়।
আয়তন সম্পর্কে এরিস্টটল বলেছেন,“আয়তন আমাদের ইন্দ্রিয়ের সীমা দ্বারা নিয়ন্ত্রত। আয়তন বলতে বুঝতে হবে সমগ্রতার একটি ধারণা। তিনি শিল্পের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে জৈবিক ঐক্যের কথাও বলেছেন। যদিও এক অর্থে কাব্যতত্ত্ব ‘ট্রাজেডিতত্ত্ব’ তবে বৃহত্তর অর্থে কাব্যতত্ত্ব শিল্প নির্মাণের কৌশল। পট্স সম্ভাবত সেইজন্যেই তাঁর কাব্যতত্ত্বের অনুবাদের নাম দিয়েছেন ঞযব অৎঃ ড়ভ ভরপঃরড়হ।
কাহিনি ও চরিত্র সম্পর্কে এরিস্টটলের দুইটি সূত্র বিশেষ মূল্যবান : অনিবার্যতা ও সম্ভাব্যতা। কাহিনির প্রত্যেকটি ঘটনা, চরিত্রের প্রত্যেকটি আচরণ কাহিনির ভেতর থেকেই উদ্ভুত হবে। বাইরে থেকে কোনো ভাবেই কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। কাহিনির গঠন সম্পর্কেও এরিস্টটলের বক্তব্য বিশেষভাবে অনুধাবনযোগ্য। তিনি কাহিনির কথা বলতে গিয়ে ‘মুখোস’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার অর্থ গল্প। আর আমরা তাকে প্লট বলি। কাহিনিকেই এরিস্টটল ট্রাজেডির প্রধান অঙ্গ বলেছেন। কাহিনিই ট্রাজেডির আত্মা। তবে আধুনিক সময়ে ট্রাজেডির ক্ষেত্রে অনেকেই চরিত্রকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
সাহিত্য বিচারের ক্ষেত্রে এরিস্টটল একটি ব্যাপারে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেটি হলো ভাষার ব্যবহার। ভাষা সম্পর্কে সচেতন ও সতর্কতা কাব্যতত্ত্বের একটি বড় অংশ জুড়ে আলোচিত হয়েছে। এরিস্টটল ট্রাজেডির ক্রিয়ার মধ্যে একটি গভীর ঐক্য থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। তিনি নাটকে তিনটি ঐক্য থাকার কথা বলেছেন। ১. ঘটনার ঐক্য ২. সময়ের ঐক্য ৩. স্থানের ঐক্য।
এরিস্টটলের যেসব উক্তির জন্য পরবর্তী কাল বিপন্নবোধ করেছে তারমধ্যে সবচেয়ে জটিল হলো ‘কাথারসিস’। শব্দটির একটি অর্থ হলো চিকিৎসাশাস্ত্রগত : দেহের পরিশোধন। আর একটি অর্থ হলো নৈতিক ও ধর্মীয় : পবিত্রীকরণ, পরিমার্জন বা পরিশুদ্ধি। সংগীত সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এরিস্টটল বলেছেন যে, দেখা যায় অনেক ব্যক্তি ধর্মীয় উন্মাদনার মধ্যে কাটান। এই উন্মাদনাকে জোর করে রুদ্ধ করা ঠিক নয়। তাতে রুদ্ধ আবেগ আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এরিস্টটল বলেছেন, অবশ্যই মানুষ নাট্যশালায় যায় আনন্দ পেতে। সেই আনন্দ একটা বিশেষ আনন্দ এবং স্বতন্ত্র আনন্দ। ট্রাজেডি ভীতি ও করুণা জাগিয়ে তোলে আর সেই জাগরণেই মনে আসে আনন্দ।
কাব্যতত্ত্বে বহুবিতর্কের মূলে যে শব্দটি রয়েছে তা হলো ‘অনুকরণ’। প্লেটো অনুকরণ বলতে বুঝেছিলেন ‘নকল’ আর এরিস্টটল বুঝেছেন সৃষ্টি। কবিকে প্রতি নিয়ত সৃষ্টি করতে হয়। কবি জীবনকে অনুকরণ করেনÑএই কথাটির অর্থ দাঁড়ায় কবি জীবনকে নতুন ছকে গড়ে তোলেন। ট্রাজেডির ছয়টি অঙ্গের মধ্যে একটি অঙ্গ হলো দৃশ্য। এরস্টিটল দৃশ্যকে সাহিত্য আলোচনায় খুব একটা গুরুত্ব দেননি। তিনি বলেছেন, দৃশ্য হলো প্রযোজনার অঙ্গ।
পরিশেষে, কাব্যতত্ত্ব গ্রন্থটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্য কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপ তথা বিশ্বসাহিত্য সমালোচনার ধারায় শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। এরিস্টটলের মতে, শিল্প আমাদের আনন্দ দেয় কারণ শিল্প সুন্দর। শিল্প একদিকে যেমন ভাবের, বোধের কর্ম, অন্যদিকে শিল্প একটি বৌদ্ধিক কর্ম। শিল্পের বিশ্লেষণের ওপরে এরিস্টটল জোর দিয়েছেন। তবে সব সময় এ কথাটি মনে রেখেছেন শিল্প একটি অখন্ড ব্যাপার। এ অখন্ডতাই তাকে সুন্দর করে সার্থক করে। এরিস্টটলের কাব্যতত্ত্বের গৌরব তাইÑ এই অখন্ডতায়।