পদাবলি
মা আমার ভালো থাকুক
মোকসেদুল ইসলাম
কেউ জানে না আমার কেন বুকের ভেতর ব্যথা জাগে
কেউ ডাকে না খোকনসোনা আয় কাছে আয়
কিসের ব্যথা, কিসের ঢেউয়ে ভাঙ্গছে সুর
কেন চাঁদের সাথে বলিস কথা একা একা?
কেউ বলে না ওরে খোকা চোখে কেন জলের ঢেউ
আর্শিবাদের হাত দু’টোতোর এমন কেন মলিন হলো
চুলগুলো তোর এমন কেন লাগছে যেন পাজির মতো
এখনও কি তুই রাত্রি জাগিস পড়ার ছলে দুষ্টু ছেলে?
মাথার ওপর হাতটি রেখে কেউ বলে না ‘পাগল ছেলে’
কপাল চুমে কেউ বলে না ‘আমি তোর মা আছি না?’
‘কেউ দেখেনি’ এমন করে একটি টাকা দেয় না হাতে
চুপিসারে আদর করে কেউ বলে না আমার রতœ ‘কবি ছেলে’।
রাতটুকু আর কেউ জাগে না মাথার পাশে একলা বসে
কেউ ডাকে না রাতদুপুরে আদরপ্রিয় নামটি ধরে
মা আমার থাকুক ভালো দূর আকাশের ঐ দেশে
এখন আর কেউ বলে না ‘আমি তোর মা আছি না’।
এমন কেন হলো মাগো
চন্দনকৃষ্ণ পাল
ফোন করতেই বললে তুমি ‘সবাইকে চাই, চলে আসিস
পিঠে হবে এ পার্বণে, যে পিঠে তুই ভালোবাসিস।
শুকনো পাটি, পাটিসাপটা, পদ্মরুটি হবেই হবে
জমে যাওয়া মাছের পেটি, মুড়িঘন্ট ঠিকই রবে।’
ধনেপাতার ঘ্রাণ পেয়ে যাই মাগো তোমার ফোনটা থেকে
এ পার্বণে কে আটকাবে তোমার প্রিয় এ ছেলেকে।
মম-সিঁথি নাচতে থাকে দেখা হবে ঠামার সাথে
পিকনিক হবে সবাই মিলে শেষ পৌষের গভীর রাতে।
গরম পিঠে চুলোর পাড়ে বসে বসে হবে খাওয়া
কি আনন্দ কি আনন্দ পার্বনেতে মাকে পাওয়া।
কথা দিয়েও রাখলে না মা কোথায় গেলে একদিন পর
সবাইকে আজ রেখে গেলে শূন্য করলে তোমার এ ঘর।
হাসি মুখে তোমার ছবি তাকিয়ে থাকে দিবস রাতি
তুলসীতলায় সন্ধ্যেবেলায় জ্বলে না তো তোমার বাতি।
মুমু-কুমু বাতি জ্বালায় দুচোখ ভরা জল নিয়ে আজ
খুব কষ্টে ওরা থাকে সকাল দুপুর বিকেল ও সাঁঝ।
কি হতো আর কদিন পরে যেতে যদি কি হতো আর?
জল ফেলছে ক্যাকটাস ঝোঁপ,কাঁদছে তোমার কামিনী ঝাড়।
ফলজ বনজ বৃক্ষ তোমার কাঁদছে চেয়ে আকাশ পানে
সারা পাড়ায় হারানো সুর উঠছে ভরে করুণ গানে।
এমন কেন হলো মাগো কোন সূত্র পাই না আমি
ভালো থেকো ওপার লোকে,ভালো রাখুন অন্তর্যামী।
অন্তরালের আরশিনগর
পরান জহির
হাসনাহেনা আমার মায়ের নাম ছিলো। মা ছিলো পৃথিবীর ভিতরে আমার অবিকল্প একটি পৃথিবী।
মায়ের শরীরে বাজে সময়ের তার। আর মাতৃহারা হওয়ার আগপর্যন্তও চিনিনি সেই আরশিনগর। দেখি নিজস্ব শরীরের সহোদর অশরীর অনুভব। আমি মুছে যাওয়া কররেখায় এঁকে দেই ব্রহ্মা-। অন্তরাল থেকে নিনাদ হয় নিসর্গের উচ্চাঙ্গধ্বনি। মায়ের শরীর ফুঁড়ে বেড়িয়ে যাই কুঁড়ি মোহনায়...
অভিনেত্রী মা
হোসনা মুরাদ
কষ্টগুলো... অনলি মি
ভালোবাসাগুলো ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি
অভিনয়গুলো পাবলিকলি !
অভিনয় আমাকে মানায় না ?
কি করি বলো.......মা’র দেয়া
অমূল্য স্ক্রিপ্ট এ দুটো লাইন ছিল...
‘যত ভালো অভিনয় করবে
তত ভালো অভিনেত্রী হবে’
একধাপ বেশি মাত্রা;
কিশোরী বয়সে তরুণী হবার
তরুণী বয়সে ঘরণী হবার
আর ঘরণী বয়সে প্রৌঢ়া...
মা আমার শরৎ চন্দ্রের শ্রেষ্ঠ নায়িকা
জীবন যুদ্ধে হার না মানা যোদ্ধা
কোষ্ঠী পাথরে যাচাই করা অভিনেত্রী !
সেই মায়ের গর্ভে আমি হয়েছি
মূর্খ, গোমূর্খ, বুঝলা?
মা বলেছিলেন-
‘মেয়েদের জীবন হলো
কঁচুপাতার উপর টালমাটাল পানি,
পড়ে যেতে পারে সময়ে-অসময়ে’
একি বিস্ময় !
কয়েক যুগ পর আমি যে সেই সুর-ই শুনছি
‘আহারে জীবন, জলে ভাসা পদ্ম যেমন....'
তবে কি মা আমার জোতিষী ছিলেন..
নাকি দার্শনিক ?
তার এক নোখেরও যোগ্যতা আমার নেই
আমি আধুনিকাও নই...
বিজ্ঞান বুঝিনা, দর্শন বুঝিনা
বুঝি কানের মিথ্যা না শোনা
চোখের ভুল না দেখা
আর অন্তরাত্মার অকপটতা ।
আমার বিশ্বাস আর মা’র দেয়া
বেদবাক্য সম্বল করে
আজো আমি ভালো অভিনেত্রী হবার
নেশায় বুদ!
ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ শব্দ
সৌর শাইন
আমি অনবরত শব্দের পিছু ছুটছি, যখন শব্দই আমার জীবন,
জীবন আমার শব্দের স্বরলিপি।
চারদিকে কত শব্দ... দ্রুত-মৃদু-মন্দ-মন্থর গতির শব্দ।
কোনো শব্দ পিপাসার্ত, কোনটি মলিন, রুক্ষ, দুঃখময়,
কিছু শব্দ শতাব্দীর গলা টিপে ধরে,
কিছু শব্দ সভ্যতার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে,
কটমটে কিছু শব্দ বিভীষিকা নিয়ে ধাবিত হয় ধ্বংস সাধের লক্ষ্যে।
হাস্য রহস্য কিছু শব্দের চিরন্তন স্বভাব।
কতিপয় শব্দ পারমাণবিক বিশ্বের স্নায়ু যুদ্ধের পঙক্তি সৃষ্টিতে ব্যস্ত।
এতো শব্দ থেকে আমি বেছে নিই একটি শব্দ।
এ শব্দটি আমাকে খুঁজে দেয় মাটির পৃথিবীতে স্বর্গের সন্ধান,
অমৃত স্নেহের অপার সুধা।
ঝিরিঝিরি ঝর্ণা হঠাৎ থমকে যায় এ শব্দের মাধুর্যে,
চির চঞ্চল দখিন হাওয়া বার বার তাকায় আমার মুখের দিকে,
পরম শান্তিতে আমি উচ্চারণ করি ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ শব্দটি ‘মা’।
আমাদের মা
গোবিন্দ ধর
আঠারো বছর ধরে মা বিছানায় শায়িত, মাঝে মাঝে উঠতেন
বাইরে একটু পায়চারী করা
বারান্দায় হাঁটতে হাঁটতে তিনি ক্লান্ত হয়ে যেতেন।
মা আমাদের কোনদিন রান্না করে খাওয়াননি।
বাবা অফিশ যাওয়ার আগে
সকালে এক সাথে পাত পাড়তেন।
সকলের খাওয়া হলে তিনি অফিস যেতেন।
সকালের রান্না থাকতো
দুপুরে স্কুল থেকে এসে আমরা খেতাম।
বাবা রাতে বাসায় এসে ক্লান্তি ঝেড়ে
রাতের খাওয়ার হাঁড়ি চাপাতেন।
লেখাপড়া চেষে আবার একসাথে আমরা ভাইবোন মিলে
একসাথে খেতাম।
বাবা তারপর খাওয়ার শেষে
গরমকালে বাইরে বেনচ্ েবসতেন।
ক্লান্তিহীন গল্প স্বপ্ন, বিলাতেন।
মা সর্বদা মনোযোগসহ গল্প শুনতেন। স্বপ্নগুলো বুনতেন।
বাবার ছায়াসাথী মা।
মা সেরকম কোন কাজই করার সামর্থ্যে নেই।
দীর্ঘ রোগ ভোগ। দীর্ঘকাল বিছানায় তিনি।
হাপরের মতো শ্বাস নিতেন। তবুও মাকে কোনদিন রোগমুক্ত পাইনি।
বিছানায় থেকে থেকে মা
সারাবছর বই পড়তেন।
যা সামনে আসতো তাই পড়তেন।
বই পড়তে পড়তে মায়ের মুখমন্ডল অবিকল
বইয়ের মতো দেখাতো।
মায়ের ছিলো না কোন গোড়ামি।
কারো কাছে কোনো নালিশ জানাতে দেখিনি মাকে।
অসুখ মাকে শয্যাগত করলো।
শ্বাস নিতে কত কষ্ট
কোনোদিন মা তার কষ্ট পাঁচকান করেননি।
এত কষ্ট,এত অসুখ, এত অসুবিধে
আমরা তবু তিন ভাই পাঁচ বোনের সংসারে বড় হলাম।
মা এই একটি মাত্র শব্দঋণে আজীবন স্মৃতিপট লেখা আমার ললাট।
চোখের প্রতি মায়ের বিশ্বাস
অসীম মালিক
১
চোখের জমিতে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে দেখে
আমার মা, বাবাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিল ।
মা বুঝেছিল, চোখের জমিতে ফ্ল্যাটবাড়ি গড়ে না উঠলেও
অস্ত্রকারখানা গড়ে উঠবে না কোনোদিন ।
২
চোখের প্রতি মায়ের বিশ্বাস, সোনালী ধানক্ষেত হয়ে
হাওয়ায় ভাসিয়ে দিত নবান্নের চিঠি ।
মাটির উঠোনে লক্ষ্মীর পা এঁকে কোজাগর চাঁদে ভেসে যেত শহর-নগর ।
কিন্তু নতুন ধানের গন্ধে বাবা ভেসে যেতেন না
মা’র চোখের জমিতে তুলে রাখতেন-ধানবীজ ।
মায়ের অসুখ
তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন
ইচ্ছে করে পুরো শহর কিনে দেই মাকে ।
খরচপাতি লাগবে অনেক, সেটা সবাই জানে!
তবুও মনে ইচ্ছে জাগে;-বাবার এখন বয়স বাড়ছে।
শরীরও খারাপ হচ্ছে, আমাদের দুই ভাইয়ের প্রতি নির্ভর হচ্ছে।
মায়ের শরীর অনেক খারাপ। গলায় হয়েছে টিউমার।
কেউ বলছে অপারেশন করলে ক্যান্সার হবে,
কেউ বলছে মারা যাবে ইত্যাদি। এসব বলে ভয় দেখায়!
আচ্ছা শুনি ডাক্তার ছাড়া ওদের এসব কথা কে শেখায়?
এসব কথা শুনে বিধাতার চরণে
মায়ের আরোগ্য লাভের জন্য আকুল মিনতি করে বলি,
‘মা যেন একশ বছর বাঁচে’
আমার তো আর টাকা নাই মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য।
তাই বিধাতাই হোক মায়ের পরম চিকিৎসক।
সে ছায়া তোমারই
চৌধুরী নাজির হোসেন
অক্ষরহীন এক অক্ষরেখায়
ঘুরতে ঘুরতে নিজের ঠিকানা মুছে
বজ্র বিদ্যুৎ ধারণ করো,
সন্তান যেন থাকে নিরাপদে!
ঝঞ্ঝাভর্তি খাতা তোমার জীবনী
ছিন্ন আঁচলের আড়ালটুকু ইতিহাস
নোনা ঢেউ, পোড়ো মাটি ভূগোলেও..
তোমার অতীত নেই, ভবিষ্যত নেই
এমনকি বর্তমানও...
