প্রদীপের সলতে
অসীম মালিক
অস্থির হাওয়ায় ,
লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে প্রদীপের শিখা;
শিখাকে নয় যেন হাওয়াকেই বরণ করে নিচ্ছে-
প্রদীপের সলতে...
নির্লিপ্ত সলতেটা পুড়ছে ,
যে হাত সলতেকে দিয়েছে দহন-
অদ্ভুতভাবেই তার হাতে এসে লাগছে;
অহংকারী শিখার আঁচ ।
বিশ্বাসের আগুনে হু হু করে ফুরিয়ে আসছে-
বুক থেকে সাঁঝ প্রদীপে গড়িয়ে পড়া ওম ।
নীরব শিখাটা লাফিয়ে উঠে গ্রহণ করছে ,
অস্থির সময়ের সাহচর্য...
শুধু একাকী দগ্ধ সলতে
মাটির প্রদীপের সাহচর্য পেয়ে
সন্ধ্যাকে শেখাচ্ছে দহন...
পায়ের কাছে
ঊষার মাহমুদ
মেয়েটা হেঁটে যায় পাহাড়ি পথে
নূপুরের শব্দে থেমে যায় পিঁপড়ার পা;
শালিক নয়নে স্বপ্নের কোলাহল!
বাতাস আর লাল আঁচলে শরীর খোলা বিকেলের সঙ্গম;
ঘাসফড়িং চিত্তের না বলা কথার আক্ষেপ
ঝরাপাতা হয় রোজ,
চঞ্চলা পা ছুঁয়ে যাবার অভিলাষে পথে বেঁধেছে ঘর...!
বড্ড বেখেয়ালি তবে চঞ্চলা বটে.
উড়ন্ত বলাকার বাঁকা সারিতে স্বপ্ন জমা রাখে.!
অথচ; বুঝেনা পায়ের কাছে পড়ে থাকা পাতার আর্তনাদ ।
মেয়েটা কারণ হোক তীব্র কোলাহলের
সাদিক আল আমিন
উঠোনবাঁকা কোমরে নাচতে কেমন পারো?
হারিকেন রেখে যদি দেই টাটকা তেলের কুপি!
নাচবে কি বালিকা তুমি ? শেষ নিশিতে আরো?
এই সুবাদে মাল্লা-মাঝি, সর্দার-কাজি, বৌমা-বুড়ো
সবাই হলো জড়ো, নাচবে কি বালিকা আরো?
উঠোনবাঁকা কোমরে নাচতে কেমন পারো?
রুপোর ঘুঙুর দেখবে কি চেয়ে সোনারোদের আলো!
চোখের কোণে লুকোনো জল করবে কি টলোমলো!
চাইবে কি নিরীহ নদী, নিযুত বন্দরের ভালো!
নাচবে কি বালিকা তুমি? হাসবে খলোখলো?
এক বাংলাদেশ কিভাবে তুমি একাই কাঁপাতে পারো!
বুকের ভীরু ঘরের আমন্ত্রণ, ‘বাহির ঘরে চলো’
জলের নীচে চাঁদ উঠেছে, লাগছে কি যে ভালো!
তোমার আমার দস্যিপনা রুখবে কে আজ বলো
নাচবে কি গো তুমি? জোছনা রাতের আলো?
ঘ্রাণ
পরান জহির
খুপড়ির চারপাশে পালক ঝরিয়েছে কতিপয় জ্বালালী কবুতর। তুলতুলে ছানাগুলির চোখ ফোঁটেছে, তারাও শিখে নিয়েছে বাকবাকুম স্বর...
ঘুঘু সরিষার দানাগুলিতে লুকিয়ে পড়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ ঋতু। ডানায় ডানায় খচিত হয়েছে হীমবাহের কঙ্কাল; দু’হাতে আঁধার পোড়াই। তবু কি আর এত সহজেই মিটে পিতৃপ্রদত্ত ক্ষুধা? ভেসে আসে নাসিকামূলে ভূতুরে ছায়াদের অস্তিত্বের ঘ্রাণ। নির্মল চিন্তনছায়াগুলিকে লক্ষ্য করে ক্রমাগত ছুরিকাঘাত করে কারা যেন পালিয়ে যায় ধুঁধু আঁধারের পথরেখা ধরে ।
শিরোনামহীন
পার্থ কর্মকার
চাঁদের মতোই একা আছি;
আলো ছড়াচ্ছি,
আবার আঁধারে হাড়িয়ে যাচ্ছি।
নিয়মিত না হলেও,
একটা আবর্তনের মধ্যে দিয়ে
পাড় করছি জীবন ।
অসুখ-বিসুখ
মাহমুদ নোমান
টাকি মাছের নাড়ানিতে বিলের জল ঘোলা
মিথ্যে বলো না-
শাপলা তুলতে গিয়ে হেঁটে গিয়েছো;
সূর্য ডিম ভাঙা হলে
আর অন্ধকারে পায়ের গোড়ালিতে
জোঁকে রক্ত চুষছে তাও জানলে না !