মানচিত্রে প্রতিটি রেখায় জরাজীর্ণ
ফাটলের দাগ,পাংশু বর্ণের
অথচ ত্রিকাল জুড়ে যে অনর্থ ভালোবাসা
ত্রিলোক জুড়ে নিরর্থ মায়া
চিকচক্রবালে সে ছায়া তোমারই
আমার অক্ষর জ্ঞান
নিরক্ষর মায়ের চোখের তারা
শিকড়ের মাটি
দুখিনী মায়ের ভালোবাসা
আর আলো জল হাওয়ায় বেড়ে ওঠা যেটুকু,
সে তো তোমার শুষ্ক
চোখের কোণায় স্বপ্ন প্রজ্জ্বলন ।
আম্মা, আমার ঈশ্বরের সাক্ষাৎ প্রতিনিধি
জোবায়ের মিলন
‘একটা শাড়ীকাপড়, একটা ব্লাউজের পিছ্ দরকার। যদিও জরুরি না।’
জানিয়েছিলেন আম্মা। উত্তর করিনি, বলেছি, দেখি-
মাস শেষে কারখানা বন্ধের ঘোষণা এলো
আট মাসের বকেয়া পরের মাসেই দেবে বললেও
তালা বন্ধ ফটকের ভিতর ঢুকা গেল না,
দরজার’পরে নোটিশ ঝুলানো- দুঃখিত।
দু:সংবাদটি ঘরে জানাতে পারিনি
একাজ ওকাজ করে অফিস পাড়ায় ঘুরে ঘুরে
ক্লান্তি চলে আসলে শেষ সাক্ষাতকারে জানলাম-
চাকরির বাজার ভালো না, সময়টা মন্দা।
আব্বা তাঁর পেনশন বিক্রি করে দিয়েছিলেন
আম্মা তাই চিরকালের মতো অসহায়ত্বের ঘোর ছেড়ে
আনন্দালোকে ভাসতে পারেননি কোনো বেলায়,
আমার হাতেই তাঁর তৃপ্তি-
হাতপোড়া আমি শ্রমের বদলে উপার্জন খুঁজে
চষে বেড়াই পিচের শহর।
ইট আর পাথরেরা জানে, দেয়াল ও প্রাচীরেরা জানে
রোদে গলা বিটুমিন জানে আমার একটা গল্প আছে-
দিন গত হয়, রাত গত হয়, সূর্যের তপ্ত বমি
মাথায় নিয়ে ফিরি বিবর্ণ বাড়ির সীমানায়
আম্মা ভাবেন, পুত্র তাঁর, শেষ ভরসার উষ্ণ চৌবাচ্চা;
আমি জানি, আম্মা, আমার ঈশ্বরের সাক্ষাৎ প্রতিনিধি।
-তা’ই ভেবে, আমি বিক্রি করতে থাকি
সঞ্চিত সমস্ত অহংকার, আর...
হাত
লুৎফুন নাহার লোপা
শরীর জুড়ে ঘিরে আছে তাপমাত্রার শোক,
আমার চিৎকার ছড়িয়ে যাচ্ছে রুগ্ন পৃথিবীতে।
ভ্যাপসা চোখে কালো দেখাচ্ছে বৃক্ষগুলো,
তার তলে অসংখ্য শিশুবৃক্ষ হাত বাড়িয়ে
তৃলে নিচ্ছে প্রেম,সম্মুখ প্রার্থনায়,
আমার তপ্ত দু’চোখ বৃক্ষহীন, বৃষ্টিহীন ;
একটি হাতের অপেক্ষায় ভুলে যাচ্ছে সবকিছু
আমার দ্বিখ-িত শরীর সে জুড়ে দিচ্ছে বহুবার,
সেই অমসৃণ হাত দু’টো প্রতিদানহীন পূর্ণতা,
শুধুই মা হয়ে দূর করছে অন্ধকার।
গন্তব্যহীন গন্তব্য
রাহাত রাব্বানী
তোমার আশ্রয় ছাড়া-
বিষাদ ভরা এতসব পা-ুলিপি
বিষণœ বিধুর আমার কবিতার খাতা; দুর্দিনে-
কার বুকে মাথা গুঁজবে?
রৌদ্রদগ্ধ কবিতার বিশুষ্ক পঙক্তিমালা-
কার কাছে পাবে সেবা, শুশ্রƒষা?
তুমি না দিলে আশ্রয়
বেদনাহত এই কবির শূন্য ঝোলা, কার কাছে দাঁড়াবে-
ভিখেরির মতো?
কার কাছে পাবে সামান্য ডাল-ভাত;
শুকনো মরিচ, ঠা-া জল?
বোকা মানুষগুলো রক্তারক্তি বুঝে,- কবিতা বুঝে না!
বৃক্ষ জানে অনন্ত প্রতীক্ষা; নদী জানে অবিরাম ছুটে চলা।
একমাত্র তুমিই জানো-
কষ্টের দাবদাহ;
কবির নিঃসঙ্গ অভিধান, কবিতা।
এমন কোনো দীঘি নেই, যেখানে
অনায়াসে ফোটতে পারে কবিতার পদ্ম।
এমন কোনো উদ্যান নেই, যেখানে
মামুলি আদরে বেড়ে ওঠবে শব্দের চারাগাছ।
অথচ-
তোমার আশ্রয় পেলে মুহূর্তেই
পৃথিবীর তিন ভাগ সমান জলাশয় পূর্ণ করা যায়-
কবিতায়, কবিতায়।
প্রতিটি বৃক্ষেই ফোটানো যায় কবিতার বকুল।
যদি তুমি না দাও আশ্রয় -
আর কোনোদিন কোনো কবিতা লিখবে না,
এ কবির বেদনাগ্রস্ত হৃদয়। উড়বে না-
অক্ষরের প্রজাপতি। ফুলে ফুলে ছুটবে না ভ্রমর।
তোমার আশ্রয় ছাড়া-
পুরো পৃথিবী ভালোবাসাহীন, খাঁখাঁ বিরান।
মায়ের কাছে চিঠি
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
এই যে তোমায় লিখছি চিঠি জবাব দিও মা,
কেমন আছ জানিয়ে দিও
কষ্ট নিও না।
আমরা তো বেশ ভালোই আছি তোমায় ভুলি নাই
কিন্তু তোমার শীতল পরশ যাদুর তুলি নাই।
তোমার হাতের কমলা চারাএখন দিচ্ছে ফল
সেই ফলেতে হাত দিলে মা
চোখ করে ছল ছল।
তোমার হাতের নকশি কাঁথা অল্প শীতের ওম
সেই যে তোমার তাল পাখাটা ভাবনা ভোলায় কম।
ভাবছো মাগো এখন কেমন কাটাই ভয়াল রাত?
নামলে আঁধার হামলে করি
ভয়কে কুপোকাত।
এখন আমি অনেক বড় অল্পে ডরি না
ভয় গুলো সব জয় করেছি কল্পে মরি না।
রাত্রি যখন আঁধার নামায় স্বপ্ন মেলে জাল
তখন তুমি জবাব দিও
সময় পেলে কাল।
সব আয়োজন পড়ে থাকে
সজল কুমার টিকাদার
ম-এ আ-কার দিলেই মা’কে ধরা যায় না।
যিনি এক গভীর প্রত্যয়, ভালোবাসায় জাহ্নবী,
তাঁকে কি কখনও
স্বর আর ব্যঞ্জনের দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা যায়?
তাই দিনান্তে দেখি
সবকথা, সব আয়োজন পড়ে থাকে
নৈবেদ্যর থালায়।
শূন্য মনে হয়, শুধু শূন্য মনে হয় !
গল্প : চপেটাঘাত
চপেটাঘাত
তন্ময় আলমগীর
‘ছলিম ভাই, কাঞ্চইন্যে আঙুরার সাথে ফষ্টিনষ্টি কইরা বেড়ায়। ওরে সাবধান কইরা দিয়েন। নাইলে কিন্তু ল্যাংরাডার বাকি ঠ্যাংডাও কাইট্টেলামু’। বেশ উচ্চকন্ঠে কথাগুলো বলল সুলতান। রাগে গলার স্বর কাঁপার সাথে সাথে ঠোঁট জোড়াও কেঁপে ওঠল। লাল হয়ে গেল মার্বেলের মত ঢাসা ঢাসা চোখ দুটো। উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কাঞ্চনকে এখন সামনে পেলে জিন্দা মাটিচাপা দিবে। ছলিম ভাই পানের মধ্যে খয়ার লাগিয়ে মুখে দিয়ে সিগ্রেটটা হাতে নিলেন। পানের সাথে সিগ্রেট না খেলে জমে না। সিগ্রেটে আগুন ধরাতে ধরাতে বললেন- আমি ব্যাপারটা দেখতাছি। তুই তোর কাম-কাজ ঠিক মতো কইরা যা।
সুলতান আর কথা বাড়ায়নি। বাড়ানোর দরকারও নেই। ছলিম ভাই যেকোন অভিযোগ গুরুত্বের সাথে নেন। সুষ্ঠু বিচারের ক্ষেত্রে আপোসহীন। দশ বছর ধরে দেখে আসছে ছলিম ভাইকে। সেই ভরসায় সুলতান খানিকটা ভারমুক্ত হল। প্রথমে ভেবেছিল সমস্যার সমাধান নিজেই করে ফেলবে। কিন্তু ছলিম ভাইকে না জানালে হিতে বিপরীত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। জানিয়ে ভালই হলো। দায়িত্ব যেহেতু নিয়েছেন, নিশ্চয় বিচার হবে কাঞ্চনের।
ছলিম ভাইর বিশ্বস্ত সহযোগী সুলতান। অতিক্রান্ত দশ বছরে সে দেখেছে ১২ জনের করুন পরিণতি। কারো পায়ের রগ, কারো কব্জি, কারো চোখ মর্মান্তিকভাবে উপড়ে ফেলা। নিপুণ দক্ষতার সাথে ছলিম ভাই এসব নির্মম কান্ড ঘটিয়েছেন। আপাত দৃষ্টিতে অপরাধ মনে হলেও নিজেদের পেট ভরার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুধার্থ মানুষের পাতে জুটেছে খাবার, মুখে ফুটেছে হাসি, পরিবারে এসেছে সুখ।
কাঞ্চন সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে হাসপাতালের বারান্দায় ধুকে ধুকে মরতে বসেছিল। ছলিম ভাইর নির্দেশে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে আনে সুলতান। এনে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভাঙা পাটাকে একেবারে অচল করে ফেলে। তারপর ভিক্ষার থালা হাতে ধরিয়ে বসিয়ে দেয় শাহআলী মাজারের প্রধান গেটে। পঙ্গু কাঞ্চনকে ফেলে চলে যায় তার বউ। নারীসঙ্গহীন কাঞ্চন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। হাত বাড়ায় সুলতানের বড় মেয়ে আঙুরার দিকে। জমেও যায় বেশ। ছলিম ভাইর কিছু পরিবারহীন বাধিত ভিক্ষুক রাতের বেলা একসাথে হলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে আঙুরা। তারা একসাথে ঘুমায়। পাশের ছাউনি করা ঘর থেকে শেষ রাতের নির্জনতার ভেতর কাঞ্চনের কাছে আসতে আঙুরার অসুবিধা হতো না। খুব সতর্কতার সাথে চলছিল সে সম্পর্ক। একদিন সুলতানের কাছে সব গোমর ফাঁস হয়ে যায়।
ছলিম ভাই সবাইকে নিয়ে দরবার করতে বসলেন। কাঞ্চন, আঙুরা দুজন দুদিকে বসল। বাকি সবাই সামনে। ছলিম ভাই বসেছেন মোড়ার ওপর। দু পক্ষের বক্তব্য শোনার পর কিছুক্ষণ নিরব থেকে খয়ার সম্বলিত পান মুখে দিয়ে একটা সিগ্রেট ধরালেন। এই রাজ্যের একচ্ছত্র রাজত্ব তার। যা বলবেন তার একবিন্দুও নড়চড় হবে না। তাই ভেবে চিন্তে ফয়সালা করা তার নৈতিক দায়িত্ব।
তিনি সবাইকে বিশেষ করে কাঞ্চন ও আঙুরাকে উদ্দেশ্য করে একটা কাহিনী শুনালেন। বললেন- আমি ছিলাম বাবার একমাত্র ছেলে। ছোটবেলায় ভাতের অভাব অনুভব করিনি। যখন যা চেয়েছি, পেয়েছি। হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় বিপাকে পড়ে গেলাম। তখন আমার বয়স সতের-আঠার হবে। বাবা অন্যের জমিতে বদলি কাটত। অল্প কদিন স্কুল মাড়ানো আমিও শুরু করলাম সে কাজ। মা কিছুদিন পর আমাকে বিয়ে করিয়ে দিলেন। সুখেই কাটছিল সংসার জীবন। সুস্থ-সবল এই আমি প্রতিদিন বদলি দিতাম। খানা-খাদ্যের অভাব হত না।
বউ গর্ভবতী হল। আমাদের আনন্দের সীমা নেই। পোয়াতি বউয়ের যতœ-আত্মীর ঘাটতি রাখতাম না। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার মাসখানেক আগে কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। পেটে ব্যথা ছিল। ডাক্তার বলল সিজার করতে হবে। টাকা লাগবে ত্রিশ হাজার। নয়তো বাচ্চা বাঁচানো যাবে না।
আমি সিজার করাতে মনস্থির করলাম। যেভাবেই হোক আমার রক্তের ধনকে পৃথিবীতে আনবই। অতিরিক্ত পরিশ্রম করেও সব টাকা জোগাড় করতে না পেরে একরাতে মহাজনের গোদাম থেকে কয়েক বস্তা চাল সরাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলাম। এর আগের চুরিগুলোর দায়ভারও আমার ওপর চাপিয়ে মামলা করে জেলে ঢুকিয়ে দিল। অপর দিকে সিজার লাগেনি। আল্লাহর রহমতে মা-ছেলে দুজনই সুস্থ।
জেলে থাকতে থাকতেই আমার মা মারা গেল। কী কারনে জানি না, বউ কিছুদিন নিয়মিত যোগাযোগ করলেও মা মারা যাওয়ার পর থেকে অনিয়মিত হয়ে গেছে। এক সময় একেবারে উধাও। দু বছর জেল খেটে বের হয়ে এসে দেখি এ সংসারে আমার আমি ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ঠ নেই। অনেক খুঁজেও বউ-সন্তানের সন্ধান পেলাম না। প্রতিদিন পরিশ্রম করে টাকা উপার্জনের বিকল্প ভেবে শহরে চলে আসলাম। বস্তিতে ঘুমাতাম। দেখতাম তোদের মত ভিক্ষুকদের সর্দার আছে একজন। সেই সব নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যস, চোখ বুজে সে পথে নেমে পড়লাম আমি।
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে একটু দম নিলেন। পানের সাথে সিগ্রেটও শেষ। আরেকটা সিগ্রেট ধরিয়ে আবার শুরু করলেন- আমার গল্প শেষ। এবার আসল কথা শোন। টাকার অভাবে আমার বউ চলে গেছে। পঙ্গু হওয়ার কারনে কাঞ্চনের বউ চলে গেছে। অথচ দেখ, পঙ্গু হওয়া সত্ত্বেও আঙুরা কাঞ্চনকে ভালবাসে। এতে খুব খুশি হয়েছি আমি। এতো পুঁজিবাদী সমাজের দুইগালে চপেটাঘাতের শামিল। আঙুরা এবং কাঞ্চনকে আমি নিজ হাতে বিয়ে দিতে চাই। কী বলিস তোরা?