গাছ
মিসির হাছনাইন
আমার প্রেম, গাছের ফুলের মতো
স্বয়ং গাছ হয়ে- বছরের পর বছর
তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, তুমি আসো নাই;
মনে হয় পৃথিবীতে, এরচেয়ে বড় কষ্ট আর নাই।
শুধু তুমি আসোনি...
সুমন আহমেদ
লীলাবতী, মনে পড়ে সেদিনের কথা !
হাতে-হাত রেখে কুয়াশার চাদর জড়ানো শিউলি ঝরা
ভোরে- হেঁটে যেতাম দু’জন গায়ের সবুজ মেঠোপথে।
দূর্বাঘাসের আভায় জড়িয়ে থাকা শিশির বিন্দু;
ছুঁয়ে দিতো তোমার দুধে আলতা স্পর্শহীন দু’চরণ।
ভোরের সূর্যটাও আর নিজেকে আড়াল করে রাখতে পারতোনা,
তার সোনালি রোদ্দুর মিষ্টি কিরণে রাঙিয়ে দিতো তোমায়।
তোমার অঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাল-সাদা শাড়ির মুগ্ধতা,
আর মৃদু সমীরণে ভেসে যাওয়া খোলা চুলের গন্ধ
বড়ই প্রানবন্ত লাগতো সেই মূহুর্ত গুলো।
জানো লীলাবতী,
আজ আবার সেই মূহুর্তটা ফিরে এসেছে; শুধু তুমি আসোনি।
বিচ্ছেদ
সুমনা পাল
‘তুমি’ শব্দে বিচ্ছেদ বেশি।
আমি দেখেছি,বহুবার।
আমার অসংখ্য প্রেমিকের সাথে
বিচ্ছেদ হয়েছে ‘তুমি’ শব্দে।
তোমার সন্তানেরা কোন পথে হাটবে ?
ইকরামুল হাসান শাকিল
আলতা রাঙা নগ্ন পা এখন আর নেই তোমার
বিকাশিত হয়েছে তোমাদের সভ্যতা
উন্নত হয়েছে মর্যদা
আজ তোমরা নও ভিন্ন সমাজের বাসিন্দা
ভবিষ্যৎ উজ্জল নিঃশ্চিতÑ
রাজনৈতিককর্মী, সমাজকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, নাট্যকর্মী
ইত্যাদি ইত্যাদি কত শত কর্মী-
তেমনি তোমার নামের পদোন্নতি হয়েছে।
আজ আর তোমরা বেশ্যা কিংবা পতিতা নও
নবসংস্কারে নাম হয়েছে যৌনকর্মী।
গাঢ় মেকাপের আড়ালে এইডসের
মরণ ভয়কে করেছ জয়
তোমার সভ্যতা বিলীন হবার সম্ভাবনা নেই
তোমার সন্তানেরা কোন পথে হাটবে ?
তৃতীয় কার্ড
মীর সাহাবুদ্দীন
লঞ্চ বা ট্রেনের মতই ঘুরে বেড়াই
আজ আর কেউ বলেনা দাড়াও
গন্তব্যে একবার ফিরেই গান ধরে ছুঁটছি
এখন আর আমার নিজস্ব আলো নেই বলে
শেষ রাতের আলো থেকে ধার নিয়ে
কচি ধান গাছের মধ্যে হেঁটে নিজেকে ভেজাই।
জানি এ পথে তুমি হেঁটে যাও
খোঁজ আমায়, ভাব শীত বসন্ত বা দ্বিতীয় ফাল্গুনে।
সূর্য উঠলে হাসগুলো পুকুরে নামে
আমি অন্ধকারে ফিরি
তোমার ভরপুর আলো নিয়েও ঘরে বসে ভুল তাসে
রঙের বাসর সাজাও।
অথচ আমিও কখনো কার্ড ছিলাম !