প্রকৃতিও সেই টানের কাছে বরাবরই পরাজিত
প্রকৃতিও সেই টানের কাছে বরাবরই পরাজিত।
আহমদ মেহেদী
ভার্সিটির বন্ধুদের মধ্যে আমিই গ্রামের বলে তারা আমার গ্রাম দেখতে যেতে চাচ্ছে, কয়েকদিন ধরে রিন্টু পিড়াপিড়ি শুরু করে দিয়েছে। আমি হঠাৎ বলে দেই যাবি, অবশ্যই যাবি, কোনদিন যেতে চাস বল? রিন্টু উচ্ছাসে বলে কেন পরশু যাব, ভার্সিটি ত বন্ধই, তবে একটি শর্ত নাইট কোচে যাব যাতে করে খুব ভোরে গিয়ে পৌছাতে পারি, কত শীত যায় আসে, কাঁচা খেজুরের রস ঠিক কবে খেয়েছি এখন তা আর মনে পড়ে না। তোর গ্রামে পৌঁছেই একেবারে টাটকা রস খেতে চাই। -ওকে, ডান। তাদেরকে কথা দেবার সময় দিয়েছি কিন্তু তারা কি আদৌ জানে আমার বাবা পুনরায় বিয়ে করায় তাকে পাঁচ বছর আগেই একেবারে ছেড়ে চলে এসেছি আমি ? জিগাতলার একটি জীর্ণশীর্ণ মেসে টিউশনি করে, খেয়ে না খেয়ে চলছে কোন রকম। পৃথিবীর সব সহ্য করতে পারি মায়ের জায়গায় লাল লিপিস্টিক মাখা ঠোঁটে অন্য মায়ের পদচারনা মানতে পারি না এবং তার আঁচলে থাকতে চাইনা আর চাইবও না! শুনেছিলাম বাবা ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন। এই বুঝি তার ভালবাসার নমুনা? মৃত্যুর চল্লিশ দিন না পেরুতেই আবার বিয়ে ! ভাবছি কী করা যায়। খেজুর গাছগুলি কি আগের মত আছে? মালেক মিয়া কী এখনো জীবিত আছে, ঘটি দেয় এখনও।
রাত তিনটা বাজে। ছেলেবেলার কাছারি ঘরের সামনে আমি। শীত পড়েছে খুব। রিন্টুরা উঠানে দাঁড়িয়ে। কয়েকবার দরজায় কড়া নাড়তে নাড়তে বাবাকে ডাকলাম। বাবা এত রাতে আমাকে দেখে খুব অবাক হন। কিরে পুত, তুই কেমন আছিস? ঘুম ভাঙা বাবার চেহারায় অসহায়ত্বের ভাব। আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। কাছারি ঘর আমাদের জন্য ছেড়ে দিলেন, আলমারি থেকে লেপ নামিয়ে দিলেন। নতুন মা আমাদের জন্য আবার ভাত রান্না করলেন সাথে বেগুন ভর্তা আর ফ্রিজে রাখা শিং মাছের তরকারি। বেগুনের ভর্তা খুব প্রিয় আমার বাবা আজও মনে রেখেছেন? আমার ছোট্ট একটি বোন হয়েছে, কী সুন্দর! একেবারে যেন আমার মায়ের ফটোকপি। পুস্পা তাঁর নাম। প্রকৃতি মানুষের কাছ থেকে অনেক কিছু নিয়ে যায় আবার দিয়েও যায়। অস্ফুট স্বরে আমাকে ভাইয়া বলে ডাক দিলে ভেতর টা কেমন জানি নড়ে উঠল।
বাবা ফজর পড়ে আমাদের জন্য টাটকা খেজুরের রস নিয়ে এলেন। নিজ হাতে দুধ-ছাকনি দিয়ে ছেঁকে দিলেন। রিন্টুরা সেই রস অমৃতের মত খেল। রোদ উঠতে শুরু করলে বন্ধুরা মিলে নিজের পুকুরের তরতাজা সরপুঁটি, কই, শিংও খইয়া মাছ ধরলাম। দুপুরে তা রান্না হল সরিষার তেলে আর মায়ের স্পেশাল মাসকলাই রেসিপি। সিএনজি দাড় করানো। বাজারের স্টেশনে যেতে হবে। বাবা আমাদের জন্য বি আর টি সি’ র টিকিট আগেই কিনে রেখেছেন। বাবা পিছন থেকে ডাকলেন, শোন বাবা! তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস বলে একটি টাকার বান্ডিল আমার হাতে দিয়ে দেয়। নতুন মা কিছু লাউয়ের ডোগা, ব্যাগভর্তি মাছ, ডিম দিয়ে দেন। সত্যি ওনাকে সৎ মা’র মত একবারও মনে হয়নি। তাকে নিয়ে আমার ভুল ধারনার ভেঙে গেল নিমিষে। পুস্পা আমার হাত ছাড়ছেই না। বলে, ভাইয়া আমাকে ঢাকায় নিবে একদিন? আবার আসার সময় একটি কোন আইসক্রিম নিয়ে আসবে! পুস্পা আমাকে জড়িয়ে ধরতেই অনুভব করলাম এ যেন আমার চিরচেনা মায়ের বায়না, ব্লেড দিয়ে কাটা সেই নাড়ি- পাখিরই টান যা উপেক্ষার শক্তি অন্তত আজ নেই আমার। প্রকৃতি ও সেই টানের কাছে বরাবরই পরাজিত।
গল্প : মা
মা
মো: ওবায়দুল হক
তিতাস নদী। এও যেন আমাদের অন্যএক মা। মায়ের মতোই মমতা বিলিয়ে যায়। নদীটা যেন আমাদের তিতাস পাড় বাসীর প্রাণ।বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নদীঘাট। আমাদের পাড়ার নারী পুরুষ সকলে এই ঘাটে প্রক্ষালনে আসা। নিজ নিজ কৌশল প্রয়োগে কতোটা দক্ষতা তাদের! কেবল দেখলেই বোঝা যায় স্নানও একটা আর্ট! দুপরে গোসোল করতে এলে, প্রায়ই দেখতাম মা তার আঁচল দিয়ে আমার বাবার হাত, পা, পিঠ ঢলে দিতেন। সাবানের ফেনা ভর্তি সেই একই আঁচল দিয়ে আমার শরীর ও মেখে দিতেন জলে মাখা পবিত্র মমতা। খুব মনে পড়ে শৈশবের স্মৃতিমাখা সোনালি দিনগুলোর কথা। মাঝ রাতে বেলকনীতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবি.. আমার মায়ের কথা। মায়েদের আঁচলগুলো ভালোবাসার ফুল বিলাতে কতো দক্ষতাময়। মায়ের শাড়ির প্রতিটা সুঁতো যেন এক একটা মমতার সাগর, যা সন্তানদের জন্য প্রভুর দেয়া নিঁখুত উপহার!!
২
সেচ্ছায় যেখানে এসে নারীর জীবনের সব স্বাদ আহ্লাদ আত্মসমর্থন করে সেটা হলো সন্তানের প্রতি ভালোসা মায়া মমতা। আমার বোন সাদিয়া, খুব অন্য রকম একটা মেয়ে। ফ্যাসান এবং সাঁজগুজ করাই ছিলো নেশা। বাবা ওকে আদর করে পাঙকু মেয়ে বলে ডাকতো! বাচ্চাদের আদর করা। কুলে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এটা উঠতি বয়সি মেয়েদের একধরনের ভালোলাগা হলেও সাদিয়া ছিলো ব্যতিক্রম । কখনো ছোট বাচ্চা কুলে নিতো না, কাপড় ময়লা হয়ে যাবে বলে। অথচ ওর বাচ্চাটা জন্মানোর পর কত বদলে গেছে! ওর সন্তানের প্রতি মায়া, মমতা, দায়িত্ববোধ দেখে আমি রীতিমত অভাক হই! ওর ছেলেটা রাতে খুব কাঁন্না করতো, কাঁন্নার তীক্ষè আওয়াজ, শুধু ঘরের মানুষই না, আশপাশের মানুষগুলোর ও ঘুমের বিঘœতা ঘটতো। আমি ওর মুখে এতোটুকোও বিরক্ততার ছাপ দেখতে পাইনি। ‘বাবারে সোনারে’ বলে বাচ্চাটাকে শান্ত করার কী যে প্রয়াস.! আমি মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে থাকিয়ে ভাবতাম ‘বোনটি আমার এখন আর আগের সাদিয়া নেই; ও মা হয়ে গেছে! মাতৃত্ব নারীজীবনের শ্রেষ্ঠ পূর্ণতার নাম।
৩
আমার বাবা শ্বাস কষ্টের রোগী। বাবার এই হাঁপানি রোগটা তার জন্ম থেকেই। বছরে দু একবার এই অসুখটা দেখা দিত। সেই সময়টাতে বাবা এতোটাই কাঁশি হতো। কাঁশতে কাঁশতে বাবা অস্থির হয়ে ওঠতো। আমার মা নিজে না ঘুমিয়ে বাবার পাশে বোসে থাকতো। আমি দেখেছি, বাবার প্রতি নিখুঁত সেবা, স্বামীবোধ। বাবাকে ধরে ঘরে বাহিরে নেয়া। কুসুম গরম জল দিয়ে গোসল করানো। পিতলের চামচে রসুন আর সরিষার তেল গরম করে বাবার বুকে মালিশ করে দিতো। এতোটাই কাঁশি হতো, সবসময় একটি মাটির পাতিলে ছাই ভরে বাবার পাশে রাখতে হতো, কাঁশি ফেলার জন্য। মা সারারাত জেগে বাবার পাশে বসে থাকতো..। কখনো কখনো খুব তীব্রহয়ে অসুখটা দেখা দিত। বাবা কষ্টে গলাকাটা মোরগের মতো ছটপট করতে থাকতো। মনে হতো এই বুঝি আমরা বাবাকে হারিয়ে ফেলছি। তখন মা আমার অসহায় হয়ে ওঠতো। মা, চিৎকার করে বলত,‘আরে যা তাড়াতাড়ি গিয়া ইমাম সাবরে ডাইকা নিয়া আই।’ পাড়া গাঁ। বেশ দূরে হসপিটাল থাকার কারনে যে কোন কঠিন মুহূর্তে মসজিদের ইমাম সাহেবই ছিলো একমাত্র গন্তব্য! ইমাম সাহেব এসে বাবার মাথার পাশে বেেস ইয়াসিন সুরা পড়ে ফু দিতো। আর বাবার মুখে আঙুল ভিজিয়ে পানি দিতো। মা আমার পর্দার আড়াল থেকে কাঁন্নাভেজা চোখে তাকিয়ে থাকতো। পৃথিবীর সমস্ত অসাহায়ত্ত্ব যেন নেমে আসতো মায়ের মুখে। আর আমরা ভাই বোনগুলো বাবার সিতানের পাশে দাঁড়িয়ে অসহার মতো কাঁদতাম।
৪
আমি বাবা হতে চলছি! এই আনন্দটা আমাদের ফ্যামালির সবার মনে আকাশ ছোঁয়া! আমি যেমন আমাদের ফ্যামেলির বড় ছেলে, স্নিগ্ধা ও ওদের ফ্যামিলির বড় মেয়ে। এই মাসেই মা হবে, স্নিগ্ধার কন্ডিসন তেমন ভালো না। কয়েক মাস আগে থেকেই ডক্টর আপা যেভাবে বলেছেন, সে ভাবেই আমার মা ওকে আগলে রাখছেন। যখন জানতে পারলেন ওর টুইনবেবি হবে, সে থেকেই স্নিগ্ধা কেমন যেন আতঙ্কে ভুগছেন। হাসি খুশি চঞ্চলা বউটা আমার কেমন যেন নীরবতার দখলে চলে গেলো। মাঝে মধ্যে আমার দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকে। অবুজ শিশুর মতো আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমিও পরুম মমতায় ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দেই। ওকে আমি এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল হতে দেই না। সারাক্ষন পাশে থেকে সাহস দিয়ে যাই। আজ সকাল থেকেই ও কেমন যেন ছটপট করছিলো। আমি আমার শ্বশুর শ্বাশুরীকে ফোন করে উপজেলা হসপিটাল আসতে বলে, মা আর আমি স্নিগ্ধাকে নিয়ে ভ্যানে উঠেলাম। যথা সময়ে এসে পৌছালাম। এমারজেন্সিতে ডোকার আগে আমার মা ও তার মাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো। তার পর ওদের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে, ‘আম্মা, আমার জন্য দোয়া করবেন। আর যতো ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে দিবেন। স্নিগ্ধার শেষ কথাগুলো আমার বুকের ভিতরের কাঁন্নার নদীটার বাঁধ ভাঙছে। চোখের জলে ভাবছি, ‘বউ আমার মা’ হতে যাচ্ছে , মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে...
মা একটি মহাকাব্যের নাম
মা একটি মহাকাব্যের নাম
মুহাম্মদ তাফহীমুল ইসলাম
‘মা’ একটি শব্দ। এই শব্দ সৃষ্টির পেছনে থাকে কষ্টময় দীর্ঘ এক ইতিহাস। একজন মেয়েকে মা হওয়ার জন্য নিতে হয় জীবনের ঝুঁকি। প্রায় নয়-দশ মাস সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার পর সন্তান ভূমিষ্ট হলে মা ভুলে যায় সেই কষ্টময় ইতিহাসের কথা। সন্তানকে লালন পালন করে মা বড় করে তোলে। তাতেও রয়েছে কষ্টের এক দীর্ঘতম পথ। যেই পথটি প্রত্যেক মায়ে অতিক্রম করে সন্তানের পৌঁছে নেয় মানুষ হওয়ার দিকে। যেই মা না হলে সন্তান এই পৃথিবীর আলো দেখতো না। অনেকেই সেই মায়ের সন্তান হয়ে মাকে বৃদ্ধাবস্থায় পাঠিয়ে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে। এই কাজটি শিক্ষিত সন্তানদের দ্বারা সাম্প্রতিক সময়ে বেশি ঘটছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
আমার বয়স এখন প্রায় ১৯ বছর। আমিই পরিবারের বড় ছেলে। আমার ছোট এক ভাই ও বোন রয়েছে। আমার মা গৃহিণী, বাবা ব্যবসায়ী। ছোটকাল থেকে মায়ের সান্নিধ্যে থেকে দুইটি দশক অতিক্রম করতে চলেছি। এখনো আছি মায়ের সান্নিধ্যে। এই দীর্ঘ সময়ে মায়ের সাথে ঘটে যাওয়া আমার বহু ঘটনার আজ সাক্ষী আমি। আজ মা দিবসে পাঠকদের সম্মুখে তুলে ধরবো আমার সাম্প্রতিক জীবন থেকে মায়ের কিছু স্মৃতি-
ক্লাস ফোর-ফাইভে থাকাকালীন আমার সাথে সমবয়সীদের মাঝে মাঝে ঝঁগড়া হতো। মায়ের কাছে অভিযোগ আসতো। আমি বাহির থেকে বাসায় ফিরলে মা জানতে চাইতেন- কেন অভিযোগ এলো? আমার মতামতের ভিত্তিতে যদি আমি দোষী হই তাহলে মা কখনো ছাড় দিতেন না। দোষী সাব্যস্ত হলেই মাইর অবশ্যম্ভাবী। বেশ কয়েকবছর পূর্বে আমাদের বাড়িতে রেখে মা আন্টির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সকালে গিয়েছেন দুপুরেই ছোট ভাই নারিকেল গাছের শুকনো ঢালে ঝুলে চড়তে গিয়ে হাতে হালকা ব্যাথা পায়। বাবা মাকে ফোন দিয়ে সেই খবরটা জানান। ফোন করার এক ঘন্টা সময় অতিক্রম না হওয়ার পূর্বেই মা চলে এলেন বাড়িতে। তখন ঘড়িতে বিকাল তিন কি চারটা বাজে। ছোট ভাইকে দেখেই মা শান্ত হলেন। বাড়ি আসার পর জানতে পারলাম- মা খাবার প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও দুপুরের খাবার না খেয়েই চলে এসেছেন। এইটা থেকে কিছুটা হলেও ধারণা করা যায়- সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার বিশালতার পরিমাণ। গত মাসে আমি পরীক্ষা দিয়ে শহর থেকে বাড়ি ফিরলাম রাত আটটার দিকে। বাড়ি ফিরেই হাত-মুখ ধুঁয়ে আসতে আসতে নয়টা বেজে গেল। শরীর বেশ ক্লান্ত। তাই মাকে দ্রুত রাতের খাবার দিতে বললাম। মা বললেন- একটু দেরী হবে। সেই একটু দেরী হওয়াটা আমি সহ্য করতে না পেরে পানি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। মা একটু পরে খাবার প্রস্তুত করে আমাকে ডাকলেন খেতে। বেশ কয়েকবার ডাকার পরও আমি গেলাম না। শেষ পর্যন্ত খাবার আমার বিছানায় নিয়ে এলেন। আমি আর না বলতে পারলাম না। ওঠে খাবার গ্রহণ করলাম। আমি চার বা পাঁচ বছর বয়সী নয়। আমার বয়স উপরে উল্লেখ আছে! মায়ের কাছে আমি এখনো পাঁচ বছরের শিশু।
গত দুই তারিখে মা তাঁর মাকে (আমার নানী) হারিয়েছেন। সেদিন রাতেই নানীকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। বাবাসহ আমরা রাতেই বাড়ি ফিরে আসি। মা আর ছোট বোন আসে সকালে। সেদিন বেলা এগারোটার দিকে মাকে কে একজন ফোন করে। তখন আমি চা খাচ্ছিলাম। মা এদিক থেকে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন- ‘মা’ শব্দটা আমাদের জীবন থেকে চলে গেছে আর কি! ‘মা’ বলে আর কাউকে ডাকতে পারবো না’। মায়ের কথা শুনে আমার চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে এলো। আপন মাকে হারিয়ে মা এখনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠতে পারেননি। আহা! ‘মা’ কি মিষ্টি মধুর শব্দ! কত কিছুই না জড়িয়ে আছে এই শব্দের মাঝে। মা দিবসে সকলের প্রতি অনুরোধ- আমার মা সহ পৃথিবীর সকল মায়েদের জন্য দোয়া করবেন। মাকে কোন অবস্থাতেই কষ্ট দিবেন না।
প্রতি বছরে ‘মা’ দিবস' একটি নির্দিষ্ট দিনে এলেও মায়ের প্রতি ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে। মা দিবস আসার কারণ হিসেবে আমি দেখি- মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার পরিমাণটা বাড়ানো। অর্থাৎ অতীতের চেয়ে মা দিবসের দিন থেকে আগামীতে মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার পরিমাণ বৃদ্ধি করা, যারা মাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে তাদের কাছে টেনে নেয়ার দিন হিসেবে। মা দিবসের প্রত্যাশা- পৃথিবীর সকল মায়েরা ভালো থাকুক, নিরাপদে থাকুক। বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর সন্তান কর্তৃক কষ্টের স্বীকার থেকে দূরে থাকুক। পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতি ভালোবাসা, শুভেচ্ছা।
একগুচ্ছ কবিতা
একগুচ্ছ কবিতা
নূরনবী সোহাগ
মাতৃপ্রেম ১
দুধ মুখে চুমু খায় মায়ের ঠোঁট
অবেলায় মাছি এসে শুঁকে-মমতা।
কচি শরীরে ছুঁয়ে যায়; মায়ের আঙ্গুল
কাকের চোখে তৃপ্তি ফোটে- আহ! আহ
ঘুমের শরীর লেপ্টে থাকে মায়ের বুকে
পৃথিবী অনুভব করে মাতৃপ্রেম।
মাতৃপ্রেম ২
ঘর্ষণে আগুন জ্বলে!
কেবল এই সূত্রটি মাথায় রেখে-
গুহাকালীন পাথর ঠুকোঠুকির কায়দাকে
সভ্যতা, নিয়ে এসেছে ‘বারুদ-কাঠি’ রূপে।
কালের বিবর্তনে বদলায়নি শুধু...
আগুনের রঙ! কিন্তু বৈচিত্রহীন-
জননীর স্তন চুষে চুষে ক্রমান্বয়ে বেড়ে উঠেছে
আদিম থেকে আধুনিক প্রজন্ম
কালের বিবর্তনে একইরকম...
মাতৃপ্রেম!
মাতৃপ্রেম ৩
...অতঃপর ভিক্ষুক’টি
আমার মাথায় হাত রাখলেন-
‘বেঁচে থাকো বাবা। ’
আমি যে ভীষণরকম মা ভক্ত
তিনি বোধ হয় আমার চোখ দেখেই বুঝেছিলেন।
মাতৃপ্রেম ৪
এমন অনেক নিঃসঙ্গ রাতে
মাকে হৃদয়ে নিয়ে ঘুমাই।
মা হৃদয় ছেড়ে; উঠে বসে থাকে আমার শিয়রে
আমায় ভয় পেতে দেয় না
আমায় ঘামতে দেয় না
আমায় দুঃস্বপ্ন দেখতে দেয় না
গোপন ব্যথা জমতে দেয় না।
ভাবতে থাকি। আমি বোধহয় ছোট হতে হতে
ফিরে যাচ্ছি শিশুকালে...
ক্ষাণিক বাদে আমার নিশ্চিন্ত ঘুম হবে
মায়ের কোলে।
মমতাময়ী শব্দের নাম `মা'
মমতাময়ী শব্দের নাম `মা'
এমএ ওহাব ম-ল
পৃথিবীর সব থেকে প্রিয় এবং মধুময় শব্দটির নাম হলো মা। যে
নামের সাথে সকল মানুষের জন্ম পরিচয় মিশে
থাকে। মা মানেই পরম মমতা এবং স্নেহের ছায়াতল। মা মানেই নিঃস্বার্থ ভালবাসার সমুদ্র। মায়ের আঁচলের মতো নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র দ্বিতীয় কোথাও আছে বলে জানা নেই। কোনো প্রকার পূর্ব স্বার্থ ব্যতীত একজন মা
তাঁর পেটে সন্তান ধারণ করেন। শুধু কী তাই(?) অসহনীয় প্রসব বেদনা সহ্যের পর একজন মা
কতো না কষ্ট করে পরম স্নেহ আর আদরে পেটের সন্তানকে বড় করে তোলেন। কোনো শিশু জন্মের পরই হাঁটতে পারে না। চলতে পারে না। খেতে পারে না। কিছু বলতে পারে না। মোট কথা প্রতিটি শিশুই জন্মের পর থাকে পরম অসহায়। ঠিক সেই মুহুর্তে প্রসব বেদনার কথা ভুলে গিয়ে আদর করে হাসি মুখে একজন মা সন্তানকে কোলে তুলে নেয়।
পৃথিবীতে আগমনের পর
আমরা প্রথম আহার বা খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করি তা হলো মায়ের বুকের দুধ। যে
দুধের মতো পবিত্র এবং সদ্যজাত শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর আহার পৃথিবীতে দ্বিতীয় কিছু নেই। মা মানেই প্রতিটি সন্তানের চোখের দৃপ্তি। তাই তো
মন বলে ওঠে
‘মা তুমি মোর নয়নের দৃপ্তি,
তোমার হাতের রান্না
একদিন না খেলে
মিটে না মোর তৃপ্তি।’
আমাদের মায়েরা সন্তান জন্মদানের পর কি পরিমাণ যে
কষ্ট করে তা
একজন আদর্শবান সন্তান ছাড়া কোনো ভাবেই উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। মাঘের কনকনে তীব্র শীতের রাতে আমরা যখন মায়ের কোলে বা শিউরে পেশাব করে দিই তখন মা নিজে সকল ঠ-া দাঁতের মাড়িতে চেপে ধরে আমাদের শুকনো কাপড়ে মুড়িয়ে রাখেন। সারারাত ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। একটু পর পর আমাদের নোংড়া কাপড় বদল করে দেন । কোলে নিয়ে দুধ খাওয়ান। যাতে আমরা নূন্যতম কষ্ট অনুভব না করি। কতো মমত্ব ঘেরা মা-সন্তানের সম্পর্ক।
ইহলৌকিক জান্নাতের নামই ‘মা’। যে ঘরে মা নেই সে ঘর কখনোই পূর্ণতা পায় না। কিছুদিন পূর্বে আমার মা
অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। যে
কয়দিন মা বাড়িতে ছিলেন না
মনে হয়েছে পুরো বাড়িটা যেন মরুভূমি হয়ে গেছে। অন্ধ হোক,পঙ্গু হোক, শিক্ষিত হোক, অশিক্ষিত হোক সেটা কোনো কথা নয়। পৃথিবীতে মায়ের স্থান সবার উপরে। যে সন্তান তার মাকে ভালবাসলো না তার মতো অভাগা পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর
একজনও নেই। সন্তান হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য বাবা-মা’র সেবা যতœ
করা। আমরা অকারণে আমাদের মায়েদের সঙ্গে কতো রকম বেয়াদবী করি। খারাপ আচরণ করি। তবুও মমতাময়ী মায়েরা আমদের অভিশাপ দেন না। বরং দু’ হাত তুলে মহান প্রভুর নিকট দোয়া কামনা করেন আমাদের ভালোর জন্যে।
আর্ন্তজাতিক মা দিবসে পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতি রইলো পরম শ্রদ্ধা আর
ভালবাসা। মায়েরা ভালো থাকলে ভালো লাগে। মায়ের মুখে হাসি দেখলে বেঁচে থাকার প্রেরণা বা সাহস খুঁজে পাওয়া যায়। কবিতার ভাষায় তাই তো বলতে হয়-
‘মা গো তুমি এই জগতে খোদার সেরা দান
কেমন করে দিবো তোমার দুধের প্রতিদান?
তোমার মুখের হাসিতে মা শক্তি খুঁজে পাই।
তোমার মতো শান্তির ছায়া ত্রিভূবনে নাই।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)